নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশ্ববিখ্যাত যন্ত্রশিল্পী ও বাংলাদেশের সুহৃদ পণ্ডিত রবিশঙ্করের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা (৭ এপ্রিল)

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৩


পাশ্চাত্যের সঙ্গীতের তুলনায় ভারতীয় রাগসঙ্গীত যে অনেক উঁচুস্তরের এবং নানা বৈচিত্র্যে পূর্ণ, একথা প্রমান করেছেন বিশ্ববিখ্যাত যন্ত্রশিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্কর। পণ্ডিত রবিশঙ্কর বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ওতোপ্রতোভাবে যুক্ত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে লক্ষ লক্ষ শরর্নাথী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো, সে সময় তাদের আর্থিক সাহায্যের জন্য পন্ডিত রবিশঙ্কর, র্জজ হ্যরিসন মিলিতভাবে নিউ ইর্য়কের মেডিসন স্কোয়ারে ‘দ্যা কনর্সাট ফর বাংলাদেশ, র্জজ হ্যারিসন এন্ড ফ্রেন্ডস’ শিরোনামে এক বিশাল কনর্সাটের আয়োজন করেছিলেন, সেদিন এই বরেন্য শিল্পীরা বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশটিকে পৃথিবীর বহু মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলেছিলেন। তাঁদের এ ভালোবাসায় আজো আমরা মুগ্ধ হই। বিশ্ববিখ্যাত যন্ত্রশিল্পী পন্ডিত রবিশঙ্করের আজ ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সুহৃদ পণ্ডিত রবিশঙ্করের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

পণ্ডিত রবি শংকর ১৯২০ সালের ৭ই এপ্রিল, ভারতের উত্তর প্রদেশের বেনারসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী, ঘরোয়া নাম ‘রবু’। আদি পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায় হলেও তাঁর জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরে। সেখানেই বড় হয়েছেন তিনি। রবি শংকর ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তাঁর বাবা শ্যাম শংকর চৌধুরী ছিলেন একজন প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞ। কিন্তু রবি শংকরের প্রায় পুরো ছেলেবেলাটাই বাবার অবর্তমানে কাটে। বস্তুত একরকম দারিদ্রের মধ্যেই রবি শংকরের মা হেমাঙ্গিনী তাঁকে বড় করেন। বড় ভাই উদয় শংকর ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী। ঐ সময়টায় তিনি ছিলেন প্যারিসে। রবি শংকর ১৯৩০-এ মায়ের সাথে প্যারিসে বড় ভাইয়ের কাছে যান এবং সেখানেই আট বছর স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বার বছর বয়স থেকেই রবি শংকর বড় ভাইয়ের নাচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক। ঐ বয়স থেকেই তিনি অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন শহরে। ১৯৩৮ সালে, আঠারো বছর বয়সে রবি শংকর বড় ভাই উদয় শংকরের নাচের দল ছেড়ে মাইহারে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অমর শিল্পী আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। দীক্ষা গ্রহণকালে তিনি আচার্যের পুত্র সরোদের অমর শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খানের সংস্পর্শে আসেন। তাঁরা পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে সেতার-সরোদের যুগলবন্দী বাজিয়েছেন। গুরুগৃহে রবি শংকর দীর্ঘ সাত বছর সেতারে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই শিক্ষাকাল পরিব্যাপ্ত ছিল ১৯৩৮ হতে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত।

(পণ্ডিত রবি শঙ্কর এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সুকন্যা শঙ্কর)
একুশ বছর বয়েসে রবি শংকর তাঁর গুরু (যাঁকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন) আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে বিয়ে করেন। এই বিয়েতে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান শুভেন্দ্র শংকরের জন্ম হয়। কিন্তু এই বিয়ে বিচ্ছেদে শেষ হয়। পরবর্তীতে রবি শংকর তার গুণগ্রাহী ও অনুরক্তা সুকন্যা কৈতানকে বিয়ে করেন। এই বিয়েতে তাঁর দ্বিতীয় কন্যা অনুশকা শংকরের জন্ম হয়। বাবার কাছে শিক্ষা নিয়ে অনুশকা এখন নিজেও সেতার বাজিয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে আমেরিকান কনসার্ট উদ্যোক্তা স্যূ জোন্স এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এই সম্পর্ক একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। নোরা জোন্স – রবি শংকরের এই মেয়ে একজন প্রথিতযশা জ্যাজ, পপ, আধ্যাত্মিক এবং পাশ্চাত্য লোক সঙ্গীতের শিল্পী ও সুরকার। নোরা জোন্স ২০০৩ ও ২০০৫ সালে দশটি গ্র্যামি এওয়ার্ড পেয়েছেন। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর পন্ডিত রবিশঙ্কর প্রথমে সর্বভারতীয় বেতার কেন্দ্রে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী’র সঙ্গীত পরিচালনা করেন। বর্তমান বিশ্বে পণ্ডিত রবিশঙ্কর সেতার বাদক হিসাবে অদ্বিতীয় এক প্রতিভা। তাঁর সঙ্গীত জীবনে অসংখ্য সম্মান এবং পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ১৯৬০-এর দশকে রবি শংকর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে প্রথম তুলে ধরেন। ১৯৬২ এবং ১৯৮০ সালে তিনি দুইবার ভারতের রাষ্ট্রপতি পদক লাভ করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে প্রচার ও মানবিক সহায়তার জন্য জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজিত “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছিলেন পণ্ডিত রবি শংকর। মূলতঃ পণ্ডিত রবি শংকরই এই অনুষ্ঠানের জন্য জর্জ হ্যারিসনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হাওয়ার্ড ওয়র্থ পরিচালিত “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এছাড়াও রাগা (১৯৭১), কনসার্ট ফর জর্জ (২০০৩) উল্লেখযোগ্য। ১৯৫০ হতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রবি শংকর অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সঙ্গীত সৃষ্টিতে ব্যাপৃত ছিলেন। এ সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো সত্যজিৎ রায়ের অপু ত্রয়ী (পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার) চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা। পরবর্তীতে তিনি চাপাকোয়া (১৯৬৬) চার্লি (১৯৬৮) ও গান্ধী (১৯৮২) সহ আরো চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ২০০২ এ দুটি গ্র্যামি এওয়ার্ড; ২০০৩ সালে আই এস পি এ ডিস্টিংগুইশ্‌ড আর্টিস্ট এওয়ার্ড, লন্ডন; ২০০৬ সালে ফাউন্ডিং এম্বাসেডর ফর গ্লোবাল এমিটি এওয়ার্ড, স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ১৪টি সম্মানসূচক ডক্টরেট; ম্যাগাসাসে এওয়ার্ড, ম্যানিলা, ফিলিপাইন; গ্লোবাল এম্বাসেডর উপাধি – ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম; ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পদ্মবিভূষণ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত দেশিকোত্তম পুরস্কার লাভ করেন। তবে মৃত্যুর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রবর্তিত ‘বঙ্গ-বিভূষণ’ সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্কর। পণ্ডিত রবি শংকর আমেরিকান একাডেমী অব আর্টস্ এন্ড লেটারস্-এর অনারারী মেম্বার এবং ইউনাইটেড নেশনস্ ইন্টারন্যাশনাল রোস্ট্রাম অফ কম্পোজারস-এর সদস্য ছিলেন।

বিশ্বখ্যাত কিংবদন্তি যন্ত্র শিল্পী পণ্ডিত রবি শংকর২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। মৃত্যুর আগে কয়েক বৎসর যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন এবং ক্রমশ: বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। এক পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাঁর হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব পরবির্তন করা হয়। শল্যচিকিৎসার এই ধাক্কা তার দুর্বল শরীর সহ্য করতে পারেনি। মৃত্যুকালে দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক কর্মজীবনের জন্য গিনেস রেকর্ডের অধিকারী হয়ে ছিলেন রবি শঙ্কর। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্রষ্টা আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের শিষ্য বিশ্ববিখ্যাত যন্ত্রশিল্পী ও বাংলাদেশের সুহৃদ পন্ডিত রবিশঙ্করের আজ ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশ্ববিখ্যাত যন্ত্রশিল্পী পন্ডিত রবিশঙ্করের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: উনি জগত বিখ্যাত । শুভেচ্ছা । দোয়া করবেন নুর ভাই

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে সবাই সবার জন্য
দোয়া করবেন। সতর্ক থাকবেন, নিরাপদে
ঘরে অবস্থান করুন। আল্লাহ আমাদের সহায়
হবেন ইনসাআল্লাহ।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: পরপারে উনি ভালো থাকুক এই দোয়া করি।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ খানসাব
মৃত্যুর পরে সবা্ই যেন
মহান আল্লাহর আরশতলে
ছায়া লাভ করতে পারে সেই
দোয়া করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.