নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাকে ভালবাসি
"সত্যি বলছি ভাইয়া, হিন্দুদের চিতাখোলার (শ্মশান) পাশে জ্বীনের আস্তানা আছে।"
তানিয়ার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো তৌসিফ। তানিয়া তার একমাত্র শ্যালিকা। কিছুদিন আগে তানিয়ার বড় বোন শায়লার সাথে বিয়ে হয় তৌসিফের। গ্রামের মেয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। বাংলা বিভাগের তরুন শিক্ষক তৌসিফ। সেখানেই ছাত্রী শায়লার সাথে পরিচয় এবং প্রেম। যা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়।
বিয়ের পর বেশ ক'বার শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে এসেছে তৌসিফ। একেবারে গ্রাম বলতে যা বোঝায় সেরকমই শায়লাদের গ্রামটি। মেইন রোড থেকে অনেক ভিতরে। দিনে গাড়ি পাওয়া গেলেও রাতে এলে গাড়ি পাওয়া যায়না। তখন মেইন রোড থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হাটতে হয়। এবারও শায়লাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে। শায়লা কয়েকদিন বাপের বাড়ি থাকবে। তৌসিফ সকালে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে। কয়েকদিন পর এসে শায়লাকে নিয়ে যাবে।
তানিয়া আবার বলে - "বিশ্বাস করেন না ভাইয়া? আমাদের গ্রামের অনেকেই দেখেছে। গভীর রাতে চিতা থেকে বের হয়। অনেক লম্বা জ্বীন। সাদা পোষাক পড়ে থাকে। সেদিন মেম্বার চাচা দেখেছিল। হাট থেকে ফিরছিলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় সঙ্গী কাউকে পাননি। একা একা বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ দেখতে পান লম্বা সাদা পান্জাবী পড়া কি একটা বের হয়ে আসছে চিতা থেকে। মেম্বার চাচা ভয়ে অজ্ঞান হওয়ার দশা। আয়তুল কুরসি পড়তে পড়তে দৌড়ায়া দোড়ায়া বারি ফিরেছে, তারপর উঠানে এসে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন।"
শ্যালিকার মাথায় চাটি মারে তৌসিফ- "আমাকে ভয় দেখাচ্ছো, না? যাতে কোনদিন একা একা আসতে হলে ভয় পাই। শোন, জ্বীন- ভুত- প্রেত এসব কিচ্ছু নেই। সব বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য মায়েদের বানানো গল্প। এসব গল্প বড়দের মাথায়ও ঘুরতে থাকে। তাই তারা যখন একাকী পথ চলে তখন ছায়া দেখলেও ভয় পায়।"
নাস্তার প্লেট হাতে রুমে প্রবেশ করে শায়লা। কয়েক রকমের ঝাল নাস্তা। স্বামীর পছন্দের নাস্তাই বানিয়ে নিয়ে এসেছে সে। স্বামীকে বললো- "তুমি ভুতে ভয় পাওনা জানি। কিন্তু, সেদিন হাই স্কুলের কবির স্যারও নাকি কিছু একটা দেখেছেন। তিনি অসম্ভব গম্ভীর টাইপের মানুষ। ফাজলামী পছন্দ করেননা। তিনি তো মিথ্যা বলতে পারেননা।"
"হয়তো পাড়ার কোন দুষ্টু ছেলে কবির স্যারকে ভয় দেখানোর জন্য অমন কাজ করেছে"। নাস্তা খেতে খেতে বললো তৌসিফ। "শোন, আমি ভুত, জ্বীন এসব নিয়ে অনেক বই পড়েছি। এই ২০১৫ সালে এসে ভুতের ভয় পাওয়াটা অবান্তর। বাদ দাও তো ভুতের গল্প। শোন, আমি সকাল সকাল বের হবো। আমার চা নাস্তা দিতে দেরী করোনা। আর কয়েকদিন পর তোমাকে নিতে আসবো। "
পরদিন সকালে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় তৌসিফ। একটা রিক্সা নিয়ে মেইন রোডে উঠতে হবে। সেখানে সিএনজি টেক্সি পাওয়া যায়। রিক্সা চিতা খোলার পাশে আসতে ভাল করে সেদিকে তাকায় তৌসিফ। কয়েকটা আধপোড়া কাঠ পড়ে আছে। সম্ভবত গতকাল কাউকে পোড়ানো হয়েছিল। তারই চিহ্ণ রয়ে গেছে। আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই। চিতাখোলা অবশ্য বাড়ি থেকে দুরেই করা হয়। গতকালকে তানিয়ার বলা কথাগুলো ভাবতে লাগল সে। "নাহ, এসব জ্বীন ভুতের কাহিনী বানানো।" একটু জোরে জোরেই বলে ফেললো তৌসিফ।
রিকশাওয়ালা শুনে হাসলো। বললো- "প্রথম প্রথম সবাই একথা বলে। যেদিন নিজের চোখে দেখবেন সেদিন বুঝবেন।"
নিজের কর্মস্থলে ফিরে কয়েকদিন ব্যস্ততার মধ্যেই কেটে গেল তৌসিফের। আজ শ্বশুর বাড়ী যেতে হবে। শায়লাকে আনতে। শায়লা ফোনে বলেছিল, একটা সারপ্রাইজ আছে। সেখানে গেলে নাকি জানাবে। আর ফেরার পথে নাকি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে গিয়েও পারলোনা তৌসিফ, সাতটা বেজে গেছে। বাসায় গিয়ে কাপড় চেইঞ্জ করতে হবে। সেখান থেকে শায়লাদের বাড়ী কমপক্ষে দু ঘন্টার পথ। একবার ভাবলো আজকে না গিয়ে কাল সকালে গেলে কেমন হয়। আবার ভাবলো, না শায়লা অপেক্ষায় থাকবে। আর সারপ্রাইজটা কী সেটা জানার আগ্রহও রয়েছে।
রাস্তায় বের হয়ে সরাসরি শায়লাদের বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি রিজার্ভ করলো তৌসিফ। গাড়ি ছাড়তেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির তোড়ে রাস্তা ভাল করে দেখায় যায়না। গতি কমে এলো গাড়ির। শায়লাদের গ্রামের কাঁচা রাস্তার মাথায় যখন পৌছলো তখন রাত সাড়ে এগারোটা। কাঁচা রাস্তা দেখে বেকে বসলো সিএনজি চালক। কাদার মধ্যে সে সিএনজি নিয়ে যাবেনা। ভাড়া বাড়িয়ে দিতে চাইলো তৌসিফ। তবুও যাবেনা। শেষ পর্যন্ত তৌসিফ ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে নেমে গেল।
তৌসিফ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ছাতা নেয়নি। ভিজে ভিজে সিএনজি থেকে নেমে কিছুদুর আসতে বৃষ্টি থেমে গেল। মোবাইল বের করল সে। শায়লাদের বাড়ির কাউকে বাতি নিয়ে আসতে বলবে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো চার্জ নেই। মোবাইল বন্ধ হয়ে রয়েছে। অগত্যা হাটতে শুরু করলো তৌসিফ। হাটতে হাটতে চিতা খোলার কাছাকাছি আসার পর হঠাৎ গা ছমছম করতে লাগলো তার। আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই। এমনকি দুরেও যতটুকু চোখ যায় কোন বাতি জ্বলছেনা। আকাশে মেঘ কেটে যাওয়ায় চাঁদ উকি মারছে। চাঁদের আলোই ভরসা।
চিতাখোলার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা অদ্ভুত গন্ধ এসে নাকে লাগলো তৌসিফের। গন্ধ কিসের দেখার জন্য এদিক ওদিক নজর বোলালো সে। হঠাৎ দেখলো চিতাখোলার মাঝখান থেকে কি একটা সোজা হচ্ছে। লম্বা সাদা আলখাল্লা পড়া। গন্ধের তেজ আরো বাড়ছে। ভয়ে তৌসিফের কলিজা শুকিয়ে আসছে। থর থর করে কাঁপতে লাগলো সে। নড়াচড়া বা দৌড় দেয়ার কথা যেন ভুলে গেছে। মনে পড়লো তানিয়ার বলা জ্বীনের গল্পের কথা। এটাই সেই জ্বীন নয়তো। তা কী করে হয়!! জ্বীন বলে তো কিচ্ছু নেই। বিজ্ঞানের বইয়ে পড়েছে।
এদিকে সাদা আলখাল্লা পড়া লম্বা বস্তুটি তৌসিফের দিকে এগিয়ে আসছে। দু হাত সামনে বাড়িয়ে দিলো তৌসিফকে ধরার জন্য। তৌসিফ আয়তুল কুরসি পড়ার চেষ্টা করলো। হায়, এ মূহুর্তে সেটিও মনে পড়ছেনা। এগিয়ে আসছে জ্বীনটি। তৌসিফকে ধরার জন্য...........
#ভৌতিক
১৪ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮
জিয়া চৌধুরী বলেছেন: এইটা আমার দ্বিতীয় ভুতের গল্প। চেষ্টা করছি আরো ভাল করতে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:২০
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: লেখনীটা সাবলিল লেগেছে। তবে গল্পটা গতানুগতিক। চাইলে আরো একটু ভালো হতে পারত! শুভ কামনা রইল।