নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ইব্রাহীম খাঁ।তিনি ‘প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ’ নামেও পরিচিত। ইব্রাহিম খাঁ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে প্রবন্ধকার, নাট্যকার, গদ্য-লেখক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও সমাজ-সংস্কারক হিসাবে সুপরিচিত। বাঙালি মুসলিম নবজাগরণের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিলগ্নে ইব্রাহীম খাঁর আবির্ভাব। ইসলামের প্রতি অনুরাগ, মুসলমানদের প্রতি দরদ ও মুসলিম সমাজের উন্নয়নে ইব্রাহীম খাঁর আগ্রহ কত গভীর ছিল এবং এ জন্য তিনি কতটা আন্তরিকতা সহকারে চিন্তা-ভাবনা করতেন, কাজী নজরুল ইসলামকে লেখা তাঁর একটি চিঠি থেকে তা সুস্পষ্ট হয়। উক্ত চিঠি ১৩৩৪ সনের ভাদ্র সংখ্যা ‘নওরোজ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আমাদের সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি চিন্তার ক্ষেত্রে উক্ত চিঠির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। নজরুলের নিকট লেখা ইব্রাহীম খাঁর উপরোক্ত পত্রটি থেকে ইসলামের প্রতি তাঁর অবিচল নিষ্ঠা ও মুসলিম সমাজের উন্নয়নে গভীর আগ্রহ ও উদ্বেগের বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নজরুল ৩ বছর পর এক দীর্ঘ পত্রে এর জবাব দিয়েছিলেন। সে পত্রটি নানা দিক থেকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। নজরুল জীবনের নানা দিক, না বলা দুঃখ-বেদনা ও চিন্তা-চেতনার বিষয় তাতে বর্ণিত হয়েছে। ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে মহাপ্রাণ মনীষী ইবরাহীম খাঁ কর্মজীবনের শুরুতেই অসহযোগ আন্দোলন এবং খেলাফত আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এই আন্দোলন তার গভীরভাবে জনজীবনের সাথে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের ভিত তৈরি করে দেয়। সেই সময় মুসলিম মনে আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করার জন্য তিনি ইতিহাস, সমকালীন জীবন নিয়ে, ইসলামের গৌরবময় অধ্যায় নিয়ে লিখেছেন- এটাকেই তিনি তপস্যা বলেছেন। ব্রিটিশ ভারতে নিগৃহীত পণ্ডিতদেরকে তিনি তার কলেজে সুযোগ দিতেন- এমনকি অন্যত্র বহিষ্কৃত ছাত্ররাও তার আশ্রয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে। তিনি তার নিজের বিশ্বাসে দৃঢ় ছিলেন, কিন্তু অন্যের মতবাদকে বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা করতেন না। উদার মানবতাবাদী ইবরাহীম খাঁর সাহিত্যচর্চার প্রধান উৎসই শিক্ষা এবং সংস্কার- তিনি মূলত সংস্কারকই। অসংখ্য শৈবালদামে আচ্ছন্ন স্রোতধারার সংস্কারকেও কিছুটা বিপ্লবী ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়- তিনি তা করেছেন। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা`দত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, নাটক, শিশুসাহিত্য ও অনুবাদ মিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। অদ্বিতীয় প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ইব্রাহীম খাঁ ১৮৯৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলার তৎকালীন ভুঞাপুর থানার অন্তর্গত বিরামদী (বর্তমান নাম শাবাজনগর) গ্রামে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শাবাজ খাঁ ও মায়ের নাম রতন খানম। ১৯১২ সালে তিনি পিংনা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স, ১৯১৪ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এফএ এবং ১৯১৬ সালে কলকাতার সেন্ট পলস সিএম কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। পরে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি আইন বিষয়েও ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৯ সালে এমএ পাস করে করটিয়া হাইস্কুলের প্রধান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে করটিয়ার জমিদারের আর্থিক সহযোগিতায় করটিয়া সাদ’ত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে ইব্রাহীম খাঁ সেখানে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ছিলেন টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা'দত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলা একাডেমির অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা এবং সরকারি বাঙলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁকাজের ফাঁকে সময় বের করে তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি প্রায় ১২০টি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লেখা বইয়ের তালিকায় আছে—স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ, নাটক, ভ্রমণকাহিনি, রসরচনা, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস ও জীবনচরিত, শিশু সাহিত্য, অনুবাদ ও পাঠ্য বই। ইংরাজিতে লেখা তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘এনেকডোটস ফ্রম ইসলাম' একটি মূল্যবান গ্রন্থ। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।ভ্রমণ কাহিনীমূলক রচনায় তিনি পৃথিবীর যে সব দেশ সফর করেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে সে সব দেশের ভৌগোলিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নানা বিষয় রসঘন ও চিত্তাকর্ষকভাবে তুলে ধরেছেন। এসব গ্রন্থ পাঠে বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় অবগত হওয়া যায়। তাঁর স্মৃতিকথামূলক রচনা ‘বাতায়নে' জীবনের ব্যাপক অভিজ্ঞতার অন্তরঙ্গ বর্ণনা স্থান পেয়েছে। এটি তাঁর সমকালিন জীবনের এক অবিস্মরণীয় গুরুত্বপূর্ণ দলীল। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহঃ
কামাল পাশা (১৩৩৪), আনোয়ার পাশা (১৩৩৭), ঋণ পরিশোধ (১৯৫৫), ভিস্তি বাদশা (১৯৫৭), কাফেলা। উপন্যাস : বৌ বেগম (১৯৫৮)। গল্পগ্রন্থ : আলু বোখরা (১৯৬০), উস্তাদ (১৯৬৭), দাদুর আসর (১৯৭১), মানুষ, হিরকহার। স্মৃতিকথা : বাতায়ন (১৩৭৪)। ভ্রমণ কাহিনী : ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র (১৯৫৪), নয়া চীনে এক চক্কর, পাকিস্তানের পথে-ঘাটে। শিশু সাহিত্য : ব্যাঘ্র মামা (১৯৫১), শিয়াল পন্ডিত (১৯৫২), নিজাম ডাকাত (১৯৫০), বেদুঈনদের দেশে (১৯৫৬), ইতিহাসের আগের মানুষ (১৯৬১), গল্পে ফজলুল হক (১৯৭৭), ছোটদের মহানবী, ছেলেদের শাহনামা, ছোটদের নজরুল, গুলবাগিচা, নবী জীবনের ঝান্ডা বহিল যারা, তুর্কী উপকথা, নীল হরিণ, সোহরাব রোস্তম। ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ : মহানবী মুহাম্মদ, ইসলাম সোপান, ছোটদের মিলাদুন্নবী। শিক্ষা বিষয়ক গ্রন্থ : আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সংস্কৃতির মর্মকথা, ইসলামের মর্মকথা, নীতিকাহিনী ইত্যাদি।
আজীবন শিক্ষাব্রতী হিসাবে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ বাঙালি মুসলিম সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। অধঃপতিত মুসলিম জাতি তখন অজ্ঞানতায় নিমজ্জিত ছিল। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। তাই ইব্রাহীম খাঁ নিজে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে আজীবন শিক্ষাদান কাজে নিরত থাকেন। পাঠ্য বই রচনা ও শিক্ষামূলক নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গ্রন্থাদি রচনা করেন। শিক্ষার উন্নয়নে তিনি অসংখ্য সভা-সেমিনারে যোগদান করেন। বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভুয়াপুর হাই স্কুল, ভুয়াপুর বালিকা বিদ্যালয়, ভুয়াপুর কলেজ, করটিয়া জুনিয়র গার্লস মাদ্রাসা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ‘জাদু সম্রাট' পি.সি. রায় গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে তাঁর শিক্ষক ইব্রাহীম খাঁকে ‘হৃদয় সম্রাট' হিসাবে আখ্যায়িত করেন। ইব্রাহীম খাঁ তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন সময় নানা খেতাব ও পুরস্কার পেয়েছেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে প্রথমে ‘খান সাহেব' ও পরে ‘খান বাহাদুর' উপাধি প্রদান করে। খান সাহেব উপাধি তিনি সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করেন এবং খান বাহাদুর খেতাব তিনি পরবর্তীতে বৃটিশ সরকারের মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের প্রতিবাদে প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৬৩ সনে পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘তঘমা-এ-কায়দে আযম' খেতাব প্রদান করেন। ১৯৭১ সনে পাক বাহিনীর নৃশংসতার প্রতিবাদে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৩ সনে তিনি নাটকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও ১৯৭৬ সনে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদক' লাভ করেন। ১৯৭৭ সনে তিনি ভুয়াপুর ‘সাহিত্য সংসদ' গঠন করে একুশে পদকের সব অর্থ ও কিছু জমি উক্ত সাহিত্য সংসদে দান করেন। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে তাঁর নামে একটি কলেজ আছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ ১৯৭৮ সালের ২৯ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। অদ্বিতীয় প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
২৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ প্রকৃত সত্য
অনুধাবন করার জন্য
২| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার কি বিখ্যাত মানুষদের মতো হতে ইচ্ছা করে না?
২৯ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
না, কারণ আমি যা হতে পারবো না তা নিয়ে হাপিত্যেশ করে লাভ কি!
তবে গুণীদের কথা জানতে ও জানাতে ইচ্ছা করে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৫১
কালো যাদুকর বলেছেন: একজন প্রকৃত শিক্ষাবিদ। শ্রদ্ধাঞ্জলি।