নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ভাষা সংগ্রামী, প্রগতিবাদী কথাসাহিত্যিক, বহুকাল দর্শী-বিরল ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দীন। ধর্ম নিরপেক্ষ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী একজন প্রগতিশীল লেখক। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি কর্মজীবনে ছিলেন প্রতিষ্টিত সাংবাদিক। উপন্যাস, ছোট গল্প ও মননশীল প্রবন্ধ লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। এরমধ্যে সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় ১৯৮৩ সালে একুশে পদক উল্লেখযোগ্য। কীর্তিমান এই গুণী মানুষ ১৯৮৯ সালের আজকের দিনে তি্নি মৃত্যুবরন করেন। আজ তার ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রগতিবাদী কথাসাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৯১১ সালের ১২ মার্চ ঢাকার গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবু জাফর শামসুদ্দীন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আক্কাস আলী ভূইয়া। আবু জাফর শামসুদ্দীন ছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ একজন প্রগতিশীল লেখক। ১৯২৪ সালে স্থানীয় একডালা মাদ্রাসা থেকে জুনিয়র মাদ্রাসা পরীক্ষায় ও ১৯২৯ সালে ঢাকা সরকারি মাদ্রাসা থেকে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় পাস করেন। আবু জাফর শামসুদ্দীন যেসময় মাদ্রাসায় পড়েছেন, সে সময় মাদ্রাসা থেকে বড় বড় জ্ঞানী গুণীর জন্ম হতো। তিনি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন বলেই সর্বপ্রথম ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন ও ধর্মের নামে যারা গোমরাহি করেন তাদের বিরুদ্ধে সাহসী লেখনীর মাধ্যমে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় পাশ করার পর কিছুদিন তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সাংবাদিকতায় যোগ দেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি দৈনিক সুলতানের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি সরকারের সেচ বিভাগে যোগ দেন। ১৯৪২ সালে সেচ বিভাগের কাজ পরিত্যাগ করে কটকে নির্মাণাধীন বিমানঘাটি তদারকি অফিসের হেড ক্লার্ক পদে যোগ দেন। কয়েক মাস পর তিনি এ চাকরি ছেড়ে আবার সাংবাদিকতা শুরু করেন। এ সময় তিনি দৈনিক আজাদে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালের অক্টোবরে পত্রিকাটি কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসার পর তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে আজাদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হলে তিনি প্রকাশনা ব্যবসা সংস্থা কিতাবিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫০-৫১ সালে তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কাগমারীর সাংস্কৃতিক সম্মেলনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এ দলের সঙ্গে জড়িত হন এবং কিছুদিন ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমির অনুবাদ বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে তিনি এ চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর তিনি দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে পূর্বদেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি দৈনিক সংবাদে যোগ দেন। সংবাদে তিনি অল্পদর্শী ছদ্মনামে বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা নামে কলাম লেখেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন।
আবু জাফর শামসুদ্দীন ছিলেন একজন ঐতিহাসিক যুগসন্ধির সন্তান এবং বহুদর্শী-বিরল ব্যক্তিত্ব। তাঁর কথাসাহিত্যে যেমন তৃণমূল মানুষের জনজীবন উঠে এসেছে তেমনি তাঁর প্রবন্ধ-নিবন্ধের মধ্য দিয়ে তিনি শক্তিশালী করেছেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণাকে। পাণ্ডিত্য তাকে অহংকারী করেনি। দায়বদ্ধ করেছে নিজের ভাষা, দেশ, সমাজ ও মানুষের প্রতি। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন বৃহত্তর লক্ষ্যে। জীবনের বৈচিত্র্য তার সৃষ্টিকর্মকে দিয়েছে অনন্য সমৃদ্ধি। এই উত্তালতার প্রভাব তাঁর সাহিত্যকর্মেও প্রতিফলিত হয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণার বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে আবু জাফর শামসুদ্দীন তার তিন উপন্যাস ‘সংকর সংকীর্তন’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান’র মধ্য দিয়ে মূলত বাঙালির নৃতাত্ত্বিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিযাত্রাকে ধারণ করেছেন। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ শীর্ষক বিশালকায় উপন্যাসও উপর্যুক্ত প্রেক্ষিতে বিচার্য। অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুক্তির আকাক্সক্ষা ও বাঙালির শাশ্বত স্বাধীনতার সাধনা এই উপন্যাসের চরিত্র ও কাহিনী বিস্তারে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। বিপ্লবী সমাজবাদ তাঁর কথাসাহিত্যের নেপথ্যে সক্রিয় ছিল। এপিক উপন্যাসের কাঠামোয় তিনি ধরতে চেয়েছেন বিশাল বাংলাকে। পাশাপাশি তার ভাবনাশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধে ধ্বনিত হয়েছে বৃহত্তর মানবের মুক্তির গান। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ১। উপন্যাসঃ পরিত্যক্ত স্বামী, মুক্তি, ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান, পদ্মা মেঘনা যমুনা, সংকর সংকীর্তন, প্রপঞ্চ, দেয়াল। ২। গল্প গ্রন্থঃ জীবন, শেষ রাত্রির তারা, রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা, ল্যাংড়ী, নির্বাচিত গল্প। ৩। প্রবন্ধ গ্রন্থঃ চিন্তার বিবর্তন ও পূর্ব পাকিস্তানী সাহিত্য, সোচ্চার উচ্চারণ, সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাস, মধ্যপ্রাচ্য, ইসলাম ও সমকালীন রাজনীতি, লোকায়ত সমাজ ও বাঙালি সংস্কৃতি, বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা ইত্যাদি।
ত্রিকালদর্শী প্রখ্যাত সহিত্যিক সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দীন ১৯৮৯ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন। আবু জাফর শামসুদ্দীন ছিলেন একজন স্বনির্মিত মানুষ। উপন্যাস, ছোট গল্প ও মননশীল প্রবন্ধ লিখে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উপন্যাসে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮) ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় ১৯৮৩ সালে একুশে পদক উল্লেখযোগ্য। আজকের প্রজন্ম আবু জাফর শামসুদ্দীনের নিবিড় পাঠে খুঁজে পাবেন প্রগতিপথে অগ্রসরের সার্থক নির্দেশনা। আবু জাফর শামসুদ্দীন ছিলেন প্রকৃত পক্ষেই একজন শিকড়সন্ধানী মানুষ। বাংলার লোকসমাজ ও লোকসংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুধ্যান তাকে দিয়েছিল জীবনপাঠের সমগ্র দৃষ্টি। পরিবেশ-প্রতিবেশে প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন বৃহত্তর লক্ষ্যে। জীবনের বৈচিত্র্য তার সৃষ্টিকর্মকে দিয়েছে অনন্য সমৃদ্ধি। বর্তমানে ধর্ম রক্ষার নামে সমাজে যে গোমরাহি শুরু হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের সবাইকেই আবু জাফর শামসুদ্দীনের জীবনাদর্শের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। তাই বিপ্লবী মানবতাবাদী আবু জাফর শামসুদ্দীনের লেখা পাঠ করা এ বৈরী সময়ে বড় প্রয়োজন। মহৎ মূল্যবোধের সাধক কীর্তিমান এই গুণী মানুষের ২৮তম মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই,
কেমন আছেন? ছুটির দিনে !!
সব কুশলতো?
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০
চাঁদগাজী বলেছেন:
"ত্রিকালদর্শী ", কোন কোন কালের সমন্ময়ে "ত্রিকাল" হয়?
২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজী ভাই ধন্যবাদ আপনার জানার আগ্রহের জন্য।
ত্রিকাল (বিশেষ্য পদ) ত্রিকাল শব্দের অর্থঃ স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ < অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এই তিন কাল; সর্বকাল
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
"আবু জাফর শামসুদ্দীন ছিলেন একজন স্বনির্মিত মানুষ। "
-কি ধরণের মানুষকে " স্বনির্মিত মানুষ" বলতে চাচ্ছেন আপনি?
২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আবারো ধন্যবাদ আপনাকে,
আবু জাফর শামসুদ্দীন ছিলেন একজন স্বনির্মিত মানুষ। পরিবেশ-প্রতিবেশে প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন বৃহত্তর লক্ষ্যে। জীবনের বৈচিত্র্য তাঁর সৃষ্টিকর্মকে দিয়েছে অনন্য সমৃদ্ধি। বাঙালী জাতীয়তাবাদী ধারণার অন্যতম বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্গাতা আবু জাফর শামসুদ্দীন তাঁর ত্রয়ী উপন্যাস সংকর সংকীর্তন, পদ্মা মেঘনা যমুনা ও ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যানের মধ্য দিয়ে মূলত বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিযাত্রাকে ধারণ করেছেন। পাশাপাশি তাঁর ভাবনাশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধে ধ্বনিত হয়েছে বৃহত্তর মানবের মুক্তির গান। আজকের প্রজন্ম আবু জাফর শামসুদ্দীনের নিবিড় পাঠে খুঁজে পাবেন প্রগতিপথে অগ্রসরের সার্থক নির্দেশনা। এজন্য আমি তাকে স্বনির্মিত মানুষ বলে আখ্যায়িত করছি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪
প্রামানিক বলেছেন: প্রগতিবাদী কথাসাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।