নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিশিষ্ট বাঙালি লেখক ও চিন্তাবিদ নীরদচন্দ্র চৌধুরী। যিনি ‘নীরদ সি চৌধুরী’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। নীরদ সি চৌধুরী তাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও তীর্যক প্রকাশভঙ্গীর ক্ষুরধার লেখনীর জন্য বিশেষভাবে আলোচিত, বিশেষতঃ বিদেশে নন্দিত ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি তাঁর প্রথম গ্রন্থ দি অটোবায়োগ্রাফি অব অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান (The autography of an unknown Indian) প্রকাশ করেন, যা তাঁকে সর্বাধিক খ্যাতি এনে দেয়। নীরদ চৌধুরীর লেখা ছিল চমৎকার বর্ণনাধর্মী, পরিমিত ও যথাযথ। অটোবায়োগ্রাফির প্রথম কয়েকটি অধ্যায়ে তিনি উনিশ শতক থেকে বিশ শতকে পরিবর্তনকালে ব্রিটিশ শাসনাধীন গ্রামবাংলায় কীভাবে বেড়ে উঠেছেন তার সাবলীল বর্ণনা দিয়েছেন। এটি মূলত তৎকালীন ভারতবর্ষের প্রথা, পারিবারিক কাঠামো, বর্ণপ্রথা, হিন্দু-মুসলিম এবং ভারতীয় ও ব্রিটিশদের মধ্যকার সম্পর্কের একটি জীবন্ত ও অন্তর্বিশ্লেষণমূলক বর্ণনা। নীরদ চৌধুরী তাঁর অটোবায়োগ্রাফি গ্রন্থটি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্মরণে উৎসর্গ করেন। ভারতে অটোবায়োগ্রাফি গ্রন্থটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও এর কারণেই ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (BBC) নীরদচন্দ্রকে ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ড সফরের আমন্ত্রণ জানায়। তাঁর এই সফরকে ভিত্তি করেই তিনি রচনা করেন এ প্যাসেজ টু ইংল্যান্ড গ্রন্থটি। এতে তিনি ব্রিটিশ জীবন-যাপন পদ্ধতি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে তিনি স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন। চিন্তাবিদ নীরদচন্দ্র উপমহাদেশে নানা কারণে বিতর্কিতও ছিলেন। নীরদ চৌধুরীর উপরিউক্ত গ্রন্থে ‘আমি ব্রিটিশ নাগরিক’ (Civis Britannicus sum) এই উক্তিকে প্রায় প্রত্যেক সমালোচকই চ্যালেঞ্জ করেন। ব্রিটিশদের প্রতি এই অনুরাগ ও প্রশংসা তাঁকে ভারতীয়দের কাছে বিতর্কিত এবং অপ্রিয় করে তোলে। এতদসত্তে ও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে নীরদচন্দ্র চৌধুরী স্কলার এক্সট্রাঅর্ডিনারী শীর্ষক ম্যাক্স মুলারের জীবনী লিখে ভারত সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা হিসেবে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। আজ এই চিন্তাবিদের ১২০তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৭ সালের আজকের দিনে তিনি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে জন্মগ্রহণ করেন। খ্যাতনামা মননশীল লেখক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ নীরদচন্দ্র চৌধুরী জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নীরদচন্দ্র চৌধুরী ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশের) কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ও মাতা সুশীলা সুন্দররানী চৌধুরানী। তিনি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ এবং কলকাতায় পড়াশোনা করেছেন। এফএ পরীক্ষা পাশ করে তিনি কলকাতার রিপন কলেজে (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ)। এর পর স্কটিশ চার্চ কলেজের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯১৮ সালে ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টেনে ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিসাবরক্ষণ অধিদফতরে কেরানি হিসেবে নীরদ চৌধুরীর কর্মজীবনের সূত্রপাত হয়। চাকরির পাশাপাশি একই সময়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ রচনা করতে থাকেন। জনপ্রিয় সাময়িকীগুলোতে নিবন্ধ পাঠানোর মাধ্যমে লেখালেখিতে তার পদাপর্ণ। প্রথম নিবন্ধটি ছিল অষ্টাদশ শতকের বিখ্যাত বাঙালী কবি ভারতচন্দ্রের ওপর। এটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত ইংরেজি ম্যাগাজিন ‘মডার্ন রিভিউ’তে স্থান পায়। কিছুদিন পর নীরদ চৌধুরী হিসাবরক্ষণ অধিদফতরের চাকরি ত্যাগ করেন এবং সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে নতুন কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২৬ সালে ‘মডার্ন রিভিউ’তে রমানন্দ চ্যাটার্জির অধীনে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ১৯২৭ সালে বাংলা সাময়িকী ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ বছরই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে। ১৯৩৭ সালে রাজনীতিবিদ শরৎচন্দ্র বসুর একান্ত সচিব হন। ফলশ্রুতিতে তিনি খ্যাতিমান মহাপুরুষ যেমন: মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু-সহ অনেক খ্যাতিমান রাজনৈতিক নেতাদের সংস্পর্শ পান। ভারতীয় রাজনীতির অভ্যন্তরে কাজ করার দরুণ ও রাজনীতির সাথে নিবীড় ঘনিষ্ঠতা থাকায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি সম্বন্ধে সন্দিহান হন। নীরদ চন্দ্র চৌধুরী স্বাধীনতা আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এ পর্যায়ে তিনি বাংলা ভাষায় লেখালিখি ছেড়ে দেন। ১৯৪১ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর দিল্লি শাখায় কর্মজীবন শুরু করেন।
নীরদচন্দ্র চৌধুরীর আলোচিত বই ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অব এ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ (The autobiography of an unknown Indian) প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে। আত্মজীবনীমূলক এই বইটিতে তিনি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্মরণে উৎসর্গ করেন। নীরদ চৌধুরী তাঁর লেখনীতে ভারতবর্ষের যা কিছু ভাল, যা এ দেশের মানুষের জীবন-পদ্ধতিকে উন্নত করেছে, জীবনধারায় গতি এনেছে বা প্রগতিকে দ্রুততর করেছে, তার সবকিছুকেই ব্রিটিশ শাসনের সুফল বলে দাবি করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ভারতবর্ষের জনগণ প্রজার খেতাব পেলেও ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পায়নি। তাই নীরদ চৌধুরীর ‘আমি ব্রিটিশ নাগরিক’ উক্তিকে প্রায় প্রত্যেক সমালোচকই চ্যালেঞ্জ করেন। ফলশ্রুতিতে অটোবায়োগ্রাফি গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই তিনি আকাশবাণীর চাকরি হারান। প্রতিহিংসায় তখন থেকেই তাঁর প্রতিটি লেখায় তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। প্রথমদিকে তাঁর লেখাগুলিকে সমালোচক ও পাঠকরা যাচ্ছে-তাই বলে অভিহিত করেন; পরে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করেন; কেউ কেউ তাঁকে শেষ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী বলেও অভিহিত করেন। তিনি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায়ই লিখেছেন। ইংরেজিতে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১১ এবং বাংলায় ৫টি। নীরদচন্দ্র চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ ১। আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ, ২। বাঙালী জীবনে রমণী, ৩। আত্মঘাতী বাঙালী, ৪। শতবার্ষিকী সংকলন, ৫। আমার দেশ আমার শতক, ৬। From The Archives of a Centenarian, ৭। Why I Mourn England, ৮। A passage to England, ৯। The intellectuals in India, ১০। Scholar Extraordinary the life of Professor the Rt. Hon. Fredrick Max Muller ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংকলন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। উপরোল্লিখিত গ্রন্থগুলো ছাড়াও তাঁর কিছু অপ্রকাশিত, বিশেষ করে অগ্রন্থিত রচনা রয়ে গেছে। পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ নীরদচন্দ্র চৌধুরী ১৯৯০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি, ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডের রাণী কর্তৃ কমান্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (CBE) উপাধি লাভ করেন। এ ছাড়া ডাফ কুপার মেমোরিয়াল পুরস্কার (১৯৫৬), আনন্দ পুরস্কার (১৯৮৯), বিদ্যাসাগর পুরস্কার (১৯৯৭) ইত্যাদিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন নীরদচন্দ্র চৌধুরী।
১৯৯৯ সালের ১ আগস্ট ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে মৃত্যুবরণ করেন নীরদচন্দ্র চৌধুরী। মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র তাঁর সমুদয় পুস্তক ও চিত্রকর্ম ক্যালকাটা ক্লাবকে দান করেন। ক্লাব উক্ত দ্রব্যাদি দিয়ে ‘নীরদ চৌধুরী কর্নার’ স্থাপনের মাধ্যমে তাঁর প্রতি মরণোত্তর সম্মান প্রদর্শন করে। ক্ষণজন্মা সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ নীরদ চন্দ্র চৌধুরীর আজ ১২০তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে তাকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভেচ্ছায়।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ শাহচুল হক ভাই,
এখন আর গুণীজনদেরকে
কেউ সম্মান দিতে চায়না,
কার্পণ্য করে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২৩
শামচুল হক বলেছেন: নীরদ চন্দ্র চৌধুরীর আজ ১২০তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে তাকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভেচ্ছায়।