নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
২৮ ডিসেম্বর, বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসঃ বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন দিন। এদিন ফ্রান্সে লুমিয়ের ব্রাদার্স এক ক্যাফেটেরিয়ায় প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে। লুমিয়ের ব্রাদার্সের সেই অবদানকে স্মরণ রাখতেই বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে আয়োজন। ১৮৮৫ সালে ফ্রান্সে যেমন লুমিয়েঁ ব্রাদার্স নিজেদের প্রজেক্টরে ছবি দেখিয়ে বিশ্বে চলচ্চিত্রের সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশেও তার ঢেউ লেগেছিল প্রায় সাথে সাথেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসটি পালন করে আসছে। এছাড়া ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ ও প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটিকে। বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস ও আমাদের চলচ্চিত্র ঐতিহ্য’। বিষয়টি অবাক করার মত যে খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে শুধু বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ বলে কোনো দিবস পালনের খবর জানা যায়নি। বিশ্বের নবীনতম শিল্পমাধ্যম হলেও বিজ্ঞান ও কলা নির্ভর গণমাধ্যম চলচ্চিত্র পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের বিনোদন, শিক্ষা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের উপকরণ যোগাচ্ছে। তা হলে চলচ্চিত্র দিবস কেন পালিত হচ্ছে না পৃথিবীর অন্য কোথাও? অথচ সুকুমার শিল্পের অন্য অনেক বিষয় সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন দিবস কিন্তু ঠিকই পালিত হচ্ছে পৃথিবী জুড়ে, যেমন: বিশ্ব নৃত্য দিবস, বিশ্ব নাট্য দিবস ইত্যাদি।
এ কথা মানতেই হবে যে মানব সভ্যতার সব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চলচ্চিত্র। মানুষ চায় তাঁর সজীব ও সচল উপস্থিতি নিয়ে রূপ রসে ভরা পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকতে। সম্ভবত বিশ্ব মানবের সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর মানব জাতির হাতে সফলতম সে হাতিয়ারটি তুলে দিয়েছিলেন লুমিয়েঁ ভ্রাতৃদ্বয়। ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিস নগরীর ‘কাপুসিন ক্যাফে’নামক প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধন অধিবেশনে সেদিন নিজেদেরই উদ্ভাবিত প্রক্ষেপণ যন্ত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কৃতিত্ব দেখান অগাস্ট লুমিয়েঁ ও লুই লুমিয়েঁ নামের দুই ভাই। তাই ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, কারণ বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এ দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। সেদিন প্রদর্শনীর মাধ্যমে যে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিষেক ঘটেছিল আজ মানুষের মনের সুপ্ত বাসনা, স্বপ্ন, বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের কল্পনা তার সাথে মিশে গেছে। উপবন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের ফল হিসেবে চলচ্চিত্র বর্তমান পৃথিবীর এক অপ্রতিরোধ্য গণমাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আজ মানব সভ্যতার জীবন্ত ইতিহাসের ধারক হয়ে উঠেছে সে দিনের প্রদর্শিত সেই চলচ্চিত্রগুলোই। তাদের সেদিনের প্রদর্শিত সে চলচ্চিত্র আজও জীবন্ত আছে এবং তা টিকে থাকবে, যতদিন মানব সভ্যতা বেঁচে আছে।
বাংলাদেশে ও ভারতবর্ষে চলচ্চিত্রের প্রথম নির্মাতা ও দেশীয় প্রদর্শকও সহোদর বাঙালি ‘দুই ভাই’ বা ‘সেন ব্রাদার্স’। এঁরা হলেন হীরালাল সেন ও মতিলাল সেন। বাংলাদেশের মাণিকগঞ্জের বগজুড়ি গ্রামের সন্তান হীরালাল ও মতিলাল সেন। ১৮৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথমে কোলকাতায় স্টিফেন্স নামক জনৈক বিদেশি নাগরিক ও ১৮৯৮ সালে ভোলায় প্রথম বাঙালি হীরালাল সেন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। তিনি তাঁর ভাই মতিলাল সেনকে সাথে নিয়ে রয়েল বায়োস্কোপ কোম্পানি গঠন করে ভারতবষের্র বিভিন্ন স্থান, কোলকাতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভোলা, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে ও মেলায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। হীরালাল সেন শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শকই ছিলেন না, তিনি ‘এডওয়ার্ডস এ্যান্টি ম্যালেরিয়া স্পেসিফিক’, ‘জবাকুসুম তৈল’, ‘সালসা পিলাও’ নামে তিনটি বিজ্ঞাপন চিত্র, সম্রাট পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেক এবং বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ মিছিল ও শোভাযাত্রার ওপর প্রামাণ্যচিত্রসহ ১৯০১ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে ১২টি কাহিনী চিত্র, ১০টি সংবাদ চিত্র এবং ৩টি প্রচার চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর আগে এ উপমহাদেশে আর কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন নাই। বঙ্গসন্তান হীরালাল সেনই ভারতীয় উপমহাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের জনক।
ঢাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রথম পরীক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন নবাব পরিবারের কয়েকজন তরুণ। খাজা আজমল, খাজা আজাদ, খাজা আদেল, খাজা নসরুল্লাহ, খাজা জহির আর এদের সাথে যুক্ত ছিলেন জগন্নাথ কলেজের অম্বুজ গুপ্ত, আব্দুস সোবহান এবং আরো কয়েকজন। তাদের সে ছবির নাম সুকুমারী। এতে নায়িকা সেজেছিলেন আব্দুস সোবহান নামে একজন পুরুষ। এ গ্রুপের উদ্যোগে নির্মিত সফল প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘শেষ চুম্বন’ (দি লাস্ট কিস)। ত্রিশের দশকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন। এমনকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও তাঁর জীবনের শেষদিকে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায় এর পর থেকে ধীরে ধীরে সামনে এগুতে থাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, খান আতাউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ফরিদপুরের মোহন মিয়া (লাল মিয়া) প্রমুখের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এদেশে চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে ৩ এপ্রিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিল উত্থাপন করে ‘চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ (এফডিসি) প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন। তার পর থেকে ঢাকায় চলচ্চিত্র শিল্পের এক শক্ত বুনিয়াদ গড়ে ওঠে। মুখ ও মুখোশ, আসিয়া, আকাশ আর মাটি, জাগো হুয়া সাভেরা, মাটির পাহাড়, এদেশ তোমার আমার, রাজধানীর বুকে, কখনো আসেনি, সূর্যস্নান, কাঁচের দেয়াল, নদী ও নারী এবং আরও পরে সুতরাং, জীবন থেকে নেওয়া ইত্যাদি কাহিনী নির্ভর বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণের মধ্য দিয়ে কিছুটা সংগঠিত হয়ে ওঠে ঢাকার চলচ্চিত্র।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে অভিষেক ঘটে যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের সেই নতুন দেশে নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতারাই পরবর্তীতে এদেশে বিকাশমান বিকল্প চলচ্চিত্র ধারা গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই শুরু হয়েছিল এক নতুন ধারার চলচ্চিত্রের পথ চলা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে নির্মিত হয় ‘স্টপ জেনোসাইড’। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও শরণার্থীদের মৃত্যুর প্রতিরোধ স্পৃহার ওপর ভিত্তি করে এ ছবিটি নির্মিত হয়েছে, যা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গড়ে ওঠে বিশ্ব জনমত। স্বাধীনতার পর নির্মিত হয় একগুচ্ছ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও আমাদের চলচ্চিত্রে জীবনঘনিষ্ঠ সমাজ বাস্তবতা দেখতে চেয়েছিলেন দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসী।কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর একের পর এক এ দেশে নির্মিত হয়েছে মুনাফা অর্জনকারী ফর্মুলাভিত্তিক নকল চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রে মানুষ সমাজ বাস্তবতার স্পর্শ পায়নি।
যত ক্ষুদ্র পরিসরেই হোক, বিশেষত শিল্পের অতশত অভিভাবক থাকতে বাংলাদেশেই পালিত হচ্ছে বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস। প্রতি বছর ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি নিজেদের মতো করে ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ উদযাপন করে। এ উদ্যোগটি ক্রমান্বয়ে সরকার, সকল চলচ্চিত্র সংগঠন ও সংস্থার মধ্যে সঞ্চালিত করতে হবে। কারণ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বুকের রক্ত দিয়ে বিশ্বে মাতৃভাষার মর্যাদা ও দাবি প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন একমাত্র বাঙালিদের দ্বারাই সম্ভব হয়েছিল। আজ সারা পৃথিবীতে তাই ২১ মে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়। এ ক্ষেত্রে বাঙালিাই বিশ্ববাসীকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই বিশ্বের কোথাও যা হয় নাই, বাংলাদেশ আবারও তা করে দেখাবে। বাংলাদেশই হবে এ উদ্যোগের চালিকা শক্তি। একদিন ২৮ ডিসেম্বর সারা দুনিয়ায় ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হবে এ স্বপ্ন আজ আর অলীক কল্পনা নয়। প্রথমে দেশের সর্বত্র এবং কালের ব্যপ্ত পরিসরে তা বাংলাদেশ থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হবে আমাদের চলচ্চিত্র ঐতিহ্য’। বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসে এ আমাদের প্রত্যাশা।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে তূর্য
লেখাটিকে প্রিয়তে রাখার জন্য
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮
কিরমানী লিটন বলেছেন: চমৎকার ভালোলাগার পোস্ট- অনেক শুভকামনা প্রিয় নূর মোহাম্মদ নূরু ভাইকে ...।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: লিটন ভাই সুভেচ্ছা জানবেন।
লেখাটি আপনার ভালে লেগেছে
তার জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৪
এনামুল রেজা বলেছেন: বরাবরের মতই তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট। নূরু ভাইকে ধন্যবাদ। আজকে চলচ্চিত্র দিবস, সেইটা জানা গেল।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: রেজা ভাই সালাম নিবেন,
ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যে
অনুপ্রানিত করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
আরেফীন তূর্য বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম...