নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা দিবসে বাবার কথাই চলুক না হয়

২২ শে জুন, ২০২০ রাত ৩:২৩




আজকে বাবা দিবস।

বাবা দিবস, মা দিবস, ভালোবাসা দিবস- এই দিবসগুলোর, এই সংস্কৃতির পক্ষে আমি নই। এটা পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে নয়, এর বিরোধিতায় আর সবাই যেমনটা বলেন- প্রিয় মানুষকে ভালোবাসার জন্যে কোনও নির্দিষ্ট দিন দরকার পড়ে না- আমিও তাঁদেরই দলে।

কিন্তু একটু মনোযোগ দেওয়ার পরে দেখা গেল, আমাদের অনাড়ম্বর জীবনে এই সংস্কৃতি এসে একটা আড়ম্বর এনেছে, একটা অনুভূতিকে জাগ্রত করতে শুরু করেছে। সেটা হয়ত মেকি, হয়ত সেটা দেখানোপনা, কিন্তু যাকে উপলক্ষ্য করে অনুভূতিটিকে জাগ্রত করা হলো, তিনি ওই একটি দিনের জন্যে হলেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। তখন তাঁর মহানুভবতার গল্প বলা হয়, তাঁর স্মৃতি মেলে ধরা হয়, তাঁর ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাঁর জন্যে উপহার কেনা হয়, তাঁকে নিয়ে লেখা হয় সন্তানের জীবনের মহত্তম রচনাটি। সেদিনটির উপলক্ষ্য বাবা তখন আনন্দিত হন। নির্মল হাসি হাসেন।

এ হাসি বড় বড় মূল্যবান। অমূল্য। যখন নকল একটা আড়ম্বর একটা মানুষকে নির্মল হাসি হাসাতে পারছে, তখন কি আর একে নকল বলবার জো থাকে? থাকে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য- একজন মানুষের নির্মল হাসি। এ হাসিতে কেবল থাকে আনন্দ, থাকে বিস্ময়, থাকে প্রাপ্তি, থাকে সন্তুষ্টি আর একটু লজ্জা রাঙা ভাবও থাকে। একজন বয়স্ক মানুষ চমকপ্রদ উপহার পেয়ে শিশুদের মতো উদ্বেলিত হতে পারেন না। তাই লজ্জায় রাঙিয়ে ওঠেন। এরপর কৃত্রিম বিরক্তিতে বিতাড়িত করতে চান। তারপরই তাঁর ঠোঁটে ফুটে ওঠে নির্মল হাসিটি। আমি চুপ করে থেকে সেই নিমর্ল হাসিটি দেখি।

ধার করা সংস্কৃতির এই আড়ম্বরকে আমি তবু নকলই বলি। আর এর পক্ষে না থাকার অবস্থানে অনড় থেকেও উপলক্ষ্য হয়ে ওঠা মানুষটির গল্প শুনি, ছবি দেখি- সেগুলো দিকে চেয়ে তাঁর সময়টাকে ধরবার চেষ্টা করি।

আমি জানি, আমার বাবার মতো আপনারও নিজের বাবাকে নিয়ে অহঙ্কার আছে। এবং আমরা মেনে না নিলেও, আমাদের সকল অযোগ্যতা জেনেও, আমাকে-আপনাকে নিয়ে আমাদের বাবারাও একজন গর্বিত বাবা হিসেবেই শক্ত পায়ে দাঁড়াবেন। তাঁর সমসাময়িকদেরকে শোনাবেন আমাদের মতো অযোগ্য সন্তানদের বাছাই করা সফলতার গল্পগুলো। গর্বিত এই পিতার সে গল্পে আরও থাকবে মনের মাধুরী মেশানো অহংকার। সারাজীবন ধরে বাবার কথা শুনতে না চাওয়া খুব বিরক্ত এই আমরা সে অহংকারের যোগ্য নই। বাবাও জানেন সেটা। তবু করেন। করেন আমাদেরই জন্যে। সমাজের কাছে আমাদের সুসন্তান হিসেবে পরিচিত করতে চান বলে। কেননা যিনি সুসন্তান তিনি উৎকৃষ্ট মানুষ।

কিন্তু সকল সন্তান উৎকৃষ্ট হতে চায় না। সকল সন্তান উৎকৃষ্ট হতে পারেও না। সেকারণে পশ্চিমাদের থেকে আমরা আরেকটি সংস্কৃতি ধার করেছি - ওল্ডহোম। বাংলায় আমরা তার গালভরা নামও দিয়েছি - বৃদ্ধাশ্রম।

সন্তান যখন অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন আর তার উৎকৃষ্ট মানুষ হওয়ার দায় থাকে না। লাগেও না। কেননা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ডাক্তার তৈরি করে, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করে, জজ, ব্যরিস্টার, উকিল, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ - সকলই তৈরি করে। শুধু উৎকৃষ্ট মানুষ তৈরি করে না। ফলে ধার করা সংস্কৃতির নির্মাণ - বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা কেবলই বেড়েই চলে। সুকঠিন আর এমনই মজবুত তার ভিত যে, স্থাপনা ভাঙা গেলেও সংস্কৃতিটি ভাঙা যাবে না।

যে নিষ্ঠুর সন্তান বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসে আর খোঁজ নেয় না। সে বাবা তারপরও হয়ত সন্তানের এ নিষ্ঠুরতাকে উপেক্ষা করে রোজ অপেক্ষা করেন- সন্তান আসবে তাঁকে দেখতে। যে সন্তান বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারে, ঈদ-পার্বণেও যে সন্তান বাবার খোঁজ নেয় না, সে সন্তান বাবার নামে উৎসর্গীত দিনটি উদযাপন করতে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে হাজির হবে- এমনটা ভাববার কোনও কারণ নেই।

কিন্তু তবুও, এরপরও যায় কেউ কেউ। স্ত্রীকে নিয়ে, নিজের সন্তানদের সঙ্গে কিছু একটা উপহার নিয়ে যায় কেউ কেউ। তারপর আর বাবাকে মাঝখানে রেখে বউ বাচ্চাদের নিয়ে দুপাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে। বাড়ি ফিরে সে ছবি আপলোড করে ফেসবুকে। আমরা সেসব ছবি দেখে ‘আহা মরি মরি’ বলতে থাকি।

এই নকল আর মেকি উদযাপন বাবা মাও টের পান। আমাদের মতো অনাত্মীয়দের থেকে বেশিই টের পান। তবু তিনি আনন্দ পান। মুগ্ধ হন তিনি। আয়োজন মেকি হলেও এ আনন্দে, এ মুগ্ধতায় মেকি বলে কিছু নেই। বাবার ভালোবাসায় মেকি বলে কখনও কিছু থাকে না, মায়ের মতোই। যেটি থাকে, তার নাম আশির্বাদ। বৃদ্ধাশ্রমে ছুঁড়ে ফেলে দিল যে সন্তান, বাবা মা সেই অর্বাচীন সন্তানকেও আশির্বাদ করেন।

ধরুন, সন্তানটি গেল না বৃদ্ধাশ্রমে। কোনও ক্ষতি বৃদ্ধি হয় কী তাতে? না, নেই কোনও ক্ষতি। বিশেষ এ দিনটি সেখানেও পালিত হবে। এ দিনটি সেখানে বসবাস করা সকল বাবা মাকে মনে করিয়ে দেবে, আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটিতে, যেদিনটিতে আপনি এ পৃথিবীতে এসেছিলেন বলে বছর বছর নিজের জন্মদিন নাম দিয়ে উদযাপন করেন- সেদিনটিকে তাঁরাই নির্মাণ করেছিলেন। যদি এই নির্মাণ তাঁরা না করতেন, তাহলে তাঁদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবার কিংবা আপনার এ পৃথিবী দেখবার সুযোগ ঘটত না। এই ভাবনাটি আপনার জন্যে তাঁদের অন্তরে তখন করুণার উদ্রেক করে। তবুও এ তাঁরা নিজ নিজ বিশ্বাসের কাছে আপনার দীর্ঘায়ুই কামনা করেন।

বাবারা এমনই হন। হন মায়েরাও। পৃথিবীর সকল বাবা মায়েরাই এমন। তাহলে কি করে এর বিরুদ্ধে যাই!? তাই বিরুদ্ধাচরণ করি না। আবার পক্ষেও থাকি না।

আজকে বাবা দিবস। পৃথিবীর সকল বাবাদেরকে শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা মায়েদেরও।

কিন্তু বাবা দিবস বলে আজ না হয় শুধু বাবার কথাই চলুক। 


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০২০ ভোর ৪:২৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: খুবই ভালো লিখেছেন । চমৎকার

২২ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:১০

মুবিন খান বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানবেন।

২| ২২ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: বাপ কি জিনিস তা সেদিনই স্পষ্ট বুঝা যায় যেদিন নিজে বাপ হওয়া যায়।
দুঃখজনক হলো সমাজে বহু খারাপ বাপ আছে। এরা সন্তান জন্ম দিয়েই খালাস এর পর আর কোনো খোক খবর রাখে না।

২২ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:১২

মুবিন খান বলেছেন: আপনার কথায় সত্যতা আছে।

৩| ২২ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই দিবস যদি সমাজে বাবাদের প্রতি আমরা যে অন্যায় আচরণ অনেক সময় অনেকে করি তার পরিবর্তন ঘটানোতে সাহায্য করে তবে এই দিবস উদযাপনের সার্থকতা আছে। তবে যেকোনো সামাজিক প্রথা সার্বজনীন না হলে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। আমাদের দেশে কয়েক কোটি নিম্নবিত্ত মানুষ আছে তারা সম্ভবত এসবের নামও শোনেনি। বাবা দিবস এদেশে আসার আগে বাবাদের প্রতি ভালবাসা কি কম ছিল অথবা এখন কি বেড়েছে? যাই হোক যেহেতু এই দিবসের উদ্দেশ্য ভালবাসা ছড়ানো তাই সব বাবাদের প্রতি রইল শুভ কামনা।

২২ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:২১

মুবিন খান বলেছেন: ভালোবাসার তো আড়ম্বর থাকে না আসলে। আড়ম্বর লাগে ভান করতে। কিন্তু দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে যাদের আড়ম্বর দরকার পড়ে না, তারাও পালন করতে শুরু করেন। আপনি ঠিকই বলেছেন, এসব দিবস যখন এদেশে ছিল না তখন ভালোবাসার কমতি ছিল না। এখন আছে বলে ভালোবাসাটা বেড়েও যায় নি। হয়ত আমি আপনি এর পক্ষে নই, কিন্তু যারা আড়ম্বর পছন্দ করছেন, তারা করুন আড়ম্বর। টিকে থাকুক ভালোবাসাটা। চলতে থাকুক।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.