নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চেষ্টা করি নতুন কিছু শেখার, ভালো কিছু করার, আর নিজে যা জানি তা অন্যকে উদারভাবে শেখানোর যদি কেউ শিখতে চায়।

নয়া পাঠক

আমি এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবন, যে সর্বদা কিছু শিখতে উদগ্রীব, চষে বেড়াই চারপাশে, নতুন কি কি আছে!

নয়া পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদৃশ্য জালের বুনন

০৫ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ৯:০৫


একটি সুদূর গ্রামে 'জলপুর' নামে এক জায়গায়, নদীর ধারে এক চিলতে বালির ওপর বসে একটি ছোট ছেলে রিয়াজ, নিজের পৃথিবীতে মগ্ন হয়ে আছে। তার বয়স মাত্র দশ, কিন্তু তার মনোজগৎ বয়সে বড়। নদীর পানির কলকল ধ্বনি, গাছপালার সবুজ আভা, আর গ্রামের মানুষের কোলাহল - সবকিছু মিলে মিশে এক অদ্ভুত সুন্দর সুরের সৃষ্টি করে। কিন্তু এই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর সমস্যার শিকড়।

রিয়াজের বাবা শফিক, একজন মৎস্যজীবী। নদীতে মাছ ধরাই তার জীবন-জীবিকা। প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠার আগে, শফিক তার জাল নিয়ে নদীতে নামেন। মা আমিনা সংসারের কাজ সামলান, আর রিয়াজ গ্রামের স্কুলে যায়। গ্রামের স্কুলটি খুবই সাধারণ। কাঠের বেঞ্চ আর টিনের চালা বিশিষ্ট। শিক্ষকেরা আন্তরিক, কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষার উপকরণ ও সুযোগ-সুবিধার অভাব। তবুও, রিয়াজের মনোবল ছিল শক্ত।

একদিন গ্রামে আসে এক সরকারি কর্মচারী। তিনি জানান, গ্রামে উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল সবকিছু নতুন করে তৈরি হবে। গ্রামের মানুষ এ খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা। শফিকও ভাবলেন, তার ছেলের ভবিষ্যত হয়তো এবার একটু উজ্জ্বল হবে। কিন্তু উন্নয়নের সাথে সাথে গ্রামে ঢুকে পড়ে কিছু অপরিচিত মুখ। এদের মধ্যে ছিল ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ আর কিছু স্বার্থপর মানুষ, যাদের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামের সম্পদ হরণ করা।

নদীর পাড়ে তৈরি হয় বড় বড় দালান। নদীর পানি দূষিত হতে শুরু করে, মাছ কমে যায়। শফিকের আয় কমে যায়, সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আমিনা সংসারের খরচ সামলাতে অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। রিয়াজের স্কুলেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। বইপত্র আসে, নতুন শিক্ষক নিয়োগ হয়। কিন্তু শিক্ষার মান উন্নয়নের বদলে দুর্নীতির শিকার হয়। শিক্ষকেরা বেতন পায় না, ফলে তারা শিক্ষাদানে উদাসীন হয়ে পড়েন।

গ্রামের কিছু সচেতন মানুষ একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। শফিক ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তারা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু সবকিছুই যেন এক অদৃশ্য জালে আটকে যায়। গ্রামের মানুষের কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে যায়। তবুও, শফিক আর তার সাথীরা হাল ছাড়েন না। তারা গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

রিয়াজ এই পুরো পরিস্থিতি দেখেও তার স্বপ্নের দিক থেকে চোখ সরায় না। সে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। একদিন, গ্রামের একজন বৃদ্ধ মুরুব্বী রিয়াজকে বলেন, "তুই যদি পড়াশোনা করিস, যদি তুই সঠিক জ্ঞান অর্জন করিস, তবেই তোর গ্রাম, তোর দেশ বদলাবে। তুই হবি আমাদের ভবিষ্যতের আলো।" রিয়াজ সেই কথা হৃদয়ে ধারণ করে।

কয়েক বছর পর, রিয়াজ উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা যায়। সেখানে সে একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠে। তার শিক্ষাদানের ধরন আর আদর্শ তাকে সবার কাছে পরিচিত করে তোলে। রিয়াজ তার গ্রামের মানুষদের কথা ভোলেনি। সে তার জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে নতুন করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

রিয়াজের নেতৃত্বে গ্রামের মানুষ আবারও একত্রিত হয়। তারা উন্নয়নের নামে দুর্নীতি আর শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। গ্রামের মানুষদের চেষ্টায় নদী আবারও পরিষ্কার হয়, মাছ ফিরে আসে। গ্রামে শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর অন্যান্য সুবিধার উন্নতি হয়। শফিকের মতো মৎস্যজীবীরাও ফিরে পান তাদের পুরনো জীবন। রিয়াজের মা আমিনা সন্তানের এই সাফল্য দেখে গর্বিত হন।

শিক্ষা, সচেতনতা আর একতা - এ তিনটি শক্তির মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেমন রিয়াজ তার গ্রামের মানুষদের স্বপ্ন দেখিয়েছে, তেমনি আমাদেরকেও দেখতে হবে, আমাদের বাংলাদেশ যেন হয়ে ওঠে একটি উন্নত, সুখী ও স্বনির্ভর দেশ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লেখা সুন্দর হয়েছে। আশা জাগানিয়া গল্প।

০৫ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৯

নয়া পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ রূপক ভাই, আশা নিয়েই তো বেঁচে রয়েছি।
কমেন্টে আশা জাগানোর জন্য পুনরায় ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.