নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মেমসাহেব উপন্যাসের অমর স্রষ্টা নিমাই ভট্টাচার্য। যিনি বৈচিত্র্যময় জীবনের শূন্য থেকে শুরু করে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছেন। একাধারে প্রখ্যাত সাংবাদিক, অন্যদিকে খ্যাতিমান লেখক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য রচনা করেছেন অন্তত তিন ডজন বই। নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা উপন্যাসগুলোতে বিষয়গত বৈচিত্র্যতার ছাপ প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো উপন্যাসে তিনি রাজধানীর অন্দর মহলের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা অভিজাত সমাজের কুৎসিত রূপের চিত্র তুলে ধরেছেন। কোথাও নীচু তলার মানুষের সুখ-দুঃখের জীবন কাহিনী চিত্রিত করেছেন। তার লেখায় কোথাও কোথাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদও লক্ষ্য করা যায়। আবার অনেক উপন্যাসে সোনালী আনন্দ দিনের বিলাপ লক্ষ্যণীয়। তার লেখা বইগুলো নানাভাবে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। তবে তাকে মনে রাখার জন্য একটি মাত্র বই-ই যথেষ্ট। সেটি ‘মেমসাহেব’। ‘মেমসাহেব-রিপোর্টার বাচ্চু’ দুটি চরিত্র। এই ‘মেমসাহেব’র জন্যই বাংলার তরুণ সমাজের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ‘রিপোর্টার’ নিমাই ভট্টাচার্য। শুধু চিরস্মরণীয় বললে ভুল বলা হবে, বরং মেমসাহেবে সাংবাদিকতার যে চ্যালেঞ্জিং ও বৈচিত্র্যময় জীবনকাব্য তুলে ধরা হয়েছে তাতে আকৃষ্ট হয়ে আজও তরুণ সমাজ এ পেশার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। ব্হুল পঠিত উপন্যাস ‘মেমসাসেহব’-এর আলোচিত মেমসাহেব চরিত্রটি একেবারেই কাল্পনিক বলে জানালেন বইটির লেখক নিমাই ভট্টাচার্য। তার মতে, ‘রিপোর্টার’ যেমন একটি বই, ‘মেমসাহেব’ও তেমনি একটি। পাঠক পড়ে যেটা ভাববে সেটাই আসল কথা। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসটি এ বছর প্রকাশের ৫২ বছর। তার ৩৫ বছর বয়সে তিনি বইটি লিখেছিলেন। আজ প্রতিভাধর এই লেখকের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে তিনি তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় বাঙালি লেখক নিমাই ভট্টাচার্যের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুরেন্দ্রনাথ এক সময় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ও পরবর্তীতে শিক্ষক ছিলেন। তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহীন হন। বাবার সীমিত আয়ে অকল্পনীয় দুঃখ কষ্ট অভাব-অভিযোগের মধ্যে ভর্তি হলেন কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি স্কুলে। কলকাতা রিপন স্কুলে কিছুদিন তিনি পড়াশুনা করার পর যশোরে ফিরে আসেন। খ্যাতিমান এ মানুষটির শৈশব, কৈশোরের অনেকটা বছর কেটেছে বৃহত্তর যশোরে। ১৯৪১ সালে যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং নবম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পড়াশুনা করেন। দেশ বিভাগের পর নিমাই ভট্টাচার্য বাবার সঙ্গে পূর্ববঙ্গ থেকে কলকাতায় চলে যান এবং পুনরায় কলকাতায় রিপন স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং রিপন কলেজ থেকে আইএ উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে তিনি ওই কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি কলকাতায় বসবাস করছেন। জীবনের টানে, জীবিকার গরজে কক্ষচ্যূত উল্কার মতো এশিয়া-আফ্রিকা ইউরোপ- আমেরিকা, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর ঘুরে বেড়িয়েছেন নিমাই ভট্টাচার্য। দারিদ্রতা নিমাই ভট্টাচার্যকে পরাভূত করতে পারেনি। ক্ষয় করতে পারেনি তার সৃষ্টিশীল প্রতিভাকে। পরম উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভাগ্যের সঙ্গে পাঞ্জা কষেছেন তিনি। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার কর্মজীবন শুরু হয়। কিন্তু প্রথম অবস্থায় সেখানেও তিনি ভাগ্যের বিড়ম্বনার শিকার হন। বাংলাদেশ স্বাধীনের কয়েক বছর পর দিল্লিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন নিমাই ভট্টচার্য। তিনি সেসময় বঙ্গবন্ধুকে ডিপ্লোম্যাটসহ চারটি বই উপহার দিয়েছিলেন। ‘‘সেসময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের লেখক-সাহিত্যিকদের অবদান বিরাট।’’
সাংবাদিকতার মাধ্যমেই নিমাই ভট্টাচার্য তার কর্মজীবন শুরু করেন। সাংবাদিকতা নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্য চিন্তা তার জীবনচর্চার একান্ত অনুগামী হয়ে দেখা দেয়। ১৯৬৩ সালে তার লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যামোদীদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ‘রাজধানী নৈপথ্য’ রিপোর্টার. ভিআইপি এবং পার্লামেন্ট স্টীট নামক চারটি উপন্যাস ওই একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য পূর্ণোদ্যমে আরো উপন্যাস লেখা শুরু করেন। নিমাইয়ের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫০ -এর অধিক। তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলঃ
‘মেমসাহেব’, ‘ডিপ্লোম্যাট’, ‘মিনিবাস’, ‘মাতাল’, ‘ইনকিলাব’, ‘ব্যাচেলার’, ‘ইমনকল্যাণ’, ‘ডিফেন্স’, ‘কলোনী’, ‘প্রবেশ নিষেধ’, ‘কেরানী’, ‘ভায়া ডালহৌসী’, ‘হকার্স কর্নার’, ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘নাচনী’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’, ‘ডার্লিং’, ‘ম্যাডাম’, ‘ওয়ান আপ-টু-ডাউন’, ‘গোধুলিয়া’, ‘প্রিয়বরেষু’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘মোগল সরাই জংশন’, ‘ইওর অনার’, ‘ককটেল’, ‘অনুরোধের আসর’, ‘যৌবন নিকুঞ্জে’, ‘শেষ পরানির কড়ি’, ‘হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স’, ‘পথের শেষে’ প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যে মেমসাহেব উপন্যাসটি তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা। মেমসাহেব গ্রন্থ অবলম্বনে ১৯৭২ সালে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার এবং অপর্ণা সেন।
(লেখক নিমাই ভট্টাচার্য ও তার সহধর্মীনি দীপ্তি ভট্টাচার্য)
ব্যক্তিগত জীবনে নিমাই ভট্টাচার্য বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। পাঁচ বছর আগে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের কারণে শরীরের একাংশ অবশ হয়ে যাওয়ার পর থেকে লেখালেখি একেবারেই বন্ধ নিমাই ভট্টাচার্যের। লিখতে না পারার আফসোস রয়েছে তার। তিনি বলেন, লিখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারছি না। লেখালেখি জীবন নিয়ে তৃপ্ত কি না জানতে চাইলে নিমাই ভট্টচার্য বলেন, কিছু লিখে তৃপ্ত হলেও আরও অনেক লেখা উচিত ছিল বলে এখন এসে মনে হয়। আজ প্রতিভাধর এই লেখকের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। ভারতীয় বাঙালি লেখক নিমাই ভট্টাচার্যের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১১ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে খানসাব
পড়তে থাকুন, আর মুগ্ধ হতে থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: তার অই আমি আজও ্মুগ্ধ হয়ে পড়ি।