নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্রের বিজয়ের ২৭তম বার্ষিকীতে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১১


আজ ৬ ডিসেম্বর, স্বৈরাচার পতন দিবস। গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের এই দিনে পদত্যাগ করেন তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদ দীর্ঘ নয় বছরের শাসনামলে আন্দোলন-সংগ্রাম ঠেকাতে অনেক জাতীয় রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করেন। অন্তরীণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের কারারুদ্ধ করেন এরশাদ। বর্তমানে মহাজোট সরকারের মূল দল আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রমুখও রেহাই পাননি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটসহ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর টানা আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। মুক্তি পায় গণতন্ত্র। ১৯৯০ সালের এই দিনে সামরিক স্বৈর সরকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। এরশাদের প্রায় নয় বছরের শাসনামলেই দেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়। একপর্যায়ে সারা দেশে এরশাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের মুখে অনেক মৃত্যু এবং দীর্ঘ রক্তাক্ত পথ অতিক্রম শেষে এই ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের বুকে চেপে থাকা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। শুরু হয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা। সেই থেকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দিনটিকে স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। নব্বাইয়ে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ৪ ডিসেম্বর রাতে এরশাদ অনেকটা নাটকীয়ভাবে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরদিন (৫ ডিসেম্বর) সব রাজনৈতিক দলের অনুরোধে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ শর্তসাপেক্ষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। আর ১৯৯০ সালের এই তারিখে (৬ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এরশাদ পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ’৯০-এর ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। অবসান ঘটে দেশব্যাপী শ্বাসরু্দ্ধকর পরিস্থিতির। শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক পদযাত্রা। কালের আবর্তে এরপর কেটে গেছে ২৬টি বছর। এই দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়ন হয়নি তিন জোটের সেই ঐতিহাসিক রূপরেখা। বরং দুটি বড় রাজনৈতিক দলের বৈরী মনোভাবের কারণে স্বৈরাচারী এরশাদ ও তার দল জাতীয় পার্টি দেশের রাজনীতিতে বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

গোড়ার কথাঃ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদের ক্ষমতা দখলকে প্রথমদিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে অনেকটাই নীরবে মিলিটারি স্বৈরশাসন মেনে নিতে বাধ্য হন। রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নিলেও ছাত্ররা মেনে নেননি এই সামরিক অভ্যুত্থান। ক্ষমতা দখলের দিনই (২৪ মার্চ ১৯৮২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে পোস্টার লাগাতে গিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর তিন সদস্য গ্রেফতার হন। ওই ছাত্রনেতারা হলেন শিবলী কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান ও আবদুল আলী। পরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। সেই থেকে শুরু হয় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আপসহীন লড়াই। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে শহীদ বেদিতেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মিছিলের খবর শুনে সাভার সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী এসে স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। সরকারি ফরমান ও তত্পরতার কারণে সে সময় সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লাল-কালো অক্ষরে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন অব্যাহত থাকে। ছাত্রদের দেয়াল লিখন সমানে মুছতে থাকে সামরিক সরকারের তল্পিবাহক পুলিশ বাহিনী। পুলিশ যত দেয়ালে সাদা চুন টেনে মুছে ফেলে, ছাত্ররা ততই দেয়াল লিখন চালিয়ে যেতে থাকে। এভাবেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলছিল দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ সময় ছাত্রনেতারা একটি সর্বাত্মক গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়া হয়। সেটাই ছিল সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম লিখিত প্রতিবাদ। সামরিক স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী প্রথম বড় ধরনের আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, যা মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। আর এদিন থেকেই শুরু হয় সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ আমলের রক্ত ঝরার ইতিহাস। এদিন মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কাঞ্চন, জাফর, জয়নাল, আইয়ুব, দিপালী ও ফারুক। ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাম্মেল পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম আহূত সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সকাল প্রায় ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে তাত্ক্ষণিকভাবেই বেশ ক’জন নিহত হয়। নিহতদের ক’জনের লাশ গুম করে সরকার। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। একইসঙ্গে ওই সময় পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় এবং ব্যাপকসংখ্যক ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ছাত্র হত্যা এবং পুলিশি হামলার প্রতিবাদে পরদিন এ আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাবালনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পরদিন সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা এতটাই ব্যাপক ছিল যে, এই বিক্ষোভ এবং ছাত্রহত্যার ঘটনার বিষয়ে পরদিন কোনো পত্রিকায় সরকারের প্রেসনোটের বাইরে অন্য কোনো খবর প্রকাশ হতে পারেনি। এরশাদ তার দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনামলে আন্দোলন-সংগ্রাম প্রতিহত করতে কত মানুষ হত্যা করেছে, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে তার শাসনামলজুড়ে ছিল গণতন্ত্রকামী সংগ্রামীদের মৃত্যুর মিছিল।
১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল চলাকালে নিহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন ও ইব্রাহিম সেলিম। ১ মার্চ নিহত হন শ্রমিক তাজুল ইসলাম। ২৭ সেপ্টেম্বরের হরতালে ঢাকার কালীগঞ্জে নিহত হন রাজনৈতিক নেতা ময়েজ উদ্দিন। এদিন স্বপন কুমার, নেত্রকোনায় তিতাস ও অপর একজন নিহত হন। ঢাকায় পুলিশের গুলিতে এক রিকশাওয়ালা ও ফুটপাতের এক দোকানদার এবং ঢাকার বাইরে আরও দুজন নিহত হন। ২৪ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গায় ফজলুর রহমান নামে একজন নিহত হন। ২২ ডিসেম্বর রাজশাহীতে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় হলের বাবুর্চি আশরাফ, ছাত্র শাজাহান সিরাজ ও পত্রিকার হকার আবদুল আজিজ।
১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া। ১৯ মার্চ হরতাল চলাকালে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ২২ এপ্রিল মিছিলে বোমা হামলায় একজন, ৯ অক্টোবর তেজগাঁও পলিটেকনিকে ৪ জন, ৩০ অক্টোবর ছাত্রনেতা তিতাস, ৩১ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে বিডিআরের গুলিতে ছাত্র স্বপন ও রমিজ নিহত হন। ৭ নভেম্বর আদমজী জুট মিলে ধর্মঘটে হামলায় ১৭ শ্রমিক এবং বিডিআরের গুলিতে তিন শ্রমিক নিহত হন।
১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিহত হন ৫ জন। ১৪ মে হরতালে নিহত হন ৮ জন। ১৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনে নিহত হন ১১ জন। ১০ নভেম্বর হরতাল চলাকালে ঢাকার কাঁটাবন এলাকায় শাহাদত নামে এক কিশোর নিহত হয়।
১৯৮৭ সালের ২২ জুলাই জেলা পরিষদ বিল প্রতিরোধ ও স্কপের হরতালে নিহত হন ৩ জন। ২৪ অক্টোবর শ্রমিক নেতা শামসুল আলম, ২৬ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কৃষক জয়নাল, ১ নভেম্বর কৃষক নেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা, ১০ নভেম্বর নূর হোসেন নিহত হন এবং ১১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবুল ফাত্তাহ, ছাত্র বাবলু, যুবনেতা টিটো, শেরপুরের আমিনবাজারে পুলিশের গুলিতে উমেছা খাতুন, গোলাম মোহাম্মদ আসলাম, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোকন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও তিনজন নিহত হন। এরপর ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছাত্রনেতা দৌলত খান নিহত হন।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় আগত মিছিলে গুলিবর্ষণে নিহত হন ২২ জন। তারা হলেনঃ ক্ষেতমজুর নেতা রমেশ বৈদ্য, হোটেল কর্মচারী জিকে চৌধুরী, ছাত্র মহিউদ্দিন শামিম, বদরুল, শেখ মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন, আলবার্ট গোমেজ, আবদুল মান্নান, কাশেম, ডিকে দাস, কুদ্দুস, পঙ্কজ বৈদ্য, চান মিঞা, হাসান, সমর দত্ত, পলাশ, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, শাহাদাত হোসেন। এ বছর ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনের সময় হামলায় ১৫ জন নিহত হন।

১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর সচিবালয়ে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে ছাত্র জেহাদ ও মনোয়ার, হকার জাকির, ভিক্ষুক দুলাল, ১৩ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মনিরুজ্জামান ও সাধন চন্দ্র শীল, ২৭ অক্টোবর হরতাল চলাকালে ঢাকার বাইরে দুজন, ১৪ নভেম্বর আদমজীতে ১১ জন, ২৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চা দোকানদার নিমাই, ২৭ নভেম্বর ডা. শামসুল আলম মিলন, ২৮ নভেম্বর মালিবাগ রেলপথ অবরোধে দুজন, ৩০ নভেম্বর রামপুরায় বিডিআরের গুলিতে একজন, ১ ডিসেম্বর মিরপুরে ছাত্র জাফর, ইটভাঙা শ্রমিক আবদুল খালেক, এক মহিলা গার্মেন্ট কর্মী ও নুুরুল হুদাসহ সাতজন, আট মাসের শিশু ইমন, নীলক্ষেতে একজন, কাজীপাড়ায় দুজন এবং ডেমরার যাত্রাবাড়ীতে দুজন, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একজন, খুলনার খালিশপুরে মহাব্রজ, নারায়ণগঞ্জের মণ্ডলপাড়ায় এক কিশোর, ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে দুজন; ২৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ময়মনসিংহে দুজন, রাজশাহীতে দুজন, ধানমন্ডিতে একজন ও জিগাতলায় একজন নিহত হন। এভাবে ঘটনাক্রমিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এরশাদ ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে এরশাদ অনেকটা নাটকীয়ভাবে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিজয় অর্জিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈর শাসনের অবসান ঘটে ১৯৯০ সালের আজকের দিনে। স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্রে বিজয়ের ২৭তমবার্ষিকীতে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৮

শাহিন বিন রফিক বলেছেন: সত্যি কি স্বৈরাতন্ত্রের পতন হয়েছে আমাদের দেশে!!!
এরশাদ সাহেবতো এখন বিশাল ক্ষমতাধর ব্যাক্তি।
তাছাড়া বর্তমান দেশে আমার মনে হয় গণতন্ত্রের নামে ডিজিটাল স্বৈরাতন্ত্র চলছে।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার লেখার প্রথম প্যারার শেষে উল্লেখ করেছি,
কালের আবর্তে এরপর কেটে গেছে ২৬টি বছর। এই দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়ন হয়নি তিন জোটের সেই ঐতিহাসিক রূপরেখা। বরং দুটি বড় রাজনৈতিক দলের বৈরী মনোভাবের কারণে স্বৈরাচারী এরশাদ ও তার দল জাতীয় পার্টি দেশের রাজনীতিতে বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



স্বৈরাচার বা এরশাদের পতন কোনদিনও হয়নি, রূপান্তর হয়েছে মাত্র।

এরশাদের পক্ষ থেকে দিনটিকে "ফুলেল শুভেচ্ছা" জানাচ্ছি

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সাধু ! সাধু !!
ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাত ১০ টার ভয়েস অফ আমেরিকার সংবাদ শুনেছি, এর পরে চলছিল,যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মতামতের প্রতিফলন সম্পাদকীয়। সম্পাদকীয়র মাঝামাঝি হঠাত ঘোষণা আসে,’আমাদের কাছে এই মাত্র খবর এসেছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করেছেন। এই সংবাদের পরেই উল্যাসে ফেটে পড়ে দেশ।
দুঃখের বিষয় সেই রাতে আমরা কখনোই ভাবিনি এরশাদ বা তার মন্ত্রিসভার কেউ আবার বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন। এরশাদ যে আবার এমপি হবেন, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হবেন- এমনটা আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
লিটন ভাই
সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে
আশ্চর্য্য হবার কিছু নাই।
রাজাকারের গাড়ীতে যদি
বাংলাদেশের পতাকা উড়তে পারে
তা হলে এরশাদ কেন মন্ত্রী হবেন না।

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:২৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ধন্যবাদ, এত তথ্যকে একসাথে গেথে তুলবার জন্য।।
কিন্তু সেই, সেলিম দেলোয়ার, ডঃ মিলন আর নূর হোসেনদের রক্ত শুধু কাঁদছে।।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
এখানে সক্রেটিসের একটি লাইন
কোট করার লোভ সম্ভরণ করতে পারলাম না
I to die and you to live. Which is the better, only God knows.

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৩

আমি তনুর ভাই বলেছেন: Really very happy to say,your post is very interesting to read.I never stop myself to say something about it.You’re doing a great job.Keep it up

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
Thank you very much dear brother of Tonu.
I am really impressed.
Hope to get you
beside me
always.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.