নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

মুনতাসির রাসেল

আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিপদে বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের প্রকৃত স্বরূপ এবং বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম বাস্তবতা

১৪ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৫


মানবজীবন এক অন্তহীন সংগ্রামের গল্প, যেখানে প্রতিটি সম্পর্ক একেকটি অধ্যায়। আমরা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে আসি—কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়, কেউ ছায়ার মতো সঙ্গ দেয়, আবার কেউ অন্ধকারের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে। তবে প্রকৃত সম্পর্কের পরীক্ষা হয় দুঃসময়ে। বিপদই বলে দেয়, কে প্রকৃত বন্ধু, কে স্বার্থপর, আর কে ছদ্মবেশী শত্রু।
বিপদে আমরা সাধারণত দেখি তিন ধরনের মানুষের ভূমিকা—(১) যারা নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় পাশে থাকে, (2) যারা কাছাকাছি থেকেও অন্তরে শত্রুতা লুকিয়ে রাখে, এবং (৩) যারা উপকারের অভিনয় করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেবল স্বার্থসিদ্ধির খেলায় মত্ত।

➤প্রকৃত বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন: যারা আলো হয়ে পাশে দাঁড়ায়
কবি বলেছেন,
"সহজে বন্ধুর পরিচয় হয় না,
সময়ের বাঁকে ধরা দেয় আসল চেহারা।"
প্রকৃত বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার ভিত্তি হলো নিঃস্বার্থতা। যারা সত্যিকার অর্থে আপন, তারা বিপদের দিনে নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকে—তারা শর্ত জুড়ে দেয় না, বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করে না। তাদের ভালোবাসা দানবৃত্তির মতো, যা কোনো স্বার্থ ছাড়া প্রবাহিত হয়।
১. দুঃসময়ের সঙ্গী:
বিপদের মুহূর্তে যারা নির্ভয়ে পাশে দাঁড়ায়, তাদের জন্য বড় কোনো ঘোষণা লাগে না। তারা কেবল কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তার প্রকৃত মানে কী। আর্থিক সংকট হোক, সামাজিক কলঙ্ক হোক, কিংবা মানসিক দুর্দশা—তারা আশ্রয়ের মতো পাশে থাকে।
২. সত্যনিষ্ঠ পরামর্শদাতা:
প্রকৃত বন্ধুরা মুখে তোষামোদ করে না, বরং সত্যকে কঠোরভাবে প্রকাশ করতেও কুণ্ঠিত হয় না। বিপদের মুহূর্তে ভুল থেকে বাঁচাতে তারা কঠিন হলেও বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেয়। সস্তা সহানুভূতির চেয়ে কঠিন সতর্কবাণী বেশি মূল্যবান—প্রকৃত বন্ধুরা এই সত্যটি জানে।
৩. নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ:
ইতিহাস বলে, সত্যিকারের বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তা পরীক্ষিত হয় বিপদের দিনে। বহু কিংবদন্তি চরিত্র আছে, যারা বন্ধুর জন্য জীবন দিতে পিছপা হয়নি। এমন মানুষই প্রকৃত বন্ধু, যারা নিজেকে পেছনে রেখে অপরের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়।

➤ছদ্মবেশী শত্রুরা: যারা পাশে থেকেও অন্তরে ক্ষতি করে
"বিশ্বাসঘাতকতা সবসময় শত্রুর হাতে আসে না,
অনেক সময় তা আসে সবচেয়ে কাছের মানুষের হাত ধরে।"
বিপদের দিনে এক ধরনের মানুষ থাকে, যারা বন্ধু বা আত্মীয় সেজে কাছাকাছি থাকে, অথচ হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে রাখে ঈর্ষা, প্রতিহিংসা ও শত্রুতা। তারা মুখে সহানুভূতির বুলি আউড়ে, কিন্তু সুযোগ পেলেই ছুরি চালিয়ে দেয়।
১. দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী:
এরা সামনে ভালোবাসার মুখোশ পরে, কিন্তু পেছনে নিন্দা রটায়, ষড়যন্ত্র করে। সামাজিক কিংবা পারিবারিক জীবনে এমন মানুষ প্রচুর, যারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিকটজনের ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না।
২. সুযোগসন্ধানী বন্ধু:
এদের উদ্দেশ্য একটাই—পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়া। যখন বিপর্যয় আসে, তখন তারা পাশে থাকার অভিনয় করে, কিন্তু মূলত নিজের অবস্থান আরও সুসংহত করার ফন্দি আঁটে। ব্যবসা, রাজনীতি, পরিবার—সবক্ষেত্রেই এমন সুবিধাবাদীদের দেখা মেলে।
৩. পরিস্থিতির সুবিধা নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা:
অনেক সময় দেখা যায়, যারা পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারাই বিপদের দিনে পরিণত হয় প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে। শাসকদের ইতিহাসে এরকম হাজারো উদাহরণ আছে—যেখানে সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গীই হয়ে ওঠে শেষমেশ ধ্বংসের কারণ।

➤উপকারের ভান করা মানুষ: মুখোশধারীদের স্বরূপ
"যে তোমার বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ায় না,
তার দেওয়া ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি এক মরীচিকা।"
বিশ্বাসঘাতকতার একটি সূক্ষ্ম রূপ হলো—উপকারের ভান করা। কিছু মানুষ এমন থাকে, যারা কথায় সহানুভূতি দেখায়, কিন্তু কাজে শূন্য। এদের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, তারা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যকে মিথ্যা আশার বুদবুদে ভাসিয়ে রাখে।
১. মুখে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি, কাজে কিছুই নয়:
অনেক মানুষ বিপদের দিনে এসে আশ্বাস দেয়, কিন্তু যখন সত্যিকারের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন হাজারো অজুহাত তৈরি করে। এদের মুখের কথা যতই মিষ্টি হোক, প্রকৃতপক্ষে তারা কেবলই আত্মকেন্দ্রিক।
২. উপকারের বিনিময়ে শর্ত:
কিছু মানুষ কৌশলে উপকারের ভান করে, কিন্তু সাহায্যের বিনিময়ে এমন কিছু দাবি করে, যা প্রকৃতপক্ষে আরও বড় ক্ষতির কারণ হয়। এদের উপকারের আড়ালে থাকে সূক্ষ্ম শোষণ।
৩. নেতিবাচক পরামর্শদাতা:
কিছু মানুষ থাকে, যারা উপকার করার অভিনয় করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন ভুল পরামর্শ দেয়, যা বিপদ আরও বাড়িয়ে দেয়। কখনো তারা অজ্ঞতা থেকে এটা করে, কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে।

➤প্রকৃত সম্পর্কের পরিচয় বিপদেই মেলে
মানুষের সম্পর্কের প্রকৃত রূপ ফুটে ওঠে সংকটের মুহূর্তে। সুসময়ের আড্ডা, হাসি-তামাশা, কিংবা বাহ্যিক ভদ্রতা কোনো বন্ধুত্বের সত্যিকারের মানদণ্ড হতে পারে না।
একটি পুরনো প্রবাদ আছে—"যে বৃক্ষের ফল মিষ্টি, তার ছায়াতেও বিষ থাকে না।" প্রকৃত বন্ধু ও আত্মীয় তার ভালোবাসার মাধ্যমে নিজের পরিচয় দেয়, বিশ্বাসঘাতকরা তাদের আচরণ দিয়ে নিজেদের মুখোশ খুলে ফেলে।

জীবনে কিছু মানুষ আশীর্বাদ হয়ে আসে, আবার কিছু মানুষ শিক্ষা দিয়ে যায়। আমাদের উচিত সত্যিকারের বন্ধু ও আত্মীয়দের চিনতে শেখা, তাদের মূল্য দেওয়া, এবং ছদ্মবেশীদের থেকে দূরে থাকা। বিপদের সময় যারা পাশে দাঁড়ায়, তারাই প্রকৃত আপন—আর যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাদের স্থান অন্তহীন বিস্মৃতির অন্ধকারে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:০০

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষের বিপদে আপনি কি মানুষের পাশে দাঁড়ান?

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০০

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: জি ভাই। আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি কারো বিপদে পাশে থাকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.