নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ষাটের দশকের অন্যতম কবি সাযযাদ কাদির। বহুমাত্রিক লেখক কবি সাযযাদ কাদির একাধারে গবেষক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিকহিসেবে পরিচিত। ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইলে শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতৃস্থানীয় সংগঠক, ১৯৬৯-এর গণ অভ্যূত্থানের অন্যতম রূপকার ও সংগঠক, ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক সংগঠক ছিলেন তিনি। এজন্য পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী এবং বন্দী শিবিরে নৃশংসভাবে তিনি নির্যাতিত হন। পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে প্রায় ২ মাস সকাল-বিকাল থানায় হাজিরা দিতে হতো কবিকে। তারপর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাসাইলের ফুলকি-ঝনঝনিয়ায় তিনি পালিয়ে যান। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর (বীর উত্তম) ভাষায়, ‘আমি একদল কবি-সাহিত্যিক পেয়েছিলাম, যারা অস্ত্র হাতে তেমন যুদ্ধ না করলেও যোদ্ধাদের অস্ত্র শানিত করেছেন নানা ভাবে। যুদ্ধের প্রেরণা যুগিয়েছে পদে পদে। তার মধ্যে রফিক আজাদ, বুলবুল খান মাহবুব, মাহবুব সাদিক, সাযযাদ কাদির, আবু কায়ছার অন্যতম। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধুর হাতে আমরা অস্ত্র তুলে দিলে পূর্বদেশে কাদেরিয়া বাহিনীর এক বিরাট ক্রোড়পত্র ছাপা হয়েছিল। সেখানে মূল চালিকা শক্তি ছিলেন কবি রফিক আজাদ আর সাযযাদ কাদির। যাঁরা একই সঙ্গে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়ে কাজ করেন। তাদের ক্ষেত্রে চিহ্নিত হওয়ার একটি সমস্যা থেকেই যায়। সাযযাদ কাদিরের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি একই সঙ্গে গদ্য-পদ্য দু’শাখাতেই নিজের স্বাচ্ছন্দ্য দেখিয়েছেন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ কোনও শাখাতেই তাঁর উপস্থিতি অনুজ্জ্বল নয়। কবির জন্য গদ্য রচনা বিড়ম্বনার এমন ধারণা থাকলেও, সাযযাদ কাদিরের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি গদ্য ভাষায় যেমন তেমনি কবিতাতেও নিজের স্বাতন্ত্র্য জানান দিতে সক্ষম হয়েছেন। গদ্য রচনার আড়ম্বরে তাঁর কবি পরিচয় হারিয়ে যায়নি। প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি কবি, কবিই। তাই তাঁর কবিতায় মিশে আছে প্রত্যয়। আজ কবি সাযযাদ কাদিরের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে তিনি টাঙ্গাইল জেলার মিরের বেতকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের দশকের বহুমাত্রিক লেখক কবি সাযযাদ কাদিরের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
সাযযাদ কাদিরে ১৯৪৭ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার মিরের বেতকা গ্রামে তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার। তার স্থায়ী আবাস টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায়। ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনি হাইস্কুল থেকে মানবিক শাখায় এসএসসি পাস করেন সাযযাদ কাদির। আর এইচ, এসসি (ইন্টারমিডিয়েট) পাস করেন ১৯৬৬ সালে। এছাড়া ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। কর্মজীবনে সাযযাদ কাদির সাযযাদ কাদির ১৯৭২ সালে টাঙ্গাইল করোটিয়ার সা’দত কলেজের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কলেজের চাকরি ছেড়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। সাংবাদিকতা জীবনে সাযযাদ কাদির কাজ করেছেন রেডিও বেইজিং, দৈনিক সংবাদ, মানবজমিন ও দিনকালে। এর আগে ১৯৬৮ সালে মাসিক বিচিত্রায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ইতোপূর্বে মাসিক কণ্ঠস্বর-এর সহকারী সম্পাদক (১৯৬৬-৬৭) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচিত্রার সহকারি সম্পাদক (১৯৭১-৮৫, সাপ্তাহিক আগামী, পাক্ষিক তারকালোক, মাসিক কিশোর তারকালোক, মাসিক নিরিবিলি-এর সম্পাদক (১৯৮৫-৯২), দৈনিক দিনকাল-এর বার্তা/ফিচার সম্পাদক (১৯৯২-’৯৫) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট-এর সহযোগি সম্পাদক (প্রকাশনা ও ফিচার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কবি সাযযাদ কাদির বিটিভিতে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান তাৎক্ষণিক (১৯৮২), প্রত্যয় (১৯৮৭), শানিত সংকল্প (১৯৯২) রচনাও পরিচালনা করেছেন। ১৯৬৬ সাল হতে রেডিও টিভির অজ¯্র অনুষ্ঠান রচনা পরিচালনা ও উপস্থাপনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ডেস্কটপ পাবলিকেশনে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন ১৯৮৭ সালে। গণচীনের রেডিও পেইচিং-এর ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সাহিত্য চিন্তা, আয়োজক বুধ সন্ধ্যা-এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও সভাপতি ছিলেন তিনি।
সাযযাদ কাদির শুধু মাত্র কবিতাই নয় গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ-গবেষণা, শিশুতোষ, সম্পাদনা, সঙ্কলন, অনুবাদ সহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ যথেচ্ছ ধ্রুপদ (১৯৭০) - কাব্যগ্রন্থ চন্দনে মৃগপদচিহ্ন (১৯৭৬) - গল্পগ্রন্থ, লাভ স্টোরি (১৯৭৭) - অনুবাদ, রাজরূপসী, প্রেমপাঁচালী, হারেমের কাহিনী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধসমগ্র - সংকলন, বেগম রোকেয়া প্রবন্ধসমগ্র - সংকলন, পৃথিবীর প্রিয় প্রণয়ী, অপর বেলায় - উপন্যাস, অন্তর্জাল (২০০৮) - উপন্যাস, রবীন্দ্রনাথ : শান্তিনিকেতন (২০১২) - গবেষণা, রবীন্দ্রনাথ : মানুষটি (২০১২) - গবেষণা, নারীঘটিত (২০১২) - প্রবন্ধ, খেই (২০১২) - উপন্যাস., বৃষ্টিবিলীন (২০১২) কাব্যগ্রন্থ, আমার ভুলবাসা (২০১৭) কাব্যগ্রন্থ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাযযাদ কাদির শত শত জনের চেয়ে সাহিত্যে সংস্কৃতিতে বিরাট অবদান রাখার পরও স্বাধীনতা পুরস্কার এবং একুশে পদক পাননি। এছাড়া এর বাইরে স্বীকৃতি, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্ন পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। একুশে স্মৃতি স্বর্ণ পদক ১৯৯৪ (সাহিত্যে), কবি জসিম উদ্দীন পুরস্কার ১৪০৪ (কবিতায়), শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া স্বর্ণপদক ১৯৯৫ (শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব), নন্দিনী ২০০১ ( শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সমগ্রও কবিতা), কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার ২০০২, টাঙ্গাইল জেলা সমিতি কর্তৃক প্রদত্ত সৈয়দ আব্দুল মতিন স্বর্ণপদক ২০০২ (সাহিত্যে); জাতীয় প্রেসক্লাব সংবর্ধনা ২০০৩, টিভি সাংবাদিকতার প্রবর্তক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ট্রাব এওয়ার্ড ২০০৩। (লাইফ টাইম এচিভমেন্ট ভিত্তিক এওয়ার্ড, সম্মাননা ও সংবর্ধনা, সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমী ২০০৪সহ আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কবি। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল বেলা দুইটার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন কবি সাযযাদ কাদির। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। আজ কবি সাযযাদ কাদিরের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। ষাটের দশকের বহুমাত্রিক লেখক কবি সাযযাদ কাদিরের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ খাদকসাব।
আজ নববর্ষে মেনু কি ছিলো?
২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উনি মনে হয় কোনও দলকেই খুশি করতে পারেননি তাই। বড় স্বীকৃতি পাননি। কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকির লেখায় ওনার নাম পেয়েছি।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে সাড়ে চুয়াত্তর
আপনার বক্তব্য সত্যি হলেও হতে পারে।
আমাদের দেশে এ খেলাতো চলে্ই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।