নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক সমরেশ বসুর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫



খ্যাতিমান ভারতীয় বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক সমরেশ বসু। যাঁদের লেখনী বাংলা গদ্য সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে, বলা যেতে পারে পরিপক্ব করেছে সমরেশ বসু সেই শীর্ষ সারির প্রতিভাবান লেখকদের একজন। বিচিত্র স্বাদের বহু উপন্যাসের জনক তিনি। বাংলা কল্পকাহিনীরও প্রথম সারির লেখক তিনি। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে ওঠে। কালকূট ও ভ্রমর তার ছদ্মনাম। কালকূট মানে তীব্র বিষ। 'অমৃত কুম্ভের সন্ধানে', সাম্ব, 'কোথায় পাব তারে'সহ অনেক উপন্যাস তিনি এ নামে লিখেছেন। 'কালকূট' ছদ্ম নামে লেখা "সাম্ব" উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮০সলের অকাদেমি পুরুস্কার পেয়েছিলেন | বিশিষ্ট এই ঔপন্যাসিক ১৯৮৮ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। কথাসাহিত্যিক সমেরেশ বসুর মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসু ১৯২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মুন্সিগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত রাজনগর গ্রামে পৈতৃক বাস্তু ভিটায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মোহিনী মোহন বসু। মায়ের নাম শৈবলিণী বসু।সমরেশ বসুর জন্মের সময় বাবার এক মাসিমা সদ্যজাত সমরেশকে দেখতে এসে বলেছিলেন, ‘এযে তড়বড় কইরা আইয়া পড়ল’। এতেই ডাক নাম দাঁড়াল ‘তড়বড়ি’। পরে উচ্চারণ পরিবর্তে তরবরি। বাবার দেওয়া নাম ‘সুরথনাথ’। সমরেশ বসুর শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। এক সময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন। ১৯৪৩-৪৯ সাল পর্যন্ত ইছাপুরের কামান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যেও লেখালেখিই ছিল তাঁর একমাত্র পেশা। নিজ আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি তিনি। এক সময় ট্রেড ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি অবৈধ ঘোষিত হলে ১৯৪৯-৫০ সালে তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। জেলে অবস্থানকালে তিনি প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ লিখেন। মুক্ত হয়ে সমরেশ বসু লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেন। ২১ বছর বয়সে উপন্যাস ‘নয়নপুরের মাটি’ লিখেন। তার প্রথম ছোটগল্প ‘আদাব’।

(১৯৬৬-৬৭ সালে দীঘায় স্ত্রী ধরিত্রী বসুর সঙ্গে সমরেশ বসু)
সমরেশ বসু জীবনকে যেমন বহুভাবে বহু দিক থেকে দেখেছেন, তেমনি সাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছেন সেভাবে। 'সাহিত্যের যা কিছু দায় সে তো জীবনের কাছেই'-এই ছিল সমরেশ বসুর কথা। তাঁর বই যে খুব বেশি বিক্রি হতো তা নয়। খুব যে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি এমনও বলা যাবে না। তবু কয়েক দশক ধরে সিংহের মতোই তিনি বিচরণ করেছেন সাহিত্যের অঙ্গণে। সমরেশ বসু নিজ নামে এবং কালকূট ছদ্মনামে ২০০ ছোটগল্প এবং ১০০ উপন্যাস রচনা করেন। তার প্রকাশিত গল্প ও উপন্যাস সমূহঃ উত্তরঙ্গ, গঙ্গা, বিবর, প্রজাপতি, দেখি নাই ফিরে, সওদাগর, কোথায় পাবো তারে, নয়নপুরের মাটি, বাঘিনী, চলো মন রুপনগরে, পাতক, মুক্তবেণীর উজানে, টানাপোড়েন, স্বীকারোক্তি, অপদার্থ, সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা, যুগ যুগ জীয়ে, মহাকালের রথের ঘোড়া, শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে, বাঘিনী, বিপর্যস্ত, শাম্ব, বিটি রোডের ধারে, শ্রীমতি কাফে, অবশেষে, আম মাহাতো, কামনা বাসনা, কে নেবে মোরে, খন্ডিতা, গোগোল চিক্কুস নাগাল্যান্ড, ছায়া ঢাকা মন, জঙ্গল মহলের গোগোল, জবাব, তিন পুরুষ, দাহ, নাটের গুরু, নিঠুর দরদী, পথিক, প্রাণ প্রতিমা, বাঘিনী, বিদেশী গাড়িতে বিপদ, ভানুমতী ও ভানুমতীর নবরঙ্গ, মহাকালের রথের ঘোড়া, রক্তিম বসন্ত, শিমুলগড়ের খুনে ভূত, সেই গাড়ির খোঁজে, স্বর্ণচঞ্চু, হৃদয়ের মুখ ইত্যাদি।

" গঙ্গা " সমরেশ বসু রচিত শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম একটি ধ্রুপদী বাংলা উপন্যাস। আর্থ-সামাজিক কাহিনির সঙ্গে প্রচুর উপকথা-মিথের ব্যবহার এই উপন্যাসকে বিশিষ্টতা দান করেছে। এই উপন্যাসটি লেখক তথা বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা বলে বিবেচিত হয়। দেশ পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ২৪টি বাংলা উপন্যাসের তালিকাতেও স্থান পায় গঙ্গা। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত নদীকেন্দ্রিক এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয় দক্ষিণবঙ্গ, বিশেষত অবিভক্ত ২৪ পরগনা জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের (মাছমারা) জীবনসংগ্রামের কাহিনি।
কাহিনি-সারাংশঃ

গঙ্গা উপন্যাসের নায়ক তেঁতলে বিলাস (অর্থাৎ, তেঁতুলতলার বিলাস)। তার বাপ নিবারণ সাঁইদার ছিল দুঃসাহসী মালো মাছমারা। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিবারণ প্রাণ হারায়। বিলাস তখন মাতৃগর্ভে কিংবা সদ্যোজাত। বড় হয়ে বিলাসের চেহারাও হয় তার বাপের মতো সুদর্শন সুপুরুষ:
কালো কুচকুচে রঙ, পেটানো শরীর। নেহাইয়ের মতো শক্ত। যেন নিমকাঠের কালো রঙ মাখা চকচকে মূর্তি। নাকটি ছোট। চোখদুটি ঈষৎ গোল। ভ্রু কুঁচকে মুখ তুলে তাকালে মনে হয়, কেউটে সাপ যেন ফণা ধরে আছে। …সবাই জানে, রগচটা আর গোঁয়ার। গায়ে শক্তিও তেমন।
সে মাছ মারতে শেখে তার কাকা পাঁচুর কাছ থেকে। সুন্দরবন অঞ্চল থেকে প্রতি বছর বর্ষায় কলকাতা-সন্নিহিত অঞ্চলে হুগলি নদীতে মাছ ধরতে আসত তারা। এখানে পাইকার দামিনীর সঙ্গে আলাপ হয় বিলাসের। ভালবাসা হয় দামিনীর নাতনি হিমির সঙ্গে। উভয়ের সম্পর্কের টানাপোড়েন ও মাছমারাদের সুখদুঃখের কর্মজীবনের ধারা বেয়ে প্রবাহিত হয় কাহিনি। নদীবক্ষেই মৃত্যু হয় পাঁচুর। মৃত্যুর পূর্বে সে হিমি ও বিলাসের মিলনে সম্মতি জানিয়ে যায়। তারপরেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধেয়ে আসে নদীতে। সেবারের জন্য কপাল খুলে যায় মাছমারাদের। অবশেষে মিলন হয় হিমি ও বিলাসের। কিন্তু বিলাসকে ধরে রাখতে পারে না হিমি। বিলাস বেরিয়ে পড়ে সমুদ্রযাত্রার উদ্দেশ্যে। উপন্যাস শেষ হয় এইভাবেঃ
ঢেউ লেগেছে রাইমঙ্গল আর ঝিল্লের মোহনায়। কালীনগর গঞ্জ থেকে চাল ডাল নুন তেল যোগাড়যন্ত্র হয়েছে। সাঁইদারের অপেক্ষা।
- সাঁইদার কে?

- বিলেস। তেঁতলে বিলেস।
তেঁতলে বিলেস সমুদ্রে যায়।"


(Sunil Gangopadhyay, unidentified, Dwijendranath Basu,
and Samaresh Basu (London, 1986
)
বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল ক্ষণজন্মা লেখক সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। মৃত্যুকালেও তার লেখার টেবিলে ছিল ১০ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে ’। সমরেশ বসুর নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। প্রায় ৫ লাখ শব্দের 'চিরসখা' নামের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু।

বাংলা কথাসাহিত্যে সমরেশ বসুর তুলনা সমরেশ বসুই। আজ বাংলাসাহিত্যের খ্যাতিমান ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক সমরেশ বসুর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৪

জুন বলেছেন: সমরেশ বসু আমার অতন্ত্য প্রিয় একজন লেখক । তার সব বইই আমার পড়া । গঙ্গা অবশ্য শক্তিশালী একটি লেখা কিন্ত বাঘিনী আমার কাছে অন্যরকম এক মর্যাদায় আসীন । সেই দেশী মদ চোলাইকারীদের জীবনযাত্রা কি অসাধারন নৈপুন্যে একেছেন তিনি তা সত্যি বিষ্ময়কর । তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের এক বিশাল ক্ষতি হয়েছে বলে আমি মনে করি ।
+

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৯

প্রামানিক বলেছেন: মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪১

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: অসাধারন পোস্ট।অনেককিছুই একসাথে পড়লাম।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা এই লেখককে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।উনার বই পড়ে ফেলতে হবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.