নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবন, যে সর্বদা কিছু শিখতে উদগ্রীব, চষে বেড়াই চারপাশে, নতুন কি কি আছে!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছোট্ট একটি গ্রামে বেড়ে ওঠা রুমী। গ্রামের নাম চণ্ডীপুর। রুমীর বয়স মাত্র এগারো। গ্রামের স্কুলে সে ক্লাস ফাইভে পড়ে। রুমী খুবই মেধাবী এবং তার স্বপ্ন বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার কারনে তার পরিবারের জন্য সেই স্বপ্ন পূরণ করা যেন দূর আকাশের তারা।
রুমীর বাবা, নূরুল ইসলাম, একজন কৃষক। ছোট্ট একটা জমিতে ফসল ফলিয়ে কোনো রকমে পরিবারের খাওয়া-দাওয়া চালান। মা, রহিমা বেগম, গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রুমী সবার বড়। ছোট ভাই, রাসেল, এবং ছোট বোন, রিতা, এখনো স্কুলে যায় না।
রুমীর প্রতিদিনের রুটিন খুবই ব্যস্ত। সকালে উঠে ঘর গোছানো, মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করা, তারপর স্কুলে যাওয়া। স্কুল থেকে ফিরে পড়াশোনা, আবার বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়া। কিন্তু রুমীর মনের মধ্যে একটা চিন্তা সব সময় ঘোরে—তাদের পরিবার কিভাবে এই দারিদ্র্যের ফাঁস থেকে বেরিয়ে আসবে?
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে রুমী দেখে গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে একটি বড় গাড়ি আসছে। সে এমন গাড়ি আগে কখনো দেখেনি। গাড়ি থেকে নামলেন একজন সুন্দর পোশাক পরা মহিলা। গ্রামের লোকেরা জড়ো হয়ে গেলো এবং সবাই জানালো যে এই মহিলা আসলে শহরের নামী এনজিওর কর্মকর্তা। তাদের উদ্দেশ্য গ্রামে একটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা, যাতে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়।
রুমী এই খবর শুনে খুবই খুশি হলো। সে ভাবলো, যদি এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে তাহলে হয়তো তার পরিবারের কষ্ট কিছুটা কমবে। মহিলা তার গ্রামের মানুষের সাথে কথা বললেন এবং জানালেন, তারা এখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে চান, যেখানে গ্রামের মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী বানানো হবে।
রুমীর মা রহিমা বেগম এই সুযোগটা নিতে চান, কিন্তু তার কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। রুমী মাকে সাহস দিলো এবং বললো, "মা, তুমি যদি মন দিয়ে চেষ্টা করো, তাহলে অবশ্যই পারবে।" রহিমা বেগম সাহস করে প্রশিক্ষণের জন্য নাম লেখালেন। প্রশিক্ষণ চললো প্রায় তিন মাস। সেই তিন মাসে রুমী মাকে সব কাজে সাহায্য করতো এবং মাকে পড়াশোনা শেখাতে সাহায্য করতো।
প্রশিক্ষণ শেষে রহিমা বেগম গ্রামের প্রথম মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করলেন। তিনি গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতেন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করতেন। তার উপার্জনে পরিবারের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলো।
রুমী তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলো। সে আগের থেকে আরও মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করতো। তার স্বপ্ন এখন আরও কাছাকাছি মনে হতে লাগলো। রুমী এবার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হলো এবং তার শিক্ষক তাকে নিয়ে গর্বিত। শিক্ষকেরা ঠিক করলেন, তারা রুমীর পড়াশোনার দায়িত্ব নেবেন এবং তাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ দেবেন।
রুমী এখন শহরের একটি নামী স্কুলে পড়ে। সে খুবই পরিশ্রমী এবং তার শিক্ষকেরা তাকে সবসময় উৎসাহ দেন। গ্রামের মানুষ এখন রুমীকে তাদের গর্ব বলে মনে করে। রুমী জানে তার স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক বাধা আসবে, কিন্তু সে হার মানবে না। একদিন সে তার গ্রামের সকল মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে, এটাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
এই গল্পটি আমাদের শেখায়, কঠোর পরিশ্রম এবং সংকল্প দিয়ে জীবনের প্রতিটি বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। রুমীর মতোন প্রতিটি শিশু তাদের স্বপ্ন পূরণে সফল হোক, এটাই আমাদের প্রার্থনা।
ছবি ক্রেডিট : Click This Link
©somewhere in net ltd.