নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নগণ্য একজন মানুষ। পছন্দ করি গল্পের বই পড়তে, রান্না করতে। খুব ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াতে। ইচ্ছে আছে সারা বাংলাদেশ চষে বেড়ানোর।
কন্যাদ্বয়কে রাতে ঘুম পাড়াতে পাশে শুয়ে হঠাৎ করেই নিজে চলে গেলাম একদম শৈশবের অনেক অনেক আগের সময়ে। শনি-মঙ্গলবার হাট বসতো তখন, এখনো বসে তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির দরুন হাটের অপেক্ষা করতে হয় না মানুষকে। সপ্তাহের বাজার বলতে এই দুদিন বাড়ির পাশ থেকে করা যেতো, এছাড়া অতি প্রয়োজন হলে দূরের হাটে বা বাজারে যেতে হতো। চিকন চিকন দূর্বাঘাসে মোড়া বর্গাকার একটুকরো মাঠে বসতো সেই হাট। অল্প কয়েকটা টিনের ছাউনী দেওয়া ঘর ছিল, ঘর বলতে চারপাশে বাঁশের খুটি উপরে এক চালা টিন। সেখানে তেল আর শুকনো সদাই নিয়ে বসতো। আমরা গ্রামে বেড়াতে গেলে আব্বা বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন চাকরীসূত্রে। আমাদের বাজার করে দিতেন নানা ভাই। কেরোসিন তেলের জন্যে নীল প্লাস্টিকের লাল মুখ ওয়ালা গ্যালন ছিল। খালি গ্যালন দড়িতে বেঁধে পায়ের সাথে ঢং ঢং করে বাড়ি মেরে মেরে চলতাম হাটের দিকে। দূর থেকে মৌমাছির মত গুন গুন আওয়াজ আসতো কাছে গেলে বোঝা যেতো তা হল হাটুরেদের শোরগোল।
সামনের দিকে সবজি, রাস্তার উপর দুধওয়ালা বসতো। মাঝে বসতো তেল, শুকনো সদাই নিয়ে। একদম শেষ মাথায় ছিল মাছের বড়বড় ডালি। আমার বড় কাকা হাটের একদম শুরুতে দৌড়ে এক ভাগা ছোট মাছ নিয়ে কাকী কিংবা মেয়েদের হাতে দিতেন। আমাদের এলাকায় বলে শকুন খোকরা; অসাধারন স্বাদ সেই মাছের চচ্চরি। বাড়ী থেকে যদি বলা হতো মাছ ভালো তবে প্রায় শেষ হাটে আবার কোন এক পদ নিয়ে আসতেন দৌড়ে। হাটের সাথেই বাড়ি হবার সুবিধা এই। কিন্তু মেঝো কাকা কোন কোন দিন দূরে কাজে গেলে ফিরতে সন্ধ্যা হতো সেদিন আর মাছ বাজার হতো না। কাকীর মাচার শাক সবজিই ছিল পরবর্তী হাটবারের আগ পর্যন্ত ভরসা। এ নিয়ে কোন অভিযোগ ছিল না কাকীর।
হাটে যেতাম সিঙারা আর নিমকীর লোভে। আলু স্রেফ হলুদ লবনে ভেজে তাই দিয়ে বানাতো তিন কোনা আকৃত্রির সিঙারা। ত্রিশ পেরিয়ে এই বয়সেও এখনো আমি খুঁজেফিরি সেই আটা দিয়ে বানানো নরম সিঙারা! একটু বড় হলে দেখলাম গ্রামে যাবার পথে লঞ্চে বিক্রি হতো, এরপর পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় লঞ্চ নেই তবে সেই সিঙারাওয়ালারা বাসে ওঠে ঢাকা থেকে যাবার পথে সেতু পাড় হলে। জানি সেই স্বাদ পাবো না তাই ইচ্ছে হয় না সবসময় কেনার! নিউজ প্রিন্ট বইয়ের পাতায় মুড়ে পাটের সুতলি দিয়ে বেঁধে কালিজিরা ছিটানো কমলা রংয়ের চিকন চিকন সেই নিমকী হারিয়ে গেছে জীবন থেকে, রয়ে গেছে কেবল স্মৃতির পাতায়!
বৃষ্টির দিনে সেই হাটে দূর্বাঘাসের ভেতর জায়গায় জায়গায় পানি জমে যেতো, দল বেঁধে সেই ঘাসের ভেতর লাফালাফির দিন এই জীবনে আর একটাবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। আমার জীবনে না আসুক কন্যাদের জীবনে আসুক, তাইতো বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ ওদের তিন বছর পূর্ন হবার আগই পেয়েছে। এখন বৃষ্টি দেখলেই কন্যারা কলকলিয়ে ওঠে ভিজতে যাবার জন্যে।
সন্ধ্যে নামার আগে হারিকেনের কাঁচ পরিস্কার করার যে ব্যস্ততা ছিল তার জায়গায় এখন বিজলীবাতি আর চার্জার লাইট দখল করেছে কিন্তু ঐ কেরোসিনের গন্ধ যে বড্ড ভালো লাগতো আমার তা কারো সামনে স্বীকার করতে লজ্জা পেতাম! সন্ধ্যে নামতেই জোনাকির দল বের হতো ঝাঁকে ঝাঁকে। দুই শরিক পরের ঘরের সমবয়সী জাহাংগীর কথা দিয়েছিল আমাকে জোনাকী ধরে দিবে, হাতের মুঠোয় ধরলে আলো জ্বলে, সে এক বিস্ময়কর জিনিস! জাহাংগীরের খোঁজ করতে গেলে শুনি ঘুমিয়ে গেছে, মনটাই খারাপ হল প্রচণ্ড। ওদের শরিকদের বাড়ীতে গেলে অবাক বিস্ময়ে দেখতাম এত ছোট ছোট ঘরে পুরো পরিবারের জীবনযাপন। আমার সেই ছোট্ট মাথায় তখন না ঢুকলেও এখন বুঝি কী মানবেতর জীবন ছিল ওদের! মোটামুটি ১৫০ স্কয়ার ফিটের পাট খড়ির বেড়া আর ছনের ছাউনীর ঘরে কোন প্রকার আসবাব ছাড়াই দিব্যি তাদের ঘর ভর্তি ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস ছিল। সেই ঘরের অর্ধেকে মাচা যেটাকে আমাদের এলাকায় বলে 'ওগৈর' পেতে মাটির কোলা, কলস, মটকা কাঁথা বালিশ থাকতো, বাকী অর্ধেকে রাতে পাটি বিছিয়ে বিছানা করতো! বেড়ার সাথে বা চাল থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া শিকায় ঝুলতো ভাত তরকারীর গামলা। মোটামুটি এই ছিল জীবন ওদের। জাহাংগীরের বাপ চাচা ৪ভাইয়ের একই রকম ঘর যেখানে দারিদ্রতার চরমসীমা বিরাজ করতো। সময়ের সাথে সাথে ভাগ্য বদলেছে কিছুটা এখন। হুট করে ছেলেটার কথা মনে পড়ল জোনাকী পোকার কথা ভেবে এছাড়া ওর সাথে তেমন কোন স্মৃতি ছিল না। এক যুগেরও বেশি সময় হয়ত ওকে দেখি না।
আমি চাইলেই এখন ছয় ঘর কিংবা নয় ঘরের কুতকুত খেলতে পারি না কিন্তু বাড়ির সামনের রাস্তায় তখন তা ছিল নিত্যদিনের অভ্যাস। পুরনো স্মৃতি, পুরনো দিন একটা সময়ের পর থেকে খুব টানে তাইতো বাসা খোঁজার সময় লাল সিমেন্টের চওড়া টানা বারান্দার এই বাসাটা দেখার পর পছন্দ হয়ে যায়। এই বাসার সবচাইতে পছন্দের জায়গা এর বারান্দা। শুনেছি আমার জন্ম সালে এই বাড়িটি করা। পুরনো এই বাসায় আমার ঘোর লেগে গেলেও কন্যাদের খুব একটা পছন্দ নয় তাইতো নিয়ম করে রোজ নানুর বাসায় যেতে হয়। একদিন ভেবেছি সারাদিনের জন্যে ওদের নানুর বাসায় দিয়ে আমি সারাদিন উত্তরের এই বারান্দায় বসে বাইরে দেখবো।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
নীল-দর্পণ বলেছেন: আপনি যে মোগল সম্রাট তাইতো এই পুরনো জিনিসের সাথে পরিচিতি।
সময় করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ জানবেন।
২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩০
শায়মা বলেছেন: কত কিছু স্মৃতি!!!!!!!!!!
হারিকেন তো আমিও দেখেছি। আর ঐ নিমকীও আর কচুপাতার উপরে পড়ে থাকা জলের মুক্ত!
হাঁটে যাইনি আমি তবে জোনাকী পোকা, চার্জার লাইট!!! কত কথা মনে পড়ে যায়!!!!!!!!
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০০
নীল-দর্পণ বলেছেন: কচু পাতার উপর পড়ে থাকা জলের মুক্তো আহা কী কথা মনে করালে। বৃষ্টির পরে কী দারুন লাগতো দেখতে!
৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:০৪
সোহানী বলেছেন: বাহ অসাধারন স্মৃতিচারন।
আমরা বছরে একবার যেতাম ঈদের সময় গ্রামে। কিন্তু এখনো প্রতিটা স্মৃতি আমার মাথায় আছে। একটা লিখা মনে হয় লিখেছিলাম এ নিয়ে। সেই যে অসাধারন দিন ছিল।
কিন্তু এখন ক'বছর আগে যেয়ে ধাক্কা খেলাম। বিজলি, ড্রইং রুম, ফ্রিজ, টিভি, হিন্দি সিরিয়াল............ সবকিছু কেড়ে নিয়েছে জোনাকীদের। এতো আলোতে ওরা আর এখানে আমে না।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৬
নীল-দর্পণ বলেছেন: আমাদের দুই ঈদের মাঝেও এক দুইবার যাওয়া হতো গ্রাম, আস্তে আস্তে বড় হলে বছরে দুইবার কোন না কোন ভাবে যাওয়া হতোই, এখনো যাই। বিয়ে, কন্যার হল এর মাঝে একটু বড় গ্যাপ হয়ে গেছিলো, গিয়ে মনে হল চিনতেই পারছি না এত দ্রুত পরিবর্তন!
সত্যিই জোনাকীরা কোথায় হারিয়ে গেল! আমি আমার শ্বশুর বাড়ী গেলেও রাতে ছাদে বসে থাকি, পাহাড়ের উপর বাড়ি, চারপাশে ঘন জঙ্গল তাও একটা জোনাকীর দেখা নাই!
৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৪
শায়মা বলেছেন: আমি ভাবলে বৃষ্টির সেই সোদা মাটির গন্ধও পাই।
এক্কা দোক্কা খেলা, বরই এর আচার.....হাওয়াই মিঠা, শন পাপড়ি, ফেরিওয়ালা লেইসফিতা , শাড়িওয়ালা গাট্টি পিঠে ......আমসত্ব তেতুল বরই
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৯
নীল-দর্পণ বলেছেন: সোঁদা মাটির গন্ধ এখনো পেলে বুক ভরে নেই।
কাঁচের বাক্সে গোল গোল হাওয়াই মিঠাই ১টাকায় ৪টা…কী মনে করালে আহা! একবার একটা মিঠাই হাতে নিয়ে পানি ভরা বালতিতে হাত ডুবালে দেখি হাওয়া হয়ে গেছে
লেইসফিতাওয়ালার সেই বাক্সের ঘ্রান এখনো মনে হয় পাই! ইশ তুমি কী কী মনে করালে! আমার এই সব কিছু এখন একসাথে পেতে ইচ্ছা করছে!
৫| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১৯
শায়মা বলেছেন: কিন্তু আর পাওয়া হয় না.......
আমাদের ছিলো ছোট ছোট ভ্যানিটি ব্যাগ, হাই হিল ..।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২১
নীল-দর্পণ বলেছেন: ঈদের সালামী রাখার জন্যে সেই ব্যাগ সবচেয়ে বেশি কাজের ছিল
৬| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮
নীল-দর্পণ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্যে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৭
মোগল সম্রাট বলেছেন:
নষ্টালজিক হওয়ার মতো লেখা !!! উগৈর” শব্দটা বহুকাল পরে দেখলাম।