নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী এম এন আখতার। ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যুম তোয়ারে’, ‘মাঝি পাল তুইলা দে’, ‘বাছুরে, জি জি জি’, ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’, ‘ও পরানের তালতো ভাই’, ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম’, ‘ও আকাশ তারার প্রদীপ’সহ এরকম অসংখ্য মন মাতানো এবং কালজয়ী গানের রচয়িতা কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের প্রবর্তক, গীতিকার, সুরকার শিল্পী এম এন আখতারের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের আজকের দিনে তিনি চট্রগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী এম এন আখতারের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি
বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার এম. এন. আখতার ১৯৩১ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের রাউজান থানার মোহাম্মদপুর গ্রামের তাজ মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম মোহাম্মদ নুরুল আখতার। তাঁর পিতা জাহাজের সারেং আলহাজ্ব সৈয়দ আলী, মা কুলছুমা খাতুন। প্রথম জীবনে মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন এম এন আখতার, অতঃপর সাধারণ শাখায় পড়ালেখা এবং হোমিওপ্যাথিক বিষয়েও পড়ালেখা করেন কিছুদিন। পারিবারিক সদস্যদের পেশাগত কারণে ছোটবেলা থেকেই এম. এন. আখতারের বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া থাকা ও পড়ালেখার সুযোগ হয়েছে। ভারতের চব্বিশ পরগণার বশির হাট টাউনে সঙ্গীতজ্ঞ বাবু অমল মুখার্জির কাছে সঙ্গীতে হাতে খড়ি তাঁর। এম. এন. আখতার পেশাগত জীবনে ১৯৪৯ সাল থেকে সরকারি চাকুরে। তাঁর কর্মস্থল ছিলো সাতক্ষীরা কাস্টমসে। ১৯৫৯ সালে চাকরি সূত্রে বদলি হয়ে চট্টগ্রাম আসেন । সে থেকে চট্টগ্রামই তাঁর চাকুরী, সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চা। চট্টগ্রাম বেতার কালুরঘাটের প্রথম দিনের প্রথম আধুনিক গানের শিল্পী ছিলেন এম. এন. আখতার। এম এন আখতারের রচিত অনেক গানের মধ্যে একটি সাড়া জাগানো গান ছিল ‘বকশি হাইট্টা পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম’। এছাড়াও তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছেঃ কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোয়ারে, যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, তুমি যে আমার জীবনের উপহার , ও পরানর তালত ভাই চিডি দিলাম, বর্গী এলো দেশে”, “মধুমিতা” ইত্যাদি।
আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী বলে পরিচিত শিল্পী শেফালী ঘোষের ওস্তাদ এম এন আখতার লেখা ও সুর করার পাশাপাশি নিজেও গাইতেন। তাঁর লেখা ও সুর করা গান গেয়ে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষ খ্যাতি পান। তাঁর অনেক গান চলচ্চিত্রেও নেওয়া হয়েছে। ৩৫ বছর আগে গ্রামোফোন রেকর্ডে শিল্পী আখতার ও সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলেন ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোয়ারে’ গানটি। পরে এই গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তিনি প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক গান লিখেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য নাটক ও কবিতা। তার লেখা গানের মধ্য থেকে কয়েক হাজার গান নিয়ে ‘এম এন আখতারের গান’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ষাটের দশক থেকে তিনি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ভাষায় আটটি ও শুদ্ধ ভাষায় চারটি গীতিনাট্য রচনা করেন। পবিত্র কুরআনের ১১৪টি সূরা হতে বিশেষ বিশেষ তথ্যগুলো নিয়ে বাংলায় তার লিখিত “করুণার বাণী” গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় চুড়িওয়ালা, সোনার কলসী, নাতিন জামাই, কানের ফুল, লট্টন কইতর, রাঙ্গাবালির চরে, বৈশাখী মেলাসহ অনেক নাটকও লিখেছেন। তাঁর সর্বশেষ রচিত হাসির নাটক ‘রসিক দাদুর স্কুলে মানুষ গড়ার কল’।
এম এন আখতার ১৯৬২ সাল থেকে চট্টগ্রাম বেতার এবং ১৯৭৯ সাল থেকে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের শিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং নাট্যকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ১৯৬২ সাল থেকে গান লেখা শুরু করলেও ১৯৭৩ সালে ‘মনুআ’ নামক আধুনিক, পল্লীগীতি ও আঞ্চলিক গানের প্রকাশনার পর চট্টগ্রাম বেতার তাঁকে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। তবে তিনি শুধু আঞ্চলিক গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। একুশের গান, দেশাত্ববোধক গান, আধুনিক গান, পল্লীগীতি, ভাবের গান, বিচ্ছেদি গান, হামদ-নাত, পীর-আউলিয়ার গান এবং চট্টগ্রামের হাওলা গানেও তার পদচারণা ছিল। গান লিখতে তাঁর কোনো প্রস্তুতি লাগত না। হাঁটতে হাঁটতে তিনি লিখতে পারতেন এবং তাৎক্ষণিক সুর বসিয়ে প্রায়ই তিনি বেতারে গাইতেন। কেবল গীতিকার হিসেবে নয় সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি পান এম এন আখতার। আধুনিক, পল্লীগীতি, মুর্শীদি, মারফতি, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান রচনা ও কণ্ঠ দিয়ে খ্যাতি লাভ করেন। কী মঞ্চে, কী নাটকে, কী চলচ্চিত্রে-সর্বত্রই ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে এম এন আখতারের গান।
এম. এন. আখতার বেতার টেলিভিশন তথা মঞ্চে দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও নন্দিত শিল্পী। তাঁর হাত ধরেই মূলত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের প্রসার লাভ করেছে। তাঁর রচিত ও সুরারোপিত গান সাবিনা ইয়াসমিন, শেফালি ঘোষ ছাড়াও আবদুল জব্বার, আবিদা সুলতানা, সুবীর নন্দী, ফেরদৌসী রহমান, ফেরদৌস আরা, রুমানা ইসলাম, আনোয়ার উদ্দিন খান, আপেল মাহমুদ, সামিনা চৌধুরী, উমা ইসলাম, মিনা বড়ুয়া, আলাউদ্দিন তাহের, জুলি শরমিলি, বুলা মোস্তফা, সন্ধ্যা রানী, আবদুর রহিম, বীণাপানি, এম. এ. খালেক, বদরুন্নেসা ডালিয়া, এ. জে. মারুফা বেগম, সাইফুদ্দিন মাহমুদ, পাকিস্তানি শিল্পী নিঘাত সীমা, মুন্নি বেগম ভারতের শ্রাবন্তী মজুমদার প্রমুখ শিল্পীর কণ্ঠে গীত হয়েছে। গীতিকার, নাট্যকার, কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁর অবদান আমাদের শিল্প সংস্কৃতির ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী এম এন আখতার ১৯৮৭ সালে অবসর নেন।
এম এন আখতার কয়েকদিন মৃত্যুরসাথে পাঞ্জা লড়ে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে, ২ মেয়েসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সঙ্গীত ভূবেনে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য জাতি এ গুণী শিল্পীর কাছে ঋণী। এম. এন. আখতার তাঁর সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকবেন কাল থেকে কালান্তরে। আজ এই সঙ্গীত শিল্পীর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী এম এন আখতারের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খানসাব।
আছেন কেমন ?
টুকরা টুকরা মিথ্যা
এখনো বলেন?
মিথ্যা বলা ভালা না !!
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।