নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।
গেল বছর কয় ধরে বছরের এই সময়টায় আমার মেজাজ খুবই খারাপ থাকে। এইবারে এইটা মাত্রাছাড়া হয়ে গেছে। এই মাত্রাছাড়া বিষয়টা আমারে উৎকৃষ্ট মানের ছোটলোক বানায়ে দিয়েছে।
কালকে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করতে গেছি। তিনি কিংবদন্তী মানুষ। আমার বাসনা কথাবার্তা আলোচনাদের ইন্টারভিউ হিসেবে লিখে ফেলতে পারলে একটা এক্সক্লুসিভ কিছু হয়ে যাবে। তা দিয়ে অন্তত দুইটা দিন মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খাইতে পারব। কাঁচামরিচ ডলে ডলে ডাল-ভাত খাইতে খাইতে জিহ্বায় আর অন্তরে কহর পড়ে গেছে।
কিন্তু এক্সক্লুসিভ হওয়ানো যায় নাই। আমারে কাঁচা মরিচ ডলে ডলে জিহ্বায় কহর ফেলতে থাকতে থাকা লাগবে। কিংবদন্তী মানুষ কিছু বলতে রাজি না। এই বলতে রাজি থাকতে থাকা না থাকার মধ্যবার্তী অবস্থানে তার কাছে আমি যা যা শুনে ফেললাম, সেগুলা লিখে ফেললে আমার মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া হবে না। লোকেরা ঘেটিটা ধরে বাংলাদেশ থেকে বের করে দিবে। আর কোনোদিন ঢুকতে পারব কিনা সেইটা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ করবার পর্যাপ্ত কারণ আছে।
আজকে আমার বাংলাদেশটার পঞ্চাশতম বিজয় দিবস। একজন কিংবদন্তি মানুষ নির্ভয়ে নিজের কথাবার্তা বলতে পারবেন, কিংবা কাঁচামরিচ ডলে ডলে ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া খুব সাধারণ একটা লোকে সেগুলা শুনে খোলামেলা আলোচনা করতে থাকতে পারবে- এই পঞ্চাশ বছরে আমার বাংলাদেশটা এই পরিবেশ বানাতে পারে নাই।
তো কথাবার্তা শেষে ফিরতেছি। পাড়ার কলেজটার কাছে আসতে নানানরকম গান ভেসে এল। এইসব গান স্বাধীন বাংলা বেতারে বাজত। মুক্তিযোদ্ধারা শোনা যায় কি যায় না- এমন শব্দে রেডিওটা কানের কাছে রেখে এসব গান শুনতেন। শুনে শুনে দেশমাতৃকার জন্যে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজের জীবনটারে উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ হতেন। আজকে এইখানে এই গানগুলো ভীষণ চড়া শব্দে বাজছে শুধুই ১৬ ডিসেম্বরকে উপলক্ষ্য করে। যারা বাজাচ্ছে তারা নিজেদের আলাপে মশগুল, কাল গরু জবাই হবে। আচ্ছা, খিচুড়িই করবে? নাকি তেহারি করলে ভালো হয়?
১৭ ডিসেম্বর এলেই এরা বলবে, পঞ্চাশ বছর আগে কি হয়েছিল সেসব এখন বলে লাভ কি!
গেল তিনদিনে আমাকে চার চারজন মানুষে ইংরেজিতে চিঠি লিখেছেন। ইংরেজিতে কেউ কাউকে চিঠি লিখতেই পারেন। তাছাড়া তাঁরা উচ্চ শিক্ষিত মানুষ, ইংরেজি জানেন, তাহলে কেন লিখবেন না! অবশ্যই লিখবেন। কিন্তু যাকে লিখলেন তাঁকে তো সে ভাষা বুঝতে হবে। মজার ব্যাপার হলো এই চারজনের সঙ্গেই আমার পরিচয় লেখালেখি মাধ্যমে। আমার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের ভাষাটা তাই বাংলাতেই। তাঁরা ইংরেজিতে লিখেছেন ভীষণ রেখে গিয়ে। কারও লেখা ছাপি নি বলে রাগ। কেউ মতে অনৈক্য জানিয়েছেন। কেউ হয়ত গালাগালিও করেছেন। হয়ত বলে দেবার কারণ হলো, অকাট মূর্খ এই আমিটা আসলেই ইংরেজি জানিবুঝি না। একজন ভীষণভাবে শিক্ষিত মানুষ কাগজে লেখা পাঠিয়ে তাঁর লেখাটা ছাপতেই হবে কেন ধরে নেবেন! এবং ছাপা না হলে শিশুদের মতো রাগ-অভিমান করে নিজেরে প্রমাণ করতে কেন ইংরেজিতে চিঠি লিখবেন! পত্রিকা, পত্রিকার দায়িত্বে যিনি, এবং তিনি নিজে- সকলই তো বাংলা!
গেল পঞ্চাশটা বছরে আমরা এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি নাই যেটা মানুষকে পরমতসহিষ্ণু হতে শেখায়, নিরহঙ্কার হতে শেখায়।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে আজকে অর্ধশত বছর। আজকে আমরা বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি।
অথচ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছিল চারটা নীতি। আমরা যখন পূর্ব পাকিস্তান ছিলাম, তখন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে কিছু ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানিরা হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসে যোগ্যতা না থাকলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করত। আমরা কিছুই বলতে পারতাম না। আমরা বলতে চাইলাম। আমরা গণতন্ত্রের অভাব অনুভব করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলাম।
মানুষে মানুষে সমতা ছিল না। সকলের সমান অধিকার ছিল না। আমরা সকলকে সমান চোখে দেখবার দাবি তুললাম।
যদিও পাকিস্তান রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল ধর্মর ভিত্তিতে। এবং সেই ধর্মকে সামনে রেখেই পূর্ব বাংলাকে 'লড়কে লেঙ্গে' পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল সম্পূর্ণ আবেগ থেকে। একটা দেশে একটা ধর্মেরই মানুষ বসবাস করবে- এর চেয়ে অবাস্তব চিন্তা আর কিছু হতে পারে না। পাকিস্তান হওয়ার পরে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের শেকড় উপড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান আর পাকিস্তান থেকে ভারত গিয়েছে, কিন্তু ভারত কি মুসলমান মুক্ত হয়েছে? কিংবা পাকিস্তানই কি হিন্দু-বৌদ্ধ-খিস্টান মুক্ত হয়েছিল? হয় নি তো। সেকারণেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কেননা রাষ্ট্র কখনও ধর্ম পালন করে না। রাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান। ধর্ম মানুষের জন্যে। যে যার ধর্ম নিজের মতো করে পালন করবে। রাষ্ট্র সকলকে যার যার ধর্ম পালনের পরিবেশ আর স্বাধীনতা দেবে। এই বাংলাদেশে এখন ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হয়ে গেছে ধর্মহীনতা।
পঞ্চাশটা বছরে বাংলাদেশটার রাষ্ট্র পরিচালকরা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা তো দূর, শব্দটির অর্থই তার নাগরিককে শেখাতে পারে নি।
আরেকটি হলো জাতীয়তাবাদ। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ থাকা সত্ত্বেও মাথার ওপর লাঠি ঘোরাত পশ্চিম পাকিস্তানিরা। শাসন ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানিরাই কুক্ষিগত করেছিল। সকল সুবিধা তাই পশ্চিমের নাগরিকেরাই পেত। এমন কি বাঙালি শব্দটাকেই তারা গালাগালের ভঙ্গীতে উচ্চারণ করত। আমরা জাতীয়তাবাদের কথা বললাম। মানে পূর্ব বা পশ্চিম নয়, পাকিস্তানের নাগরিক হলেই যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে।
যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে আজ বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদযাপন করছি। আমরা আজও জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারি নি। আমরা এখন বাঙালি আর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিভাজিত। এবং বাঙালি শব্দটাকে এখন নিজেরাই গালাগাল বানিয়ে ফেলে একে অন্যকে তাচ্ছিল্য করতে বলেই চলেছি, 'জাতে বাঙ্গালি না!'
এইসব ভেবে ভেবে গেল বছর কয় ধরে বছরের এই সময়টায় মেজাজ খুবই খারাপ থাকে। লোকেরা ভালো কথা বললেও ঘুরায়ে পেঁচায়ে কিসব কিসব বলে দেই। আমার ভালো লাগে না। লোকেরা আমারে আউলা ডেকে ফেলে ঘাপটি মারে।
এখন আমি জানতে চাই, আমাদের বিজয়টা আসলে কই?
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১৪
মুবিন খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৫
জ্যাকেল বলেছেন: আপনি যা লিখেছেন ইহার মধ্যে হতাশাই বেশি। কিন্তু আপনার লেখা থেকেই দেখুন, পশ্চিমের লোকেরা এই দেশের মানুষকে দাবায়ে রাখত রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করে। এখন ইহা হইতেছে না।
আমরা উর্দু নয়, বাংলায় কথা বলতে পারতেছি।
যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতেছে এরা তো আর ভিনদেশি না। এ সকলই হইল আমাদের বিজয়।
আমাদের নুন্যতম চাহিদা ছিল পাকিদের হাত থেকে মুক্তি, বাকস্বাধীনতা। নাগরিক অধিকার অর্জন ছিল মুখের বলি, মনের চাওয়া আসলে ছিল পাকি দুঃশাসন থেকে মুক্তি আর মনের কথা বলতে পারার স্বাধীনতা।
তাই আমাদের বিজয় হয়েছে তবে নিজ দেশের লোকেদের হাতেই বিজয় কলংকিত হয়ে আছে।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৫
মুবিন খান বলেছেন: আমি যা লিখেছি ইহার মধ্যে আপনি হতাশা খুঁজে বের করেছেন বলে দুঃখ জানাই। মজার ব্যাপার হলো, নিজেকে আমি আশাবাদী মানুষ বলেই দাবি করি। আশাবাদী ব্যাপারটা হলো, যা আছে ও নিয়ে আত্মপ্রসাদ না নিয়ে কি চাইলাম আর কি পেলাম, যা পেলাম না বলে হাল ছেড়ে না দিয়ে তাকে পাওয়ার চেষ্টা- এইটা তো, তাই নয়?
"পশ্চিমের লোকেরা এই দেশের মানুষকে দাবায়ে রাখত রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করে। এখন ইহা হইতেছে না।"- আপনার এই সমাধান আপনার নিজস্ব আত্মপ্রসাদ, আমি কেন নেব! আমি প্রশ্ন তুলব, পশ্চিমের লোকেদের খেদায়ে দেয়া হলো যাতে নিজের লোকেরা দাবায়ে রাখতে পারে?
"আমরা উর্দু নয়, বাংলায় কথা বলতে পারতেছি।"- একাত্তর আর বায়ান্নর ফারাকটা ভালো করে জানেন ভাই। তখন আপনার সঙ্গে
"এ সকলই হইল আমাদের বিজয়" নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।
৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে উর্দুতে কথা বলতে হচ্ছে না। এটাই বিজয়।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১৩
মুবিন খান বলেছেন: একাত্তর তবে স্বাধিকার আন্দোলন ছিল না! ভাষা আন্দোলন ছিল!
বিজয় নিয়ে আপনার আত্মপ্রসাদ ঈর্ষনীয় বটে।
৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:১১
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বিজয়ের মুল্য বোঝা যায় যখন দেখা যায় স্বাধীনতার পর শুন্য তহবিল হাতে নিয়ে দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি অবস্থা থেকে উঠে দখলদার ধনাড্ড পাকিদের চেয়ে এগিয়ে গেছে।
এটাই তো বড় বিজয়।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪২
মুবিন খান বলেছেন: 'ধনাঢ্য' হবে বানানটা।
আপনি বড় বিজয় পেয়েছেন। আপনি সৌভাগ্যবান। আপনাকে ঈর্ষা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আপনার মত আমারো জানতে মন চায় , বিজয়টা আসলে কোথায় ?