নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
মেজর (অব.) কাজী নূরুজ্জামান (কিউএন জামান), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার। যু্দ্ধকালীন অবস্থায় মেজর জামানকে লেঃকর্ণেল পদে উন্নীত করা হয়। তিনি ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ নম্বর সেক্টরের দ্বায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার একাংশ নিয়ে ছিল ৭ নম্বর সেক্টর। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল নয়টি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ২৩১০ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ১২,৫০০। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ৭ নম্বর সেক্টরে কমান্ডারের দায়িত্ব লাভের পর বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। প্রথমে এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর নাজমুল হক। তারপর দায়িত্ব নেন সুবেদার মেজর আবদুর রব এবং সবশেষে দায়িত্ব নেন কাজী নুরুজ্জামান। ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ভারতে সড়ক দুর্ঘটনা মারা যাওয়ার পর কর্ণেল নূরুজ্জামানকে এই সেক্টরের অধিনায়ক করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। একাত্তরের মার্চে কর্নেল (অব.) কাজী নূর-উজ্জামান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী যখন বাঙালী হত্যা শুরু করে বিশেষত ইপিআর-এর সদস্য ও তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ চালায় তখন ইপিআর সদস্যদের পরিবার-পরিজনের আর্তনাদ তাঁকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। সেই নৃশংস দৃশ্য দেখে মেজর (অব.) কাজী নূর-উজ্জামান তাঁর পরিবারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন হানাদারের বিরুদ্ধে আবার অস্ত্র তুলে নেওয়ার। তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনকে ময়মনসিংহ জেলার গান্ধিনা নামক এক গ্রামে পাঠিয়ে ২৮ মার্চ তৎকালীন কর্নেল শফিউল্লাহর ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানী কাজী নূর-উজ্জামানকে নিজের সাথে রেখে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন।আজ অসীম সাহসী স্বাধীনচেতা সেক্টর কমাণ্ডার কাজী নূর-উজ্জামানের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৫ সালের আজকের দিনে তিনি যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার মাসে সেক্টর কমাণ্ডার কর্নেল (অব.) কাজী নূরুজ্জামানের জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
কাজী নূরুজ্জামান ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খান সাহেব কাজী সদরুলওলা এবং মাতার নাম রতুবুন্নেসা। কাজী নূরুজ্জামানের পড়াশোনা কলকাতায়। সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে রসায়নে পড়ার সময় ১৯৪৩ সনে ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মার উপকূল ও সুমাত্রায় যুদ্ধ করেন। ১৯৪৬ সালে পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর আহবানে অনেকে নৌবাহিনী থেকে ভারতীয় সেনবাহিনীতে চলে আসে। কাজী নূরুজ্জামান তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রশিক্ষণের জন্য কাজী নূরুজ্জামান দেরাদুনে রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে চলে যান। ১৯৪৭ সালে তিনি এই একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্টের পর কাজী নুরুজ্জামানের পরিবার পাকিস্তানে আসার সিদ্ধান্ত নিলে নুরুজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নবীন অফিসার হিসাবে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডে আর্টিলারি কোর্স সমাপ্ত করে আসার পর তিনি পাকিস্তানের নওশেরায় আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুলে প্রশিক্ষক নিয়োজিত হন। পরের বছর হোন অফিসার ট্রেনিং স্কুলের ইনস্ট্রাক্টর। ১৯৫৬ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯৫৮ সালে স্টাফ কলেজ সম্পন্ন করেন। ১৯৫৮ সালে সেনাপ্রধান আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করলে তিনি উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েন। তখন (১৯৬২ সালে) তাকে প্রেষণে ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনে (ইপিআইডিসি) পাঠানো হয়। এরই মধ্যে তিনি লেফটেনেন্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান। ইপিআইডিসি থেকে তিনি স্বল্প সময় পরে তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন এবং স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং যুদ্ধকালীন সময়ের পরপরই পুনরায় সিভিল পেশায ফেরত আসেন। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি ড. আহমদ শরীফ প্রতিষ্ঠিত স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন লেখক শিবির ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফ্রন্টের সদস্য।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির উপর গণহত্যা শুরু করলে কাজী নূরুজ্জামান ঢাকা ত্যাগ করে স্বপরিবারে ময়মনসিংহ চলে যান। ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর কাজী মোহাম্মদ সফিউল্লাহ'র সঙ্গে দেখা করেন। ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর ও তদূর্ধ্ব পদবির কর্মকর্তাদের প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের মে মাসে তাঁকে সভাপতি করে একটি পর্ষদ গঠন করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচ ক্যাডেট নির্বাচনের জন্য। এই ক্যাডেটরা কমিশন লাভ করেন সে বছরের ৯ অক্টোবর। নব্বইয়ের দশকে কর্ণেল নূরুজ্জামান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে অংশ নেন। তিনি গণআদালতের অন্যতম বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। কর্নেল (অব.) কাজী নূর-উজ্জামান একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন। দেশী-বিদেশী সকল প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আন্দোলনকামী জনতাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ লেখক শিবির-এর অন্যতম সদস্য, ছিলেন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফ্রন্টের অগ্রভাগে। কর্নেল (অব.) কাজী নূর-উজ্জামান বীরউত্তমকে আহ্বায়ক করে প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনগুলো গড়ে তুলেছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক কমিটি। ১৯৮৫ সালে গঠিত মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কর্নেল (অব.) কাজী নূর-উজ্জামান বীরউত্তম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় কমিটি আয়োজিত গণআদালতের অন্যতম বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন এই সাহসী যোদ্ধা। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে সাপ্তাহিক নয়াপদধ্বনি।
ব্যাক্তিগত জীবনে কাজী নূরুজ্জামানের স্ত্রী ডা. সুলতানা জামান, দুই মেয়ে - নায়লা জামান ও লুবনা মরিয়ম এবং এক ছেলে নাদিম ওমর এর জনক। ডা. সুলতানা জামান সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ৭ নম্বর সেক্টরের মাহদিপুর সাব-সেক্টরে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন। তাঁকে সাহায্য করেন ডা. মোয়াজ্জেম। ১৫ বছরের কিশোর নাদিম ওমর লালগোলা সাব-সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে কর্নেল (অব.) কাজী নূর-উজ্জামানকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। কিন্তু গণযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ণ ও স্বীকৃতি দেয়া হয়নি বলে কাজী নূরুজ্জামান তা তাঁর নামের শেষে ব্যবহার করতেন না। 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়' গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক ছিলেন কাজী নূরুজ্জামান। তাঁর রচিত অন্যান্যগ্রন্থসমূহ সুধীজন কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেঃ
১। 'একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ: একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা',
২। 'মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি',
৩। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি'
৪। 'স্বদেশ চিন্তা'
বার্ধক্যজনিত কারণে ২০১১ সালের ৬ মে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন কর্নেল (অব.) কাজী নূরুজ্জামান। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কাজী নূরুজ্জামানকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তাঁর নামে ঢাকার পান্থপথে একটি সড়কের নামকরণ করেছে বীর উত্তম কাজী নূরুজ্জামান সড়ক। কর্নেল (অব.) কাজী নূরুজ্জামান, বীর উত্তম এর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী। স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতভয় বীর সেনানী ৭নং সেক্টর কমাণ্ডার কর্নেল (অব.) কাজী নূরুজ্জামান, বীর উত্তম এর জন্মদিনে তাঁকে স্মরন করছি ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায়।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আলহামদুলিল্লহ !
২| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: শ্রদ্ধা
২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:২৬
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মাশাল্লাহ।