নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
রবীন্দ্রসঙ্গীত জগতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের মধ্যে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। বিশেষত টপ্পা ঢঙ্গের রবীন্দ্রসংগীতে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক গায়িকা। সত্যিকার অর্থেই তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের শিষ্যা, কেবল গানে নয়, আধ্যাত্মিক উপলব্ধিতেও। তাই তো সংগীতকে জীবন-সাধনায় একাত্ম করতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া অতুলপ্রসাদের গানেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন, যদিও এই ধারায় তাঁর রেকর্ড সংখ্যা খুব বেশি নয়। তিনি যেমন গান গাইতেন, তেমনই ছিল তাঁর গায়নভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদ; নিমিষে সকল ভক্ত-শ্রোতার মন জয় করে নিতেন। জীবনের অধিকাংশ সময় শান্তিনিকেতনে অতিবাহিত করলেও তাঁর জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও পরিব্যাপ্ত ছিল। কলকাতা পৌরসংস্থা তাঁর সম্মানে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও রবীন্দ্র সদনের মধ্যবর্তী ময়দানের একাংশে একটি সুরম্য সুবৃহৎ উদ্যান উৎসর্গ করেছেন। স্বনামধন্য এই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর আজ ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। । ২০০০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় মৃত্যুবারণ করেন স্বনামধন্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৪ সালের ১২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থাগারের কর্মী ও মা অনিলা দেবী ছিলেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমজননী। তাঁদের পাঁচ কন্যা ও তিন পুত্রের মধ্যে কণিকা ছিলেন জ্যেষ্ঠ। ছেলেবেলা কাটে বিষ্ণুপুরের মামাবাড়ির যৌথ পরিবারে। পরে খুব অল্পবয়সে পিতার কর্মস্থল শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। ভর্তি হন ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে। তাঁর স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় এই সময় এক কালবৈশাখীর সন্ধ্যায় উত্তরায়ণের বাগানে আম চুরি করতে গিয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ। সহজাতসঙ্গীত প্রতিভার কারণে তিনি সেই বয়সেই কবির বিশেষ স্নেহভাজন হয়ে পড়েন। কনিকার পিতৃদত্ত নাম অনিমা মুখোপাধ্যায়। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘অণিমা’ নামটি পরিবর্তন করে ‘কণিকা’ রাখেন। অবশ্য ডাকনাম হিসাবে তিনি ব্যবহার করতেন ‘মোহর’। পরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর এই ‘মোহর’ নামটি বিস্তারিত করে বলেছিলেন ‘আকবরী মোহর’। ১৯৩৫ সালে শিশুশিল্পী হিসাবে প্রথম মঞ্চাবতরণ করেন কণিকা। শান্তিনিকেতনের শারদোৎসবে একটি অনুষ্ঠানে বালক-বালিকাদের দলে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর সেই প্রথম ও শেষ মঞ্চাবতরণ; কারণ সেই অনুষ্ঠানটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের শেষ মঞ্চাভিনয়। ১৯৩৭ সালে প্রথম কলকাতার ছায়া সিনেমা হলে আয়োজিত বর্ষামঙ্গল উৎসবে কণিকা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে ছায়া ঘনাইছে বনে বনে গানটি গেয়েছিলেন। কলকাতার মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরূপে সেটিই ছিল তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ। এই সময়ে অনেকগুলি গান রবীন্দ্রনাথ তাঁকে স্বয়ং শিখিয়েছিলেন। কণিকা অভিনয় করেছিলেন তাসের দেশ নাটকের দহলানী, ডাকঘর নাটকের সুধা, বিসর্জন নাটকের অপর্ণা ও বশীকরণ নাটকের নিরুপমা চরিত্রে। ১৯৪০ সালের ২৪ জুলাই বোলপুর টেলিফোন কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ওগো তুমি পঞ্চদশী গানটি গেয়েছিলেন। গানটি তিনি সরাসরি রবীন্দ্রনাথের কাছেই শেখেন। এই অনুষ্ঠানটি বেতারে সম্প্রচারিত হয়। এটিই কণিকার প্রথম বেতার অনুষ্ঠান।
১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর সময় কণিকা ছিলেন শান্তিনিকেতনে। এই সময় রবীন্দ্রনাথের নির্দেশ মতো সমুখে শান্তিপারাবার গানটি যে বৃন্দদলে গাওয়া হয়, সেই দলে ছিলেন কণিকা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই গানটি মৃত্যুর কয়েক বছর আগে রচনা করলেও, রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে তাঁর মৃত্যুর পরেই প্রকাশিত ও গীত হয়। এরপর ইন্দিরা দেবী চৌধরানী, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, অমিতা সেন, রমা কর প্রমুখ খ্যাতনামা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষকের কাছে গান শিখতে থাকেন কণিকা। শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন হেমেন্দ্রলাল রায়, অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভি ভি ওয়াজেলওয়ার, পি এন চিনচোর ও ধ্রুবতারা যোশির কাছে। ভজন শেখেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ও প্রকাশকালী ঘোষালের কাছে। কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের পিতা হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নিকট শেখেন অতুলপ্রসাদের গান। এছাড়াও কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের কাছে কিছুকাল নজরুলগীতিও শেখেন কণিকা। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও অন্যান্য ধারার বিভিন্ন গান কণিকা রেকর্ড করেন বিভিন্ন সময়ে। তার মধ্যে রয়েছে ভজন, কীর্তন, অতুলপ্রসাদী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, নজরুলগীতি ইত্যাদি। ১৯৪২ সাল থেকে তিনি হিজ মাস্টার্স ভয়েসের শিল্পী। ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতীরসঙ্গীত ভবনে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন কণিকা। এই বছরেই আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পীরূপে তাঁর যোগদান। পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীর এমিরিটাস অধ্যাপকও হন তিনি। ১৯৪৪ সালে কলকাতায় গীতবিতানসঙ্গীত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নৃত্যনাট্য মায়ার খেলা মঞ্চস্থ হলে কণিকা সেই নাটকে প্রমদার চরিত্রটি করেন। এই অনুষ্ঠানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সূত্রে তিনি পরিচিত হন বাঁকুড়ার বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পরের বছর বৈশাখ মাসে বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি আবদ্ধ পরিণয়-সূত্রে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বীরেনবাবু ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থাগারের কর্মী, রবীন্দ্র-বিশারদ ও আত্মকথা বাদে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত সকল গ্রন্থের সহলেখক।
(হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়)
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতে অনন্য ভূমিকা রাখায় বহু সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনে পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। ১৯৭৩ সালে বি এফ জে এ পুরস্কার, ১৯৭৮ সালে ই এম আই গ্রুপ গোল্ডেন ডিস্ক, ১৯৭৯ সালে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার , ১৯৮৬ সালে হন পদ্মশ্রী পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে এশিয়ান পেন্টস শিরোমণি পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম দ্বারা সম্মানিত করা হয় তাঁকে। ১৯৯৮ সালে পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র তাঁকে সম্মান জানান। ১৯৯৯ সালে পান আলাউদ্দিন পুরস্কার। এছাড়া মৃত্যুর পরে কলকাতার বিখ্যাত সিটিজেন্স পার্কটিকে তাঁর নামে উৎসর্গিত করা হয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লাগোয়া এই সুরম্য বিশাল উদ্যানটির বর্তমান নাম মোহরকুঞ্জ।
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ১৯৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা; ১৯৭৬, ১৯৮০ ও ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ড এবং ১৯৮০ সালেই জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। বহুবার তনি বাংলাদেশ ভ্রমন করেন। তাঁর প্রিয় ছাত্রী ও বিশিষ্ট বাংলাদেশী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার তত্ত্বাবধানে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে শেষবার সেই দেশ ভ্রমণ করেন কণিকা। ১৯৮৪ সালেসঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর নেন কণিকা। ১৯৯৩ সালে বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ‘মোহর’ নামে তাঁর জীবনভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র তোলেন। এর প্রযোজক ছিল ফিল্ম মেকার্স কনসর্টিয়াম। তাঁর শেষজীবন কাটে শান্তিনিকেতনে। অসুস্থতার কারণে শেষদিকে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল কলকাতাতেই তাঁর জীবনাবসান হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। স্বনামধন্য এই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর আজ ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পবিত্রতার প্রতিমা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় - তবু মনে রেখো
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই
চমৎকার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত
করার জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন।
২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গুনী মানুষদের শ্রদ্ধা জানালে
একসময় আপনিও শ্রদ্ধা পাবেন।
খাবারের রু্চি কি আরো বেড়েছে!
সীমিত খান প্রতিবেশীদের খাওয়ান।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার লেখা থেকে কম সময়ে স্বনামধন্য মানুষ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। অন্যথায় জানার জন্য অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হত। ধন্যবাদ আপনাকে।