নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মানবাধিকার নেত্রী নাসরীন পারভীন হক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পুষ্টি বিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী নাসরীন ছিলেন একজন নারী বিষয়ক গবেষক ও নারী আন্দোলনের নেত্রী। নাসরীন হক একটি আন্দোলনের নাম, যার কণ্ঠ সর্বদা সোচ্চার ছিল শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার মানুষের পক্ষে। আন্দোলনে নাসরীন- নাসরীনের আন্দোলন।প্রসূতি মৃত্যুরোধে নাসরীন হকের পদক্ষেপ ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে তার নিরলস প্রচেষ্টার সুফল পাচ্ছেন বাংলাদেশের অসংখ্য নারী। এসিড আক্রমণের শিকার নারীর মুখ নাসরীন হকই প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে এসেছিলেন। যেখানে যখনই নারীর অধিকার লঙ্ঘনের খবর পেয়েছেন, ছুটে গেছেন সেখানে, ব্যবস্থা নিয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তী সময়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করেছেন। অবলীলায়- অনায়াসে আন্দোলনের বিভিন্ন ইস্যু চিহ্নিত করা মতো বিচক্ষণতা ছিল নাসরীনের। তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নারী আন্দোলনের মানচিত্রে এক একটি লিজেণ্ড। মানবাধিকার নেত্রী নাসরীন পারভীন হক ২০০৩ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন। অক্টোবর মাসে গোলাপী ফিতা বুকে বেঁধে দিয়ে স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ছিল নাসরীনের আরেকটি অভিযান। নিজে নিজে কিভাবে স্তন পরীক্ষা করা যায় তারও মহড়া দিয়ে শিখিয়ে দেয়া ছিল এ অভিযানের অংশ। দেশে স্তন ক্যান্সারের জন্য স্বল্প মূল্যে ঔষধ তৈরীর এ্যাডভোকেসীর অংশ ছিল ঔষধ কোম্পানীর সাথে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ করা ও সভা করা। দরিদ্র স্তন ক্যান্সার রোগীকে আর্থিক সহযোগিতাও ছিল তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের অংশ। তামাক বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৮৮ সালে বন্যায় ত্রাণ কাজ, টানবাজার থেকে যৌন কর্মীদের উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন, এইচআইভি/এইডস, নারী ও শিশু পাচার নিয়ে সংসদীয় পর্যায়ে কাজ করা, নারীর উপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ, কর্মজীবী নারীদের শিশু রক্ষণাবেক্ষণ সবই ছিল নাসরীনের আন্দোলনের বিষয়। তাছাড়া দত্তক ও নাগরিত্ব নিয়ে আইন সংস্কারের জন্যেও নাসরীনের জোরালো লবিইং ছিল।বলিষ্ঠ সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী নাসরীন ছিল অসম্প্রদায়িক চেতনায় সমুজ্জ্বল। আজ নারী নেত্রী নাসরীন পারভীন হকের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মানবাধিকার নেত্রী নাসরীন পারভীন হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নাসরীন হক ১৯৫৮ সালের ১৮ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ রফিকুল হক যিনি ছিলেন একজন প্রকৌশলী ও মাতার নাম জাহেদা খানম যিনি কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বাবা-মায়ের শেষ সন্তান। বড় ভাই হাসান মোস্তফা হক স্থপতি ছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মেজভাই শামীম হক প্রকৌশলী; তিনি এখন আমেরিকার হিউস্টনে কর্মরত আছেন। বড় বোন শিরিন হক সমাজকর্মী এবং ডাঃ জাফরুল্লাহ'র স্ত্রী। নাসরীন হকের ডাকনাম হ্যাপি; তবে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন এবং তার স্বামী তাকে হ্যাপন নামে ডাকতেন। নাসরীন হক ঢাকার হলিক্রস স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাশ করেন। এর পর পরই ১৯৭৬ সালে তিনি আমেরিকায় চলে যান। আমেরিকায় ডালাস শহরের উপকণ্ঠে হোকাডে স্কুলে পড়াশোনার পর বেইলর কলেজ অফ মেডিসিনে ইন্টার্নশিপ শেষ করেন। বড় দুই ভাইয়ের মত প্রকৌশল বা স্থাপত্যবিদ্যার দিকে না গিয়ে তিনি পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী হন। এ উদ্দেশ্যে তিনি চলে যান স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক-এ এবং সেখান থেকেই স্নাতক শ্রেণীর পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি সান ফ্রান্সিসকোর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ বার্কলিতে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকেই মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
নারীপক্ষ একটি ভিন্নধর্মী নারী সংগঠন। এ সংগঠনের বৈচিত্রময়ী সদস্যছিলেন নাসরীন হক। নাসরীন ছিল একটি আন্দোলনের নাম। তার চিন্তা চেতনায়, জীবনাভিজ্ঞতায়, আন্দোলনের বিষয় নির্বাচন ও কর্মসূচীর কৌশল পরিচালনায় ছিল ভিন্ন মাত্রা। সবার নাসরীন, নাসরীনের সবাই। গ্রামীণ নারী, শহুরে নারী, ঢাকার নারী, পাথরঘাটার নারী, যুক্তরাষ্টের নারী, আফ্রিকার নারী, প্যালেস্টাইনের নারী সবার দুঃখে সংগ্রামী ছিল নাসরীন। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অকালে মৃত্যুবরণকারী মায়ের জন্যে ছিল তার অশেষ দুঃখবোধ, আর এ দুঃখবোধকে সে রূপান্তরিত করেছিল নিরাপদ মাতৃত্বের মতো শক্তিশালী কর্মসূচীতে। এ বিষয়ে ফিউচার সার্চ কনফারেন্স নাসরীনের সৃজনশীলতা, মেধা ও কৌশলের অপূর্ব সমন্বয়। মাতৃমৃত্যু রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মতামতকে সন্নিবেশিত করা, মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের সেবাপ্রদানে উদ্ধুদ্ব করা ও নীতি -নির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাবিত করার মতো উপাদান ছিল এ কর্মসূচীতে। কিশোরীদের সাথে মাসিককালীন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মতবিনিময় করেছিল সেই নব্বই এর দশকে। তারা এখন পর্যন্ত তাঁকে স্মরণে রেখেছে এবং রাখবে আজীবন। সরকারের নরপ্ল্যান্ট নামক জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির বিরূদ্ধে সোচ্চার নাসরীন। ‘শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার’ নারীর এ জীবনাধিকারকে সামনে নিয়ে যেতে লড়াকু ছিল নাসরীন। নাসরীনের কর্ম। নাসরীনের মানবতার ধর্ম।
২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন নারী নেত্রী নাসরীন পারভীন হক। নাসরীন পারভীন হকের প্রাণহানির ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং সেটি ছিল সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার সাক্ষ্যপ্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ নাসরীন পরভীন হকের অফিসিয়াল গাড়িচালক জাকির হোসেন এ হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার মাধ্যমে ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিতর্কের অবসান হল। রায়ে আসামিকে যাবজ্জীবনের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, প্রতিদিনের মতো ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে অফিসের গাড়ি নাসরীন পারভীন হককে নেয়ার জন্য আসে। চালক গাড়িটি চালু অবস্থায় রাখে। নাসরীন পারভীন হক তার মেয়েকে কোলে নিয়ে ৯টা ৫৫ মিনিটে নিচে নেমে আসেন। গাড়ির সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে চালক তার ওপর গাড়ি তুলে দেয়। এ সময় গাড়ির প্রচণ্ড শব্দ ও নাসরীন পারভীন হকের চিৎকার শুনে তার স্বামী নিচে নেমে আসেন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় নাসরীন পারভীন হককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে ও পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হলেও ওই দিনই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান। ঘটনার ১৫ দিন পর ৯ মে রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় এ মামলাটি করা হয়। মামলায় গাড়িচালক নাসরীন পারভীন হককে সুপরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে এ মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ। এরপর নিহতের মায়ের নারাজির ভিত্তিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন আদালত। ২০০৯ সালের ১৭ সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ মোমিন হোসেন অধিকতর তদন্ত শেষে এ মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, গাড়িচালক জাকির হোসেন পরিকল্পিতভাবে নাসরীন পারভীন হককে হত্যা করেছে। এরপর আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত। মামলায় মোট ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। নাসরীনের বলা। নাসরীনের চলা। নাসরীনের হাসি। নাসরীনের সহমর্মিতা। নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন সবই আজ আমাদের শক্তি, সাহস ও উদ্যমের পাথেয়। আজ নারী নেত্রী নাসরীন পারভীন হকের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। মানবাধিকার নেত্রী নাসরীন পারভীন হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:১২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আ্ন্দোলন ছাড়া সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়না
এ সহজ কথাটা আপনার অজানা থাকার
কথা নয়। আন্দোলন করেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা
হয়েছে। আ্ন্দোলন করেই বাংলাদেশ স্বাধীন্
হয়েছে। আন্দোলন করেই দাবী আদায় করতে হয়।
২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:১৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হত্যা কাণ্ডের কারণ কি ছিল?
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর আপনার প্রশ্নের জন্য। নাসরীন পারভীন হকের হত্যার কারণ এখনো
যানা যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেন, মামলার আসামি
গাড়িচালক জাকির হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও সে নাসরীন পারভীন হককে
ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছে- বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে
সক্ষম হয়েছে। এতে আদালত আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন। এক প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, গাড়িচালক ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।
তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ ও এর সঙ্গে আরও অন্যদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা-
তা তদন্তে প্রকাশ পায়নি। ফলে বিচারেও তা প্রকাশ পায়নি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি আন্দোলনে বিশ্বাসী?