নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধুসূদনের পরবর্তী কাব্য রচয়িতাদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা মহাকাব্যের ধারায় হেমচন্দ্রের বিশেষ দান হচ্ছে স্বদেশ প্রেমের উত্তেজনা সঞ্চার। কবি হেমচন্দ্র বঙ্গদেশীয়দের কানে নব ভারত সঙ্গীত ধ্বনিত করলেন। তাঁর খ্যাতি ছিলো গগণস্পশী। বঙ্কিমচন্দ্র তার রচনার অনুরাগী ছিলেন এবং কিশোর রবীন্দ্রনাথের রচনায় পড়েছিলো তার ছায়া। হেমচন্দ্র পাঠকের সামনে খুলে দিলেন বঙ্গদর্শন গোষ্ঠী। মধুসূদনকে জাতীয় কবি হিসেবে তুলে ধরতে বঙ্গদর্শন প্রস্তুত। কবিওয়ালাদের শব্দালঙ্কার আর মিলের জগত পেছনে ফেলে অমিত্রাক্ষরে মধুসূদন নতুন ধ্বনিঝঙ্কার প্রবর্তন করলেন। আর সেই ছন্দ ও শব্দের জগতকে হেমচন্দ্র জাতীয়তাবাদের অঙ্গনে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। ১৯০৩ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করনে। আজ তার ১১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রশিদ্ধ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ১৭ এপ্রিল পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার রাজবল্লভহাট গ্রামের গুলিটায় এক কুলীনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলীর উত্তরপাড়া গ্রামে। তার পিতা কৈলাসচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা আনন্দময়ী। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পিতা কৈলাসচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন অতিশয় দরিদ্র। কৌলীন্যের বলে কৈলাসচন্দ্র গুলিটা, রাজবল্লভহাট গ্রাম নিবাসী কলকাতা আদালতের মোক্তার রাজচন্দ্র চক্রবর্তীর একমাত্র সন্তান আনন্দময়ীকে বিবাহ করে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। কৈলাসচন্দ্র বিশেষ কোনও কাজকর্ম করতেন না বিধায় শ্বশুরের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন। হেমচন্দ্র কলকাতার খিদিরপুর বাঙ্গালা স্কুলে পাঠকালে তার নানা রাজচন্দ্র চক্রবর্তীর মৃত্যু হলে আর্থিক সংকটে পড়ে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী দয়াপরবশ হয়ে ১৮৫৩ সালে হেমচন্দ্রকে কলকাতার হিন্দু কলেজে সিনিয়র স্কুল বিভাগের দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এই স্কুল থেকে ১৮৫৫ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে মাসিক দশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর কলকাতার ভবানীপুর নিবাসী কালীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা কামিনী দেবীর সংগে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৮৫৭ সালে সিনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে দুই বছরের জন্য মাসিক পচিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৫৯ সালে চতুর্থ বার্ষিক শ্রেণিতে পাঠকালে বৃত্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে লেখাপড়া ত্যাগ করে মিলিটারি অডিট অফিসে কেরানী পদে চাকরি গ্রহণ করেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি এ পাশ করে আইনজীবীর পেশা গ্রহন করেন।
বিশিষ্ট বাঙালি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্য চিন্তাতরঙ্গিনী ১৮৬১ প্রকাশিত হয়। ১৮৬৪ সালে প্রকাশিত হয় বীরবাহু । এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে আছেঃ কবিতাবলী (১৮৭০), মহা কাব্য বৃত্রসংহার (১৯৭৫), আষাকানন (১৮৭৬), ছায়াময়ী ( ১৮৮০),। তাঁর রচিত "ভারত সঙ্গীত" কবিতাটি ঊনবিংশ শতকের জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম। তাঁর অনুবাদ গ্রন্থঃ রোমিও-জুলিয়েট। ঊনবিংশ শতাব্দীর এই বিশিষ্ট কবি শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে যান। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালের ২৪ মে কলকাতার খিদিরপুরে মুত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। আজ কবির ১১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রশিদ্ধ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
©somewhere in net ltd.