নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবন, যে সর্বদা কিছু শিখতে উদগ্রীব, চষে বেড়াই চারপাশে, নতুন কি কি আছে!
এটি আমার ছোটগল্প লেখার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা! আমার নিঃসঙ্গতা আমাকে মাঝে মাঝে বড়ই কষ্ট দেয়! সেই নিঃসঙ্গতার অনুভবের একটি বহিঃপ্রকাশ মাত্র! এটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত অনুভব মনে করবেন না। গল্প তো গল্পই তাই না!
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। নীলা আজকাল সন্ধ্যার সময়টা একা একা কাটাতে পছন্দ করে। ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে, দেখে সূর্যটা ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে, আকাশটা রক্তিম লাল হয়ে উঠছে। গ্রামের এক কোণে তার পৈতৃক বাড়ি। এই বাড়িতে সে একাই থাকে। বাবা-মা অনেকদিন আগেই মারা গেছেন, ভাইবোন কেউ নেই। তাই একাকীত্বই নীলার সঙ্গী।
আজও সে জানালায় বসে আছে। আচমকা একটা ছায়া দেখতে পেলো উঠোনে। প্রথমে ভাবলো, হয়তো কোন গাছের ছায়া, কিন্তু ভালো করে দেখতেই বুঝলো, সেটা একটা মানুষের ছায়া। ছায়াটা ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। নীলা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলো। সে জানালা থেকে সরে এসে দরজার দিকে তাকালো। কিন্তু দরজা বন্ধ, কেউ ঢুকবে না।
একটু পরে দরজায় ধীরে ধীরে টোকা পড়লো। নীলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আবার টোকা পড়লো, এবার একটু জোরে। নীলা সাহস করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই দেখে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। সেই ছায়া কথা বলছে, কিন্তু কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না। নীলা কিছুটা ভয়ে, কিছুটা কৌতূহলে ছায়াটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ছায়াটা ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে পড়লো। নীলা ভাবলো, এটা কি তার মনের ভুল, নাকি সত্যিই কিছু ঘটছে? ছায়াটা ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো। নীলা ভয়ে ভয়ে ছায়াটার কাছে গেলো।
"কে তুমি?" নীলা জিজ্ঞাসা করলো।
কোনো উত্তর নেই। ছায়াটা কেবল তাকিয়ে রইলো। নীলার মনে হলো, ছায়াটার চোখে এক ধরনের বেদনা রয়েছে।
"তুমি কি চাও?" আবার জিজ্ঞাসা করলো নীলা।
এইবার ছায়াটা ধীরে ধীরে কথা বললো। "আমি তোমার অতীত।"
নীলা অবাক হয়ে গেলো। "অতীত? তুমি আমার অতীত কিভাবে হতে পারো?"
"আমি সেই সব স্মৃতি, যেগুলো তুমি ভুলে গেছো।"
নীলা কিছুই বুঝতে পারছিলো না। তার মনে পড়লো ছোটবেলার কিছু ঘটনা, যেগুলো অনেক আগেই সে ভুলে গিয়েছিলো। ছোটবেলায় একদিন সে বাড়ির পিছনের পুকুরে ডুবে যাচ্ছিলো, বাবা তাকে বাঁচিয়েছিলো। সেই স্মৃতিটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো তার মনে।
"তুমি কি সেই স্মৃতি?" নীলা জিজ্ঞাসা করলো।
ছায়াটা মাথা নাড়লো। "হ্যাঁ, আমি সেই সব স্মৃতি, যেগুলো তোমাকে কষ্ট দিয়েছে, যেগুলো তুমি ভুলতে চেয়েছিলে। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি।"
নীলা কিছুটা চিন্তিত হলো। সে ভাবলো, এসব স্মৃতি কি আবার তার জীবনে ফিরে আসবে?
"তাহলে তুমি কি চাও?" নীলা আবার জিজ্ঞাসা করলো।
ছায়াটা ধীরে ধীরে বললো, "আমি চাই তুমি আমাকে মেনে নাও। আমি তোমার অংশ। তুমি আমাকে অস্বীকার করতে পারবে না।"
নীলা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বললো, "আমি তোমাকে মেনে নিলাম। তুমি আমার অংশ, আমি তা স্বীকার করছি।"
ছায়াটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো। নীলা বুঝলো, সে তার অতীতকে মেনে নিয়েছে। এখন আর কোনো ভয় নেই। সে জানালার কাছে ফিরে গেলো, বাইরে তাকিয়ে দেখলো, আকাশটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সূর্য ডুবে গেছে, কিন্তু আকাশে একটা নীলাভ আলো ছড়িয়ে পড়েছে।
নীলা অনুভব করলো, সে একা নয়। তার অতীত, তার স্মৃতি সবসময় তার সঙ্গে থাকবে। ছায়াটা তাকে সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে।
সেদিনের পর থেকে নীলা আর কখনো ভয় পায়নি। সে জানত, তার অতীত তাকে কখনো ছেড়ে যাবে না, কিন্তু সেই অতীতকে মেনে নিয়ে সে নিজের জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। জীবন কখনও থেমে থাকে না, আর থামলে জীবন থাকে না। মানুষ তখন নিজেই ছায়া হয়ে যায়। যে ছায়ার থাকেনা নিজস্ব কোন চিন্তা-ভাবনা, কর্ম বা চলার ক্ষমতা।
নীলা এবার জানালার কাছ থেকে উঠে দৃপ্তকণ্ঠে বলে উঠল, নাহ্ এভাবে আর না, আমাকে যেতে হবে আমার নিয়তির কাছে, নিজেকে অবশ্যই আমি আমার লক্ষ্যে স্থাপন করব। যারা আমার এই অব্স্থার জন্য দায়ী তাদের উপযুক্ত প্রতিদান দেব, যেন তারা আমায় দেখলে মাথা নিচু করে চলে যায়। আমার দিকে চোখ তুলে তাকাবার মতো আত্মবিশ্বাসটুকুও তাদের থাকবে না। নীলা হাঁটতে হাঁটতে ঘরের ভেতরে চলে যায়। এখন আর থেমে থাকা নয়, তার সামনে এখন অনেক কাজ...।
ছবির সাইটেশন: ছায়া মোর পরম বন্ধু! লিংকডইন। (সত্যপথিক শ্যাইয়্যান ভাইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, যদিও পুরোটা পারিনি।)
লিংক: Click This Link
০২ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ৮:২৪
নয়া পাঠক বলেছেন: কিশোর মাইনু, ধন্যবাদ ভাইয়া। এত সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য। আর নিঃসঙ্গতা, বা একাকিত্ব কি বিয়ে করলেই ঘুচে যায়। আমি তো ভাই আর দু’য়েক বছর পরেই ২৫ বছর উদযাপন করব। কিন্তু যে সদাই নিজের মাঝে লুকিয়ে থাকে তাকে কি আপনি সঙ্গ দিয়ে তার নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারবেন। মনে হয় না। আমার ভেতরে যে আমি আছি সেই আমি চিরদিনই নিঃসঙ্গ।
এবার আসি গল্প প্রসঙ্গে, এগুলো হয়ত আমার নিজেরই গল্প, অথবা অন্যকারো! আসলে এগুলো জীবনের গল্প তো তাই মনে হয় কারো না কারো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায়!
২| ০২ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:১০
কিশোর মাইনু বলেছেন: বেশ কয়েকমাস আগে ইন্সটায় আমার এক ছবির ক্যাপশন ছিল এটা।- (Even when I'm surrounded by a lot of friends and family I yet feel extremely lonely. But what surprising is that somehow when I'm like really really alone I dont feel lonely for some reason, none at all.) আপনার অবস্থা যদি ভুল বুঝে না থাকি কিছুটা এরকম ই।
আপনার জন্য আমার আরো একটা ছবির ক্যাপশন উল্লেখ করব।
"Lonely means not being alone, its the feeling that no one in this whole world cares enough."
বিয়ে করতে বলেছি আপনাকে মজা করে, কিন্তু কিছুটা সিরিয়াসনেস ও আছে সেটার মধ্যে। যদি আপনি আপনার জীবনসংগীনী ঠিকমত choose করতে পারেন, তাহলে আপনার নিঃসঙ্গতা বলুন আর একাকিত্ব, চলে যেতে বাধ্য। এটলিস্ট আমি এটাই বিশ্বাস করি।
০৩ রা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫
নয়া পাঠক বলেছেন: জ্বী, মাইনু ভাই, আপনার ধারণা কিছুটা আমার সাথে মেলে। তবে আমি যে দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করেছি একাকীত্ব বোঝাতে তা হল, “আপনি এই পৃথিবীতে এসেছেন একা, যাবেনও একা, আর এই পৃথিবীতে আপনার মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই, এখানেও আপনি একা, নিঃসঙ্গ! আমারা সাময়িকভাবে হয়ত জীবন সঙ্গী/সঙ্গীনি/সন্তানদের সাহায্যে বাহ্যিক একাকিত্ত্ব ঘোচাতে পারি, কিন্তু আত্মার একাকিত্ব কি দূর করতে পারি?”
ধন্যবাদ পুনরায় এসে পোষ্টে কমেন্ট করার জন্য। শুভেচ্ছা নিরন্তর!
৩| ০২ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৫৩
কামাল১৮ বলেছেন: লেখকে চেনা চেনা মনে হয়।
০৩ রা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৯:৫৬
নয়া পাঠক বলেছেন: কামাল১৮: ভাইয়া, লেখাটি চেনা না কি লেখককে চেনা চেনা লাগে ঠিক বুঝতে পারলাম না। যাহোক এটি একেবারেই আমার নিজস্ব লেখা, যা এর আগে আর কোথাও লেখা বা প্রকাশিত হয় নি। ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ৮:০১
কিশোর মাইনু বলেছেন: আরো লেখা চাইলাম একজনের কাছে। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তার কাছ থেকে নতুন লেখা পেয়ে গেলাম। আর কী লাগে??? ধন্যবাদ।
এবার আসি মতামত নিয়ে। আপনার গল্পগুলো আপনার ই জীবনের, আপনার নিজের সাথে লড়াইয়ের প্রতিফলন। আমার থেকে কেন জেন এটাই মনে হচ্ছে। গল্প দুটোই গল্পের থেকে বেশী ছোটগল্প, কাহিনীর থেকে বেশী রুপক। যাই হোক, নিঃসঙ্গতা ??? বিয়ে করে ফেলেন ভাই। সংগ পেয়ে যাবেন সারাজীবনের জন্য।