নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ডিএনএ গবেষক রোজালিণ্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন একজন ইংরেজ অণুজীববিজ্ঞানী এবং ভৌত রসায়নবিদ। ডিএনএ, ভাইরাস, কয়লা এবং গ্রাফাইট এর গঠন-কাঠামো বোঝার ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৫৩ সালে ডিএনএ'র গঠন-কাঠামো আবিষ্কারের পিছনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্যেই তিনি সর্বাধিক পরিচিতি পান। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জাল ভেদ করে যে সকল মহিয়সী নারী তাদের কর্মগুণে সামনে চলে এসেছেন, তাদের মধ্যে ডিএনএ গবেষক রোজালিণ্ড ফ্রাঙ্কলিনের কথা অবশ্যই উল্লেখ যোগ্য। যারা তাদের পুরুষ সহযোগীদের সঙ্গে একনিষ্ঠচিত্তে কাজ করেছেন। অথচ ওই সহযোগীরাই এক সময় তাদের অবদানকে ক্রমশ অবমূল্যায়নের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে। কৃতকর্মের প্রাপ্য সম্মান থেকে করেছে বঞ্চিত। এমনই এক ঘটনার শিকার অণুজীববিজ্ঞানী এবং ভৌত রসায়নবিদ রোজালিণ্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিন। তার মতো আর কোন নারী-বিজ্ঞানীর জীবন এতটা বিতর্কিত এবং কর্মমুখর ছিল না। রোজালিণ্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিন ১৯৫৮ সালের আজকের দিনে জরায়ুর ক্যান্সার জনিত কারনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী। নোবেল বঞ্চিত নারী বিজ্ঞানী রোজালিণ্ড ফ্রাঙ্কলিমৃত্যুদিনে তাঁর জন্য আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
অণুজীববিজ্ঞানী এবং ভৌত রসায়নবিদ রোজালিণ্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিন ১৯২০ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে লন্ডনের একটি সচ্ছল ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৫ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করার পর একজন গবেষণা সহকারী হিসেবে লন্ডনের কিংস কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে একটি গবেষণাগারে কাজ করেন। এখানেই তিনি রঞ্জনরশ্মি বিচ্ছিন্নকরণ কৌশল শিখেছিলেন, এবং কেলাসতত্ত্ববিদ জ্যাকস মিরিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে গবেষণা করেছিলেন। পরবতীতে নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে থাকেন নিত্য-নতুন গবেষণা সংক্রান্ত ধারণা প্রদানের মাধ্যমে। খুব সাধারণ কিছু সরঞ্জাম নিয়ে ফ্রাঙ্কলিন ডিএনএর একক তন্তুর উচ্চ বিশেষণীয় ফটোগ্রাফ নেয়ার জন্য একটি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। ১৯৫৩ সালে ডিএনএর গঠন-কাঠামো আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ডিএনএ, ভাইরাস, কয়লা এবং গ্রাফাইটের গঠন-কাঠামো সংক্রান্ত গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য রোজালিণ্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিনকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।
লন্ডনের কিংস কলেজে এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি নিয়ে গবেষণা করতেন রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন আর মরিস উইলকিন্স। কিংস কলেজে উইলকিন্স আর রোজালিন্ড মিলে শুরু করেন এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফির কাজ, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা শুরু হয়। রোজালিন্ড যেমন ছিলেন তথ্য-সন্ধিৎসু, উইলকিন্স ছিলেন ঠিক উলটো। উইলকিন্স কাল্পনিক মডেল বানিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে মেলাতে চেষ্টা করতেন। ডাবল হেলিক্স আবিষ্কারের আসল কাহিনী শুরু হয় ১৯৫২ সালে, রোজালিন্ডের সেমিনারের মধ্যে দিয়ে। আর এই সেমিনারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ওয়াটসনের মুখে শুনেই নতুন উদ্যমে ডিএনএর খসড়া ছবি আঁকা শুরু করেন ক্রিক। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া এক্সরে ছবি দেখে ও তার সাথে প্রাপ্ত ঘনত্ব ও আকৃতির সাদৃশ্য থেকে ক্রিক প্রস্তাব করলেন ডিএনএর প্রথম মডেল।
(ডিএনএর প্রথম মডেল)
ডিএনএ কি? ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) একটি নিউক্লিক এসিড যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রনের জিনগত নির্দেশ ধারন করে। সকল জীবের ডিএনএ জিনোম থাকে। একটি সম্ভাব্য ব্যতিক্রম হচ্ছে কিছু ভাইরাস গ্রুপ যাদের আরএনএ জিনোম রয়েছে, তবে ভাইরাসকে সাধারণত জীবন্ত প্রাণ হিসেবে ধরা হয় না। কোষে ডিএনএর প্রধান কাজ দীর্ঘকালের জন্য তথ্য সংরক্ষন। জিনোমকে কখনও নীলনকশার সাথে তুলনা করা হয় কারণ, এতে কোষের বিভিন্ন অংশে যেমনঃ প্রোটিন ও আরএনএ অণু, গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী থাকে। ডিএনএর যে অংশ বংশগতি তথ্য বহন করে তাদের বলে জিন, কিন্তু অন্যান্য ডিএনএ ক্রমের গঠনগত তাৎপর্য রয়েছে অথবা তারা জিনগত তথ্য নিয়ন্ত্রনে ব্যবহৃত হয়। ইউক্যারিয়ট যেমন প্রাণী ও উদ্ভিদে , ডিএনএ নিউক্লিয়াসের ভিতরে থাকে, তবে প্রোক্যারিয়ট যেমন ব্যাকটেরিয়াতে, ডিএনএ কোষের সাইটোপ্লাজমে থাকে। উৎসেচকের মত ডিএনএ অধিকাংশ জৈবরসায়ন বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয় না; মূলত, বিভিন্ন উৎসেচক ডিএনএর উপর কাজ করে এর তথ্য নকল করে রেপ্লিকেশনের মাধ্যমে আরো ডিএনএ তৈরি করে। ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিন প্রোটিন যেমন হিস্টোন ডিএনএকে ঘনসন্নিবেশিত ও সংগঠিত করে, যা নিউক্লিয়াসের অন্যান্য প্রোটিনের সাথে এর আচরণ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
(রোজালিন্ড এর পাওয়া ডিএনএর এক্সরে ডিফ্র্যাকশন প্যাটার্নের ছবি)
ডিএনএ নিয়ে এত এত আলোচনা, কি কাজ করে এই ডিএনএ? এর গুরুত্বই বা কি? আমাদের কৌতুহলী মনে প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে খুব সহজেই অল্প কথায় এর গুরুত্ব নিয়ে বলা যাক, ডিএনএ একমাত্র উপাদান যা দেহের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে ক্রোমোজোম এর ভেতরে কি ধরণের প্রোটিন তৈরি হবে তা ডিএনএ নির্ধারণ করে। এসব প্রোটিনের মাধ্যমেই সকল শারীরবৃত্তীয় কাজ সংঘটিত হয়। ডিএন-র আরেকটি কাজ হচ্ছে রেপ্লিকেশন তথা সংখ্যাবৃদ্ধি। ডিএনএ নিজের হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, ডিএনএ ই যেহেতু জীবনের মূল তাই আরেকটি প্রতিলিপি তৈরি হওয়ার অর্থই আরেকটি জীবন তৈরি হওয়া, এভাবেই জীবের বংশবৃদ্ধি ঘটে। মোটকথা ডিএনএ জীবনের মৌলিক একক এবং কার্যকরি শক্তি, সেই জীবের সকল কাজকর্ম পরিচালনা করে এবং তার থেকে আরেকটি জীবের উৎপত্তি ঘটায়। ডিএনএ-র মধ্যে তাই জীবের সকল বৈশিষ্ট্য ও বংশবৃদ্ধির তথ্য জমা করা থাকে। ডিএনএ-র মধ্যে থাকে জিন, জিনের সিকোয়েন্সই জীবদেহের সকল তথ্যের ভাণ্ডার। এজন্য ডিএনএ কে জীবনের নীল নকশা ও বলা হয়।
রোজালিণ্ড ফ্রাঙ্কলিনের এই কেলাস সম্পর্কিত কাজ ওয়াটসন, ক্রিক ও উইলকিনস কর্তৃক উপস্থাপিত ডাবল হেলিক্স মডেলের পরীক্ষামূলক সমর্থন জুগিয়েছিল। অথচ জেমস ওয়াটসন, ফ্রানসিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিনসকে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স গঠনের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হলেও রোজালিণ্ড ফ্রঙ্কলিনকে এই অমূল্য কাজের জন্য কোন কৃতিত্ব প্রদান করা হয়নি।
(জেডি ওয়াটসন এবং এফএইচসি ক্রিক ডিএনএর রাসায়নিক গঠন আবিষ্কারের দুই পথিকৃৎ)
তাঁর এই আবিষ্কারের কল্যাণে ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক আর উইলকিন্স একসঙ্গে নোবেল পুরস্কার পেলেছিল ১৯৬২ সালে। ততদিনে অকালপ্রয়াত হয়েছেন আরেক সহযোগী রোজালিণ্ড ফ্রাঙ্কলিন। তবে এই ঘটনা স্বীকার করে ওয়াটসন বলেছিলেন, 'নোবেল পুরস্কারের অলিখিত নিয়ম হলো একসঙ্গে তিনজনের বেশি প্রাপককে বিবেচনা করা হয় না। ফ্রাঙ্কলিন বেঁচে থাকলে তাকে না উইলকিন্সকে নোবেল দেয়া হবে তা নিয়ে বিতর্কই সৃষ্টি হতো। তবে নোবেল কমিটি হয়তো তাদের দুজনকে যুগ্মভাবে রসায়নে নোবেল দিতে পারতেন। তার জায়গায় রসায়নের নোবেল গেল একই ইনস্টিটিউটের ম্যাক্স পেরুজ আর জন কেন্ড্রুর কাছে মায়োগ্লোবিন আর হিমোগ্লোবিনের গঠন কাঠামো ব্যাখ্যা করার জন্য। আর এই কাজের জন্য প্রথমে আমি আর ফ্রান্সিস ক্রিক কাজ শুরু করেছিলাম'।
উল্লেখ্য, নারীদের হাতেই ১৫ থেকে ২০ হাজার বছর আগে কৃষিকাজের সূচনা হয়। সমাজকে মৃৎপাত্র তৈরির রাসায়নিক প্রক্রিয়া, সুতা কাটার পদার্থবিদ্যা, তাঁতের প্রযুক্তি এবং শন ও তুলার উদ্ভিদবিদ্যার জ্ঞানদানের কৃতিত্ব শুধুমাত্র নারীদের। নারীরাই প্রথম চিকিৎসক, শিল্পী এবং প্রকৌশলী। নিজ বাসগৃহে তারা তৈরি করেছে বিজ্ঞান গবেষণাগার। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা বঞ্চিত হচ্ছে নানাভাবে। আজ এই ভাগ্যহত মহিয়সী নারীর ৬১তম মৃত্যুবাষিকী আজ। ১৯৫৮ সালের ১৬ এপ্রিল জরায়ুর ক্যান্সার জনিত কারনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নোবেল বঞ্চিত নারী বিজ্ঞানী রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সূত্রঃ Bio.true story
লিংকঃ রোজালিণ্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিনের জন্ম বৃত্তান্ত
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আল্লাহ পরম যত্ন করে তার বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহর ইচ্ছা নয় তিনি তার প্রিয় বান্দদের কষ্ট দেন।
তবে অতি যত্নে গড়া তার বান্দারা যখন তার নাফরমানি
ও তার আদেশ নির্দেশ ভুলে পাপকার্যে লিপ্ত হয় তখন
বান্দাদের সুপথে ফিরিেযে আনবার জন্য শাস্তি প্রদান
করেন। বান্দা যখন তার ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে
ক্ষমা চা্ইবেন তখনই তিনি তার ক্ষমার হস্ত প্রসারিত
করবেন। এই কথা বিশ্বাস করতে হবে দৃঢ় ভাবে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী আল্লাহ কবে আমাদের এই ভাইরাস থেকে মুক্তি দিবেন?
মানলাম দুনিয়ার মানুষ পাপে নিম্মজিত হয়ে। তাই আল্লাহ গজব দিয়েছেন। কিন্তু এই গজবে ছোট ছোট কত শিশু আছে, বুড়ো বাবা মা আছেন তাদের কেন এই গজবের শিকার হবেন? এটা কেমন বিচার??