নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথাবিরোধী লেখক, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ আরজ আলী মাতুব্বরের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০২


প্রথাবিরোধী ধর্মদর্শনের প্রাচীন ধারাবাহিকতার বাংলাদেশী রূপকার হলেন আরজ আলি মাতুব্বর। তিনি মনে করতেন পশু যেমন সামান্য জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে ধর্মবাদী ব্যক্তিগণও তেমনি সামান্য জ্ঞান নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। নিজের প্রান্তিক জীবনের সাধারণ কয়েকটি ঘটনাতেই তিনি বুঝে নিয়েছেন তার ও তার সমাজের আচরিত ধর্মের স্বরূপ। ক্রমাগত গ্রন্থ পাঠে বুঝে নিয়েছেন এর কারণাবলী। এই অন্ধকারাচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। তাই তিনি অনবরত প্রশ্নবাণে দগ্ধ করেছেন তথাকথিত সমাজপিতা ও তাদের আচরিত-প্রচারিত ধর্ম ও দর্শনকে। স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং বিজ্ঞানমনস্ক লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের লেখায় জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা উঠে এসেছে যা থেকে তার প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। তবে শহুরে মধ্যবিত্ত কিংবা গ্রামীণ ক্ষমতাবান কারও কাছেই আরজ আলী মাতুব্বর গ্রহণযোগ্যতা পাননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি সত্ত্বেও সাহসীকতার সাথে তিনি কতিপয় বই লেখেন। বিশ্ব ও জীবন সম্পর্কে তাঁর দার্শনিক লেখা বিতর্কিত হয়ে পড়ে এবং তিনি ইসলাম-বিরোধী কর্মী হিসেবে সমালোচিত হন। তাঁর বইগুলো প্রকাশে অনেক বাধা পেরোতে হয়েছিলো কারণ তাঁর বইগুলো সর্বদাই সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধের হুমকিতে থাকত, কারণ তাঁর লেখনী রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরু লোকদের মতের বিরুদ্ধাচারিত নির্দিষ্ট দাবিকৃত ধর্মীয় মত বা ভাবাদর্শ ধারণ করত। মাতুব্বরকে তাঁর বই - “সত্যের সন্ধানে”র (Sotyer Shondhaney") জন্য বন্দী করা হয় এবং পুলিশ হাজতে নেয়া হয়। দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও লেখক আরজ আলি মাতুব্বরের ১১৭তম জন্ম দিন আজ। ১৯০০ সালের আজকের দিনে তিনি বরিশালো জন্মগ্রহণ করেন। দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও প্রথাবিরোধী লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ফুলেল শুভেচ্ছা।

আরজ আলী মাতুব্বর ১৯০০ ইংরেজী সালের ১৭ই ডিসেম্বর মোতাবেক বাংলা ১৩০৭ সালের ৩রা পৌষ বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত লামছড়ি গ্রামে এক গরীব কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। স্ব-শিক্ষিত, দার্শনিক এই লেখকের প্রকৃত নাম ছিলো “আরজ আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাধে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন। তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। ১২বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। এর পরে দুই একরের (৮১০০ মিটার২) বসতবাড়িটি নিলামে উঠে। জমিজমাহীন বালক আরজ আলী স্থানীয় সুদখোরদের কাছে তখন তাঁদের পরিবারটি দেনার দায়ে পূর্বপুরুষের ভিটামাটি হারিয়ে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়ে যায়। অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যে বহু কষ্টে খেত খামারে কাজ করার কারণে আর দরিদ্র আরজ আলী আর স্কুলে পড়ার সুযোগ পান নি। আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মসজিদ দ্বারা পরিচালিত মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে 'আদর্শলিপি' পড়তেন। দরিদ্রতার কারণে নিয়মানুবর্তিতার অভাবে তাঁকে মক্তব ছাড়তে হয়। এরপর তিনি কৃষিকাজে নিয়োজিত হন। পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরীর সমস্ত বাংলা বই একজন মনোযোগী ছাত্রের ন্যায় পড়েন। দর্শন ছিলো তাঁর প্রিয় বিষয়। কিন্তু পাঠাগারে পর্যাপ্ত বই ছিলো না। পরে বিএম মহাবিদ্যালয়ের দর্শনের এক শিক্ষক – কাজী গোলাম কাদির তাঁর জ্ঞানগর্ভ বিচার দেখে মোহিত হন এবং তিনি মহাবিদ্যালয়ের পাঠাগার থেকে বই ধার দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই তাঁর মানসিক আকৃতি গঠিত হয়। তিনি নিজ চেষ্টায় বিজ্ঞান ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তাঁর প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। আর্থিক সঙ্কটের কারণে, মাতুব্বর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স বা ডিগ্রী লাভ করতে পারেন নি। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কৃষি ক্ষেতের জন্য এভাবে কিছু পুঁজি জমা করেন। একসময় মানুষ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলে তিনি এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজস্ব ধরনের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। আরজ আলী মাতুব্বর সাম্যবাদী ঢঙের, অনেক অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। তাঁর লেখার জন্য তাঁকে ধর্মীয় ভাবমূর্তির প্রতিমাধ্বংসকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ইসলামের বংশগতির ধারা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেন এবং স্বকীয় মত-বৈশিষ্ট্য একমতে আনতে ব্যর্থ হন।

লেখনীর কারণে আরজ আলী মাতুব্বর যতবার ধর্মীয় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ততবারই তাঁকে হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশে, তাঁর লেখা যে সব বইয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ (সেন্সর) করা হয় সেগুলো হলঃ
১। সত্যের সন্ধানে, (The Quest for Truth) (১৯৭৩), ২। সৃষ্টির রহস্য, (The Mystery of Creation) (1১৯৭৭), ৩। অনুমান, (Estimation) (১৯৮৩), ৪। মুক্তমন (Free Mind) (১৯৮৮)
১৩৯২ সালে বাংলা একাডেমী আরজ আলী মাতুব্বরকে আজীবন সদস্য পদ প্রদান এবং বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা বৈশাখ নববর্ষ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। ১৩৮৫ বঙ্গাব্দে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন, ১৩৯২ বঙ্গাব্দে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়াও বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ প্রতি বছর তার স্মরনে আরজ আলী মাতুব্বর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে থাকে। মৃত্যুর পরে তাঁর কিছু অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাবলী শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তাঁর কিছু লেখা ইংরেজীতে ভাষান্তর করা হয় এবং পাঠক সমাবেশ কর্তৃক সেগুলো খন্ডাকারে আবদ্ধ করা হয়। এছাড়া তার আরো কতিপয় প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ ১। ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০), ২। স্মরণিকা (১৯৮২)

১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ মোতাবেক বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা চৈত্র বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরলোকগমন করেন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। তিনি তার ৮৫ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। জ্ঞান বিতরণের জন্য তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। মানবতার সেবায় মরণোত্তর চক্ষুদান এবং মেডিকেলের ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর এনাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহদান করেন আরজ আলি মাতুব্বর। দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও লেখক আরজ আলি মাতুব্বরের ১১৭তম জন্ম দিন আজ। প্রথাবিরোধী লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০৯

প্রামানিক বলেছেন: আরজ আলী মাতুব্বর ধর্ম নিয়ে শুধু প্রশ্ন করে গেছেন কিন্তু প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর দেন নাই, ইচ্ছা করলে উত্তর দিতে পারতেন।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই
আরজ আলি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, এক অসাধারণ দার্শনিক।
অতি সাধারণ কিছু প্রশ্নকে অসাধারণ ভাবে তুলে ধরার মধ্যেই
আরজ আলির সার্থকতা। তিনি প্রশ্ন করেছেন এবং নিজে সরাসরি উত্তর দেন নি,
তিনি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন ঈশ্বরবাদীদের থেকে। সবথেকে বড় ব্যাপার হল এই প্রশ্নগুলো
সব ধর্মের জন্যই এতই সাধারণ মানের প্রশ্ন যে তাতে কোন সূত্র নেই। এই ত্রুটি ধরাটাই ভুল।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১০

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ, আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তারেক ভাই
আশা করি আগামীতেও সাথে থাকবেন।
ভালো থাকবেন।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: তার লিখা পড়লে মনে হয়না যে উনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত নন।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এখানেই আরজ আলী মাতুব্বরের স্বার্থকতা।
জানতে হলে পড়তে হয়। তিনি পড়েছেন।
৮৫ বছর জীবন কালে ৭০ বছরই তি্নি
কাটিয়েছেন লাইব্রেরীতে!
ধন্যবাদ লিটন ভাই

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
রাহমান ভাই
ধন্যবাদ আপনাকে

৫| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০২

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: প্রথাবিরোধী লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে
ধন্যবাদ ব্লগ সার্চম্যান।
ভালো থাকবেন।

৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৭

জাহাঙ্গীর কবীর নয়ন বলেছেন: ধর্মান্ধদের, ধর্মব্যবসায়ীদের ভীত নড়িয়ে দিয়েছিলেন ভদ্রলোক। কিন্তু ধর্মকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন নি।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধর্ম নিয়ে খোলা আলোচনা কিংবা বিশ্লেষণ বাংলাদেশের সমাজ-ক্ষমতা অনুমোদন করে না।
ধর্ম নিয়ে আরজ আলীর ভাবনা বা গবেষণা, সর্বোপরি প্রশ্ন উত্থাপন কোন পরিকল্পিত কাজ নয়। বাস্তব জীবনে, শৈশবের একটা ধাক্কাই তাঁকে এই পথে নিয়ে আসে, প্রশ্নের মুখোমুখি তাঁকে দাঁড় করায়, প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে তাঁকে ব্যস্ত রাখে আজীবন। তাঁর আলোচনা, প্রশ্ন, দার্শনিক বিশ্লেষণ আসলে শুধুই ধর্ম গ্রন্থ নিয়ে নয়। ধর্মের গ্রন্থ বা শাস্ত্র আর জনগণের মধ্যে তার উপস্থিতি এক নাও হতে পারে। গ্রন্থ বা ধর্ম জনগণের মধ্যে কীভাবে উপস্থিত তাকে নিয়েই আরজ আলী মাতুব্বরের বিশেষ মনোযোগ। বস্তুতঃজনগণ কিভাবে ধর্মকে গ্রহণ করেন তা শাস্ত্রের উপর নির্ভর করে না। শাস্ত্রই যদি ধর্ম নির্ধারণ করতো তাহলে একটি ধর্ম পৃথিবীর সর্বত্র এবং সর্বকালে একইরকম হতো।

৭| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৪

Ssqure Ahmed বলেছেন: ভালো একজন লেখক।তাঁর প্রথা বিরোধী হয়ে ওঠার ঘটনাগুলোও জানতে আগ্রহী?

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কৃষক-দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর বরাবরই দুঃসাহসী, দুর্দান্ত, দুরন্ত, দুর্বিনীত। অশিক্ষিত সামান্য একজন চাষা নিজ উদ্যোগে স্বশিক্ষিত হয়েছেন। কিন্তু এই শিক্ষা কেবল ‘কোরানে বিজ্ঞান খোঁজার শিক্ষায়’ শিক্ষিত হওয়া নয়, বরং মনের বাতায়ন খুলে দিয়ে ‘আলোকিত মানুষ’ হবার ঐকান্তিক বাসনা। আরজ আলী বিনা প্রমাণে কিছু মেনে নেননি, প্রশ্ন করেছেন, জানতে চেয়েছেন। সে প্রশ্নগুলো সন্নিবেশিত করেছেন ‘সত্যের সন্ধান’ বইয়ে। যে প্রশ্নগুলো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীরাও করতে ভয় পেতেন, সে সব প্রশ্নগুলো তিনি করে গেছেন অবলীলায়, ভাবলেশবিহীন মুখে। এই জন্যই তিনি প্রথা বিরোধী।

ধর্ম আর মানুষ কে কাকে তৈরি করে, কে কাকে পালন করে? এর জবাবই ঠিক করে দেয় একজনের মতাদর্শিক অবস্থান। আরজ আলী এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ধর্ম মানুষকে পালন করে না, বরং মানুষ ধর্মকে পালন করে এবং প্রতিপালনও।” আরজ আলী বলেন, “সাধারণত আমরা যাহাকে ‘ধর্ম’ বলি তাহা হইল মানুষের কল্পিত ধর্ম।” ধর্ম প্রবর্তকদের তিনি অভিহিত করেছেন মহাজ্ঞানী হিসেবে যারা ‘যুগে যুগে’ ‘স্রষ্টার’ প্রতি মানুষের কর্তব্য এবং ‘মানুষের সমাজ ও কর্মজীবনের গতিপথও’ দেখিয়েছেন। তাঁর মতে, এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে অনেক ধর্ম ও তা নিয়ে বিভেদ। অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘাতও সৃষ্টি হয়েছে এটি থেকে।

৮| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৬

সাইন বোর্ড বলেছেন: এক সময় উনার লেখা পড়ার প্রতি একটা অাগ্রহ ছিল, পরবর্তিতে কেন জানি অার ততটা অাগ্রহ পাইনি ।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আবার শুরু করতে পারেন,
অনেক প্রশ্নের জবাব পাবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।

৯| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৭

জেকলেট বলেছেন: উনি প্রথা বিরোধী লেখক এতে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু দুঃখিত উনাকে আমি দার্শনিক হিসেবে মানতে পারলাম না। আরজ আলী সাহেব উনার আসপাসের কিছু কাঠ মোল্লদেরকে দিয়ে ধর্মের বিচার করেছেন। যেমন উনি বলেছেন ইসলামে কবুতরের বিষ্ঠা পাক। কোথায় পেলেন উনি এই কথা রেফারেন্স নাই। এরকম আরো অসংখ্য ব্যাপার উনার বই এ আছে।

আমার পার্সোনাল মতামত উনি জনপ্রিয় কারন উনি ইসলামের এগেইনষ্টে লিখেছেন তাই। এখানে অনেকে লিখবেন যে উনি ত শুধু ইসলাম নিয়া লেখেন নাই বরং সব ধর্মকে নিয়া লিখেছেন। আমার পয়েন্ট টা হচ্ছে উনি ধর্মিয় ষ্টেনডার্ড হিসবে ইসলামকেই সেট করেছেন। এবং প্রশ্নগুলো তুলেছেন এমনভাবে যাতে মনে হয় যাবতিয় সমস্যা শুরু ইসলামে। এই জন্য দেখবেন আরজ আলী সাহেব এই সকল সুবিধাবাদিদের কাছে খুব জনপ্রিয়। কেন ভাই অরুন্দিতি রায় ও ত ধর্মিয় সমালোচানমূলক লেখেন উনাকে নিয়া এত লম্ফ হয়না কেন???
আর উনার লেখার মান আমার কাছে লেগেছে উনি মূলত যে সকল কাঠ মোল্লাদের বিরোধীতা করে লিখা শুরু করেছিলেন সেই সকল কাঠ মোল্লাদের লিখা কিছু বই গ্রামের ওয়াজ বা গাড়িতে ফেরিওয়ালারা বিক্রি করে যাতে লেখা থাকে কোরআনের কোন আয়াত পড়লে কার কি হবে কত ফজিলত বা কোন যাদু টোনা করা যাবে বা বাচা যাবে এই টাইপের রেফারেন্স বিহীন লেখা।

দুঃখিত উনার লেখা পড়ে উনার সম্পর্কে আমার কোন উচ্চ ধারনা তৈরী হয় নাই।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনার নাতিদীর্ঘ মন্তব্যের জন্য। আপনার মন্তব্যের জবাবে আমি আরজ আলীর একটি বানী সংযোজন করছি। তিনি বলেছেনঃ
“ জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে শুধু আপন বিশ্বাসই নয়, সকল মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সকল ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা দরকার প্রতিটি জ্ঞান পিপাসু মানুষের। শুধু সীমাবদ্ধ পরিমন্ডলে আবদ্ধ হলে চলেনা। সীমানাকে অতিক্রম করে যেতে হবে ক্রমান্বয়ে। এর মধ্যেই ক্রমশ অতিক্রম করা যাবে নিজেকে। ”

১০| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: উনারে জাতে তুলছে আমাদের তথাকথিত মুসলিম বুদ্ধিজীবি সমাজ। কারণ, উনি ইসলামের বিপক্ষে লিখেছেন। উনি যদি হিন্দু ধর্ম বিরোধী কিছু লিখতেন তাহলে তেনাকে আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবি সমাজ কখনোই তাকে দার্শনিক বানাতো না...

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে
“ বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রী আছে জ্ঞানের কোনো ডিগ্রী নেই; জ্ঞান ডিগ্রীবিহীন ও সীমাহীন ”
আরজ আলী মাতব্বরের জিগ্রীবিহীন সীমাহীন জ্ঞান ছিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.