নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা জীবন দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আসফাকউল্লাহর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।আসফাকউল্লাহ খান ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভারতীয় মুসলিম যাকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ২৭ বছর। মাতৃভূমির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিলো অতুলনীয়। একজন হিন্দি কবি অগ্নিবেশ শুক্লা "আশফাক কী আখিরি রাত" নামে একটি দারুণ কবিতা লিখেছিলেন যেটাতে তিনি ভারতের এই মহান সন্তানের আবেগকে প্রকৃত অর্থেই ফুটিয়ে তুলেছেন। এক বন্ধুর বিশ্বাস ঘাতকতায় পুলিশের জালে ধরা পড়েন আসফাকসহ ১৯জন ধরা পরেন। তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়। যা কাকোরী মামলা নামে পরিচিত। মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কাকোরী মামলায় আসফাকসহ আরো তিন সাহসীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন, পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান, রাজেন্দ্র লাহিড়ী এবং ঠাকুর রোশন সিং। বাকি ১৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে চার বছর থেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আসফাকউল্লা খান এবং তাঁর সহকর্মীদের কাজকে সম্প্রতিকালে বলিউডের চলচ্চিত্র "রঙ দে বাসন্তীতে" আমির খানের চিত্রায়নে চিত্রিত করা হয়েছে। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুনাল কাপুর। আজ এই বিপ্লবীর ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী আসফাকউল্লাহ খান এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
বিপ্লবী আসফাকউল্লাহ খান ১৯০০ সালের ২২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে। তাঁর পিতা, শফিক উল্লা খান পাঠান পরিবারের মানুষ ছিলেন এবং তাঁর পরিবার সামরিক দিক দিয়ে বিখ্যাত ছিলো। তাঁর মায়ের দিক থেকে পরিবারটি ছিলো অধিক শিক্ষিত এবং অনেক আত্মীয় ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মা মাজহুর-উন-নিসা ছিলেন একজন ধার্মিক নারী। আশফাকউল্লা ছিলেন চার ভায়ের ভেতরে সবচেয়ে ছোট ছেলে। তাঁর বড় ভাই রিয়াসাত উল্লাহ খান ছিলেন পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিলের সহপাঠী। ১৯২০ সালে, যখন বিসমিল শাহজাহানপুরে আসেন এবং ব্যবসায় নিজেকে যুক্ত করেন, আশফাক বহুবার বিসমিলের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন কিন্তু বিসমিল কোনো মনোযোগ দেননি। ১৯২২ সালে, যখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, বিসমিল জনগণকে আন্দোলন সম্পর্কে বলার জন্য শাহজাহানপুরে সভা সংগঠিত করেন। আশফাক তাঁর সাথে জনসভায় সাক্ষাত করেন এবং নিজেকে তাঁর সহপাঠীর ছোটভাই হিসেবে পরিচয় দেন। কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন দেশজুড়ে বিপ্লবী ভাবধারার জোয়ার আনে। বিপ্লবীরা বুঝেছিলেন যে অহিংসার নরম কথার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা আসবে না এবং তাই তারা ভারতে বসবাসকারী ব্রিটিশদের ভেতরে ভীতির সঞ্চারের জন্য বোমা, রিভলভার এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে চাইলেন। তাঁদের কার্যক্রম চালানো এবং অস্ত্রশস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে, বিপ্লবীরা ৮ই আগস্ট, ১৯২৫ তারিখে শাহজাহানপুরে একটি সভায় বসেন। সিদ্ধান্ত হয় যে তারা সরণপুর লখনৌ চলাচলকারী ৮-ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন বহনকারী সরকারি কোষাগার লুট করবেন। ৯ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে কাকোরীতে আসফাকউল্লা খান এবং অন্য আটজন বিসমিলের নেতৃত্বে ট্রেন লুট করেন। হতচকিত ব্রিটিশ সরকার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্তে নামায়। ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫ তারিখ সকালবেলা পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের পুলিস গ্রেপ্তার করে কিন্তু আসফাক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে মূর্ত সহায়তার জন্য লালা হর দয়ালের সাথে সাক্ষাত করতে চেয়েছিলেন। বিদেশে গিয়ে বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। তিনি কীভাবে দেশ ত্যাগ করবেন তা বের করতে দিল্লি যান, সেখানে তিনি তার একজন পাঠান বন্ধুর সহায়তা নেন এবং সেই বন্ধুটিই বিশ্বাসঘাতকতা করে পুলিশকে জানিয়ে দেয় এবং আসফাককে পুলিস গ্রেপ্তার করে। আসফাকউল্লা খানকে ফৈজাবাদ জেলে প্রেরণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়। যা কাকোরী মামলা নামে পরিচিত। তাঁর ভাই রিয়াসাত উল্লা খান কৃপা শঙ্কর হাজেলা নামে একজন সিনিয়র উকিল নিয়োগ করেন। মি. হাজেলা শেষ পর্যন্ত মামলাটি পরিচালনা করেন কিন্তু তাঁর জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হন। তাঁদের শাস্তি যাতে কম সেজন্য কংগ্রেসের তরফে পন্ডিত মোতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু রক্তলোলুপ ব্রিটিশ সরকারকে নিরস্ত করা যায়নি। কাকোরী মামলা চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে শেষ হয়, তাঁরা হলেন, পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান, রাজেন্দ্র লাহিড়ী এবং ঠাকুর রোশন সিং। বাকি ১৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে চার বছর থেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭ সোমবার, আসফাকউল্লা খানকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তাঁকে শিকল থেকে মুক্ত করা হয়, তিনি ফাঁসির দড়ির কাছে যান এবং সেটিকে চুমু খেয়ে বলেনঃ “আমার হাত কোনো মানুষ হত্যা করেনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আল্লাহ্ আমাকে ন্যায়বিচার দেবেন।” অবশেষে তিনি স্পষ্টভাবে কলেমা উচ্চারণ করেন “লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ”। তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় এবং দেশ হারায় এক বীর বিপ্লবীকে। আজ এই মহান বিপ্লবীর ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী আসফাকউল্লাহ খান এর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ শাইয়্যান
আল্লাহ আপনার প্রার্থনা
কবুল করুন। আমিন-
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১১
মলাসইলমুইনা বলেছেন: আসফাকউল্লা খান সম্পর্কে জানতাম না | সিনেমা দেখিনা একদমই |আমির খানের সিনেমাটার কথাও জানতাম না | যাক সিনেমা না দেখার জন্য এখন আর আফসোস নেই আপনার লেখা পড়েইতো জানা হলো | সুন্দর একটা লেখার জন্য অনেক ধব্যবাদ রইলো |
২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে যত্নসহকারে
লেখাটি পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ খান বলেছেন: সুন্দর একটা লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ |
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ,
ভালো থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: আল্লাহ উনার সকল গুনাহ মাফ করে ক্ষমা করে দিন।
পোস্টটি প্রিয়তে নিলাম।