নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চতুর্থ সেকেন্ড

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪


পৃথিবী নামের এই গ্রহটির বয়স প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছর। আর মানুষের? এক লক্ষ চল্লিশ হাজার বছর। আসুন একটু অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি। ধরুন, পৃথিবীর বয়স চব্বিশ ঘন্টা, কিংবা পুরো একটি দিন। তাহলে সে হিসেবে আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি মাত্র তিন সেকেন্ড হতে চলল। মাত্র তিনটি সেকেন্ড! ভাবতে পারেন! অথচ দেখুন আমরা কি করে ফেলেছি! আমরা খুব আহ্লাদিত হয়ে নিজেদের নাম রেখেছি ‘হোমোসেপিয়েন্স’, যার মানে দাঁড়ায়- ‘বিচক্ষণ মানুষ’, কিন্তু মানুষ কি সত্যিই আসলে বিচক্ষণ? স্মার্ট বলা যেতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, মানুষ নিজেদের জন্যে শুভচিন্তা করতে পারার মতো যথেষ্ট স্মার্ট নয়।

হ্যাঁ, আমরা পরমাণুকে ভেঙে ভাগ করেছি। হ্যাঁ, আমরা বুদ্ধিমান যন্ত্র নির্মাণ করেছি যেটি মহাশূন্যে আমাদের জন্যে নতুন আবাসস্থল খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে পরমাণুকে ভেঙে ভাগ করতে পারার যোগ্যতা দিয়ে আবার পারমানবিক যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে চাইছি। মহাশূন্যে, ছায়াপথে নতুন আবাসস্থল খুঁজতে খুঁজতে আমাদের বর্তমান আবাসস্থল পৃথিবী নামক এই গ্রহটিকে বিপুল অবহেলা আর প্রত্যাখ্যান করে চলেছি।

অতএব, না, আমরা মানুষেরা নিজেদেরকে বিচক্ষণ আর জ্ঞানী দাবি করতে পারি না। বিচক্ষণতা ভিন্ন জিনিস। যখন একজন বুদ্ধিমান মানুষ কথা বলবেন, জ্ঞানী মানুষ সেটা শুনবেন। আর দেখুন, আমাদের মাতৃসম এই ধরণী যখন আর্তনাদে চিৎকার করছে, আমরা দুহাতে নিজেদের কান চেপে ধরছি। প্রকৃতির করুণ রূপ যখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে, আমরা চোখ বন্ধ করে ফেলছি। অথচ বিচক্ষণ মানুষদের জানা থাকার কথা, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।’

তাহলে আমরা যদি সত্যিই বিচক্ষণ বা বিজ্ঞ হতাম তাহলে পৃথিবীর বুকে বয়ে চলা ঝড়গুলো যে ক্রমশ আগের চাইতে আরও আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, সেটা দেখে বিস্মিত হতাম না। কেননা পরিবেশের দূষণও আগের চাইতে আরও আরও অনেক অনেক গুণ বেড়ে গেছে, বেড়েছে কার্বন, বেড়েছে বৃক্ষ নিধন, আর সেটা রেকর্ড হারে।

বন্য প্রাণী নিধনকে আমরা তার স্বাভাবিক গতি থেকে এক হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। কি কৃতিত্ব! শিশুদের বইয়ের প্রিয় পশুগুলো আগামি দশ থেকে একশ’ বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সিংহ?
হারিয়ে গেছে।
গন্ডার?
হারিয়ে গেছে। বাঘ? গরিলা? হাতি? মেরু ভাল্লুক?
মাত্র তিনটি সেকেন্ডেই হারিয়ে গেছে!

এই তিনটি মাত্র সেকেন্ডে, বিভিন্ন প্রজাতির এই প্রাণীগুলো যারা আমাদের চেয়েও পৃথিবীর অনেক পুরনো অধিবাসী, অথচ আজ এরা হারিয়ে যাবে আমাদেরই কারণে। কি কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের! সৌরজগতের একমাত্র পৃথিবী নামক এই গ্রহটিতেই প্রাণ বেঁচে থাকতে পারে। আমাদের এই পৃথিবীটাই একটা অলৌকিক ব্যাপার। সৌরজগতে পৃথিবীটা এতটাই নির্ভুল অবস্থানে রয়েছে যে, সূর্যর অতটা কাছেও নয় যে আমরা জ্বলে পুড়ে যাব, আবার ততটা দূরেও নয় যে ঠান্ডায় জমে যাব। আবার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রগুলো আমরা গাছপালা থেকেই তৈরি করছি, কাকতালীয়ভাবে নয়। এখানে সবকিছুই, প্রত্যেক প্রজাতিই, সানফ্লাওয়ার থেকে সানফিশ জিনগতভাবেই সকলে সকলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে ঠিক এই ব্যাপারটিই আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা সত্যিকারে সঙ্কটটি আসলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা নয়, এই যে আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতি, প্রাণী আর উর্বরতা ধ্বংস করে চলেছি, এটাই। এই সঙ্কটগুলো আমাদেরই নির্মাণ, আমাদেরই উৎপাদন। আমাদের ভেতরের লোভের প্রতিফলন, আমাদের দিকভ্রান্ত মনের যোগাযোগহীনতার সৃষ্টি। সাম্রাজ্যবাদ আমাদেরকে এসব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। আমাদের পায়ের নিচ থেকে ধীরে ধীরে আমাদের আবাসনকে টেনে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদেরকেই প্রতিহত করতে হবে। মানবিকতার এ দায়িত্ববোধ থেকে আমরা আমাদের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী আর তুচ্ছ মানুষের হাতে তুলে দিতে পারি না।

আমাকে পাগল ভাবুন বা আর যাই ভাবুন, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নিরাপদ খাদ্য আমাদের অধিকার, ঠিক তেমনি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারাও আমার অধিকার, তাহলে বিষাক্ত বায়ুতে আমি কি করে প্রশ্বাস নেব!

এই অধিকারগুলোই তো মৌলিক অধিকার। কোনও আলোচনাতেই এ নিয়ে দরকষাকষি চলে না। তাদের লক্ষ্য আপনাকে দুর্বল করে ফেলা।

প্রবাদ আছে, প্রজাপতি যতটা সময়ে তার ছোট্ট ডানা ঝটপটায় ততটা সময়ে ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর অর্ধেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলে।

ঠিক আছে, যখন আমরা সাধারণ মানুষেরাও সংঘবদ্ধ হবো, তখন আমরাও ঢেউ জাগাবো। আর সেই ঢেউয়ে পুরনোকে ধুয়ে পৃথিবীর বুকে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করব। শুধুমাত্র আমরা মানুষেরা ব্যক্তিকে অতিক্রম করে সমষ্টি হতে পারলেই সৃষ্টি হবে চতুর্থ সেকেন্ডের যাত্রা।




[ইন্ডিয়া টাইমস্‌ থেকে ইকবাল বাহারের 'দ্য ফোর্থ সেকেন্ড' নিবন্ধটির ভাবানুবাদ।]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ ভীষন ব্যস্ত। এত কিছু ভাবার তাদের সময় কই!

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০২

মুবিন খান বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। এখনকার মানুষদের সময়ের বড় অভাব। তাদের ভাবনারাও নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.