নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চেষ্টা করি নতুন কিছু শেখার, ভালো কিছু করার, আর নিজে যা জানি তা অন্যকে উদারভাবে শেখানোর যদি কেউ শিখতে চায়।

নয়া পাঠক

আমি এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবন, যে সর্বদা কিছু শিখতে উদগ্রীব, চষে বেড়াই চারপাশে, নতুন কি কি আছে!

নয়া পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প “মুনিরার স্বপ্নপূরণ”

০৩ রা জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭





মুনিরা একটি ছোট্ট গ্রামে থাকে, তার বয়স মাত্র দশ বছর। গ্রামটির নাম বেলাই। চারিদিকে সবুজ মাঠ, খোলা আকাশ আর নদীর পাশে বসে থাকা গ্রামের মানুষদের মুখে সব সময়ই হাসি। কিন্তু এই গ্রামের মেয়ে মুনিরার জীবন ছিল একটু অন্যরকম। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী এবং মায়ের নাম ফাতিমা বেগম। তারা গ্রামে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

মুনিরার সবচেয়ে বড় শখ ছিল পড়াশোনা করা। সে গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। প্রতিদিন সকালে সে খুশি খুশি স্কুলে যেত, আর সন্ধ্যায় ফিরে এসে মায়ের সাথে বাড়ির কাজ করত। মুনিরা পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকাআঁকিতেও খুব ভালো ছিল। তার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ছিল বিজ্ঞান। সে সবসময় ভাবত যে, একদিন সে বড় হয়ে একজন বিজ্ঞানী হবে।

একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় মুনিরা খেয়াল করল, তার বাবা-মা বাড়িতে খুব চিন্তিত মুখে বসে আছেন। মুনিরা দৌড়ে তাদের কাছে গেল এবং জিজ্ঞাসা করল, "মা, বাবা, তোমরা এত চিন্তিত কেন?"

তার মা ফাতিমা বেগম চোখের জল মুছে বললেন, "মুনিরা, আমরা তোমাকে স্কুলে পড়ানোর মত টাকা আর যোগাড় করতে পারছি না।"

মুনিরার মনটা হঠাৎ করেই ভেঙে গেল। কিন্তু সে হাল ছাড়ল না। সে জানত যে, তার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে তাকে নিজেকেই কিছু করতে হবে।

সে ভাবল, “কীভাবে আমি টাকা আয় করতে পারি?” অনেক ভাবনা চিন্তার পরে তার মনে হলো যে, সে তো ভাল ছবি আঁকতে পারে, আর ছবি আাঁকার জন্য খুব বেশি কিছু তার প্রয়োজনও হয় না, সামান্য একটি পেন্সিল বা কলম আর একটুকরো কাগজ হলেই সে কিছুক্ষণের মধ্যেই যেকোন কিছু ফুটিয়ে তুলতে পারে। আর তাছাড়া তার এক মামা কিছুদিন আগেই তো তাকে রং, তুলি আর একটি ছবি আঁকার খাতা উপহার দিয়েছিল। সে তো গ্রামের পাশে নদীর পাড়ে বসে ছবি আঁকতে পারে এবং সেগুলো বিক্রি করতে পারে। সে তার মা-বাবার সাথে তার পরিকল্পনা শেয়ার করল। মা-বাবা প্রথমে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও পরে রাজি হয়ে গেলেন।

পরের দিন সকালে, মুনিরা তার আঁকার খাতা, রঙ এবং তুলির বাক্স নিয়ে নদীর পাড়ে বসে ছবি আঁকতে শুরু করল। তার ছবি এত সুন্দর ছিল যে, গ্রামের অনেকেই তা দেখতে এল। তারা মুনিরার ছবি দেখে মুগ্ধ হলো এবং সেগুলো কিনতে চাইল।

এভাবে ধীরে ধীরে মুনিরার আঁকা ছবি বিক্রি হতে লাগল এবং সে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে শুরু করল। সে প্রতিদিন স্কুলে যেত, পড়াশোনা করত এবং বিকেলে ছবি আঁকত। তার মা-বাবাও তাকে সহযোগিতা করত।

একদিন, মুনিরার স্কুলে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হলো। মুনিরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করল এবং তার চমৎকার ছবি দেখে বিচারকরা মুগ্ধ হলেন। সে প্রথম পুরস্কার পেল এবং তার হাতে একটি বড় ট্রফি তুলে দেওয়া হলো।

মুনিরার এই সাফল্য তার গ্রামের সবাইকে গর্বিত করল। সবাই তার সাহস আর পরিশ্রমের প্রশংসা করল। তার মা-বাবাও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করলেন। মুনিরা আরও অনুপ্রাণিত হলো এবং তার স্বপ্ন পূরণের জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল।

মুনিরা তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে তার পড়াশোনার খরচ চালাতে লাগল। একদিন, তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে ডাকলেন এবং বললেন, "মুনিরা, তোমার পরিশ্রম এবং প্রতিভার জন্য আমরা তোমাকে একটি বৃত্তি দিতে চাই। তুমি শহরের বড় স্কুলে পড়ার সুযোগ পাবে।"

মুনিরার চোখে জল এসে গেল। সে ভাবতে পারছিল না যে, তার স্বপ্ন এত দ্রুত পূরণ হবে। সে আনন্দে ভরে গেল এবং তার শিক্ষককে ধন্যবাদ দিল। তার মা-বাবাও এই খবরে অত্যন্ত খুশি হলেন।

মুনিরা শহরের বড় স্কুলে ভর্তি হলো। সেখানে সে আরও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে লাগল। তার নতুন স্কুলের শিক্ষকরা তার মেধা দেখে মুগ্ধ হলেন এবং তাকে সবসময় উৎসাহিত করতেন।

শহরের স্কুলে পড়তে পড়তে মুনিরা তার চিত্রাঙ্কন প্রতিভা আরও উন্নত করল। একদিন, সে একটি বড় আন্তর্জাতিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করল। প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্বের বহু প্রতিভাবান শিল্পী অংশগ্রহণ করেছিল। মুনিরা তার সেরা ছবি আঁকল এবং বিচারকদের মুগ্ধ করল।

প্রতিযোগিতার ফলাফলে দেখা গেল, মুনিরা প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হলো এবং তার ছবি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে স্থান পেল। মুনিরা তার দেশের নাম উজ্জ্বল করল এবং সবার মন জয় করল।

এই সাফল্যের মাধ্যমে মুনিরা তার স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেল। সে তার পড়াশোনার পাশাপাশি চিত্রাঙ্কনও চালিয়ে যেতে লাগল। তার লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞানী হওয়া, এবং সে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল।

মুনিরার এই গল্প আমাদের শেখায় যে, কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং মনের জোর দিয়ে যে কোনো স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা মুনিরা আমাদের দেখিয়েছে যে, কোনো বাধাই জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না যদি আমরা আমাদের মনোবল অটুট রাখি।

মুনিরার এই যাত্রা শুধু তার নিজের নয়, তার গ্রামের প্রতিটি শিশুর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠল। তার সফলতার গল্প সবাইকে সাহস জোগাল এবং সবাইকে শেখাল যে, স্বপ্ন দেখতে জানতে হয় এবং সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রম করতে হয়।

ছবিসূত্র : Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:২২

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে। আপনার গল্প পড়ে মুনিরারা স্বপ্ন দেখুক।
অনুরোধ থাকবে পোষ্টের শুরুতে প্রথম দুটো লাইন বাদ দেয়ার জন্য।

০৩ রা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:২৩

নয়া পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ সৌরভ ভাইয়া। ভালো লাগায় আপ্লুত হলাম।

২| ০৩ রা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৩৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল ভাল গল্প পড়ুন সামনে আরও ভাল লিখতে পারবেন।

০৩ রা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:৩১

নয়া পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া, গল্পটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। আপনার উপদেশটি মানার চেষ্টা করব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.