নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর খ্যাতিমান ফরাসি লেখক (Jules Verne) জুল ভার্ন। আইনবিদ হয়েও যার অন্তঃসত্তা একজন খাঁটি বিজ্ঞানী, অভিযাত্রী আর পর্যটক। আর্থার সি ক্লার্ক, এইচ জি ওয়েলস, আইজ্যাক আসিমভের মত সাহিত্যিক মহারথীদের মতে, "তিনি এমন একজন শক্তিশালী লেখক যার অবদান বিশ্ব সাহিত্যে অপরিসীম"। তার জাদুকরি লেখা জয় করেছে ভৌগোলিক সীমারেখার সকল সীমাবদ্ধতা। যুগ যুগ ধরে সুররিয়ালিস্ট এবং সায়েন্স ফিকশন ধারাকে প্রভাবিত করে করে চলেছে সমান দাপটে। যাকে অনায়াসে কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের মুকুটহীন সম্রাট বলা যায়। উড়োজাহাজ, রকেট কিংবা সাবমেরিনের বাস্তবিক ও ব্যবহারিক প্রয়োগের অনেক পূর্বেই তিনি মহাকাশ ভ্রমণ ও সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণের কল্পকাহিনী লিখেছিলেন। তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি, টাইগার্স এন্ড ট্রেটস এবং অ্যা জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ উল্লেখযোগ্য। কৈশর কিংবা যুবা বয়সে সেবা প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত বাংলায় অনুবাদকৃত জুল ভার্নের কল্পকাহিনী পাঠ করেন নি এমন পাঠকের সংখ্যা সীমিত। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পিতৃপুরুষ হিসেবেও স্বীকৃত জুল ভার্ন ১৯০৫ সালের আজকের দিনে আমেরিকায় পরলোকগমন করেন। আজ তাঁর ১১৫তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। বিশ্ব মাতানো কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের বিস্ময়কর অগ্রদূত জুল ভার্নের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(২৫ বছর বয়সে জুল ভার্ন)
জুল ভার্ন ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের পশ্চিমে বিস্কে উপসাগরের তীরে অবস্থিত নঁত নামের বন্দর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম জুল গার্বিয়েল ভার্ন (Jules Gabriel Verne)। তাঁর বাবা পিয়েরে ভার্ন, এবং মা সোফি অ্যালো দে লা ফুয়। তাঁর শৈশবকাল কাটে এখানকার বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তাঁরা গ্রীষ্মকাল কাটাতেন নঁতের কাছেই ব্রে শহরে। সেখানে ভার্ন ও তাঁর ভাই পল প্রায়ই এক ফ্রাঁ দিয়ে এক দিনের জন্য নৌকা ভাড়া নিতেন। ভার্নের মতে, নদীতে প্রচুর জলযানের চলাচলের দৃশ্য তাঁর কল্পনাশক্তির স্ফুরণ ঘটায়। ১২ বছর বয়সে জাহাজের কেবিনবয় হিসেবে কাজ নিয়ে বাড়ী থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন এখন থেকে নিজের মনের মধ্যেই ঘুরে বেড়াবেন। বাবার ইচ্ছায় আইন বিষয়ে পড়াশুনা করে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে বেশ প্রসার লাভ করেন। অভিযানপ্রিয় জুল ভার্ন খুব দ্রুত বিরক্ত হন এ পেশার প্রতি এবং আইন ব্যবসা ছেড়ে ১৮৬৭ সালে আমেরিকাতে পাড়ি জমান । সাহিত্যাঙ্গনে ভার্নের প্রবেশ ঘটে মঞ্চনাটক লেখার মাধ্যমে। তাঁর লেখা মঞ্চনাটক বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তাঁর লেখা প্রথম বই বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ অত্যন্ত অবাস্তব বলে কোন প্রকাশক ছাপতে রাজী না হওয়ায় তিনি রেগে গিয়ে এর পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়িয়ে ফেলার সময় তাঁর স্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা রক্ষা পায়। পরে এ বইটি প্রকাশিত হলে রাতারাতি প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পায়। ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড ঘরকুনো এই লেখক তার বাড়ীর চিলেকোঠায় বসেই লিখে গেছেন বিশ্বমাতানো সব কল্পবিজ্ঞান কাহিনী। বিজ্ঞানমনস্কতা তার লেখার মূল উপজীব্য। সাবমেরিন,হেলিকপ্টার,বিমান,রকেট প্রভৃতি যুগান্তকারি আবিষ্কারের মূল প্রেরণা জুল ভার্নের রচনা। হয়তো অনেকেই জানেননা পরবর্তী বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পশ্চাতে রয়েছে জুল ভার্নের সায়েন্স ফিকশনের অবদান। আশ্চর্য হতে হয় উনবিংশ শতাব্দীতে যখন এমন যন্ত্রের কথা মানুষ ভাবতেও পারেনি তখন কিভাবে তিনি এসবের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। বিজ্ঞানীরাও তাই সঙ্গত কারনেই অপরিসীম শ্রদ্ধার চোখেই বিবেচনা করেন এই মহান সাহিত্যিককে। সাহিত্যের পরিসীমা অতিক্রম করে তার রচনাবলী যেন পথ নির্দেশ করে আধুনিক বিজ্ঞানকে। তাঁর অবিশ্বাস্য কাহিনীগুলি পড়তে পড়তে আমরা যখন মানসভ্রমনে বেরোই,ভাবতেও অবাক লাগে শুধুমাত্র নিজের ঘরে বসে এমন বর্ণনা কিভাবে সম্ভব।
জুল ভার্নের 'মিষ্টিরিয়াস আইল্যান্ডের' ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং এর উদ্ভবনী শক্তির কারনে প্রত্যেক পাঠককেই প্রচন্ড ভাবে আকৃষ্ট করবে। খালি হাতে তিনি সব কিছু বানিয়ে ফেললেন! 'টুয়েন্টি থাউজেন্ড লীগস আন্ডার দ্য সী' তার আর একটি অবাস্মরনীয় উপন্যাস। তিনি সাবমেরিনের চিন্তাই শুধু করেননি, তার খুঁটিনাটি তথ্যও তিনি দিয়েছেন পাঠকদের। 'এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেজ' তার আর একটি ক্লাসিক। সারা পৃথিবীকে আশি দিনে পর্যটন করা সম্ভব কিনা, এই নিয়ে দুই বন্ধুর বাজি থেকে যার উৎপত্তি। আর মাঝখানে সব মহাদেশেরই অসাধারন কিছু ঘটনা দিয়ে শেষ হয়েছে আরও একটি চমক দিয়ে। রওনা হওয়ার একাশি দিনের মাথায় পৌঁছেও বাজী জিতে গেলেন প্রফেসর। 'ফাই্ভ উইকস ইন এ বেলুন' তার ভ্রমনের আর একটি অসাধারন বর্ণনা। বেলুন প্রয়োজনমত ওঠানো নামানোর কৌশলটার কোনও তুলনা হয়না।
জুল ভার্নের উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ
১। টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দ্য সী, ২। এ জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ, ৩। অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ, ৪। দ্য মিস্ট্রিয়াস আইল্যান্ড, ৫। ডিক স্যান্ড, ৬। টাইগার্স এন্ড ট্রেটস, ৭। এ ক্যাপ্টেইন অ্যাট ফিফটিন ইত্যাদি। বেস্ট সেলার হিসেবেও প্রচুর সাফল্য পায় এইসব রচনাবলী। বিশ্বব্যাপি তার পাঠক তৈরী হয়। জনপ্রিয়তাও পৌঁছে যায় তুংগে। অদ্যবধি তার এই বিপুল জনপ্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। পৃথিবীতে আগাথা ক্রিস্টির পরেই তাঁর লেখা সবচেয়ে বেশী বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ও নানা সাহেবের ইতিহাস আশ্রিত তাঁর উপন্যাস "টাইগার্স এন্ড ট্রেটস"-এ অবিভক্ত ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর লেখা বেশ কিছু কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র ও নাটকও নির্মিত হয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির মধ্যে ফিলিয়াস ফগ্, ক্যাপ্টেন নিমো, রোবার ও ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ফ্রান্স সাহিত্য অ্যাকাডেমি তাঁকে "অর্ডার অব মেরিট" সম্মানে ভূষিত হন এবং ইংল্যান্ড রয়াল অ্যাকাডেমির সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। টাইম ম্যাগাজিন তাকে ১৯৯৬ সালে ঘোষণা দেয় সর্বকালের সেরা সায়েন্স ফিকশন রাইটার হিসেবে। সংগত কারনেই জুল ভার্ন এই স্বীকৃতির যোগ্য।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর এই লেখক ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ আমেরিকাতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। আজ এই লেখকের ১১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিশ্ব মাতানো কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের বিস্ময়কর অগ্রদূত জুল ভার্নের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
২৪ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সত্যি বিস্ময়কর ব্যাপার !!!
২| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
২৪ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আনোয়ার ভাই
শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: এই লেখাটা আগে পড়েছি।