নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বর্তমানে পর্ণোগ্রাফি সারা বিশ্বে সংক্রামক ব্যাধির মত বিস্তার লাভ করছে। পর্ণোতে আসক্তির কারণ এর সহজ লভ্যতা। ২০১৫ সাল পর্ণো সিনেমায় রেকর্ড গড়ার বছর। এ বছর নির্মিত পর্নো সিনেমাগুলো গত ১০ বছরের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর নভেম্বর নাগাদ সারাবিশ্বে নির্মিত হয়েছে ৩ হাজার ২১৭টি পর্নো সিনেমা। নথিভুক্ত করা হয়নি এমন পর্নো সিনেমার সংখ্যা যোগ করলে এটা সাড়ে তিন হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে। গড় হিসেবে সারা বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে মুক্তি পাচ্ছে ৯.৫ টি পর্ণো ছবি। সামনে রয়েছে আরও এক মাস। ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বাড়বে বই কমবেনা। এ ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ পর্নোগ্রাফিক ছবি পোস্ট হয় মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে। বড়দের পাশাপাশি এসকল ছবি দেখছে শিশুরাও। টুইটারে একটি টুইটের মাধ্যমেই লাখ লাখ অনুসারির কাছে সহজেই পৌঁছানো যায়। আর পর্নো কন্টেন্ট বিষয়ে টুইটারে কোন ক্লাসিফিকেশন না থাকায় খুব সহজেই এসব ছবি চলে যাচ্ছে শিশুদের নাগালের মধ্যে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, টুইটার এসকল ছবি মুছে ফেলতে আগ্রহী নয়। সাধারণত ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে অ্যাডাল্ট কন্টেন্টের ব্যাপারে রিপোর্ট করা গেলেও টুইটারে সেই সুযোগও নেই।
২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নির্মিত পর্ণো সিনেমাগুলোর জরিপে দেখা যায় ২০১৪ সালে ২ হাজার ৭৫০টি পর্ণো ছবি নির্মিত হয়েছিল। অার মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিলো ১৪ হাজার কোটি ডলার। গত ১০ বছরে সবেচয়ে বেশি পর্ণো ছবি তৈরি হয়েছিল ২০১১ সালে। সে বছর মোট ৩ হাজার পর্ণো সিনেমা নথিভুক্ত হয়েছিলো। অপর দিকে কন্ডম নীতির জেরে ক্যালিফোর্নিয়ায় পর্ণো সিনেমা বন্ধের মুখে দাঁড়ালেও সারা বিশ্বের মোবাইল-কম্পিউটার আর ট্যাব ব্যবহার কারীদের কথা বিবেচনা করে বাড়ছে পর্ণো ছবি তৈরি কাজ। আমেরিকা, ইউরোপের পর এশিয়ায় এই পর্ণো ছবির চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। পর্ণো সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন সাধারণ সিনেমার চেয়ে পর্ণো সিনেমা নির্মাণ করে ৩০ শতাংশ বেশি লাভ করা সম্ভব। এই চাহিদার কথা বিবেচনা করেই বিশ্বের আরও তিনটি বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে পর্ণো সিনেমার সঙ্গে। পর্ণো সিনেমা সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন ব্যাপক চাহিদার কারণে এ বাজার ক্রমশ আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর বাইরে নয়। রাজধানী ঢাকায় তৈরি হচ্ছে পর্ণো ছবি। আর তাতে জড়িত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পর্ণো তারকা হিসাবে পরিচিতি এ রকম ১১ জনকে গত বছর নভেম্বরে ঢাকার বংশাল এলাকার একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয় পুলিশ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি চারজনের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। এলাকাবাসীর দেয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ রাজধানীর নিমতলীর সুফিয়া হোটেলে হানা দেয়। আটককৃতরা এ সময় পর্ণো ছবি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে যে যার মতো করে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পুলিশ এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ পর্ণো মুভির সরঞ্জমাদি উদ্ধার করে।
বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসকদের গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব পুরুষ নিয়মিত পর্ণ ছবি দেখেন বা সেক্সুয়াল ইমেজ নিয়ে নিয়মিত নাড়া চাড়া করেন, তাদের ব্রেনের আকার পরিবর্তিত হয়ে সাধারণ পুরুষের ব্রেনের চাইতে আকারে ছোট হয়ে যায়। জার্মান সাইকিয়াট্রি জার্নালে এক স্টাডির রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়। চিকিৎসকগণ তাদের গবেষণায় সাধারণ পুরুষদের ব্রেনের সাথে পর্নো ছবি দেখতে অব্যস্থ পুরুষদের ব্রেনের তুলনা করে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন বলে জানানো হয়েছে। বার্লিনের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনিষ্টিটিউটের ডঃ সাইমন কোহন এবং তার অনুসারীরা জার্মানির চারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল প্রায় ৬৪ জন সুস্থ সুঠাম দেহের পুরুষ যাদের বয়স ২১ থেকে ৪৫ এর মধ্যে, তাদের উপর গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে প্রাথমিক তথ্যে উপনীত হয়েছেন, তারা দেখতে পেয়েছেন, সুস্থ সুঠাম দেহের পুরুষদের ব্রেনের তুলনায় যারা পর্নো ছবিতে আসক্ত, তাদের ব্রেনের আকার ছোট হয়ে আসে। পর্ণো কোনো স্বাভাবিক যৌন কার্যক্রম না বরং এটা একটি বিকৃত যৌনাচার। পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তির ফলে পুরুষের নারীর প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ কমে যায় ও যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। অসংখ্য তরুণ পর্ণো জগতের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ায় পর্ণো-আসক্ত রোগীর হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিণামে নৈতিক অবক্ষয় তো আছেই পর্ণো-আসক্তদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ। যারা পর্ণোর প্রতি বেশি আসক্ত এবং সারাক্ষণ পর্ণো নিয়ে চিন্তা করেন তারা বিয়ের পর স্বাভাবিক যৌন জীবনের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। প্রতিনিয়ত পর্ণো দেখার ফলে মস্তিষ্কে উত্তেজনা সৃষ্টিকারি ‘নিউট্রো ট্রান্সমিটার’ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা নষ্ট হয়ে যায়। এটা পর্ণো দেখার সময় অতি উত্তেজনার ফলেও হয়ে থাকে। স্বাভাবিক যৌন জীবনে ‘ডোপামিন’ নামক উত্তেজনাও হারিয়ে ফেলেন অনেক পর্ণো-আসক্ত। নিয়মিত পর্ণো ছবি দেখার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতির করে ফেলছেন অসংখ্য পুরুষ। পর্ণো আসক্তির কারণে যে ৭টি ক্ষতি হতে পারে তা হলোঃ ১। নারীরা ঘৃনার চোখে দেখে, ২। রুচি বোধের অবনতি হয়, ৩। বাস্তব জগৎ ছেড়ে ফ্যান্টাসি দুনিয়াতে চলে যাওয়া, ৪। নিঃসঙ্গ/ অসুখী হয়ে পড়া, ৫। শারীরিক ক্ষতি, ৬। ভয়াল নেশায় আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা এবং ৭। সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া।
উপসংহারে বলা যায়ঃ পর্ণো আসক্তি একটি স্লো পয়জন যা আপনাকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। তবে আশার কথা, ড্রাগ এ্যাডিক্টদের তুলনায় পর্ণ এ্যাডিক্টদের ফেরার পথ টা বেশ সহজ এবং রিকভার করতে সময়টা তুলনামূলকভাবে অনেক কম লাগে। ড্রাগ এ্যাডিক্টদের মত শরীর এবং মনের উপর কোনো সাইড ইফেক্ট ব্যতীত পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফি যেকোনো সময় পরিত্যাগ করা যায়। যদিও এটার জন্য অনেক ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন, পাশাপাশি নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা টাও জরুরী। মাত্র চারটি উপায়েই পর্ণো ফিল্মের মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যথাঃ ১। নিজের মনের থেকে ভালো শাসক আর কেউ নয় তাই পর্ণো ফিল্মে আসক্তি কমাতে নিজেই একদিন প্রতিজ্ঞা করে ফেলুন আর দেখব না। ২। একা কম্পিউটারের সামনে বিনিদ্র রাত কাটানোর অভ্যেস বন্ধ করুন। ৩। এমন কোনও সফটওয়্যার ব্যবহার করুন, যা পর্নোসাইট ব্লক করে দেয়। ৪। বই পড়া অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন ব্যক্তিত্বে অসাধারণ পরিবর্তন আসবে। সর্বোপরি আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইতিবাচক চিন্তাই পর্ণো্ ফিল্মে আসক্তি থেকে মুক্তি দেয় বলেই জানাচ্ছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
শেষ কথাঃ বিশ্বাস রাখুন আপনি যত পাপ করতে পারেন, আল্লাহ্ তার চেয়েও বেশী ক্ষমা করতে পারেন, আপনি যতবার পাপ করতে পারেন, আল্লাহ্ তার চাইতেও বেশী বার আপনাকে ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু শর্ত হলো আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যদি শয়তানের ফাঁদে পড়ে কখনো দেখে ফেলেন তো সাথে সাথে গোসল করে দুই রাকআত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তওবাহ করে নিন। তারপর দ্বিগুন দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিজ্ঞা করুন আর কোনদিন পর্ণ দেখবেন না, আপনি আর শয়তানের দাস হবেন না, শয়তান বরং আপনার দাস হবে। কিছুতেই আপনার ঈমানদারীতে হাল ছাড়বেন না। শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোই সফলতা নয়, গন্তব্যে পৌঁছানোর যাত্রাটাও সফলতা। মহান আল্লাহ্ তাঁর পাক কালামের (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৩৫) বলেছেনঃ " (জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য) যারা কোনও অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ্ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে?" অবৈধ এবং যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, ভিডিও গেইমস, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনকৃত। যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কাটুর্ন বা লিফলেট - নির্মূল হোক। সুস্থ্য থাকুক মানসিক স্বাস্থ্।
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই,
সময় সল্পতার কারনে কথা হয়না।
ভালো থাকবেন।
২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১
ডার্ক ম্যান বলেছেন: অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। তবে দিন দিন পর্ণ আসক্তি বাড়বে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২
প্রামানিক বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট। ধন্যবাদ নুরু ভাই।