নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিঃদ্রঃ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের নাজুক পরিস্থিতিতে গুজব ও ভুল খবর থেকে সতর্ক হোন
মানবতাবাদী ও স্বাধীনচেতা কূটনৈতিক এবং জাতিসংঘের প্রথম কৃঞ্চাঙ্গ ও সপ্তম মহাসচিব কফি আনান। ইরাক যুদ্ধের শুরু থেকেই কফি আনান নামটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি পেতে থাকে। যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের এপাড়-ওপাড় দৌড়ঝাপসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও যুক্তরাষ্ট্র সব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরাক আক্রমণ করে। তখন জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ এ মহাসচিব। জাতিসংঘের আর কোনো প্রেসিডেন্ট জনপ্রিয়তায় তাকে ছাড়িয়ে গেছেন বলে এখনও পর্যন্ত কেউ দাবি তুলেননি। কেবল মহাসবিচ থাকাকালেই নয়, পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার রক্ষায় গড়ে তুলেন আনান কমিশন। বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন কফি আনান। কেনিয়ার রাইলা ওডিঙ্গা ও মাওয়াই কিবাকির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতেও মধ্যস্থতা করেছিলেন কফি আনান। সিরিয়া যুদ্ধে তাকে বিশেষ দূত নিয়োগ দেয় জাতিসংঘ ও আরব লিগ। এ ছাড়া মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গঠিত আন্তর্জাতিক কমিশনের নের্তৃত্ব ছিলেন আনান। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার সুপারিশ করা এ কমিশন পরিচিতি পায় ‘আনান কমিশন’ হিসেবে। তিনি কফি আনান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন দা এল্ডারস-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। আনান ২০০১ সালে জাতিসংঘের সাথে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, জাতিসংঘের পুনরুজ্জীবন এবং মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা। তাছাড়া আফ্রিকায় এইচআইভি ভাইরাস মোকাবেলা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকেও নোবেল কমিটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখে। ৮০ বছর বয়সে তিনি পৃথিবী চেড়ে চলে যান। আজ মানবতাবাদী কূটনৈতিক এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে তিনি আফ্রিকার ঘানায় জন্মগ্রহণ করেন। মানবতাবাদী ও স্বাধীনচেতা এক কূটনৈতিক কফি আনানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
কফি আনান ১৯৩৮ সালের ৮ এপ্রিল আফ্রিকার ঘানার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কুমাসিতে সবেচেয়ে প্রভাবশালি ফান্টে পরিবারে (যারা ঐতিহ্যগতভাবে গোত্রপ্রধান ছিলেন) জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা ও নানা দুইজনই উপজাতীয় এলাকার ওই গোষ্ঠীটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছোটো বেলা থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার সব গুণ তার মধ্যে দেখা যায়। শুক্রবারে জন্ম গ্রহণ করায় তার নাম রাখা হয় আন্নান। ওই উপজাতি আন্নান শব্দটি সৈন্য হিসেবে ব্যবহার করতো। আনানের বাবা ছিলেন দেশটির একজন প্রাদেশিক গভর্নর। কফি আনানের স্কুলিং শুরু হয় কেপ কোস্টের মেথোডিস্ট বোর্ডিং স্কুলে আনানের মতে যেখান থেকে তিনি শিখেছিলেন – “suffering anywhere concerns people everywhere”। আনানের সারা জীবনের কর্ম এবং দর্শনে এই শিক্ষার যথার্থই প্রতিফলন হয়েছে বলা যায়। ১৯৫৮ সালে ঘানার কাউমি নক্রুমা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে অর্থনীতি পড়ার জন্য ভর্তি হন।পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকালেস্টার কলেজে গমন করেন এবং সেখান থেকে স্নাতক সমাপ্ত করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬২ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গ্রাজুয়েট ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিজ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭১-৭২ সালে তিনি এমআইটি’র স্লোয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের ‘স্লোয়ান ফেলো’ প্রোগ্রামের অধীনে ম্যানেজমেন্টে মার্স্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাজেট অফিসার হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ এই দুই বছর তিনি ঘানার পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি জেনেভাস্থ জাতিসংঘ রিফ্যুজি কমিশনের পার্সোনেল প্রধান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউ ইয়র্কে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন দায়িত্বে কর্মরত থেকে ১৯৯৭ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে জাতিসংঘের সপ্তম মহাসচিবের দ্বায়িত্ব নেন কফি আনান।
জাতিসংঘের সঙ্গে চার দশক কাজ করেছেন কফি আনান। বিশ্ব সংস্থাটির কর্মীদের মধ্যে তিনিই প্রথম মহাসচিব হয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, জাতিসংঘের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ মহাসচিবও তিনি। ১৯৯৭ সালে মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর কফি আনান জাতিসংঘের সংস্কার এবং মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে উদ্যোগী হন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তাঁকে ও জাতিসংঘকে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ওই বছরই তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। আত্মজীবনী ‘ইন্টারভেনশনস: আ লাইফ ইন ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এ কফি আনান লিখেছেন, জাতিসংঘকে এমনভাবে তিনি গড়তে চেয়েছিলেন, যাতে বিশ্ব সংস্থাটি কেবল সদস্যরাষ্ট্রগুলোর নয়, জনগণের স্বার্থ দেখবে। জাতিসংঘের মহাসচিব থাকাকালে ইরাক যুদ্ধ ও এইডস মহামারি- এ দুটি সংকটে পড়েছিল বিশ্ব। মহাসচিব থাকা অবস্থায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন আনান। দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই তিনি জাতিসংঘকে পুনর্গঠনের জন্য সুপারিশ করেন। ২০০৫ সালের সাধারণ সভায় তিনি সিকিউরিটি কাউন্সিল বিবর্ধিতকরণের সুপারিশ করেন। তাছাড়া আনান প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ যেটিকে সংক্ষেপে এমডিজি গোল বলে আখ্যায়িত করা হয়। ২০০৩ সালে ইরাকে যৌথ বাহিনীর আগ্রাসন নিয়ে স্পষ্টভাষী ছিলেন আনান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে আহ্বান জানিয়েছিলেন যাতে জাতিসংঘের সম্মতি ছাড়া ইরাকে আগ্রাসন না চালান। ২০০৪ সালে মহাসচিব থাকা অবস্থায়ই বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরাক যুদ্ধকে জাতিসংঘের চার্টারের সাথে সাংঘর্ষিকে এবং অবৈধ যুদ্ধ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদের জেরে অবশেষে ২০০৬ সালে পদত্যাগ করেন।
(কফি আনানের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ন্যানে)
ব্যক্তিগত জীবনে কফি আনান ১৯৬৫ সালে এক নাইজেরীয় অভিজাত বংশের নারী তিতি আলাকিজাকে বিয়ে করেন। কয়েক বছর পর তাদের মেয়ে আমা এবং পরে ছেলে কোজো জন্মগ্রহণ করে। ১৯৭০'র দশকের শেষদিখে তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন এবং ১৯৮৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালে আনান জাতিসংঘের সুয়েডীয় আইনজীবী নেন লাগেরগ্রেনকে বিয়ে করেন।নেনের আগের স্বামীর সাথে নিনা নামে এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালের ১৮ই আগস্ট সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে সামান্য অসুস্থতার পর কফি আনান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিেলো ৮০ বছর। আদিবাসি থেকে জাতিসংঘ , নোবেল আর এপৃথিবীর জন্য রেখে যান তার একবুক ভালোবাসা। ন্যাটোর প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ ব্যক্তিগত টুইটে লিখেন, ‘কফি আনান মারা গেছেন, এটা শুনতে পাওয়া অত্যন্ত শোকের ব্যাপার। তাঁর সৌহার্দ্যকে কখনোই দুর্বলতা হিসেবে ভাবা উচিত হবে না। আনান দেখিয়ে গেছেন, একই সময়ে মহান মানবিক ও শক্তিশালী নেতা হওয়া যায়। জাতিসংঘ ও বিশ্ব তাদের এক অনন্য সম্পদকে হারাল। এ কথা বলার অপক্ষো রাখেনা যে কফি আনান সুন্দর পৃথিবী গড়তে অক্লান্ত চেষ্টা করে গেছেন আজ মানবতাবাদী কূটনৈতিক এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী। মানবতাবাদী ও স্বাধীনচেতা এক কূটনৈতিক কফি আনানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাকীটা রয়েছে আপনার জন্য!!
আপনি আর আপনার গুরু
মিলে তার অসমাপ্ত কাজগুলো
সমাপ্ত করে স্বর্ণাক্ষরে আপনাদের
নাম লিখাতে পারেন।
২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৪
মৃন্ময়ী শবনম বলেছেন: কফি আনান বড় ভালো মানুষ ছিলেন। আদিবাসি মানুষ সাধারণত ভালো মানুষ হয়ে থাকেন, আমার বাবা আদিবাসিদের খুব পছন্দ করেন, দেশে বিদেশে তার প্রচুর প্রিয় মানুষ আছেন আদিবাসিতে।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ মৃন্ময়ী শবনম।
সম্ভবত আমার ব্লগে এই প্রথম !
আপনাকে স্বাগত জানাই ।
মন্তব্য ভালো লেগেছে।
আপনার বাবাকে
ধন্যবাদ তার
মহানুভবতার
জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০১
রাজীব নুর বলেছেন: কফি আনান ভালো লোক। তবে তার আরো বেশি কাজ করার দরকার ছিলো।