নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যাল। কল্লোল’ পত্রিকাগোষ্ঠীর সাহিত্যিকদের মধ্যে যাঁরা প্রথম সারির, প্রবোধকুমার সান্যাল তাঁদেরই অন্যতম। যদিও নিজেকে তিনি ওই গোষ্ঠীর শরিক বলতে একেবারেই পছন্দ করতেন না। কারণ সাহিত্যের গোষ্ঠীতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন না প্রবোধকুমার। মনে করতেন, প্রত্যেক সাহিত্যিকের নিজস্ব একটি ‘প্রতিষ্ঠাভূমি’ থাকে। সেখানেই থাকে তাঁর অনন্যতার পরিচয়। তাঁর এই প্রতিষ্ঠাভূমি ছিল কলকাতা শহর, বাংলার পল্লি ও প্রবাসের জীবন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপীয় সাহিত্যের যে ‘নেতি-প্রত্যয়’ কল্লোলের সাহিত্যিকদের প্রাণিত করেছিল, প্রবোধকুমার সেই প্রভাবকে কাটিয়ে উঠেছিলেন নিজ স্বভাবগুণে। কল্লোল পত্রিকায় তাঁর ‘মার্জনা’ গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৩ সালে। তার পর থেকে তাঁর সাহিত্যসাধনা ‘বিচিত্রপথগামী’ হয়ে উঠেছিল কেবল সাহিত্যশাখার নিরিখে নয়, জীবনের পথ চলার নিরিখেও। চিরপরিব্রাজক প্রবোধকুমার প্রবোধকুমার দেশভ্রমণ পছন্দ করতেন। মাত্র চার বছর বয়সে ভাগলপুরে পিসিমার বাড়ি বেড়াতে যাওয়াই ছিল তার প্রথম বাড়ির বাইরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। পরবর্তীতে তিনি মানস সরোবর, কৈলাস পর্বত ও হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলসহ ছয়বার সমগ্র ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেন। ১৯৩২ এ কেদারবদ্রী ভ্রমণ ও তারপর হৃষিকেশ থেকে পার্বত্য শহর রাণীক্ষেত পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে পরিক্রমণ করেছিলেন ৩৮ দিনে। সেই অভিজ্ঞতার কাহিনী নিয়েই লিখেছিলেন ‘মহাপ্রস্থানের পথে’। তারপর ১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ দীর্ঘ পাঁচ বছর হিমালয় সন্নিহিত নানা স্থান ভ্রমণ করেন, সেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, হিমালয়ের নানান প্রদেশের মানুষের জীবনপ্রণালী আর নানান মানুষের সংস্পর্শে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলেন তাঁর অনন্য সৃষ্টি ‘দেবতাত্মা হিমালয়’। ভারতবর্ষ ও নেপাল ছাড়াও তিনি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়ার বহু অঞ্চল ভ্রমণ করেন। এসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি মহাপ্রস্থানের পথে (১৯৩৭), রাশিয়ার ডায়েরী, দেবতাত্মা হিমালয় (২ খন্ড), উত্তর হিমালয় চরিত প্রভৃতি ভ্রমণকাহিনী রচনা করে বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন। এগুলির মধ্যে প্রথমটি খুবই জনপ্রিয় গ্রন্থ। তিনি ১৯৬০ সালে কলকাতায় ‘হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং ১৯৬৮ সালে হিমালয়ান ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি নরওয়ের পথে উত্তরমেরু ভ্রমণ করেন। আজ সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যালের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮০ সালের এই দিনে তিনি টালিগঞ্জের টেরেসের বাড়িতে তার জীবনাবসান ঘটে। খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যালের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্রবোধকুমার সান্যাল ১৯০৫ সালের ৭ জুলাই উত্তর কলকাতার চোরবাগানে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রাজেন্দ্রনাথ সান্যাল ও মা বিশ্বেশ্বরী দেবী। তাঁদের আদি নিবাস ছিল ফরিদপুরে এবং স্থায়ী নিবাস কলকাতার বালিগঞ্জে। তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ‘কীর্তনীয়া’। চার বছর বয়সে পিতৃহীন হলে সচ্ছল পরিবারটিতে রাতারাতি নেমে এল চরম আর্থিক বিপর্যয়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বিশ্বেশ্বরী দেবী ও তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ। অবস্থা সামাল দিতে দিদিমা দ্রাক্ষাময়ী দেবী গোটা পরিবারকে নিয়ে এলেন শ্যামবাজারে তাঁর নিজের বাড়িতে। মামাদের সংসারে স্থান হল তাঁদের। তিনি মাতুলালয়ে বাল্য ও কৈশোর অতিবাহিত করেন। দিদিমার প্রভাব প্রবোধকুমারের জীবনে অনেকখানি জুড়ে ছিল। স্বাধীনচেতা এই নারীর মধ্যেই প্রবোধকুমার দেখেছিলেন স্বাধীন ভাবে বাঁচার প্রথম প্রকাশ। মা বিশ্বেশ্বরীর কাছে পেয়েছিলেন সাহিত্যপাঠের আস্বাদ। আর বাবা রাজেন্দ্রনাথকে চেনার সুযোগ না হলেও, তাঁর ঘুরে বেড়ানোর শখটি প্রবোধকুমারের মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছিল। চালতাবাগানে রঘুপণ্ডিতের পাঠশালার পাট চুকিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছেন স্কটিশ চার্চ স্কুলে। বিনা বেতনের ছাত্র হিসেবে। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যয়ন করেন তিনি। কর্মজীবনে তিনি হুগলির ডাকবিভাগ ও সামরিক বিভাগের হিসাবরক্ষণ শাখায় চাকরি করেন। অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তিনি কিছুদিন পাবনার গ্রামে অন্তরীণ ছিলেন। তিনি যুগান্তর পত্রিকায় রবিবাসরীয় সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক (১৯৩৭-৪১) ছিলেন এবং স্বদেশ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে একবার রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। কল্লোল যুগের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক হিসেবেই প্রবোধকুমারের প্রধান পরিচয়। তিনি সমকালীন বিজলী, কল্লোল, স্বদেশ, দুন্দুভি, পদাতিক, ফরওয়ার্ড, বাংলার কথা প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং বিজলী, স্বদেশ ও পদাতিক পত্রিকা নিজেই সম্পাদনা করতেন।
ছাত্রজীবন থেকে গল্প লেখা শুরু করলেও তার সেই সময়ের অনেক গল্পই পাওয়া যায় না। ১৯২৩ থেকে ’৭৯ সাল অবধি তাঁর ছোট গল্পের রচনাকাল। এই সাতান্ন বছরে তিনি ২১৪টি গল্প লিখেছেন বলে জানিয়েছেন গবেষক ড. অজিতকুমার ভট্টাচার্য। তাঁর ছোট গল্পে অভিজ্ঞতার বিস্তার যেমন আছে, তেমনই আছে প্রখর বাস্তববোধ। প্রায় দেড়শত গ্রন্থের রচয়িতা প্রবোধকুমার। তাঁর প্রথম উপন্যাস যাযাবর প্রকাশিত হয় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে। পরে তিনি প্রিয়বান্ধবী (১৯৩১), অগ্রগামী (১৯৩৬), আঁকা বাঁকা (১৯৩৯), পুষ্পধনু (১৯৫৬), বিবাগী ভ্রমর, হাসুবানু, বনহংসী, কাঁচ কাটা হীরে, নিশিপদ্ম ইত্যাদি উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ রচনা করেন। তিনি কথাসাহিত্যে নরনারীর দেহজ প্রেম অপেক্ষা বন্ধুত্বপূর্ণ মানবিক সম্পর্কের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এভাবে তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে এক নতুন সমাজ নির্মাণের ইঙ্গিত দেন। একজন পর্যটকের দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর উপন্যাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে; এজন্য তাঁর উপন্যাসে একক জীবন ও চরিত্র অপেক্ষা বিচিত্র জীবন ও চরিত্রের ভিড় লক্ষ করা যায়। বহুবর্ণিল জীবনকথা তিনি সরল অথচ হূদয়গ্রাহী ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। তার কাহিনী অবলম্বনে বহু সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, কাঁচ কাটা হীরে, পুষ্পধনু, প্রিয় বান্ধবী ইত্যাদি। তার শ্রেষ্ঠ রচনা 'মহাপ্রস্থানের পথে' চলচ্চিত্রায়িত হয় ১৯৫২ সালে নিউ থিয়েটার্স এর সৌজন্যে। পরিচালক ছিলেন কার্তিক চট্টোপাধ্যায়। এই সিনেমাটি হিন্দিতে যাত্রিক নামে চলচ্চিত্রায়িত হয়। প্রবোধকুমার দেশভ্রমণ পছন্দ করতেন। তিনি দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে আগ্রায় এবং পরের বছর ব্রহ্মদেশে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া ১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তানে ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং পরের বছর সোভিয়েট রাশিয়ার আমন্ত্রণে তাসখন্দে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় সাহিত্য সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রবোধকুমার তাঁর সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক (১৯১১), শিশির কুমার পুরস্কার, মতিলাল পুরস্কার (১৯১০), শরৎ পুরস্কার এবং আনন্দ পুরস্কার (১৯৮০) লাভ করেন।
(তিন ছেলের সঙ্গে সাহিত্যিক প্রবোধকুমার সান্যাল)
ব্যক্তিগত জীবনে প্রবোধকুমার ১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার বিপিনবিহারী মৈত্রর কন্যা জয়ন্তীকে বিবাহ করেন। সেই বছরেই তাঁদের প্রথম সন্তান বাণীর জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকে প্রবোধকুমারকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন অপরিহার্য সাহিত্যিক। তাঁদের তিন কন্যা ও তিন পুত্রের মধ্যে এক পুত্র অকালে মারা যায়। সন্তান শোকে কাতর হয়েছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। অনেক সময় লেগেছিল সে শোক সামলে উঠতে। তিন মেয়ে ও পুত্র অতনুর বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ১৯৭৯ সালে মধ্যপ্রদেশের বাস্তার জেলার দণ্ডকারণ্য অঞ্চল ঘুরতে গিয়ে জিপ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ফিরে আসেন কলকাতায়। তার পর থেকে দীর্ঘ ছ’মাস তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। সেই দুর্ঘটনায় ডান হাতের আঙুলে আঘাত পাওয়ায় নিজের হাতে আর লিখতেও পারতেন না। ১৯৮৩ সালে ১৭ এপ্রিল আটাত্তর বছর বয়সে ৬, বালিগঞ্জ টেরেসের বাড়িতে সাহিত্যিক প্রবোধকুমার সান্যালের জীবনাবসান ঘটে। মাত্র চার বছর বয়সে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় বারাণসী যাওয়ার পথের সন্ধান করে বেড়ানো সেই শিশুর চলমান জীবনের ইতি হয় ৭৪ বছর বয়সে। আজ সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যালের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যালের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সরকারের আদেশ মানতে হয়।
মসজিদ থেকে ঘোষণা দেওয়া
হয়েছে সরকারী নির্দেশ মেনে
আপনারা বাসায় ওয়াক্তিয়া
নামাজ আদায় করুন।
২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০১
বিজন রয় বলেছেন: খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যালের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ধন্যবাদ নূরু ভাই।
১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ বিজন দাদা
খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও
পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যালের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
জুম্মার নামাজ কি বাসায় পড়লেন??