নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্কিন নভোচারী ও বৈমানিক নিল আর্মস্ট্রং এর ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৪


চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানুষ হিসাবে পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন মার্কিন নভোচারী ও বৈমানিক নিল আর্মস্ট্রং। ১৯৬১ সালে মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের শূন্যে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে যে দ্বার উন্মোচন হয়েছিল মানব ইতিহাসে তার নয় বছর পর ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চন্দ্রবিজয়ের মাধ্যমে সে ইতিহাসকে প্রাণবন্ত করে তুলেন নিল আর্মস্ট্রং। আর এ বিজয় বিশ্ববাসীকে জানান দিয়েছে নতুন গ্রহে বসবাসের চিন্তা। যেখানে নতুন করে কোন সভ্যতা হয়তো গড়ে উঠবে। নিল আর্মস্ট্রং নিজেও বিশ্বাস করতেন একদিন আসবে যখন মানুষ এ গ্রহেই পড়ে থাকবে না। কারণ সময় হয়েছে নতুন ঠিকানার সন্ধানে। নিল আর্মস্ট্রংয়ের ওই যাত্রা ভবিষ্যতকে আরও মধুর স্বপ্ন বিভোর করেছে। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে পৃথিবীব্যাপী মানুষ মহাকাশ নিয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছে গবেষণায় চিন্তায়। সম্প্রতি মঙ্গলে পাঠানো রোবট যে ইমেজ পাঠাচ্ছে সেটি সে সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়েছে। আর এতোসব সম্ভাবনা কেবল একটি পদক্ষেপের কারণেই মানুষ আজ সফলভাবে করতে পারছে সেটি হলো আর্মস্ট্রংয়ের চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ, বিচরণ। আজ এই বৈমানিক ও নভেচারীর ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩০ সালের আজকের দিনে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর ওয়াপাকোনেটায় জন্মগ্রহন করেন। চন্দ্রবিজয়ী নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নিল আর্মস্ট্রং ১৯৩০ সালের ০৫ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর ওয়াপাকোনেটায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা স্টেফান কনিগ আর্মস্ট্রং ও মাতা ভায়োলা লুইসা। তিন ভাইয়ের মাঝে নিল আর্মস্ট্রং ছিলেন সবার বড়। পিতা ছিলেন হিসাব নিরীক্ষক। পিতার চাকরির সুবাদে নিল আর্মস্ট্রংয়ের কিশোর বয়স কাটে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২০টি শহরে। মাত্র দুবছর বয়সেই পিতার সঙ্গে যান ক্লিভল্যান্ড বিমান দৌঁড় দেখার জন্য। ১৯৩৬ সালের ২০ জুলাই মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি প্রথম বিমানভ্রমণের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। আর মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিমান চালনার সনদ নেন আর্মস্ট্রং। লুম হাইস্কুল পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে আর্মস্ট্রং ভর্তি হন পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারোস্পেস প্রকৌশল জানার জন্য। পরবর্তীতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকায় অবস্থায় তৃতীয় বর্ষে বিশেষ বৃত্তিতে যোগ দেন মার্কিন নৌবাহিনীতে। ১৯৫২ সালে কোরীয় যুদ্ধে নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান ফ্লাই করে বাহবা পেয়েছিলেন তিনি। ওই বছরই যুদ্ধ শেষে দেশে ফেরেন আর্মস্ট্রং এবং ১৯৫৫ সালে লুইস ফ্লাইট প্রোপালশন ল্যাবরেটরিতে যোগদেন এবং অ্যারোনোটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ড্রাইডেন ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টারের পরীক্ষামূলক বিমান চালক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে মার্কিন বিমানবাহিনীর ‘ম্যান ইন স্পেস সুনেস্ট’ প্রকল্পে আমন্ত্রণ পান তিনি। এরপরপরই ১৯৬২ সালে তিনি নাসা অ্যাস্ট্রোনাট কর্পসে যোগ দেন। বিভিন্ন পরীক্ষামূলক বিমান নিয়ে তিনি ৯০০ এর ও অধিক বার উড্ডয়ন করেন। ১৯৬২ সালের ২০ এপ্রিল এক্স-ফিফটিন রকেটে প্রথমবারের মতো ভূমি থেকে প্রায় দুলাখ ফুট উঁচুতে উড্ডয়ন করার রেকর্ড গড়েন আর্মস্ট্রং। এর পর ১৯৬৬ সালের ১৬ মার্চ জেমিনি ৮ নভোযান দিয়ে প্রথমবার মহাকাশে আরোহণ করেন আর্মস্ট্রং। এর মাধ্যমে আর্মস্ট্রংয়ের মহাকাশ অভিযান আরও আশা জাগিয়ে তুলে।

আর্মস্ট্রং এর পরবর্তী ও শেষ অভিযান হয় এপোলো ১১ নভোযানের অভিযান নেতা হিসাবে। ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই চাঁদের কক্ষে প্রবেশ করে অ্যাপোলো ১১ এবং ২০ জুলাই তারিখের গ্রীনউইচ মান সময় অপরাহ্ন ১২:৩৬ মিনিটে ৩৮ বছর বয়সী নিল আর্মস্ট্রং সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসেন চাঁদের পৃষ্ঠে। চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে তিনি একটি মার্কিন পতাকা স্থাপন করেন। এ বিরল ঘটনার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে চাঁদে পা রাখা প্রথম নভোচারী হয়ে ওঠেন তিনি। একটি তথ্যে জানা যায় সেদিন সারা বিশ্বের ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ টেলিভিশনে সে দৃশ্য দেখে বলে । আর ভারতীয় উপমহাদেশে তখন বিবিসির খবরে কোটি মানুষের কান। প্রথম মানুষ হিসাবে চাঁদে পা রাখার সময় নিল আর্মস্ট্রং মন্তব্য করেনঃ This is a small step for (a) man, but a giant leap for mankind, অর্থাৎ, এটি একজন মানুষের জন্য ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিশাল অগ্রযাত্রা। তাঁরা চাঁদে ২.৫ ঘণ্টা সময় কাটান এবং ২১ জুলাই ফেরত আসেন আর্মস্ট্রংসহ নভোচারী ওই দল। অ্যাপোলো ১১ এর পরে আর্মস্ট্রং আর মহাকাশ অভিযানে যান নাই। তিনি ১৯৭৯ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটির ঊড্ডয়ন প্রকৌশলের অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন।

চন্দ্র বিজয়ের বছরেই ঢাকায় আসেন চন্দ্র বিজয়ীরা। ১৯৬৯ সালের ২৭ অক্টোবর বিকেলে ঢাকা এয়ারপোর্টের (বর্তমান তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর) অবতরণ করে চন্দ্র বিজয়ীদের বহনকারী বিমান। ভারতের মুম্বাই থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানী ঢাকাস্থ তেজগাঁও এয়ারপোর্টের টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের পশ্চিম দিকে ছিল ভিআইপি লাউঞ্জ এসে পৌঁছায় তারা। সেখানেই সামান্য সময় অবস্থান করেন তারা। নভোচারীদের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের স্ত্রী। বিমানবন্দরে ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারা আর এক ঝাঁক সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ উপস্থিতি ছিল। তুমুল করতালি ও মুহুর্মুহু আনন্দ ধ্বনির মধ্যে তাদের মোটর শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। ২০১১ সালের নভেম্বরে চন্দ্র বিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং আরো তিন নভোচারীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল অর্জন করেন।

বাইপাস সার্জারির কিছুদিন পর ২০১২ সালের ২৫ আগষ্ট মৃত্যুবরন করেন চন্দ্র বিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং। আর্মস্ট্রং-এর পরিবার সূত্রে জানা যায় এ মাসের প্রথম দিকে তার হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারী হয়েছিল। এরপর যে জটিলতা দেখা দেয় তাতেই আর্মস্ট্রং-এর মৃত্যু হয় বলে তার পরিবার জানিয়েছে। নিল আর্মস্ট্রং আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও, তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন আমাদের কাছে। মহাকালের স্রোতে কখনওই হারিয়ে যাবেন না তিনি ও তার কৃতিত্ব। মার্কিন নভোচারী ও বৈমানিক নিল আর্মস্ট্রং এর আজ ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। চন্দ্রবিজয়ী নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:২৩

বিজন রয় বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আপনাকে ধন্যবাদ নূরু ভাই।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ বিজন দা

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৬

সোহানী বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার সেই পুরোনো সিরিজ দেখলাম। অনেক ভালোলাগলো.........++++

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মাঝখানে অনেক ব্যস্ত ছিলাম,
দুঃখিত হাজির না থাকার জন্য।

৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪

প্রোলার্ড বলেছেন: বিশ্ববাসীকে বোকা বানানো এক কাহিনী ।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কোনটা বোকা বানানো কাহিনী<
জন্ম না মৃত্যু !!

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৫৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সরকার ভাই
সাথে থাকার জন্য।

৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:২৪

প্রোলার্ড বলেছেন: চাঁদে যাওয়াটা ।

গত ৫০ বছরে যেখানে প্রযুক্তি অনেক এগিয়েছে সে অনুপাতে চাঁদে এখন নিদেন পক্ষে আমেরিকার একটা দূতাবাস খোলার কথা । পৃথিবীর মত পরিবেশ পেতে চাইলে সেটা চাঁদ ছাড়া আর কি হতে পারে/পারতো ! চাঁদে বসতি স্থাপনের চেয়ে নাসাওয়ালের লক্ষ্য কয়েক শ আলোকবর্ষ দূরের কোন গ্রহ !!!

Just wastage of money. এসবের পেছনে যে টাকা অপব্যয় করা হয় তার ১০ ভাগের ১ ভাগ পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য ব্যয় করলে বাইরে যাবার পথ খুঁজতে হত না । আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে - যারা পৃথিবীর আবহওয়াকে নষ্ট করছে তারা পৃথিবী থেকে পালাবার পথ খুঁজছে নাসার আড়ালে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.