নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগাম জামিন কি?
জামিন একটি আইনী বিচারিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্তিয়ায় বিচারিক আদালত অভিযুক্তকে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের পর আদালতে যথা সময়ে উপস্থিত থাকার শর্ত সাপেক্ষে, মুক্তির যে আদেশ প্রদান করে তাই জামিন। বিশেষ পরিস্থিতিতে আদালত অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পুর্বেই জামিনের যে আদেশ প্রদান করে তাকে আগাম জামিন বলে।(১)
আগাম জামিন সংক্রান্ত আইন:
আইনে আগাম জামিনের কোন সুস্পষ্ট বিধান নেই। আদালত ফোজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৮ অনুযায়ী আগাম জামিন প্রদান করে থাকে।
৪৯৮ ধারায় বলা আছে,
'The amount of every bond executed under this Chapter shall be fixed with due regard to the circumstances of the case, and shall not be excessive; and the High Court Division or Court of Session may, in any case, whether there be an appeal on conviction or not, direct that any person be admitted to bail, or that the bail required by a police-officer or Magistrate be reduced.'(২)
অর্থাৎ এই অধ্যায়ে সম্পাদিত কোন বন্ডের অর্থের পরিমাণ মামলার বিষয়বস্তু বিবেচনা করে নির্ধারিত হবে এবং অত্যধিক হবে না; মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত যে কোন মোকদ্দমায়(মামলাটি আপীলে বা রায়ের জন্য বা যে অবস্থায় থাকুক) অভিযুক্তকে জামিন মঞ্জুর করতে পারবে, অথবা পুলিশশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদানকৃত জামিন হ্রাস করতে পারবে।
কে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারবে?
যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় এজাহার/অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বা, যে আশঙ্কা করছে তাকে জামিন-অযোগ্য অপরাধে/মামলায় গ্রেফতার করা হতে পারে, সে ব্যক্তি আগাম জামিন আবেদন করতে পারবেন।
কোথায় আবেদন করতে হবে?
ফোজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৮ অনুযায়ী আগাম জামিনের এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত। তভে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করে থাকেন।
কখন আবেদন করা যায় না?
অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতার হবার পুর্বেই আগাম জামিন আবেদন করতে পারেন। তবে পুলিশ যদি গ্রেফতার করে অভিযুক্তকে আদালতে উপস্থাপন করে, তবে এরপর আর আগাম জামিন আবেদন করতে পারবে না। তখন তাকে নিয়মিত জামিন আবেদন করতে হবে।
Precedent/নজির ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা:
১৯ ডি এল আর (এসসি) ৩৮ এ বলা হয়েছে-‘অনুমানের উপর জামিন দেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্ট অথবা দায়রা জজের ক্ষমতাভুক্ত এবং এই ক্ষমতা অন্যান্য আদালতের নেই'; একই সঙ্গে ৬২ ডি এল আর (এডি) ৪২০ এ বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো পলাতক আসামি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে সেক্ষেত্রে হয়রানিমূলক গ্রেফতারের দরকার নেই।’ সুতরাং গ্রেফতার ঝামেলা এড়াতে আগাম জামিন ঢাল হিসেবে কাজ করে থাকে।(৩)
আগাম জামিন প্রদানে মাননীয় আপীল বিভাগ একটি মামলায় কিছু গুরুত্বপুর্ণ বিষয় বিবেচনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং কোর্ট এ সকল বিষয় বিবেচনা করে আগাম জামিন মঞ্জুর করবেন।(৪)
নির্দেশনাগুলির সংক্ষিপ্তরূপঃ
1. অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত FIR/এফ.আই.আর ভালোভাবে চেক করতে হবে,
2. অপরাধে অভিযুক্তের অবদান, অংশগ্রহণ বিবেচনায় নিতে হবে,
3. আগাম জামিনে অভিযুক্ত পালিয়ে যাবে কিনা সে বিষয়ও আমলে নিতে হবে
4. অভিযুক্ত ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান, পেশা, আচার-আচরণ বিবেচনা করতে হবে,
5. আবেদনকারীকে শুধুমাত্র গ্রেফতার করে আহত বা অপমান করার উদ্দেশ্যে অভিযোগ করা হয়েছে কিনা, যাচাই করতে হবে, কারণ গ্রেফতার করা ব্যক্তির জন্য নিকৃষ্টতম যন্ত্রণা, অপমান ও অসম্মানজনক। গ্রেপ্তার শুধুমাত্র অভিযুক্তের জন্য নয় তার পুরো পরিবার এবং একই সাথে সমগ্র সম্প্রদায়ের জন্য অসম্মান বয়ে আনে,
6. একই সাথে দুটি বিষয় খেয়াল করতে হবে, অভিযুক্তকে যাতে অসম্মান, হেয় প্রতিপন্ন করা, অন্যায় আটক না করা হয়, এবং অবাধ ও সুষ্ঠু তদন্ত যাতে বাধাগ্রস্থ না হয়,
7. আগাম জামিন একটি ব্যতিক্রমী সুবিধা, কেবল ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই মঞ্জুর করা উচিত। উচ্চ আদালত প্রদত্ত এ জামিন বিচারিক বিচক্ষণতাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নিবেন যে আগাম জামিন মঞ্জুর করার জন্য উপযুক্ত মামলা কিনা,
8. শর্ত থাকবে যে জামিনে মুক্ত অভিযুক্ত অপরাধের প্রমাণ নষ্ট করবে না, সাক্ষীকে হুমকি দিবে না এবং তদন্তে প্রভাব প্রয়োগ করবে না,
9. যদি আশঙ্কা থাকে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সাক্ষীকে প্রভাবিত, প্ররোচিত বা বাধ্য করার অবস্থানে রয়েছে; যাতে সে তদন্তকারী অফিসারকে অপরাধের প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকবে; তবে আদালত সে দিকটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন,
10. যেসব মামলায় খুন, ডাকাতি, ডাকাতি, ধর্ষণ ইত্যাদির মতো গুরুতর অপরাধ জড়িত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য করার জন্য যদি অভিযুক্তকে আটক করা প্রয়োজন হয়, আসামিদের আগাম জামিনে কখনই বাড়ানো উচিত নয়।র
11. এই ধরনের জামিন আদেশ বিচারিক বিচক্ষণতার অনুপযুক্ত অনুশীলন হবে যদি একজন অভিযুক্তকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আগাম জামিন দেয়া হয় যা, এবং ভিযুক্ত সংঘটিত অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং ন্যায় তদন্তের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
12. আদালতকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে কারণ এই ধরনের জামিন অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণে বাধা তৈরি করে।
13. আগাম জামিনে অভিযুক্তকে মুক্ত করতে, আদালত অবশ্যই আবেদনকারীকে সঠিক তদন্তের প্রতিটি ধাপে তদন্তকারী অফিসারের সাথে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিতে হবে।
14. আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আগাম জামিন আদেশ সাধারণভাবে ৮ (আট) সপ্তাহের বেশি হবে না এবং চার্জশিট জমা দেওয়ার পরেও অব্যাহত থাকবে না। এটি অবশ্যই অ-জামিনযোগ্য অপরাধের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে।
15. আগাম জামিন প্রদানকারী আদালতের যেকোনো সময়ে জামিন বাতিল করার স্বাধীনতায় থাকবে ।
আদালত যে সকল বিষয় বিবেচনা করেন:
উপর্যুক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী আদালত আগাম জামিন মঞ্জুরে প্রকৃতপক্ষে যে সকল বিষয় বিবেচনা করেনঃ
1. অভিযুক্তকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কিনা
2. অভিযোগের ধরণ ও অভিযুক্ত ব্যক্তির অংশগ্রহণ
3. অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন কিনা
4. অভিযুক্ত ব্যক্তি আগে কখনো আমলযোগ্য অপরাধে শাস্তি পেয়েছিল কিনা
প্রয়োজনীয় দলিলপত্র:
আগাম জামিন আবেদনের জন্য আবেদনকারীর যেসব কাগজপত্র প্রয়োজনঃ
1. আবেদনকারীর স্বশরীরে উপস্থিতি
2. আবেদনকারীর NID, মোবাইল নম্বর
3. মামলা নম্বর, FIR, এজাহার এর কপি
4. আবেদনপত্রঃ মামলার বিবরণ, অভিযোগের বিপক্ষে প্রমাণাদি বর্ণনা, আগাম জামিন প্রার্থনার পক্ষে যুক্তি থাকবে
5. আবেদনকারীর আচরণ ও পূর্বে অপরাধে জড়িত ছিলেন না, এ বিষয়ে প্রমাণাদি
আগাম জামিন আবেদন প্রক্রিয়া খরচ:
যেহেতু হাইকোর্ট ডিভিশনে আবেদন করা হয়, খরচ বেশিই পরে। আগাম জামিন আবেদন খরচ আপনার আইনজীবীর চাহিদা, অভিজ্ঞতা ও মামলার জটিলতার উপর নির্ভর করে। আমার পরিচিত আইনজীবীদের ৫০ হাজারের নিচে চার্জ করতে দেখিনি!
মেহরাব হাসান
এডভোকেট
ফুট নোটঃ
১। মঞ্জুরুল ইসলাম,"আগাম জামিন কাকে বলে", প্রথম আলো, ৩ এপ্রিল ২০২৩। Click This Link
২। Section 498, The Code of Criminal Procedure, 1898.
৩। "গ্রেফতার এড়াতে আগাম জামিন নেবেন যেভাবে", ইত্তেফাক, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১। https://www.ittefaq.com.bd/219356
৪। রাষ্ট্র বনাম মোর্শেদ হাসান খান (৭১ DLR (AD) ২০১৯)
©somewhere in net ltd.