নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জনের পর পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লী হয়ে ১৯৭২ সালের এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসাবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন। জীবন-মৃত্যুর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভয়ঙ্কর অধ্যায় পার হয়ে সারা জীবনের স্বপ্ন, সাধনা ও নেতৃত্বের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান এ নেতার প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অনুভূতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায় অভিযাত্রা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জাতির পিতাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। 'অপারেশন সার্চলাইট' নামের এ অভিযানের শুরুতেই পাক হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমণ্ডির বাসা থেকে বন্দী করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু।দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল। বঙ্গবন্ধু হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশগড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, 'রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালবাসার ঋণ শোধ করে যাব।' সেখানে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “ইনশা আল্লাহ, স্বাধীন যখন হয়েছি, তখন স্বাধীন থাকব। একজন মানুষ এই বাংলাদেশে বেঁচে থাকতে কেউ আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারবে না।”
১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম সরকারের সাফল্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং প্রায় এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন। বঙ্গবন্ধু সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এই গুরু দায়িত্ব সম্পন্ন করে। দুর্ভিক্ষের যে আশংকা করা হয়েছিল সরকার তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করে।সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন নতুন সরকারের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়। শতাধিক রাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বীকৃতি অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে আদায়ে সক্ষম হয় সরকার। স্বাধীনতালাভের তিন মাসের মধ্যেই বাংলার মাটি থেকে ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাবর্তন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র চালনার চেষ্টা সত্ত্বেও তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বব্যাপী অরাজকতা এবং সেই সাথে ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে তিনি সকল দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নিজেকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এর সাত মাস পরে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে একদল বিপদগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর কন্যাদ্বয় বিদেশে অবস্থান করার কারণে বেঁচে গেলেও বঙ্গবন্ধুর তিনজন পুত্রই ঐ রাতে বিপদগামী সামরিক কর্তকর্তাদের হাতে নিহত হন।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে তার দেওয়া কথা রেখেছিলেন জাতির পিতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখে গেছেন। হিংস্র পাক হানাদাররা যাঁর গায়ে আঁচড় দেয়ারও সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণীর কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা তার রক্তের শোধ করেছি। ইতিমধ্যে জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন তার খুনিদের পদচারণা থেকে মুক্ত। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন যারা এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাক সেনাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল, সেই সব মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিমুক্ত সোনার বাংলায় আজ তাঁর ৪৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনককে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্বায়।
২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
"১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। "
-৯ মাস ভয়ংকর কারাভোগের পর, ১০ তারিখে ফিরে, ১২ তারিখে দেশ চালনার দায়িত্ব ভার কেন নিলেন? উনি কি ভাবার জন্য সময় পেয়েছিলেন, দেখার জন্য সময় পেয়েছিলেন, বিশ্রামের সময় পেয়েছিলেন? আপনি এটাকে কিভাবে দেখেন?
৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩০
পবন সরকার বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ
৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৯
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে তিনি সকল দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নিজেকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।
১। রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরী করল কারা! সে সময় জামাতিরা ছিল পাকিস্তানে আত্মগোপনে, আর বিএনপি'র জন্মই হয়নি। তাহ লে কি বুঝে নিব খমতাসীনরা ক্ষমতা আজীবন কুক্ষিগত করার জন্য নিজেরা এজেন্সি (জাসদ, রক্ষিবাহিনী) সৃষ্টি করেছিল!
২। সকল দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তার সাথে আওয়ামীলীগও নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। তাহলে কি আওয়ামীলীগ ক্ষমতা জবর দখল করে ছিল!
৩। নিজেকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন! (নিজে নিজে দেশের রাষ্ট্রপ্তি ঘোষণা করা হারাম) জনগনের ম্যান্ডেট ছাড়া কোন ব্যক্তি এক মিনিটের জন্যও যদি ক্ষমতা দখল করে থাকে তাহলে সেটা হবে বে-আইনি। আর নিজেকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলে সেটা হবে রাষ্টদ্রোহিতার সামিল।
আপনি সব কিছু বুঝে লিখছেন ত'? নাকি হাইব্রিড কোন নেতার চিন্তাধারা আমদানি করছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০২
কলাবাগান১ বলেছেন: "বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন তার খুনিদের পদচারণা থেকে মুক্ত"