নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগ-বাড়ির সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ছাড়া এই ব্লগ-বাড়ির কোনো লেখা অন্যকোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
বইয়ের নাম: মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড
লেখক: মিজানুর রহমান খান
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন
বিষয়: তথ্য অনুসন্ধান ও গবেষণামূলক বই
প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী
প্রথম প্রকাশ: আগস্ট ২০১৩
মলাট মূল্য: ৬০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৭৫ পৃষ্ঠা
এই বইটার নাম আমি অনেক আগেই শুনেছিলাম। আকর্ষনীয় নামটা দেখেই পড়ার আগ্রহ হয়েছিল। এই জনরার বইগুলো সাধারণত তথ্যভিত্তিক আলোচনা ও লুকায়িত সত্যকে প্রকাশ করার জন্য অনুসন্ধিৎসুমূলক গবেষণা পত্র হিসেবে লেখা হয়ে থাকে। এটার নামকরণ দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিল যে এটা সুনির্দিষ্ট একটা বিষয় নিয়েই লেখা হবে, যেখানে মার্কিন সরকার দ্বারা অবমুক্ত করা গোপন দলিলগুলোতে শেখ মুজিব রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেই সময় ঠিক কী কী লেখা তার বার্তায় পাঠানো হয়েছিল গোয়েন্দা দলিলে তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। তথ্যভিত্তিক এই বইতে মার্কিন দলিলে প্রকাশিত শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত সবগুলো গোপন দলিলের কথাই উঠে আসার কথা। কিন্তু আদতে এই বইতে সেটা হয়নি। কেন হয়নি সেটা নিচে ব্যাখ্যা করা হবে।
বইটার নামকরণ থেকে এটাই আন্দাজ করা যায় যে মার্কিন দলিলে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে সমস্ত তথ্যগুলো আছে সেইগুলো সঠিকভাবে বইতে তুলে দেওয়া হবে। তথ্য ও গবেষনামূলক এই লেখায় লেখক নিজের কল্পনাপ্রসূত কোনো সিদ্ধান্ত এনে চাপিয়ে দিতে পারেন না। মার্কিন তথ্য ব্যতীত যে কোনো অসমর্থিত সূত্র থেকে পাওয়া লেখা এখানে নিয়ে এসে কোনো সিদ্ধান্ত পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা ঠিক হবে না।
কিন্তু লেখক এটাই করেছেন। খুব সূক্ষ্মভাবে করেছেন। সাধারণ পাঠকরা প্রথমবার পড়ে গেলে সেটা টের পাবেন না। উনি এই বইয়ে কী কী অপকর্ম করেছেন সেটা আমি নিচে ধারাবাহিকভাবে দিচ্ছি:
(এক) উনি পুরো লেখায় অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং তখন অল্প সামান্য উচ্ছৃংখল কয়েকজন সেনা দ্বারা বিদ্রোহ হয়েছিল যার পিছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদত ছিল, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে। দেশের সাধারণ মানুষ শেখ মুজিবরের মৃত্যুর সময় তার শাসনকাল এবং তাকে পরিবার নিয়ে যেন খুব সন্তুষ্ট ছিল। এটা কোনো গণবিদ্রোহ ছিল না।
এটাই হচ্ছে এই বইয়ের সবচেয়ে বড় ডাহা মিথ্যা কথা। নিদারুণ বাস্তব ও নির্মম এই সত্যকে গোপন করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে যে সেনা অভ্যুত্থানটা হয়েছিল এর পিছনে সেই সময়কার সেনাবাহিনী বেশিরভাগ সদস্যর পূর্ণ মৌন সমর্থন ছিল এবং সেই সময় দেশের মানুষজন বাকশাল, আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবের পরিবার এবং আওয়ামী দুর্বৃত্তদের উপর এতটাই ক্ষিপ্ত ছিল যে শেখ মুজিবরের সপরিবারে মারা যাওয়ার খবর শুনে, সারা বাংলাদেশে মিষ্টির দোকানের সব মিষ্টি সাথে সাথেই খালি হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় যারা প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন তাদের অনেকের কাছে থেকে শুনেছি যে শেখ মুজিবর মারা যাওয়ার এই সুসংবাদে মানুষজন রাস্তায় এসে সারাদিন আনন্দ মিছিল করেছে। নিজের টাকায় মিষ্টি কিনে নিয়ে সবার মধ্যে বিতরণ করেছে। এটা ছিল আপামর জনগনের গণবিস্ফোরণ, যেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অকুতোভয় কিছু সেনারা স্বাধীনতার যুদ্ধের চারবছর পরই দেশকে আবার পুনরায় স্বাধীন করে। এখানে মার্কিন কোনো মদদ কিংবা সিআইএর কোনো ইন্ধন ছিল না। এটা ছিল জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
আর এখানেই লেখক অত্যন্ত শঠতার সাথে এটাই বারবার দেখাতে চেয়েছেন যে, এই বিদ্রোহ দেশের মানুষ নিজে থেকে করেনি বরং সিআইয়ের এতে ইন্ধন ছিল। তারাই শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের জন্য উস্কানি ও প্রশ্রয়দাতা ছিল। এই আজগুবি থিওরির স্বপক্ষে উনি মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজের বেশ কিছু লেখা উদ্ধৃত করেছেন। অথচ এই বইটা হওয়ার কথা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবমুক্তকারী গোয়েন্দা তথ্য থেকে লেখা। সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ বিভিন্নজনের সূত্র থেকে ইশারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মার্কিন ষড়যন্ত্রের। কিন্তু যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে এই ঘটনার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক বা ইন্ধন ছিল না ঘোষনা করেছেন। সম্পূর্ণ অনুমান এবং ইচ্ছাকৃতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এর সাথে জড়িত করার প্রয়াসে বিভিন্ন জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে চাতুর্যপূর্ণ সমাধান টানা হয়েছে কিংবা কনক্লিউশন টানা হয়েছে যে এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধন থাকতে পারে।
(দুই) এই বইয়ের আরেকটা অত্যন্ত নোংরাদিক হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনার সাথে বাংলাদেশে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, বীরউত্তম, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের নামকে বিনা কারণে টেনে নিয়ে এসে এর সাথে সম্পৃক্ত করা। এই বইতে মার্কিন যে সমস্ত দলিলপত্রগুলো অনুবাদ করা হয়েছে সেখানে কোথাও একটা শব্দের মাধ্যমেও জিয়াউর রহমানকে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করে লেখা হয়নি। কোনো তার বার্তায় সেটার উল্লেখ নেই। কিন্তু লেখক বারবার ত্যানা পেঁচিয়ে বিভিন্ন ভারতীয় সূত্র ও ভারতীয় সংবাদপত্র থেকে আজগুবি সব তথ্য নিয়ে এসে, লরেন্স লিফশুলজ নামক এক সাংবাদিকের লেখার মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন।
উনি এই জিয়াউর রহমানের নাম সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে সেই সময় ভারতীয় সংবাদপত্র, মিডিয়া, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কিংবা ভারতীয় সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইত্যাদি বিভিন্নজনের বিভিন্ন সূত্র, তাদের মতবাদ, তাদের চিন্তাধারা, তাদের বাংলাদেশকে নিয়ে সন্দেহ ও ভাবনা খুব সুন্দর করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে গিয়েছেন। কিন্তু সারা বইতে একটা জায়গায়ও সেইসময় সেনাবাহিনীর ভেতরে যে ক্রোধ এবং বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছিল সেটা সম্পর্কে কিছুই লেখা হয়নি। এমনকি লেখা হয়নি দেশের মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখে, দুর্ভিক্ষের মধ্যে রেখে, লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার কাহিনী। এই বইতে কোথাও বলা হয়নি দেশের গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে, সবগুলো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে, বাকশাল কায়েম করে, পারিবারিকভাবে পুরো দেশকে নিজের কব্জায় নিয়ে এসে, দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে না খেতে দিয়ে হত্যা করার কাহিনী। না আসেনি, আমি বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার খুঁজেছি কোথাও এই সত্য কথন? কিন্তু সেটা বইয়ের কোথাও ফুটে উঠেনি।
(তিন) আরেকটা ভয়ংকর কাণ্ড আছে এখানে। আপনারা হয়তো প্রথমবার পড়ে গেলে টের পাবেন না। কিন্তু লেখক অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে এই কাজটা করেছেন। অনেকগুলো দলিলের মধ্যেই দেখবেন হুট করে থেমে গিয়েছে আর লেখা নেই। কিন্তু আপনি পড়তে থাকলে বুঝতে পারবেন যে সেখানে হয়তো আরো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল যেটা লেখক ইচ্ছাকৃতভাবে অনুবাদ করেননি। এখানে হয়তো এমন কোনো অনেক তথ্য ছিল যেটা লেখক আমাদের কাছে পৌঁছাতে চাননি। কিছু কিছু দলিল পড়ার সময় মনে হয়েছে এখানে অনেক সংযোজনশীল তথ্য ছিল যেটা পাঠকের কাছে ঐসময়কার ঘটনাগুলো পরিস্ফুটভাবে তুলে ধরবে।
কিন্তু লেখক অত্যন্ত নোংরামির সাথে সেখানেই দলিলটার অনুবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন। উনি আর এর বাকি অংশটা অনুবাদ করেননি। অথচ কোনো একটা দলিল যদি উল্লেখ করতে হয়, সেই দলিলে এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সবকিছুই নিয়ে আসা উচিত ছিল। কিন্তু লেখক সেটা করেননি। উনার যেখানে যেখানে পছন্দ হয়েছে, যা যা উনার লেখার এজেন্ডার সাথে মিলেছে, সেটাই শুধু এনেছেন। আর বাকিগুলো পাঠককে জানতে দিচ্ছেন না। উনি ইচ্ছেই করেই বাকিগুলো অনুবাদ না করে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। বইয়ের বেশ কিছু দলিলের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটছে।
দেশের সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এই বইয়ের বাস্তবতা:
বাংলাদেশের সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তখন ঠিক একই রকম ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশ তখন ভারতীয় আধিপত্যবাদ পুরো দেশকে জেঁকে বসেছিল। স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে বাংলাদেশের সরকার তখন মোটেও কার্যকর ছিল না। দেশের সেনাবাহিনীকে সংকুচিত করে এর ঠিক প্যারালাল রক্ষী বাহিনীর নামে আরেকটা রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র সংগঠনকে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবং রং এর প্রত্যক্ষ মদতে দাঁড়া করানো হয়েছিল, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করে দেওয়া, ক্ষমতা শূন্য করে রাখা। এছাড়াও নির্লজ্জভাবে দলীয়করণ এবং পা চাটা চামচাদেরকে সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ে বসানো ছিল নিয়মিত ঘটনা যার ফলে সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমান্ড শেখ মুজিবুর রহমান আমলে অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
এটা প্রতিষ্ঠিত প্রমাণ হচ্ছে শেখ মুজিবের সাহেবের বাসায় যখন সেনাবাহিনী সদস্যরা আক্রমণ করে তখন উনি সেনাবাহিনীর প্রধানকে ফোন করে সাহায্য চান। অথচ সেনাবাহিনীর প্রধান তখন অসহায় কণ্ঠে বলেন তিনি নিরুপায়, সেনাবাহিনী সদস্যরা তার কথা মানছে না। অর্থাৎ তার কমান্ডকে অনেক আগেই সেনাবাহিনী অস্বীকার করেছে। সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমান্ড নষ্ট করে দেওয়া এবং পুরোপুরি একে অকার্যকর করার দেওয়ার নোংরা পরিকল্পনা নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র খুব অসন্তোষ তখন পুরো সেনাবাহিনীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। যার কারণে খুব সহজেই এত বড় একটা সেনা অভুত্থান হওয়ার পরও সারাদেশে বড় কোনো বিশৃঙ্খল অবস্থা সেদিন তৈরি হয়নি। সারাদেশের সাধারণ মানুষজন অত্যন্ত আনন্দ এবং খুশির সাথে সেনাবাহিনীর এই অবস্থানকে হাসিমুখে স্বাগত জানিয়েছিল মিষ্টি খেয়ে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ্যামবেসী অত্যন্ত সীমিত পরিসরে বাংলাদেশে অপারেট করতো। যার মূল কারণ হচ্ছে তখন বাংলাদেশ সোভিয়েত ব্লকে থাকাটাকে তখন বেশি পছন্দ করতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদান এর কারণে দেশের মানুষজনও চাইতো শেখ মুজিবরের যেন বাংলাদেশকে সোভিয়েত ব্লকে রাখে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। কেননা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অত্যন্ত নোংরাভাবে সহায়তা করে যাচ্ছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত সেটা সফল হয়নি।
লিফশুলজ কে আর কেন তার সবকিছু বিশ্বাস করতে হবে?
মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ বাংলাদেশে এসে আবু তাহের হত্যা মামলায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের ১৪ ই মার্চ ২০১১ সালে হলফনামায় উল্লেখ না থাকলেও আদালতকে বলেছেন শেখ মুজিব হত্যা মামলায় জিয়াউর রহমান পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। এই ঘটনার মুখ্য ব্যক্তিদের মধ্যে জিয়াউর রহমানও একজন। অথচ যাদের সূত্র থেকে উনি এই কথাটা বলেছেন তারা কখনোই এই কথাটা কোথাও উল্লেখ করেননি। সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা কথা। এর প্রমাণ হচ্ছে মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তা গুলো। সেনা সদস্য ফারুক কিংবা ডালিম যখন সেনা অভ্যুত্থানের জন্য জিয়াউর রহমানকে অনুরোধ করে উনি তখন সেটাতে কিছুতেই সম্মত হননি। ডেপুটি চিফ ইন কমান্ড থাকার পরেও উনি এইধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের আমলে যে ইচ্ছাকৃতভাবে জিয়াউর রহমানকে মিথ্যাচার করে নোংরাভাবে এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল সেটা সবাই জানে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক এখনকার মত ছিল না। ভারত রাজনৈতিকভাবে রাশিয়ার প্রতি মুখাপেক্ষী ছিল এবং শেখ মুজিব ছিল সত্যিকার অর্থে ভারতের একজন দালাল। এই কারণে শেখ মুজিবর রাশিয়ার মুখাপেক্ষী ছিল। যার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রনীতি শেখ মুজিবরের প্রতি কোনোভাবেই সদয় ছিল না তার আচরণের কারণে। এটার জন্য শেখ মুজিব নিজেই দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে কি লাভ? তারপরও বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে সেই দুর্ভিক্ষের সময় ও তার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্য সাহায্য নিয়মিত পাঠানো হয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় পাতায় সেগুলো স্পষ্টভাবে লেখা আছে।
ঢাকাই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার স্পষ্টভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শেখ মুজিবরের হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক ছিল না লিখে দিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এমনকি সেই সময় সেনা সদস্য ফারুক ও ডালিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র সাহায্য কিনতে গেলেও তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে ১৯৭৫ সালে ১০ই নভেম্বর বোস্টার এক তারবার্তায় ফারুক ও ডালিমকে আমেরিকাতে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করেছিলেন এবং সেই তারবার্তায় এই দুইজনকে খুনি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দলিল থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানে জেলে আটকা ছিলেন তখন তাজউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, খন্দকার মুস্তাক সহ বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ আওয়ামী লীগের লোকজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা ও দেন-দরবার করছিলেন। পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তারা আতঙ্কিত হয়ে আমেরিকার কাছে অন্ততঃ নতুন একটা প্রদেশের বিনিময়ে হলেও অতিরিক্ত কিছু স্বাধীনতা কামনা করেন। আওয়ামী লীগে তখন মার্কিনপন্থী অনেকগুলো রাজনীতিবিদ ছিলেন যারা আমেরিকা সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। ভারত এই বিষয়টা খুব ভালো করে জানতো। পরবর্তীতে যখন শেখ মুজিবর দেশে ফিরে আসলেন এবং ক্ষমতা গ্রহণ করলেন, উনি ভারতীয় প্রেসক্রিপশন মোতাবেক এই সমস্ত মার্কিনপন্থী আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতাকর্মীদেরকে প্রায় জোর করে দল থেকে নিষ্ক্রিয় করেদিলেন, দল থেকে বহিষ্কার করা হলো কাউকে কাউকে, এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অবদান রাখার পরেও তাজুদ্দিন সাহেবকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হলো। নজরুল ইসলামের অবস্থাও তাই হলো। বুদ্ধিমান মোস্তাক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শেখ মুজিবের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবসময় ভালো ছিল বলেই শোনা যায়।
এই বইটা থেকে একটা মাত্র সত্য উদ্ধার করা গেল যে ভারত সবসময় শেখ মুজিবরকে একটা দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে গিয়েছিল। স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমন কোনো কাজ ছিল না যে শেখ মুজিবরকে দিয়ে ভারত করায়নি। বিভিন্ন সামরিক ও সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে ভারতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে একটা প্রাদেশিক রাষ্ট্র হিসেবে ভবিষ্যতে দখল করার। সেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ ও বাকশালেরর সবকিছুই ছিল আসলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের পরিকল্পনা মাফিক কাজের অংশ। তবে ভারতীয়দের চরিত্র যা হয় তাই হয়েছে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরে। শেখ মুজিবরকে সপরিবারে হত্যার পরে আওয়ামী লীগের লোকজন অনেক আশা করেছিল যে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে কিংবা আওয়ামী লীগকে রক্ষা করবে। কিন্তু যখন ভারত উপলব্ধি করতে পারে যে দেশের মানুষজন এখন প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আছে এবং সেনাবাহিনীও জনগণের সাথেই আছে তখন ইন্দিরা গান্ধী কোনোভাবেই আর বাংলাদেশে সেনাবাহিনী পাঠানোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। এটাই ভারতের চরিত্র, বিপদের সময় খুব ঘনিষ্ট বন্ধুকেও পিঠ দেখানো হচ্ছে ভারতে চাণক্যবাদের মূলমন্ত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এইসব ভারতীয় দালালরা যারা বাংলাদেশে বসে র’য়ের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার কাজে ব্যস্ত থাকে, তারা জানে না যে স্বার্থ উদ্ধার শেষ হলে ভারত তাদের প্রতিও সমর্থন পুরোপুরি তুলে নেবে।
এই বইটার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল একটা কন্সপিরেসি থিওরি। শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব মার্কিন মদতে খুন হয়েছেন নির্মম ডাহা মিথ্যা কথাটা বইয়ের পাতায় তুলে নিয়ে আসার জন্য অনেক রকম ছলচাতুরি করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা এজেন্ট হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বারবার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে, বলা হয়েছে তার সাথে হয়তো সিআইএ’র সম্পৃক্ততা থাকতেও পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠিয়েছিল। এই সমস্ত নথিতে শেখ মুজিবর রহমানের ভারতীয় দালালি করা, দেশের টাকা লুটপাট করা, পরিবারতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং ভারতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করার বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত ছিল বলেই সহজেই অনুমান করা যায়। জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা এবং ক্রোধ যে ছড়িয়ে পড়েছিল সেটা ব্যাপারেও নথিগুলো কোনভাবে অনুবাদ করা হয়নি। সততুর্ভাবের সেই অংশগুলোকে এড়িয়েছে এটাকে একটা বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম আলো পত্রিকা এবং তার সম্পাদকমন্ডলীকে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্র আশঙ্কা রয়েছে যে এটার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বৈদেশিক কোনো সাহায্যে। এরা প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত সবসময় একটা বৈদেশিক চক্রান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মিথ্যা তথ্য দেওয়া, বানোয়াট তথ্য দেওয়া, কিংবা স্বৈরাচারীকে মদত দেওয়া এদের রীতিনীতি মধ্যেই সবসময় পাওয়া যায়। ভারত বিরোধী কোনো খবর এই পত্রিকাতে কখনোই আসে না। সুতরাং এই পত্রিকার সম্পাদকের লেখা ও এখান থেকে প্রকাশিত একটা বইয়ের তথ্যের সত্যতা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক বিষয়।
বইয়ের প্রকাশকালও অত্যন্ত সন্দেহজনক। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জোর করে ক্ষমতা দখল করার পরে মিডিয়াকে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে জনগণের কাছ থেকে সত্যকে লুকিয়ে রাখার জন্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এইধরনের বই প্রকাশ করাটা মোটেও অবাক করার মতো ঘটনা না। ২০১৩ সালে প্রকাশিত এই বইটা যদি অন্য কোনো সময় কোনো নিরপেক্ষ প্রকাশনী থেকে বের হতো তাহলে হয়তো কিছুটা সত্যতা নিয়ে বিশ্বাস করা যেত। কিন্তু আওয়ামী লীগের মদতপুষ্ট একটা সংবাদপত্রের প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বই প্রকাশের উদ্দেশ্য কী হতে পারে এটা যেকোনো ভালো পাঠক পড়ামাত্রই সহজে উপলব্ধি করতে পারবে।
শেখ মুজিবর এর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত আরো গভীরভাবে অনুসন্ধানমূলক বই আর কী কী আছে সেটা জানার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আশা করছি এই লেখার পাঠকরা আমাকে আরো ভালো ভালো কিছু বইয়ের নাম সাজেশন দিতে পারবে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, আগষ্ট ২০২৪
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৮:৫৯
নীল আকাশ বলেছেন: আপনি ভালো আছেন?
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:৪৮
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার চমৎকার চমৎকার বিশ্লেষণ!
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৯:০০
নীল আকাশ বলেছেন: সত্য প্রকাশে কখনো ভয় পাওয়া উচিৎ না। এই বইটা ইচ্ছা করেই আওয়ামী প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য লেখা হয়েছে বলেই মনে হয়েছে আমার। ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য।
৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৯:৪২
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: দেশে আওয়ামী লীগের সমাবেশ হলেও লাখ লাখ মানুষ হয়, বিএনপির সমাবেশ হলেও লাখ লাখ মানুষ হয়। জামায়াতের সমাবেশেও লোক কম হয় না। এরাও মনে করে জনগণ তাদের পক্ষে আছে। আপনার অবস্থা হয়েছে সেরকমই। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার মুজিব হত্যায় আমেরিকার হাত ছিল, সেনাবাহিনীর একটা ক্ষুদ্র অংশ জড়িত ছিল, জিয়া সরাসরি জড়িত না থাকলেও নেপথ্যে ছিল আর আপনি বেমালুম অস্বীকার করছেন। এসব মিথ্যাচার করে কী লাভ? আরেকটা কথা বলি জেনে রাখুন, ইউনূসও মার্কিন মদদপুষ্ট; ১/১১ এর ঘটনা নিশ্চয়ই ভুলে যান। এবারও কঠিন খেলা খেলছে আমেরিকা। আপনারা খুশিতে বগল বাজালেও এই সুখ বেশিদিন থাকবে না। আমেরিকা তৃতীয় কাউকে ক্ষমতায় বসাবে।
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১:২৬
নীল আকাশ বলেছেন: পাগলের সুখ মনে মনে,
দিনের বেলা তারা গোনে!
১৫ই আগষ্টে দেশের মানুষজন যে খুশিতে মিষ্টি খেয়েছিল তার কী হবে গো!
৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:৪৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান কে এম শফিউল্লাহকে যখন বঙ্গবন্ধু প্রথমবার ফোন করেছিলেন তখন তিনি বলেননি যে তিনি নিরুপায় বা সেনাবাহিনী তার কথা শুনছে না। আপনি এই কথা কোথায় পেয়েছেন? উনি বলেছিলেন যে আমি দেখছি। আর পরের বার বলেছিলেন যে আপনি সম্ভব হলে বাড়ির বাইরে চলে যান। যদিও তিনি কর্নেল শাফায়াত জামিলকে বলার পরেও সে সৈন্য পাঠায়নি যেটা তিনিও পরে জেনেছেন। তখন তার উচিত ছিল নিজে মাঠে নামা। কিন্তু তিনি কিছুই করেননি সকাল ৮ টায় অফিসে গিয়েছেন সকালের নাস্তা খেয়ে। তখন মেজর ডালিম তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যায়। শফিউল্লাহ সাহেব আসলে ব্যর্থ ছিলেন এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে। এটাকে তার অযোগ্যতাই বলা যায়।
বাস্তবতা হল সেই সময় সেনা পাঠালেও হত্যা সংঘটিত হত। কারণ খুব অল্প সময়ে ঘটনাগুলি ঘটেছে। তবে সেনা প্রধানের উচিত ছিল প্রয়োজনে নিজে কিছু সৈন্য নিয়ে ৩২ নম্বরের বাড়ির দিকে যাওয়া। কর্নেল শাফায়াত জামিল কথা না শুনলেও সেনাপ্রধানের সরাসরি আদেশ সেনারা নিশ্চয়ই শুনতো। শেখকে বাচানো না গেলেও ফারুক, রশিদ আর ডালিমকে থামানো যেত। কিন্তু তিনি সেটাও করেননি। ধীরে সুস্থে সকাল ৮ টায় অফিসে গিয়েছেন। উনি যে একজন অযোগ্য সেনাপ্রধান ছিলেন এই ঘটনাগুলি থেকেই সেটা প্রমাণিত হয়। তবে উনি বঙ্গবন্ধুকে বলেননি যে তিনি নিরুপায় বা সেনারা তার কথা শুনছে না।
এই বইয়ের লেখক আইনজীবী ছিলেন না কিন্তু আইন নিয়ে অনেক উলটাপালটা লিখে সমালোচিত ছিলেন বিভিন্ন সময়ে। মার্কিন নথির আংশিক প্রকাশ না করে সংশ্লিষ্ট পুরো অংশ প্রকাশ করা উচিত ছিল। তবে মার্কিনীরা যে শেখ হত্যায় জড়িত ছিল সেই অংশ তারা কখনও প্রকাশ করবে না। যতটুকু প্রকাশ করা যায় ততটুকুই তারা প্রকাশ করবে। ঐ সময় জনগণ এবং সেনাবাহিনী শেখের উপরে ক্ষেপে ছিল। তবে শেখ হত্যায় আওয়ামী লীগের লোকও জড়িত ছিল যাদেরকে বঙ্গবন্ধু কাছের লোক মনে করতেন। আর ঝামেলা মনে করতেন তাজউদ্দীনকে। যিনি প্রকৃত একজন দেশ প্রেমিক ছিলেন। আওয়ামী লীগ সব সময় খারাপ লোককে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৪৭
নীল আকাশ বলেছেন: তাই নাকি? নিচে সংবাদ পত্রে ও বিভিন্ন বইতে যা যা এসেছে সেটা দেখুন...
সফিউল্লাহ বলেন, ‘তারপর আমি বঙ্গবন্ধুকে ফোন করিl উনার ফোন এনগেজ পাইl এইসময় আমি নেভেল চিফ খান ও এয়ার চিফ খন্দকার সাহেবের সঙ্গে কথা বলি। ওনারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানালেন। আমি ওনাকে (জিয়া) আমার এখানে আসতে বললাম। এরপর আমি খালেদ মোশারফকে ফোন করতে তিনি বললেন, তিনিও কিছু জানেন না। পরে আমি শাফায়েত জামিলকে ফোন করলাম। কিন্তু কোনো জবাব পাইনি। এমন করতে করতে বেশ কয়েক মিনিট পার হয়ে গেল।’
“এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে লাইন পাই। তিনি আমাকে বললেন, ‘সফিউল্লাহ, আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে। কামালকে মনে হয় মেরেই ফেলেছে। তুমি ফোর্স পাঠাও’। আমি ওনাকে তখন শুধু এতটুকুই বলতে পেরেছি, ‘স্যার কেন ইউ গেট আউট? আই এম ডুইং সামথিং (আপনি কি বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন? আমি কিছু করছি’। ব্যাস, তখনি শুনতে পেলাম টেলিফোনে গুলির আওয়াজ। আর এটাই ছিল ওনার সাথে আমার শেষ কথা।’
অথর্ব একজন সেনা প্রধান ছিল সফিউল্লাহ। হ্যাডম ছিল না নিজে বাসা থেকে বের হয়ে সেনাবাহিনীকে অর্ডার দিতে। ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধানকে এম সফিউল্লাহকে অনেকেই দায়ী করে থাকেন। ওই সময় তিনি তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কথাটা সত্য এবং এর পেছনে অবশ্যই বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সামরিক বাহিনীর সিনিয়ারিটি অনুযায়ী এই সময় জিয়ার রহমানের সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার কথা ছিল। শেখ মুজিব নিজেই সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমাণ্ড ভেঙে এই ফালতু আর অথর্ব সফিউল্লাহকে প্রধান বানিয়েছিলেন যার কোনো যোগ্যতাই ছিল না এই পোস্টের।
শেখ মুজিবকে বাঁচাতে এসে প্রাণ দেন কর্নেল জামিল। জেনারেল সফিউল্লাহ ভুলেও ৩২ নম্বরমুখী হননি। পরেরদিন মোশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য বঙ্গভবনে হাজির হয়েছিলেন হালুয়া রুটি নতুনভাবে খাওয়ার জন্য।
৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:৫০
নতুন নকিব বলেছেন:
বিশ্লেষন ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:২২
নীল আকাশ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনি কেমন আছেন?
৬| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:০৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনি লিখেছেন, 'এটা প্রতিষ্ঠিত প্রমাণ হচ্ছে শেখ মুজিবের সাহেবের বাসায় যখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা আক্রমণ করে তখন উনি সেনাবাহিনীর প্রধানকে ফোন করে সাহায্য চান। অথচ সেনাবাহিনীর প্রধান তখন অসহায় কণ্ঠে বলেন তিনি নিরুপায়, সেনাবাহিনী সদস্যরা তার কথা মানছে না। '
আপনার এই কথাটা ভুল। জেনারেল কে এম শফিউল্লাহর কথাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করছেন আপনি। সেনাপ্রধানের ব্যর্থতার কথা আমিও বলছি। সেটা নিয়ে বিতর্ক করছি না। সেনা প্রধান তখন বলেছিলেন যে আপনি সম্ভবত হলে বাড়ির বাইরে চলে আসুন। আর বলেছিলেন তিনি কিছু করার চেষ্টা করছেন। কারও কথাকে বিকৃত করা ঠিক না।
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:২২
নীল আকাশ বলেছেন: হা হা হা। শেখ মুজিবকে বাসার বাইরে আসতে বলেছে কিন্তু নিজে সেখানে যেতে পারে না। কেন জামিল সাহেব যায়নি?
উনি জানেন উনি বাইরে বের হলে সেনাবাহিনীর সুতীব্র রোশের মুখে পড়বেন। কোনো হ্যাডাম নেই নিজে অর্ডার দেওয়ার।
আমি অনেক আগের আরেকটা বইয়ে পড়েছিলাম উনি অসহায় কন্ঠে ফোনে কথা বলেছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে ইতিহাস বিকৃতি সর্বোচ্চ মাত্রা পৌছিয়েছে। ৭ই মার্চের ভাসনের শেষে পাকিস্থান জিন্দাবাদের মতো এটাও মনে হয় গায়েব করে দিয়েছে। ভারতীয় চক্রবর্তীদের পূর্ব পাকিস্থানের আগমনের মতো আসল ইতিহাসের মতো সব সত্য এক এক করে এবার বের হয়ে আসবে। অপেক্ষা করুন।
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:২৪
নীল আকাশ বলেছেন: যে নিজের বাসায় আক্রমনের স্বীকার হয়েছে তাকে বাসার বাইরে আসতে বলেছে!!!
ব্যাটা, বাইরে আসতে পারলে অনেক আগেই পালিয়ে যেত সবাই। তোকে কে ফোন দিত?
জোক অফ দ্যা ইয়ার।
৭| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩
ডার্ক ম্যান বলেছেন: সেনাবাহিনীর লোকজন কি মিথ্যা বলে? বঙ্গবন্ধুর এক খুনি তো ক্যু নিয়ে জিয়ার সাথে আলোচনা করেছিলেন।
সেনাবাহিনীর লোকজন খুন খারাবিকে বিপ্লব বলে ধরে নিয়েছিলো। পরে তো ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ক্যু/ পাল্টা ক্যু করে রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠেছিলো।
যুক্তরাষ্ট্র কি কখনো স্বীকার করবে তারা ১৫ আগস্টের সাথে জড়িত। ১/১১ এর সাথে জড়িত।
তারা তাদের সুবিধামত কিছু তথ্য অবমুক্ত করে। আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও কিছু তথ্য পাবলিক করা উচিত ইতিহাসের স্বার্থে।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৪
নীল আকাশ বলেছেন: শেখ মুজিবের মৃত্যুর ঘটনার জনয সে নিজে দায়ী। আর্মির চেইন অফ কমান্ড ভেঙে উনি এমন একজনকে সেনা প্রধান বানিয়েছিলেন যার কথা কোনো সিপাহীও মানতো না। রক্ষীবাহিনী বানিয়েছিলেন ভারতের র এর প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী। ইতিহাস পড়ুন কেন পুরো সেনাবাহিনী এত ক্ষিপ্ত ছিল!
সেনাবাহিনী না থাকলে ১৫ই আগস্ট ও ৫ আগস্ট দুইবার নতুন করে স্বাধীন হতো না দেশ। জাতী তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
১৫ই আগস্ট ও ৫ আগস্ট কোনোবারই আমেরিকা এই ঘটনার সাথে জড়িত এটা কোথাও আসেনি। ইন্দ্রিরা গান্ধীর কী বলেছে পড়ুন। সে নিজেই বলেছে আমেরিকা এটার সাথে জড়িত না। এই বইতেই এসেছে সেটা। ৫ আগস্ট দুইবার নতুন করে স্বাধীন হওয়ায় আমেরিকার কোন সম্পর্ক নেই। আওয়ামী প্রোপাগাণ্ডার অস্ত্র এটা। সারা দেশের মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়ে এসেছিল। সোশাল মিডিয়ায় দেখেননি?
৮| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:২২
আলামিন১০৪ বলেছেন: কে একজন মুজিবকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবার ব্যাপারে জিয়ার সাথে কথা বলেছিল শুনেছিলাম, কিন্তু আমার মনে হয় মুজিব বা তার পরিবারকে কে হত্যা করা হবে এটা জিয়া জানত না।
সে মনে হয় না মিথ্যা বলেছিল
সূত্র
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬
নীল আকাশ বলেছেন: জিয়াউর রহমানকে দেশের রাজনীতির ইতিহাসে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক হিসাবে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবেন। ব্যক্তিগতভাবে উনি ছিলেন নির্লোভ ও দেশ প্রেমিক। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সমর্থকরা উনার জনপ্রিয়তা ভয় পায় দেখেই সবসময় উনাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে বেড়ায়।
৯| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪
করুণাধারা বলেছেন: পরে আসবো ইনশাআল্লাহ।
১০| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২১
করুণাধারা বলেছেন: বরাবরের মতো চমৎকার রিভিউ দিয়েছেন। বইটা পড়িনি, তাই কিছু জানা গেল।
অবশ্য বইটা পড়ার ইচ্ছাও হয়নি কখনো। প্রথম আলোতে মাঝে মাঝে প্রকাশিতব্য বইয়ের কিছু অংশ প্রকাশিত হতো, সে সময় পড়েছিলাম এবং তখনই মনে হয়েছিল বইটিতে আমেরিকান দলিলের কথা বলে জিয়াউর রহমানকে শেখ মুজিবের হত্যাকারী বলে প্রমাণ করাটাই ছিল লেখকের এই বই লেখার উদ্দেশ্য। ফরমায়েশী লেখা মনে হয়।
বিপরীত দিকে, যদি এমন কিছু থাকতো এই বইয়ে যা শেখ মুজিবের রাজত্বের সময়ে মানুষের দুর্দশা তার প্রতি সীমাহীন ঘৃণা প্রকাশ করত তাহলে সেই বই প্রকাশ করা যেত না। আপনি জানেন হুমায়ূন আহমদ দেয়াল নামে একটি উপন্যাস লিখছিলেন। আদালত তাকে লেখা স্থগিতের নির্দেশনা দিয়ে বলে দিয়েছিল কি কি জিনিস প্রকাশ করা যাবে না।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২
নীল আকাশ বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদের দেয়াল নামের উপন্যাস এর অরিজিনাল ভার্সন আমি খুঁজছি পড়ার জন্য। ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সব সময় চ্যাম্পিয়ন।
১১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সেটা আর্মি ক্যু এর একটা অধ্যায় মানুষ হয়তো গত সরকার প্রধানের মতোই তখন শেখ মুজিবকে অপছন্দ করে থাকতে পারেন। তবে ইতিহাস বিদগণ মিথ্যাকে প্রমোট করেন কেন করেন কে জানে। কিছু ইতিহাস লেখা হয় ঘটনার অনেক পরে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে অন্যায় করেছেন। একজন ভয়ানক খুনিকে সহায়তা করা গর্হিত পক্ষপাতদুষ্ট কাজ। প্রেসিডেন্ট মোশতাক এখনও বহাল তবিয়তে আছে। ওনি একদফা একদাবির প্রেতাত্মা তাকেও সরানো উচিৎ ছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। ড. ইউনুস এই দুই ভুত ঘাড়ে নিয়ে কীভাবে ২ন্ড রিপাকলিক গঠন করবে। বিষয়টা কঠিন মনে হচ্ছে। সহজ সরল পথে সফলতা নিহিত ।
১২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১০
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী রিভিউ। আন্তরিক ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১
নীল আকাশ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
১৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬
তৌহিদ রিজন বলেছেন: আপনার লেখাটাকেও পক্ষপাত দুষ্ট মনে হলো। আর কমেন্ট পড়ে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য লেগেছে- আপনি একদমই বিরুদ্ধমত সহ্য করতে পারেন না।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২১
নীল আকাশ বলেছেন: একদমই বিরুদ্ধমত সহ্য করতে পারেন না।
আমি যাদের কমেন্ট করেছি তাদের বেশিরভাগকে আমি চিনি অনেকবছর ধরে। একাধিক নিক ও মাল্টি নিক ধরে।
আপনি মাত্র ৬ দিন হলো ব্লগে এসেছেন। এদের আপনি চেনেন না। এরা এসেছিল এই পোস্টকে পঁচাতে। এই সুযোগ আমি এদের দেইনি। ১১ বছর ৪ মাস ধরে ব্লগে আছি আমি। আরো কিছুদিন ব্লগে থাকুন। তখন বুঝবেন কেন আমি এভাবে প্রতি উত্তর করেছি কিছু কিছু ব্লগারকে।
আমার ব্লগ বাড়িতে আপনাকে সুস্বাগতম। ভালো থাকুন, ব্লগের সাথেই থাকুন।
১৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮
কিরকুট বলেছেন: তৌহিদ রিজন বলেছেন: আপনার লেখাটাকেও পক্ষপাত দুষ্ট মনে হলো। আর কমেন্ট পড়ে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য লেগেছে- আপনি একদমই বিরুদ্ধমত সহ্য করতে পারেন না।
এনারা আর খাটি লীগ লাভার্সরা এরা কেউই বিরুদ্ধবাদ মন্তব্য সহ্য তো দূরে থাক দেখলেই এদের চর্মে চুলকানি শুরু হয়৷ মিনিটে মিনিটে এরা নিজেদের আঘাতপ্রাপ্ত মনে হয়৷ এই পোস্টে এই দুই দলের সমর্থকরাই মন্তব্য করেছে। এদের কেউই একে অপর কে দেখতে পারে না কিন্তু চুরির বেলায় সবাই এক৷ একি ক্যাথার সংগী।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: ভালোবাসার নীল আকাশ।
আপনার শবনম গ্রুপের কি খবর? সেটা এখনও আছে?