নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ফিলিস্তিনীদের অবিসংবাদিত নেতা, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত গেরিলা, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত। পিএলওর চেয়ারম্যান হিসাবে আরাফাত ইসরায়েলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই করেছেন কূটনৈতিকভাবে এবং যুদ্ধের ময়দানে। সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য। দল-মত-নির্বিশেষে ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ আরাফাতকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসাবে সম্মান করে থাকে। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় আরাফাত ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৮-১৯৬০ সালের মধ্যে তিনি এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের সম্পূর্ন বিরোধী থাকলেও পরে আরাফাত ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ২৪২ মেনে নিয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। জীবনের শেষভাগে আরাফাত ইসরাইলী সরকারের সাথে কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা শুরু করেন। ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ সম্মেলন, ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি সম্পাদন করেন। ১৯৯৪ সালে আরাফাত ইজহাক রাবিন ও শিমন পেরেজ এর সাথে অসলো শান্তি চুক্তির জন্য একত্রে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইয়াসির আরাফাত। ফিলিস্তিনী মুক্তিকামী এই নেতা ১৯২৯ সালের আজকের দিনে মিসরের কায়রোতে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।
ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯২৯ সালের ২৪ আগস্ট মিসরের কায়রোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ আবদেল রহমান আব্দেল রউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী। তার বাবা আবদেল রউফ আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী ছিলেন ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসী। মা জোয়া আবুল সাউদ ছিলেন জেরুজালেমের অধিবাসী। আরাফাতের চার বছর বয়সে মা মারা যান। ১৯৪৪ সালে কায়রোর ইউনিভার্সিটি অব কিং ফুয়াদ ওয়ানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেন। এরপরে তিনি ইহুদিবাদ ও জায়ানিজম সম্পর্কে পড়াশুনা করেন। বিভিন্ন সময়ে থিওডর হাজেল ও খ্যাতনামা জায়োনিস্টের সঙ্গে আলোচনা করেন। একই সময় ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়ে অন্যান্য আরবদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তবে ফেদাইনের সঙ্গে যোগ না দিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তিনি এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি গাজা এলাকার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না থাকায় কায়রো ফিরে যান। ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৫২ সাল থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত জেনারেল ইউনিয়ন অব প্যালেস্টাইনিয়ান স্টুডেন্টস বা জিইউপিএসের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মিসরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। কিছুদিন কুয়েতে শিক্ষকতাও করেন। এ সময় মুসলিম ব্রাদারহুডের আবু খলিল আল ওয়াজির বা আবু জিহাদ তার বন্ধুতে পরিণত হয়। ফিলিস্তিন মানব ইতিহাসের একটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টান্ত। যে দেশ, যে ভূখণ্ড একদিন ফিলিস্তিনিদের ছিল, সেখান থেকে তারা ব্যাপকভাবে বিতাড়িত। হাজার বছরের মাতৃভূমি দখল করে নিয়েছে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইহুদিরা। পুরো ঘটনাটি ঘটেছে বিশেষ করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের পর আন্তর্জাতিক শক্তিধরদের সহায়তা, উদ্যোগ ও উসকানিতে। পৃথিবীর ইতিহাসে এতবড় অন্যায় আর কোথাও হয়েছে কি-না সন্দেহ। একটি ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠীকে অস্ত্রবলে উচ্ছেদ করে সেখানে একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া মানব সভ্যতার ইতিহাসে চরম বর্বরতার এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত। অস্ত্র ও অর্থবলে দুর্বল ফিলিস্তিনিরা তাদের কাছ থেকে দখলকৃত মাতৃভূমি উদ্ধারের জন্য বহু পন্থায় বহু রকম প্রয়াস চালিয়েছে।
আরব-ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরো তিনটি যুদ্ধ হয়। এতে ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। মুক্তির সংগ্রামের লক্ষ্যে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইয়াসির আরাফাত ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান। তিনি ফিলিস্তিনের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল ফাতাহরও নেতা ছিলেন। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) হিসাবে আরাফাত ইসরায়েলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করেন। পিএলও কোনো মনোলিথিক (monolithic) অর্গানাইজেশন ছিল না। এ সংগঠনের ছাতার নিচে আরও কিছু সংগঠন ছিল। যেমন জর্জ হাবাসের নেতৃত্বাধীন পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন। এ ছাড়াও ছিল নাওয়াত হাওয়াতনের নেতৃত্বাধীন আরেকটি সংগঠন। ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন মূল সংগঠনটি ব্যতিরেকে অপর সংগঠনগুলো ছিল বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী। তবে এই বামপন্থী সংগঠনগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী ছিল না। তবে ষাটের দশকে এই সংগঠনগুলোর বক্তব্য ও বিবৃতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হতো। ষাটের দশকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লায়লা খালেদ নামে এক তরুণী একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। ইসরায়েলি দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করতে ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় হামাস। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে আরাফাতের ফাতাহ দল জর্ডানের সাথে মতপার্থক্যজনিত কারণে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে আরাফাত বিতর্কিত হয়ে পড়েন। জর্ডান থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি লেবাননে অবস্থান নেন, যেখানে তিনি ও তাঁর ফাতাহ দল ইসরাইলের ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের আগ্রাসন ও আক্রমণের শিকার হন। আরাফাত প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের সম্পূর্ন বিরোধী থাকলেও পরে ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ২৪২ মেনে নিয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন।
মুক্তি সংগ্রামের আঁকাবাঁকা পথে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বিবিধ পন্থার আশ্রয় নিয়েছে। কখনও সশস্ত্র সংগ্রাম, কখনও শত্রুর ওপর প্রস্তর নিক্ষেপের মতো গণঅভ্যুত্থান (ইন্তিফাদা), আবার কখনও কূটনৈতিক পন্থায় বোঝাপড়া করার প্রয়াস। ফিলিস্তিনিদের প্রলম্বিত সংগ্রামের এক পর্যায়ে অসলো সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির পক্ষ দুটি ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ও ইসরাইল। এই প্রথমবারের মতো কালি-কলমে স্বাক্ষর করে ইসরাইল আংশিকভাবে হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের জাতীয় আকাক্সক্ষার স্বীকৃতি দিল। অনেক ফিলিস্তিনি ভাবতে শুরু করল, ইসরাইল প্রকারান্তরে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে একটি পরিপূর্ণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। কিন্তু এই প্রয়াস ক্যাম্প ডেভিডের ব্যর্থতায় থেমে গেল। ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড সম্মেলন এর মাধ্যমে আরাফাত ইসরাইলীদের সাথে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রয়াস নেন। এরপরেই শুরু হল ২০০০ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা। ২০০৩ সালে যে রোডম্যাপ ঘোষিত হয়েছিল, সেই রোডম্যাপ ফিলিস্তিনিদের জন্য ছিল অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং তা অসলোতে যে আশাবাদের সূচনা হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটাল। কিন্তু একই সময়ে হামাস ও অন্যান্য জঙ্গীবাদী সংগঠনের উত্থান ঘটে, যারা ফাতাহ ও আরাফাতের ক্ষমতার ভিত্তি দূর্বল করে দিয়ে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নেয়।জীবনের শেষভাগে আরাফাত ইসরাইলী সরকারের সাথে কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা শুরু করেন।
উল্লেখ্য প্যালেস্টাইন এবং ইয়াসির আরাফাত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিলেন। তিনি একাধিকবার রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন, অসংখ্যবার ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করেছেন। মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য। এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বর্ণবাদবিরোধী বিশ্বনন্দিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরিল। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ইয়াসির আরাফাত জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছিলেন মুক্তির সংগ্রামে। ব্যাক্তিগত জীবনে ইয়াসির আরাফাত ১৯৯০ সালে ৬২ বছর বয়সে বিশ্বস্ত সহকর্মী ২৮ বছর বয়স্ক সুহা তাবিলকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম জাহওয়া আরাফাত।
২০০২ হতে ২০০৪ সালের শেষভাগ পর্যন্ত আরাফাত ইসরাইলী সেনাবাহিনীর হাতে তাঁর রামাল্লার দপ্তরে কার্যত গৃহবন্দী হয়ে থাকেন। ২০০৪ এর শেষদিকে আরাফাত অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং কোমায় চলে যান। প্যালেস্টাইনী এই মহান নেতা ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর তারিখে প্যারিসে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৫ বছর। আরাফাতের অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ পায়নি, কিন্তু চিকিৎসকদের মতে তিনি ইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা এবং সিরোসিসে ভুগছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশ পেয়েছে।
ইয়াসির আরাফাত!
তুমি ইয়াহুদীবাদের বজ্রনিনাদ।
তুমি চলে গেলে তবো মিটলো না তোমার সাধ
তবুও বলবে জনতা ফিলিস্তীন জিন্দাবাদ।
ফিলিস্তিনী মুক্তিকামী এই নেতার আজ ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: গাজী ভাই সালাম নিবেন,
ধন্যবাদ আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য। তবে একথা অনস্বীকার্য যে ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলবিরোধী সংগ্রামের পরিপূরক দুটি নাম ইয়াসির আরাফাত এবং ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত চলছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ভূখ- দখল করে স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই এ সংঘাতের শুরু। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সহযোগিতায় ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও ইসরায়েল জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ভূখ-ের চেয়ে অনেক বেশি জায়গা দখল করে নেয়। ফলে জেরুজালেম হয়ে যায় একটি বিভক্ত নগরী। প্রাচীন জেরুজালেম নগরী এবং খ্রিস্টান, ইহুদি ও মুসলিমদের পবিত্র স্থানসহ পূর্বদিকের অর্ধেকাংশ নিয়ন্ত্রণ নেয় জর্দান আর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকে পশ্চিম জেরুজালেম। পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা হয়ে পড়ে জর্দানের। ৭ লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোয় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করতে থাকে এ আশায় যে, একদিন তারা স্বদেশে ফিরতে পারবে।
১৯৬৪ সালে আরব লিগের কায়রো অধিবেশনের পরপরই ফিলিস্তিনের অধিকারবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে
ফিলিস্তিনিদের মুক্তিকামী সংগঠন ফিলিস্তিন লিবারেশন ফ্রন্ট সংক্ষেপে পিএলও গড়ে ওঠে। ফিলিস্তিনের সব দলের লক্ষ্য এক হওয়ায় এসব দলের যৌথ প্লাটফর্ম হিসেবে ১৯৬৪ সালে পিএলও প্রতিষ্ঠা করে আরব লিগ। পিএলও প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনি গেরিলা দল ফেদাইনদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য আরো অধিক বৈধ ও সংগঠিত সমর্থন জোগানো। রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি ফিলিস্তিনের সরকার হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেছে। বিশ্বের শতাধিক দেশ এ সংগঠনকে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদাও পায় এ সংগঠনটি। পিএলওর প্রতিষ্ঠায় প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের।
ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলবিরোধী সংগ্রামের পরিপূরক দুটি নাম ইয়াসির আরাফাত এবং ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। ১৯৬৯ সালে এ দুই চরিত্রের মেলবন্ধন ঘটে। পিএলওর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আরাফাত। সেই থেকে ২০০৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পিএলওর নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। অব্যাহত বাধা, হুমকি ও হামলা উপেক্ষা করে পিএলওকে টিকিয়ে রেখে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনকে উজ্জীবিত রাখেন আরাফাত। দখলদার ইসরায়েলকে হটিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য অনেক সংগঠনের জন্ম হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যে। এগুলোর একটি ছিল ফাতাহ। মিসরে জন্ম নিলেও মা-বাবার আদিনিবাস ফিলিস্তিনের টানে এ সংগঠনে যোগ দেন ইয়াসির আরাফাত।
নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৯৬৯ সালে পিএলওর নেতৃত্ব পায় ফাতাহ। আর ফাতাহর নেতা হিসেবে পিএলওর চেয়ারম্যান হন ইয়াসির আরাফাত। এরপর থেকে পিএলওর অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন তিনি।
সুতরাং তার অবদানকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ আছে কি?
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩২
নাবিক সিনবাদ বলেছেন: উনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ নাবিক সিনবাদ,
পিএলওর চেয়ারম্যান হন ইয়াসির আরাফাতের
জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০৬
আমপাবলিক বলেছেন: চাঁদগাজী সাহেব কারো চাপিয়ে দেয়া সীমানা মেনে নেয়া যায় না। আপনি কি আপনার দেশের কোন একটা অংশ ছেড়ে দিতে রাজি হবেন ???
হে সংগ্রামী বীর আপনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজী ভাইয়ের মন্তব্যের প্রতিউত্তরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
স্বাধীনতার স্বাদ তারা পায় না যারা পরাধীন থাকেনি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
এখন, সবকিছু যোগ বিয়োগ করলে উনি ফিলিস্তিনীদের ভয়ংকর ক্ষতি করে গেছেন; ২০০০ সালের জানুয়ারী মাসে যদি উনি ওয়াশিংটনে ১৯৬৭ সালের সীমানায় ফিলিস্তিন মেনে নিয়ে কাগজে সাইন করতেন, আজ ফিলিস্তিনের ১৭ তম স্বাধীনতা দিবস পালন হতো; উনার সব অবদান ধুলার সাথে মিশে গেছে।