নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বাঙালী নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ ব্যক্তিত্ব। তত্কালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং আজকের দিনে জীবন বিসর্জন করেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে প্রীতিলতার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ চালানো হয়। এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো "কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ"। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমন করে এবং সফল অভিযান শেষে ফেরার সময় তাঁর গায়ে একটি গুলি লাগে। আহত প্রীতিলাতা পুলিশের হাতে ধরা দেয়ার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয় জ্ঞান করে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন। তার সঙ্গী কালী কিংকর দে’র কাছে তিনি তাঁর রিভলবারটা দিয়ে আরো পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে, কালী কিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করে। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তীতে প্রীতিলতাকে সনাক্ত করেন। প্রীতিলতা মারা যাওয়ার আগে মায়ের কাছে লিখেছিলেন, 'মাগো, অমন করে কেঁদোনা! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উত্সর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?' বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৩তম আত্মাহুতি দিবস আজ। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৫তম আত্মাহুতি দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
১৯১১ সালে ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বীর কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তার ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এই গ্রাম ছিল বিপ্লবীদের প্রধান ঘাঁটি। তাঁর পিতা জগবন্ধু ছিলেন চট্টগ্রাম পৌরসভার হেড ক্লার্ক এবং মাতা প্রতিভাদেবী ছিলেন গৃহিণী। জগবন্ধু পরিবারের আদি পদবী ছিল দাশগুপ্ত। তাঁদের বংশের কোনো এক পূর্বপুরুষ নবাবী আমলে 'ওয়াহেদেদার' উপাধি পেয়েছিলেন। সেই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার হয়। বাবার মৃত্যুর পর জগবন্ধু শৈশবে পৈত্রিক বাড়ী ডেঙ্গাপাড়া ত্যাগ করে মায়ের সাথে পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে চলে আসেন। ধলঘাট ছিল তাঁর মামা বাড়ি। এখানেই তিনি বড় হন এবং বসতি স্থাপন করেন। প্রীতিলতার পড়াশুনার হাতেখড়ি বাবা, মায়ের কাছে। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। যে কারণে জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার মেয়েকে ১ম ও ২য় শ্রেণিতে ভর্তি না করিয়ে ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে সরাসরি তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করান । এটি ওই সময়ের অন্যতম নারী শিক্ষালয় ছিল। এই নামকরা স্কুলে প্রতিটি শ্রেণীতে তিনি প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ছিলেন। ৮ম শ্রেণীতে প্রীতিলতা বৃত্তি পান। ওই স্কুল থেকে প্রীতিলতা ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করার পর ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। থাকেন কলেজের ছাত্রীনিবাসে। এ সময় প্রীতিলতা বিপ্লবী লীলা নাগের সংস্পর্শে আসেন। তখন বিপ্লবী লীলা নাগের নেতৃত্বে 'দীপালী সংঘ' সংগঠনটি পরিচালিত হত। দীপালী সংঘ ছিল 'শ্রীসংঘ'-এর মহিলা শাখা সংগঠন। 'শ্রীসংঘ' ছিল তখনকার ঢাকার একটি বিপ্লবী দল। আই.এ. পরীক্ষা শেষ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে চলে আসেন। সূর্যসেনের সাথে প্রীতিলতার ভবিষৎ কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। কিছুদিন পর প্রীতিলতার আই.এ. পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি পাবেন তিনি। ঠিক হলো কলকাতার বেথুন কলেজে পড়াশুনা করবেন। ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে বি.এ. ভর্তি হলেন প্রীতিলতা।
১৯২৯ সালে পূজার ছুটিতে কল্পনা দত্ত, সরোজিনি পাল, নলিনী পাল, কুমুদিনী রৰিতকে নিয়ে প্রীতিলতা চট্টগ্রাম আসেন। বোমার খোলগুলো পৌঁছে দেন বিপ্লবীদের হাতে। মাষ্টারদার নির্দেশ অনুযায়ী প্রীতিলতা এরপর প্রকাশ্য বিপ্লবী কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভারও তাঁকে নিতে হয়। কলকাতায় যে বিপ্লবী চক্র গঠন করা হয়েছে, তাঁদের সকল প্রকার প্রশিক্ষণও প্রীতিলতাকে দিতে হতো। বি.এ. শেষ বর্ষে পড়ার সময় চট্টগ্রামের অস্ত্রগার দখল, জালালাবাদ সংঘর্ষ ও সেই যুদ্ধে তাঁর আত্মীয় শহীদ হওয়ায় লেখাপড়ায় তিনি অমনোযোগী হয়ে ওঠেন এবং রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির পর থেকে তিনি বি.এ. পরীক্ষা না দেয়ার জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু তাঁর শুভাকাংক্ষীদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বি.এ. পরীক্ষা দিয়ে ডিসটিংশনে পাস করলেন তিনি। বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনকে চোখে দেখার ব্রত তিনি আগেই নিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল তাঁর নির্দেশে দেশ মাতৃকার জন্য একটা কিছু করার। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মহানায়ক সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম দখল হলো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন অচল হয়ে গেলো। টেলিগ্রাফ-টেলিফোন বিকল, সরকারি অস্ত্রাগার লুন্ঠন, রিজার্ভ পুলিশ ছত্রভঙ্গ ও রেললাইন উপড়ে ফেলা হলো। স্বদেশী বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম শহর দখল করে ফেলেছে। এ সময় প্রীতিলতা কলকাতায়। চট্টগ্রামে আসার জন্য ব্যাকুল। সশস্ত্র বিপ্লবে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তখনো পর্যন্ত মাষ্টারদার অনুমতি মেলেনি। বি.এ. পরীক্ষা শেষে মাষ্টারদার নির্দেশে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে চলে আসেন। ১৯৩২ সালে বি.এ. পাস করার পর চট্টগ্রাম অপর্ণাচরণ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ সময় বিপ্লবী কাজে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিলেন মাষ্টারদা সূর্যসেন।
১৯৩২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে এক গোপন বৈঠকে মাস্টারদার নির্দেশে প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করার জন্য একটি গ্রামের উদ্দেশ্যে পুরুষের বেশে রওনা দেন। কিন্তু পথে পাহাড়তলীতে কল্পনা দত্ত ধরা পড়েন। প্রীতিলতা নিরাপদে নির্দিষ্ট গ্রামে এসে পৌঁছেন। এখানেই প্রীতিলতার নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয় ।আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য কাট্টলীর সাগরতীরে প্রীতিলতা ও তাঁর সাথীদের অস্ত্র শিক্ষা শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বীরকন্যা প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল হন। আক্রমণ শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ অবস্থায় ধরা পড়ার আগে সঙ্গে রাখা সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মাহত্যা করেন তিনি। কারণ ধরা পড়লে বিপ্লবীদের অনেক গোপন তথ্য ব্রিটিশ পুলিশের মারের মুখে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তাই কটি সফল অপারেশন সম্পন্ন করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘটনাস্থলেই পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পটাসিয়াম সায়ানাইড খান। আজ এই বীর কন্যার ৮৫তম আত্মাহুতি দিবস। আত্মাহুতির এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বিপ্লবী বীর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ মাইনুল ভাই
চমৎকার ছড়ায় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৪
নীলপরি বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো । পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ ।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকেও নীলপরি ।
ভালো থাকবেন।
৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১১
প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: আপনার উপর একটা দ্বায়িত্ব দিতে চাই। এরকম প্রকৃত বীরদের জীবনী আপনি বিশদ বিবরণ সহ প্রকাশ করবেন নিয়মিত্ । ধন্যবাদ।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গুরু দ্বায়িত্ব !!
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রতিলতাকে নিয়ে আমার কবিতা নিম্নরূপ-
প্রীতিলতা একটি নাম
এক কিংবদন্তী
বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে
তোমার আত্মাহুতিতে
জাতির চেতনা জেগেছে
মোরা যুগে যুগে স্মরিব তোমারে
পালিত হবে বিপ্লবী অভিযানের
রজত জয়ন্তী।
তুমি সূর্য সেনের সহচরী
তুমি সূর্য কন্যা
বাঙালির মানসে এনেছিলে
পলাশীর পরাজয়ে
পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গা বন্যা,
তোমারে মোরা ডাকিব চিরকাল
বিপ্লবী অগ্নিকন্যা।
প্রীতিলতা একটি নাম
একটি সাহসী অনুপ্রেরণা
তুমি বাংলার, বীর চট্টলার
সোনার কন্যা।
ধন্যবাদ আপনাকে নুরু ভাই।