নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ইংরেজ জীববিজ্ঞানী চার্লস রবার্ট ডারউইন (Charles Robert Darwin)। যিনি প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিবর্তনবাদের ধারণা দেন। তিনিই সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন যে সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে উদ্ভূত হয়েছে এবং তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রথম বিবর্তনবাদের প্রতিষ্ঠা করেন। এক প্রজাতির অন্য প্রজাতিতে পরিবর্তনের আগের ধারণার ওপর বিজয়ী হয় তার বিবর্তনবাদ। বিবর্তনের এই নানান শাখা-প্রশাখায় ভাগ হবার বিন্যাসকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করেন। তার জীবদ্দশাতেই বিবর্তনবাদ একটি তত্ত্ব হিসাবে বিজ্ঞানী সমাজ ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে স্বীকৃতি লাভ করে। এ সম্পর্কিত তার লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ অন দ্য অরিজিন অব দ্য স্পেসিস। ডারউইনের বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতির কারণে তিনি ছিলেন ১৯ শতকের মাত্র পাঁচজন রাজপরিবারবহির্ভুত ব্যক্তিদের একজন যারা রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্মান লাভ করেন। ১৮৮২ সালের আজকের দিনে মৃত্যুৃবরণ করেন চার্লচ ডারউইন। আজ এই বিজ্ঞানীর ১৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিবর্তনবাদের প্রবর্তক ইংরেজ জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
চার্লস রবার্ট ডারউইন ১৮০৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের শ্রপশ্যয়ারের (Shropshire) শ্রুযব্রিতে (Shrewsbury) এক ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রবার্ট ডারউইন এবং মাতা সুজানা ওযেজউড। ডারউইনের স্বাচ্ছন্দময় আর সুখের শৈশব কেটেছিল ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারের সেভেয়ার্ণ নদীর পাড়ে পাখি আর নুড়ী পাথর সংগ্রহ করে; তার মা সুজানাহ (Susannah Wedgewood) এসেছিলেন বিত্তশালী ওয়েজউড পরিবার থেকে। তাঁর নানা জসিয়াহ্ ওয়েজঊড (Josiah Wedgwood) ছিলেন চীনামাটির সামগ্রী প্রস্তুতকারক। যিনি এই নামে চীনা মাটির বাসন পত্র আর পটারী তৈরী করার ব্যবসা করতেন। তার পিতা রবার্ট (Robert Darwin) ওয়েজউডদের মত এতটা বিত্তশালী পরিবার থেকে আসেননি ঠিকই, তবে তার দাদা ইরাসমাস ডারউইন (Erasmus Darwin) আঠারশ শতকের ইংল্যান্ডের নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের একজন। রবার্ট ডরউইন তার সম্পদ গড়েছিলেন ডাক্তার হিসাবে কাজ করে এবং গোপনে তার রোগীদের টাকা ধার দেবার ব্যবসার মাধ্যমে। এতে ধীরে ধীরে তিনি যথেষ্ট পরিমান বিত্তের মালিক হয়েছিলেন যা দিয়ে তিনি তার পরিবারের জন্য সেভেয়ার্ণ নদীর পারে দি মাউন্ট নামে একটি ছোট পাহাড়ের উপর একটি বিশাল বাড়ি তৈরী করেন। মাত্র আট বছর বয়সে মাকে হারান ডারউইন।
চার্লস এর বয়স যখন ১৬, তখন বাবার ইচ্ছায় বড় ভাই ইরাসমাসতে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় পাঠানো হয় চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়তে। তাদের বাবা অবশ্য ইরাসমাসকে সঙ্গ দেবার জন্য চার্লসকেও সঙ্গে পাঠান, উদ্দেশ্য ভাইয়ের মত সেও ডাক্তারী পড়বে ভবিষ্যতে। চার্লস এবং তার বড় ভাই ইরাসমাস ছিলেন খুব ঘনিষ্ট। তাই তারা প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা পেশা গ্রহণের পরিকল্পনা করেন এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে (Edinburgh University) অধ্যয়ন করতে যান। চার্লস আর ইরাসমাস এডিনবরায় এসে বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলেন, অপরিচ্ছন্ন ঘনবসতি আর ব্যস্ত শহুরে জীবন দেখে; গ্রামীন শান্ত পরিবেশে, সাধারনত যে পরিবেশে জেন অস্টেন তার উপন্যাসের পটভুমি রচনা করতেন, সেখানে বড় হওয়া এই দুই ভাই প্রথম বারের মত শহরে এসে বস্তি দেখেছিলেন, এছাড়া এডিনবরায় তখন স্কটিশদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উন্মাতাল সময়, সেই সাথে জ্যাকোবাইট আর ক্যালভিনিস্টরা চার্চ আর রাষ্ট্র নিয়ে সংঘর্ষের লিপ্ত। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই তাদের মুখোমুখি হতে হতো উগ্র ছাত্রদের সাথে, যারা লেকচারের মধ্যে চিৎকার বা পিস্তল উচিয়ে গুলি করতে দ্বিধা করতো না। এ ধরনের অপরিচিত আর ভিন্ন একটি পরিবেশ চার্লস আর ইরাসমাস দুজনকে দুজনের সান্নিধ্যে নিয়ে এসেছিল আরো গভীরভাবে, যেমন সাগর পাড়ে হেটে বেড়িয়ে সময় কাটানো, একসাথে নাটক দেখতে যাওয়া, খবরের কাগজ পড়া ইত্যাদি নানা কাজে। প্রকৃতির প্রতি গভীর আগ্রহের কারণে ডারউননি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নে মনোযোগী ছিলেন না; বরং তিনি সামদ্রিক অমেরুদন্ডী প্রাণী নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন তার মধ্যকার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আগ্রহকে অনুপ্রাণিত করে। ১৮২৬ এর গ্রীষ্মে খানিকটা পরিবর্তন আসে যখন রবার্ট ডারউইন ঠিক করেন তার বড় ছেলে ইরাসমাসকে এবার লন্ডনে পাঠাবেন তার চিকিৎসা বিজ্ঞানের পড়াশুনো শেষ করার জন্য। অতএব সে বছর অক্টোবরে বিষন্ন ডারউইনকে অবশেষে একাই ফিরতে হয় এডিনবরায়। ১৮২৮ সালে এডিনবরায় দ্বিতীয় বর্ষের শেষে বাড়ী ফেরার পর তার বাবাকে এড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল ডারউইনের জন্য। অবশেষে বাধ্য হয়েই বাবার কাছে স্বীকার করতে হয়, সে কিছুতেই ডাক্তার হতে পারবে না। রবার্ট ডারউইন যথারীতি খুবই রাগ করলেনঃ চার্লসকে তিনি বলেছিলেন, ’তুমি পাখি মারা, ককুর আর ইদুর ধরা ছাড়া আর কিছুই করো না, আর তোমার নিজের জন্যতো বটেই, এই পরিবার জন্য একটা কলঙ্ক’। তবে রবার্ট একেবারে দয়ামায়াহীন বাবা ছিল না, উত্তরাধিকারেই তার ছেলে বেশ বিত্তশালী হবে সেটা তিনি জানতেন, তবে সে কোন অলস ধনী হোক সেটা তার কাম্য ছিলনা। তাই পরের বছর তার গন্তব্য হয় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্বের উপর পড়াশুনা করার জন্য। তবে পড়াশুনার জন্য বিশেষ পরিশ্রম করার মত ছাত্র ছিলেন না ডারউইন। বাইবেল পড়ার চেয়ে তাকে বেশী সময় দেখা যেত বীটল বা গুবরে পোকা সংগ্রহ করতে। ডারউইন কোন গীর্জার দায়িত্ব নেবার কথা কল্পনা করছিলেন না, তার স্বপ্ন ছিল পুরো ইংল্যান্ড ছেড়েই পাড়ি দেবার।সুযোগও এসে গেলো।
১৯৩১ সালে এইচ এম এস বিগল (His Majesty’s Service Beagle) নামক জরিপ জাহাজে (Survey Ship) পাঁচ বছরব্যাপী যাত্রা তাকে একজন ভূতাত্ত্বিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এইচএমএস বিগ্লের দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা পরিচালিত হয় ইংরেজ ক্যাপ্টেন রবার্ট ফিট্জ্রয় এর নেতৃত্বে। ১৮৩১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ডেভেনপোর্ট থেকে যাত্রা শুরু করে ১৮৩৬ সালের ২রা অক্টোবর ফালমাউথ বন্দরে ফিরে আসে এইচএমএস বিগ্ল। প্রথম সমুদ্রযাত্রারও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফিট্জ্রয়। দ্বিতীয় যাত্রায় নিসর্গী তথা প্রকৃতিবিদ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন তরুণ চার্লস ডারউইন। এই যাত্রায়ই তিনি বিবর্তনবাদের ভিত রচনা করেন। যাত্রার বর্ণনা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে ডারউইন একটি বই লিখেন যার নাম দ্য ভয়েজ অফ দ্য বিগ্ল। বইটি প্রকাশিত হলে তা তাকে জনপ্রিয় লেখকের খ্যাতি এনে দেয়। ১৮৩৬ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে ডারউইন তাঁর পর্যবেক্ষণসমূহ এবং প্রজাতির বিকাশের রহস্য উম্মচনে সচেষ্ট হন। ম্যালথাস (Malthus) এর ধারনায় প্রভাবান্বিত হয়ে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিবর্তন তত্ত্বের প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন।
ভ্রমণকালে তার সংগৃহীত বন্যপ্রাণ ও ফসিলের ভৌগোলিক বন্টন দেখে কৌতুহলী হয়ে ডারউইন প্রজাতির ট্রান্সমিউটেশান নিয়ে অনুসন্ধান করেন এবং ১৮৩৮ সালে তার প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদটি দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে। ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন’, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী আর বৈপ্লবিক ধারনাটির জন্ম দিয়েছিলেন প্রতিভাবান বৃটিশ প্রকৃতি বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন। জীববিজ্ঞান তো বটেই বিজ্ঞানের নানা শাখায় এর প্রভাব সুদুরপ্রসারী। ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত তার মাষ্টারপিস On the Origin of Species বইটি। যা পৃথিবী এবং তার মধ্যে আমাদের নিজেদের অবস্থান সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীটাকে চিরকালের মত বদলে দিয়েছে। খুব সরল ধারনার মাধ্যমে ডারউইন পেরেছিলেন জীবের সকল জটিলতা আর বৈচিত্রের সাধারন একটি ব্যাখ্যা দিতে। ১৮৭১ সালে তিনি মানব বিবর্তন এবং যৌন নির্বাচন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এবং মানুষের ক্রমনোন্নয়ন এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীতে অনুভূতির প্রকাশ নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। বৃক্ষ নিয়ে তার গবেষণা কয়েকটি গ্রন্থে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং তার শেষ বইতে তিনি কেঁচো এবং মাটির ওপর এদের প্রভাব নিয়ে তার গবেষণা প্রকাশ করেন। মানুষ কিন্তু অনেক আগে থেকেই বিবর্তন নিয়ে চিন্তা করত। এমনকি সক্রেটিসেরও আগে থেকে তারা যোগ্যতমের টিকে থাকার প্রক্রিয়া নিয়ে ভেবে আসছে। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে জীবনের বেড়ে ওঠা নিয়ে অনেক ধারণার জন্ম হয়েছে। কিন্তু ডারউইনীয় বিবর্তনবাদই প্রথমবারের মত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। উনবিংশ শতকের পর থেকে শুরু হয়ে গত দেড় শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা তার এই ধারনাটির স্বপক্ষে প্রমান জুগিয়েছে যা এখনও অব্যাহত আছে এবং আজ অব্দি সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
ডারউইনের আর একটা তত্ত্ব হলো ‘স্ট্রাগল ফর একজিস্টেন্স’ বা ‘টিকে থাকার লড়াই’। পৃথিবীতে যতো মানুষ জন্মায়, ২৫ বছরে সংখ্যা তার দ্বিগুণ হয়ে যায়। কোনো কোনো প্রাণীর বংশবৃদ্ধি এর চেয়েও অনেক বেশি। এইভাবে বাড়তে থাকলে সবার খাদ্য জোটানো সম্ভব নয়। পৃথিবীতে পা ফেলারও জায়গা থাকতো না। বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ভূমিকম্প আর যুদ্ধে বহু মানুষ ও প্রাণী অকালে মারা যায়। এর মধ্যে যারা বাঁচে, তারাই টিকে থাকে। সব প্রাণীর মধ্যে অবিরাম যুদ্ধ চলছে; যারা জয়ী হয়, তারাই শুধু বেঁচে থাকে। কিংবদন্তি এই বিজ্ঞানী পৃথিবীর সব শিশুকে খুব ভালোবাসতেন। ১৮৮১ সালের ডিসেম্বরে লন্ডনে এক বন্ধুর বাড়ির দরজায় তিনি হৃৎরোগে আক্রান্ত হন, জ্ঞান হারাতে হারাতে আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরের বছর এপ্রিলে ডাউনে বড় ধরনের আক্রমণ ঘটে ও শয্যাশায়ী হন। দিনকয়েক ভালো থাকার পর ১৫ এপ্রিল খাবার টেবিলে বসে হঠাৎ মূর্ছা যান। অনেক কষ্টে জ্ঞান ফিরলে অস্ফুট স্বরে স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেন।
অবশেষে ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ডারউইন। আজ এই বিজ্ঞানীর ১৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিবর্তনবাদের প্রবর্তক ইংরেজ জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
পাদটিকাঃ
মানব সৃষ্টি সম্পর্কে মূলত তিনটি তত্ত্ব প্রচলিত আছে যথাঃ ১। বিবর্তনতত্ত্ব, ২। হিন্দু ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্ব, ও ৩। আব্রাহামিক ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্ব। যদিও বৌদ্ধ ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।
১। বিবর্তনতত্ত্বঃ বিবর্তনতত্ত্ব অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়া থেকে ‘এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন’ নামক মন্ত্রের মাধ্যমে উদ্ভিদজগত-সহ পুরো জীবজগত বিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তনের এক পর্যায়ে আবার বানর জাতীয় লেজওয়ালা প্রাইমেটস থেকে ধাপে ধাপে লেজবিহীন হোমোসেপিয়েন্সও বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় বুদ্ধিমত্তাহীন বানর জাতীয় লেজওয়ালা প্রজাতি থেকে লেজবিহীন ও বুদ্ধিমান মানুষ বিবর্তিত হয়েছে। এই কল্পকাহিনী-ভিত্তিক তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে সোসাল ডারউইনিজম ও ইউজেনিক্স নামক অমানবিক আইডিওলজিরও জন্ম হয়েছে – যার জন্য অসংখ্য নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
২। হিন্দু ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্ব: হিন্দু ধর্মের মানব সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী ব্রহ্মার মুখ, বাহু, উরু, ও পা থেকে যথাক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, ও শূদ্র তথা চার বর্ণের মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে [ঋগ্বেদ ১০.৯০.১২] – যেটি একটি মিথ। এই মিথ-এর উপর ভিত্তি করে ‘ঈশ্বর/ধর্ম’র নামে হাজার হাজার বছর ধরে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে ব্রাহ্মণদের ‘জন্মসূত্রে দাস (শূদ্র)’ বানিয়ে রাখা হয়েছে। এই সৃষ্টিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই নিজ ধর্মের মধ্যে বর্ণ প্রথা বা জাতিভেদ প্রথা (Caste system) গড়ে উঠেছে।
৩। আব্রাহামিক ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বঃ এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন বলেঃ
“হে মানব-জাতি! তোমরা ভয় কর তোমাদের রবকে, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এক আত্মা থেকে এবং যিনি সৃষ্টি করেছেন তার থেকে তার জোড়া, আর ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের দু’জন থেকে অনেক নর ও নারী।” [আন-নিসা ৪:১]
ইহুদী ধর্ম, খ্রীষ্ট ধর্ম, ও ইসলামের মানব সৃষ্টিতত্ত্বে মোটা দাগে বেমিল থাকলেও একটি জায়গায় যে মিল আছে তা হচ্ছে প্রথমে পার্থিব উপাদান থেকে আমাদেরই মতো এক জোড়া পূর্ণাঙ্গ মানুষ (নারী-পুরুষ) সৃষ্টি করা হয়েছে যাদের থেকে বংশবৃদ্ধি হতে হতে আজ প্রায় সাত বিলিয়ন মানুষে এসে ঠেকেছে। পবিত্র কোরআনের এই তত্ত্বকে কেউ ‘মিথ’ বা ‘অযৌক্তিক’ বা ‘অবৈজ্ঞানিক’ বা ‘অমানবিক’ দাবি করলে বুঝতে হবে তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ইসলামে বিশ্বাসীরা বিবর্তন তত্ত্বকে বিশ্বাস করে না। ইসলাম ধর্ম মতে আমরা আদি পিতামাতা আদম হাওয়া থেকে এসেছি ; কোন বানর ব এককোষী প্রাণী থেকে নয় । এর অনেক জোড়ালো প্রমাণও আছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ একটি থিওরি বা যুক্তি (theory, not fact) আর পবিত্র কোরআনের বানী বাস্তবতা (fact)। ইসলামের আলোয় আলোকিত হোক সকলের জীবন। আমিন-
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২
নতুন বলেছেন: মুক্তমনা বাতাস বলেছেন: বানর থেকে মানুষ হলে বানর এখনও তো আছে, কিন্তু মানুষ বানর থেকে হয় না কেন৷
এইটুকু বুঝতে পারলে এই প্রশ্নটা করতেন না।
৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনি মরে গেছেন, নাকি বিবর্তিত হয়ে, অন্য কিছু হয়ে গেছেন?
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮
মুক্তমনা বাতাস বলেছেন: বানর থেকে মানুষ হলে বানর এখনও তো আছে, কিন্তু মানুষ বানর থেকে হয় না কেন৷