নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার শেখ নিয়ামত আলীর ৮০তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১৩


শেখ নিয়ামত আলী, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রাতঃস্মরনীয় একটি নাম। এদেশের সুস্থধারার চলচ্চিত্রে তার অবদান অবিস্মরনীয় হয়ে আছে। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ছিলেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনেও তার রয়েছে বিশেষ অবদান। সত্তর দশকের শেষার্ধে তিনি চলচ্চিত্রকার মসিউদ্দীন শাকেরের সাথে যৌথভাবে নির্মান করেন সূর্যদীঘল বাড়ি । এছাড়াও তিনি নির্মান করেন দহন, অন্যজীবন, আমি নারী’র মতো সৃজনশীল চলচ্চিত্র। সূর্য দীঘল বাড়ি চলচ্চিত্রটি দেশে বিদেশে বিশেষভাবে প্রশংসিত এবং পুরস্কৃত হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের সুস্থধারার চলচ্চিত্রের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। আজ এই সৃষ্টিশীল গুনী চলচ্চিত্র নির্মাতার ৮০তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নিয়ামত আলীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

শেখ নিয়ামত আলী ১৯৪০ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার পৈত্রিক বাড়ি খুলনার বাগের হাটে। ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়েই চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ষাটের দশকে ঢাকায় এসে যুক্ত হন বাংলাদেশের সবচে প্রাচীন চলচ্চিত্র সংসদ ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদের’ সাথে। স্বাধীন বাংলাদেশে পত্রপত্রিকায় চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রচুর লেখালেখি করেন। ১৯৭৯ সালে যৌথভাবে ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সূর্য দীঘল বাড়ী (The Ominous House) ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী। বিশিষ্ঠ গ্রন্থকার আবু ইসহাক এর ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত (উপন্যাস) সূর্য দীঘল বাড়ি অবলম্বনে ছবিটি নির্মান করা হয়। কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাককে আজকের দিনের পাঠকদের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তিনি অল্প লিখলেও, সে সব লেখা সুপরিচিত এবং পাঠকপ্রিয়। তিনি সর্বাধিক খ্যাতি পেয়েছেন তার সূর্য দীঘল বাড়ি উপন্যাসের জন্য। তবে এটি ছাড়াও তার আরও দুটি উপন্যাস আছে। উপন্যাস দুটি হলোঃ ১। পদ্মার পলিদ্বীপ (১৯৮৬) এবং ২। জাল (১৯৮৮)। সূর্য দীঘল বাড়িই বাংলাদেশের প্রথম সরকারী অনুদান প্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সূর্য দীঘল বাড়ি ছবিটির যৌথ পরিচালক শেখ নিয়ামত আলী সর্বমহলের প্রশংসা কুড়িয়ে নেন এবং দেশ বিদেশে অনেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। ছবিটি শ্রেষ্ঠ পরিচালক সহ মোট ছয়টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ১৯৭৯ সালে সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটি বাংলাদেশ সিনে-জার্নাল এসোসিয়েসন এর মোট ছয়টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে । আন্তর্জাতিক ভাবেও সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটি (১৯৮০) সালের ম্যানহেইম চলচ্চিত্র উৎসব, জার্মানিতে অংশগ্রহণ করে এবং তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে এবং একই বছর পর্তুগাল এ ফিগুএরা দা ফোজ চলচ্চিত্র উৎসবে একটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও ছবিটি ফিল্ম ডুকাট্ পুরস্কার, ডন কিজোট পুরস্কার, ক্যাথটিক জুরি পুরস্কার এবং এভান্গেলিক্যাল জুরি পুরস্কার লাভ করে।

সূর্যদীঘল বাড়ী’ছবির কাহিনী সংক্ষেপঃ
বাংলা ১৩৫০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পঞ্চাশের আকাল নামে যে দুর্ভিক্ষ হযেছিল তাতে প্রাণ হারায় বহু লক্ষ দরিদ্র মানুষ। যারা কোনমতো শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বেঁচে থাকতে পেরেছিল তদেরই একজন আকালের সময় স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইদের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন একখণ্ড জমিতে ঘর ওঠায় যা অপয়া ভিটা বলে পরিচিত ছিল। জীবনের যুদ্ধে যখন সে প্রাণপণে লড়ছে তখন তার প্রতি দৃষ্টি পড়ে গাঁয়ের মোড়লের। দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। সে কারো প্রস্তাবেই সায় দেয় না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাৎ ঘটে এবং মোড়ল তার প্রতিযোগীকে হত্যা করে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে। সূর্যদীঘল বাড়ীর কিহিনীর বিচিত্রতার মধ্যে মূল বিষয় একটিই; তা হচ্ছে কুসংস্কার, সম্পদ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, সামাজিক বাধা-নিষেধ, এমনকি জাতীয়তাবোধ- এ সব কিছুকেই কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবি ক্ষুধর্তো মানুষকে ক্রমাগত শোষণ। ছবিটির শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন,ডলি আনোয়ার, জহিরুল হক, রওশন জামিল, আরিফুল হক, কেরামত মাওলা, এ টি এম শামসুজ্জামান, হাসান ইমাম, ফখরুল হাসান বৈরাগী, নাজমুল হুদা বাচ্চু, লেনিন, ইলোরা গহর প্রমুখ। সূর্য দীঘল বাড়ী ছবিটির সংগীত পরিচলনা করেছেন আলাউদ্দিন আলী।

শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি ‘দহন’। ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। সুস্থ্যধারার চলচ্চিত্র হিসেবে ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়ায়। দহন এটিও একটি রাষ্ট্রীয় অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র। মোহাম্মদ শামী নিবেদিত এই ছবিটির কাহিনী ও চিত্রনাট্য পরিচালনা করেছেন শেখ নিয়ামত আলী। এবং পরিচালকের নিজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শেখ নিয়ামত আলী প্রডাকশন্স এর ব্যানারে নির্মিণ করা হয় ছবিটি। ছবির প্রধান প্রধান চরিত্র গুলোতে অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা ,হুমায়ুন ফরীদি, শর্মিলী আহমেদ, প্রবীর মিত্র, ডলি আনোয়ার, রওশন জামিল, আবুল খায়ের, সাইফুদ্দিন, আসাদুজ্জামান নূর ও সৈয়দ আহসান আলী। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করেছেন ফকরুল হাসান বৈরাগী, আশিষ কুমার লোহ, জহীর চৌধুরী, খায়রুল বাশার, হুমায়ুন খালেদ, মিনু রহমান সহ আরও অনেকে। ছবিটি তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং দশটি বিভাগে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে। দহন ছবির কাহিনী সংক্ষেপঃ
ব্যক্তিগত প্রেমের চেয়ে সমষ্টিগত প্রেমই গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে। গল্পে আরো অনেক গুরুপ্তপূর্ণ বিষয় স্হান পেয়েছে যেমন- বাজেট নিয়ে আলোচনা, মানুষ নিয়ে রাজনীতি, শেরে বাংলা নগরে প্রেমাভিসার প্রভৃতি। গল্পে অর্থনৈতিক সামাজিক পুরানো পদ্ধতি ভাঙার সংগ্রামী প্রচেষ্টাকে তুলে ধরেছে, খুজেছে মুক্তির পথ। ফ্যাক্টস, ফিকশন, সিম্বল, হিওমার ব্যবহার করে কাহিনীতে সৃষ্টি করেছে একটি দলিলচিত্র। এছাড়া তাঁর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র 'অন্য জীবন'। এই চলচ্চিত্রটির সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন শেখ নিয়ামত আলী। এস নিয়ামত আলী প্রোডাকশন্স প্রযোজিত চলচ্চিত্রটির অভিনয়শিল্পীরা হলেন- রাইসুল ইসলাম আসাদ, চম্পা, আবুল খায়ের, শান্তা ইসলাম, সাইফুদ্দিন ও আরো অনেকে।

শেখ নিয়ামত আলী জন পরিবহন নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য দেশী বিদেশী প্রায় ৬০টি পুরস্কার অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ করেন শেখ নিয়ামত আলী।২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর মৃত্যুবরন করেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার শেখ নিয়ামত আলী। নন্দিত এই চলচ্চিত্রকারের আজ ৮০তম জন্মবার্ষিকী। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার শেখ নিয়ামত আলীর জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: সূর্যদীঘল বাড়ি সি্নেমাটা আমার খুব ভালো লাগে। কাহিনিটাও চমতকার।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খানসাব
অনেক দিন পরে নিজস্ব ঘারানার
বাইরে মন্তব্য করার জন্য। এতদিন
শুধু ২ শব্দের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতেন
একার তার পরিধি কিছুটা বেড়েছে। ভালো লক্ষণ !!!

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:২২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: কীর্তি মানের মৃত্যু নাই। শ্রদ্ধা জানাই এই গুণী নির্মাতাকে।
দারুন কিছু মুভি তিনি নির্মাণ করেছেন। দহন ছবিতে প্রয়াত হুমায়ূন ফরীদি নায়কের ভূমিকায় চিত্র নায়িকা ববিতার বিপরীতে দারুন অভিনয় করেছিলেন।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সেলিম ভাই
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার শেখ নিয়ামত আলীর
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য্।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.