নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।
প্রিয়তমেষু,
তুমি কি করেছ জানো? আমাকে একটা ধাক্কা মেরে সময়ের হিসেবে প্রাচীন যুগে ঠেলে দিয়েছ। এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও, যখন হাজার মাইল দূরে থেকেও লোকেরা পরস্পরকে দেখতে দেখতে কথাবার্তায় আবির মাখিয়ে বলাবলি করে, এমন একটা যুগে বাস করেও আমাকে আজকে সুপ্রাচীন যোগাযোগমাধ্যম চিঠিকে আঁকড়ে ধরতে হয়েছে।
আমি জানি, তুমি বলবে আজকে ডাক দিবস বলেই আমি চিঠি লিখছি। অথচ তুমি জানো তোমার এ ধারণা সত্য নয়। তাছাড়া আজকে যে ডাক দিবস সেটা আমি আমি জানতামই না! এক মেয়ে তার বন্ধুকে একটা কাব্যিক চিঠি লিখেছে। ওই কাব্যিক চিঠিটা না লিখলে তো আমার জানাও হতো না। মেয়েটার চিঠিটা দেখেছ তুমি? দেখ নি, না? মেয়েটা কি করেছে জানো! একশ’ বছরের পুরান একটা কাগজ জোগাড় করে তাতে চিঠি লিখেছে। যাকে লিখছে সে তো ও চিঠি হাতে নিতে না নিতেই তো ছিঁড়ে যাবে! কি কিপটা দেখেছ! মেয়েটার বন্ধুটার জন্যে আমার খারাপই লাগছে! আহা! বেচারি! চিঠি লেখা মেয়েটা কি কিপটা, তাই না? অবশ্য চিঠিটা যে শৈলীতে তাতে ওর ওই কিপটামি এড়িয়ে যাওয়াই যায়। তুমি আমাকে অমন করে একটা চিঠি লিখতে পারো না? ও ভাষায় নয়, তোমার নিজের ভাষায়।
এই শোন! আমি যে তোমাকে এসব বলেছি, তুমি কিন্তু আবার বলে দিয়ো না! বলে দিলে ওই মেয়ে ঠিক ডিটারজেন্ট আর পানি নিয়ে চলে আসবে। লন্ড্রিতে পাঠাবে না। আমাকে নিজেই ধুয়ে ফেলবে।
থাক ওসব কথা। শোন, কবিতা লিখবার কথা ভেবেছিলাম। তুমি তো জানোই, কবিতা আমি লিখতে পারি না। তোমার মতো ভাষা শৈলী আমার জানা নেই, তাই সাহিত্যও রচনা করতে পারি না। কেবল কথাবার্তা বলতে পারি। সে তো সবাই পারে। ও তো আর শিখতে হয় না, শেখা হয়ে যায়। কথাবার্তা যদি শিখতে হতো তাহলে আমার বিপদই ছিল। শেখাশেখি করতে পারি না বলেই তো মূর্খ রয়ে গেলাম। আর মূর্খ মানেই অপাংক্তেয় বড়। তাই যখনই কলম হাতে বসি, আয়নায় প্রতিবিম্বর পানে চেয়ে দেখতে পাই নিধিরাম সর্দার সামনে কাগজ রেখে তাতে সমানে কলম ঘষাঘষি করছে।
তুমি তো আর প্রতিবম্ব নও, তুমি তাকালেই এই নিধিরাম দেখে ফেলতে পারো। দেখও। আমি জানি সেটা। তবুও বলাবলিতে নিয়ন্ত্রণ হারাই, বল্গাহীন বলতেই থাকি, বলতেই থাকি! তুমিও বিরক্ত হতেই থাকো, হতেই থাকো। তারপর রেগে ওঠ। রেগে উঠে তুমিও ডিটারজেন্ট জোগাড় কর।
আমি কি করব বল তো, ছুঁড়ে দেয়া তীর-বর্শা আর বলে দেয়া কথাবার্তা ফিরিয়ে নেয়া যায় কি কখনও? যায় না তো। আমি পারি না। কিন্তু তুমি কি করে যেন এই অদ্ভুত ক্ষমতাটি আয়ত্ত করে ফেলেছে! আমি দৃষ্টিতে খুব অবিশ্বাস নিয়ে তোমার এ ক্ষমতাটি দেখলাম। কি করে আয়ত্ত করলে! বলবে আমাকে? তবে এর পেছনে যদি লেখাপড়া-জ্ঞান এসবের কোনও ব্যাপার থাকে, তাহলে জানতে চাই না। ও জিনিস আমার কাছে নেই। জোগাড় করতেও পারব না।
তারচেয়ে এসো জ্যোৎস্নার কথা বলি। লোকেরা বলে, তোমার নাকি আলো নেই। ওই দূর নক্ষত্র থেকে আলো ধার করে নাকি তুমি ঝলমল কর, সুন্দর লাগো। লোকেদের এই কথাদের আমি ঘোরতর বিরোধী, জানো তো। তুমি তো তোমার জায়গাতেই রয়েছ। নক্ষত্রর কাছে তো যাও নি! বলও নি তোমাকে আলো ধার দিতে। নক্ষত্রর আলো যে তোমার গায়ে পড়ে সেটা ওই নক্ষত্রর স্বভাব বলেই। ওর চরিত্রে সমস্যা আছে। সেকারণেই যত্রতত্র আলো ছড়িয়ে বেড়ান ওর স্বভাব। তার থেকে কিছু তোমার কাছে পৌঁছেছে বলে নক্ষত্র তোমার সৌন্দর্যে ভাগ বসাবে! এটা হয়? বল? নক্ষত্র একটা ছোটলোক।
আর লোকেদের ব্যাপারটা একবার ভাবো। লোকেরা নক্ষত্রর হেথা-হোথা-সেথা আলো ছড়িয়ে বেড়ানোর স্বভাব জানে, তবুও 'ধার' শব্দর ব্যবহারে তোমাকে 'ঋণী' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কেন চায়? লোকেরা কি জানে না যে ওই আলো যদি তোমার গায়ে নাও পড়ত, তুমি যা তাই থাকতে, তোমার রঙ, রূপ রস, গন্ধ, সৌন্দর্য, আকৃতি- কিছুই পাল্টাত না। তুমি অমনই থাকতে, এই এখন যেমন আছ।
লোকেরা এসব কেন বলে জানো? বলে, নক্ষত্রর আলো তোমার শরীরে পড়লে তারা তোমাকে দেখতে পায় বলে। মজার ব্যাপার হলো, তোমাকে দেখে মুগ্ধ হয়, আর কৃতজ্ঞতা জানায় নক্ষত্রকে। সৌন্দর্য দেখতে পায় বলে তাদের কথাবার্তায় ওইটিরই প্রাধান্য।
কিন্তু দেখতে পায় না তোমার শক্তি। গ্রহের বাইরে থেকেও তুমি নদীতে আনো জোয়ার, সমুদ্রে তোল উত্তাল ঢেউ, বানাও ঝড়- এসব লোকেদের কেউ কেউ জানে বটে, কিন্তু উপলব্ধি করে না। তাদের আলাপে শুধু তুমি, তোমার সৌন্দর্য আর জ্যোৎস্না। আচ্ছা তুমিই কি জানো? উপলব্ধি কর নিজের শক্তি? এখন তো আমার সঙ্গে আড়ি করেছ। বাড়ির সামনের গলি দিয়ে চলে যাও, আমার বাড়ি আসবে তো দূর, যেন চেনোই না আমাকে! আসবে না আর? আসবে তো। মন তাই বলে। কবে আসবে?
ইতি
আমি
১০১০/২০২০
১১ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৫৮
মুবিন খান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৫৪
মা.হাসান বলেছেন: নিজের আলোয় আলোকিত হওয়া বড় কঠিন। আলো জ্বালানো বড় কঠিন। অনেক জ্বালানি লাগে। সকলের থাকে না। নক্ষত্রের আলোয় জ্বলে ওঠাটাই সহজ। তবে বড়াই না থাকা ভালো।
খুব ভালো লেগেছে।
১২ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১০
মুবিন খান বলেছেন: নিজের যদি আলো না থাকে, তবে ওটাই স্বাভাবিকতা। অন্যর আলোয় যদি সৌন্দর্যটা দৃশ্যমান হয়, তবে ওই সৌন্দর্যটুকু আলোর নয়, নিজেরই। নয়ত কুৎসিত হলে সেটিই দৃশ্যমান হতো। তেমনি শক্তিটুকুও নিজেরই।
আপনার ভালো লাগায় সন্মানিত। অসংখ্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৩:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।