নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাল আছি ভাল থেকো- আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ। [email protected]
সবাই একদিন ছোট থাকেন, আর সেই ছোট ছোট নিস্পাপ হাতের স্পর্শ জন্মদাত্রী মাকে নতুন করে বাঁচার নির্মল স্বপ্ন দেখায়। হয়ত বাবুটা একদিন মায়ের কোল ছেড়ে পৃথিবীর কোল নতুন সম্ভাবনায় ভরিয়ে তুলবে আর মাকে করবে ধণ্য। এই ভেবে ভেবেই পৃথিবীর সকল সুখ আমাদের পরম মমতাময়ী মায়ের। হয়ত আমরা অনেকেই পারি আর কেউবা ইচ্ছে থাকলেও পারেন না।
পরসমাচার এই যে আমাদের একজন বন্ধু আছে, তার নাম মাসুদ রানা। তারও একটা শিশুকাল ছিল। সে আমাদের মতই কোমল নরম দেহ নিয়ে মায়ের কোল উজাড় করে পৃথিবীতে এসেছিল। তার স্বপ্ন ছিল, সে স্বপ্ন হয়ে উঠেছিল একটা হতদরিদ্র পরিবারের। ২০০৫ ইং সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী যন্ত্রকৌষল বিভাগে আমাদের মতই একটি বিশ্বজয়ী স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিল আমাদের এই বন্ধুটি। আমরা সবাই মস্ত বড় ইনজিনিয়ার হয়ে তাকে ছেড়ে এসেছিলাম ২০০৯ ইং সালের মার্চ মাসে , কিন্তু আমাদের সেই বন্ধুটি পারে নি, কিন্তু কেন পারে নি তা আর খোঁজ নেয়া হয় নি।
মাসুদ রানা কেমন ছিল আমাদের চোখে? আজ সে কোথায় আছে? কি চিন্তা করে সে? সে কি পেরেছিল আমাদের মত কিছু একটা হতে? কিংবা তার মায়ের বুকটা আনন্দে ভরিয়ে দিতে!
অনেক নিরীহ ও ভদ্র গোছের ছেলেদের ভেতর মাসুদ রানা ছিল একজন। সে আরেকটি দিক দিয়ে ছিল সবার থেকে আলাদা। কম কথা বলা এই ছেলেটির চলাফেরা সবার মত স্বাভাবিক ছিল না। আমি ওর উত্তর বঙ্গের দেশি সহপাঠি হওয়ায় মাঝে মাঝে কৌতহল বশত অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করতাম, ওর হাতের কিংবা পায়ের মাসেলস একটু নেড়েও দেখতাম। মোটেও ফ্লেক্সেবল ছিল না, অনেক টান টান হয়ে থাকত। আমার কাছে অদ্ভুত লাগত। কি করে একজন মানুষ ছোট থেকে এভাবে শারিরীক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে শেষপর্যন্ত এই পর্যায়ে আসতে পারে। তার প্রাণশক্তি না কতই বেশি। ছোট খাট গড়নের শরীরে জড়ানো জামাকাপড়ে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট ছিল। যখনি রাস্তায় দেখা হত আচমকা হাতটা ধরে বলত, একটা টিউশনি দিতে পারবি। আমরা তখন কিছুই বুঝিনি, আমরা তখন জানতামনা যে ওর এই দেহটার ভেতর কি পীড়নই না হচ্ছে কয়েকটা টাকার জন্য। শুনেছিলাম মাস শেষে হলের ডাইনিং এ ওর কিছুটা বাঁকিও পড়ত।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিনগুলিতে ওর সাথে খুব একটা সখ্যতা ছিল না, তার একটি কারন অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন হলে বসবাস। তবে আমি জানি যে আমরা সহপাঠিরা হয়তো যতটুকু সহানুভুতি বা অনুপ্রেরণা দিতে পারতাম ততটুকু পারিনি। খুব কষ্ট হয় আজকের সেই মাসুদ রানাকে দেখতে। মাসুদ রানা আমাদের মত চাকুরি করে না, বিদেশ ভ্রমনের বিলাষীতা তার নেই, ইনজিনিয়ারিং ক্যালকুলেশন গুলি তাকে আর যন্ত্রনা দেয়না। শুধুই ঘুমের রাজ্যে অসুস্থ্য শরীর নিয়ে অসহায় ভাবে একটু বাঁচার চেষ্টা করে। দুর্নীতির এই দেশে আমারা মানুসিক পঙ্গু বন্ধুরা মাসুদ রানাকে ভুলে গিয়েছি অনেক আগেই। কিন্তু গত মাসে আমাদের কুয়েট এর ২য় কনভোকেশনে মামুন, আমি, রিকি, মাজহাব যখন একুশের হলের সামনে গল্পে গল্পে কিছু সময় কাটাচ্ছিলাম, সেই মাসুদ রানার অনুপস্থিতি আরেকবারের জন্য মস্তিষ্কের নিউরণগুলি উত্তেজিত করে তুলল।
রিকি ওর ছোটবেলার বন্ধু, সে একটু একটু করে আমাদেরকে অনেক কিছুই বলল। আর আমাদের নির্বোধ কান সেই বন্ধুটির করুণ অবস্থার বর্নণা শুনছিল। মাসুদ রানা এখন সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকে। কারও সাথে কথা বলে না, কারও দিকে চোখ তুলে তাকায় না। বিধবা মা একটা জায়গায় চটের ব্যাগ সেলাই এর কাজ করতেন সেটাও এখন করেন না। তার উপর বছর দুয়েক আগে মাসুদ তার ছোট বোনকে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে মরতে দেখেছে। তখন থেকে ওর অবস্থা আরও নাজুক, মানসিক ভাবে অসুস্থ্য হওয়ার শুরু এখানেই।
এর কিছুদিন পর বন্ধু মামুন ফেসবুকে মাসুদ রানাকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন লেখেন। মুহুর্তে মাসুদ রানা চলে আসেন আমাদের ডিজিটাল মনে। মোচড় দিয়ে ওঠে আমাদের বেহুদা মনটা। রিয়াজ আমাদের খুব চমৎকার ও সাহসী একজন সহপাঠি ব্যক্তিত্ব, যে কিনা মাসুদ রানাকে নিয়ে আসেন আমাদের স্যারদের নজরে। বর্তমান যন্ত্রকৌশল বিভাবের প্রধান প্রফেসর মাসুদ স্যার একাডেমিক জটিলতা নিরসনে সকল সম্ভাব্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। শেষ কথা হল মাসুদ রানা কি পারবে প্রকৌশলী হতে? মাসুদ রানার মত মেধাবী একজন কি একটি সুস্থ্য সুন্দর জীবন পেতে পারে না?
আমরা তিনজন, মামুন, রিয়াজ ও আমি গত চার তারিখ গিয়েছিলাম আমাদের বন্ধুটির সাথে দেখা করতে। মামুন ও আমি আগের রাতেই ঢাকা থেকে রওয়ানা দিলাম ওদিকে রিয়াজুন নুর ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর আসছিল। সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে দশমিনিটের পথ পেরিয়ে মিস্ত্রি পাড়ায় পৌছলাম আমরা। মন্দির সংলগ্ন একটি মাত্র আধাকাঁচা রুমে মাকে নিয়ে এখন বাস করেন আমাদের বন্ধু মাসুদ। সকাল ৮টা। তখনও অনেক শীত, মাসুদ ও তার মাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হল।
মাসুদ তার গলাটা একটা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কোনরকম চোখ খোলার চেষ্টা করছে। আমার মনে হচ্ছিল আমাদের মত এই স্বার্থপর বন্ধুদের সে আর দেখতে চায় না। সে তো কোনদিন কারও হাত ধরে এতটুকু আর্থিক সাহায্য চায় নি! তারপরও আমরা কেন পারলাম না তাকে আমাদের সারিতে তুলে আনতে। সে তো একদিন আমাদের পাশের সিটেই বসে ক্লাস করতো। সে তো ভর্তি মেধা তালিকায় আমাদের অনেকের অনেক আগে স্থান করে নিয়েছিল।
শার্টের দুই একটা বোতাম ছেড়া ছিল, প্যন্টাও পরার মত ছিল না। এই হল আমাদের দেশের একজন মেধাবীর সর্বশেষ অবস্থা। আমরা কেউ পারিনি। আমাদের কি আমরা নিজেরাই ক্ষমা করতে পারব?
আমরা ঠিক যে মুহুর্তে চিন্থা করছি লাক্সারি/আরামদায়ক একটা বাসা ভাড়া করে সংসার করার ঠিক সে সময়ে আমাদের মাসুদ রানা ঘুমিয়ে থাকে একটি পুরোনো ঠেস দেয়া একটি চৌকিতে। হেলানো এই অপরিস্কার চৌকিতে মাসুদ রানা, তার মা এবং বাড়ির মুরগীটি একসাথে ঘুমোয়। বাসায় অন্য কোন রুম নেই আর নেই কোথাও শোয়ার আলাদা ভাঙ্গা কোন চৌকি। কোথায় আমাদের মানবতা। হায়রে বন্ধু। নারে! আমাদের ক্ষমা করিস না।
আমরা যখন প্রোমদের জন্য লাখ খানেক টাকা খরচ করে মালোশিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যন্ড ঘুরে আসছি ঠিক, সে মুহুর্তে আমাদের বন্ধুটি আলো আঁধারি জানালা বিহিন এই আধাকাঁচা সেঁতসেতে রুমে নিস্প্রভ হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। যার কোন আশা নেই, নিজেকে নিয়ে নেই কোন মহাজাগতিক চিন্তা। বাবা হারা এই এতিম ছেলেটি অর্ধমৃত হয়ে আছে, সে আমাদের মত কোন কিছুর অপেক্ষায় নেই।ঘরে বলার মত কিছুই নেই। বসার জন্য একটি চেয়ারও নেই।
সে আমাদের সাথে কথা বলতে বিমুখ। বড় অভিমান করেছে বন্ধুটি। অনেক বোঝানোর পর একটু আশা খুঁজে পাচ্ছিল। আমরা তিনজন বারবার তাকে জীবনের কথা বলছিলাম। বলছিলাম কিছু একটা হবেই হবে। একটা সুন্দর দিন আসবে। তার মার মুখে সেও হাসি ফোটাতে পারবে। ঝটপট তাকে গোষল করানোর ব্যবস্থা করানো হল। দাঁড়িসেভ ও চুল কামোনো হল। পেটে দুই একটা সিংগাড়া ঢুকিয়ে মার্কেটে যেয়ে কিছু কাপড় কিনে দেয়া হল। রিয়াজুন নুর এবং মামুনকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই সকল ব্যপারে সতস্ফুর্ত অংশগ্রহনের জন্য।
মাসুদ রানা ও তার পরম মমতাময়ী মা নিচের ছবিতে। এই বসার চেয়ার ও টুল দুটিও পাশের বাড়ি থেকেই নিয়ে আশা হল আমাদের আথিয়তার জন্য। আমরা কথা দিয়ে এসেছি মাকে যে, আমরা বন্ধুরা মিলে মাসুদের জন্য কিছু একটা করবই।
মায়ের চোখ পানিতে ভরে উঠেছিল, মরা মনটা কয়েকটা মুহুর্তের জন্য বেঁচে থাকার আশা খুঁজছিল।
নিচের ছবিতে খোলা আকাশের নিচে রান্না করার এই বিশেষ জায়গা ও রান্না করার সামগ্রী। আমাদের বন্ধু মাসুদ ও তার মায়ের দিন-রাত গুলি এভাবেই কেটে যায় নিরাশার ঘোরে। একমাত্র আয়ের উৎস মাসুদের ২ বছরের বড় ভাই যিনি এখন ঢাকায় কামলা খাটেন।
মাসুদকে আমরা যতটুকু পারলাম অনুপ্রাণীত করে পুনরায় প্রকৌশলী হওয়ার বীজটা বপন করলাম। তার হাতটা কাঁপছিল, অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম তার কাঁপা কাঁপা হাতের লেখা দেখে। মাসুদ রানার তো এমন হওয়ার কথা নয়। কেন সে আজ এ অবস্থায়। এর জন্য কি আমরা দ্বায়ী নই। এই ছেলেটার রোল নং ছিল ০৪০৫০৩৮। ১২০ জন শিক্ষার্থীর ভেতর যে কিনা ৮২ জনের আগে।
মাসুদরানা ছোট বেলা থেকেই অস্বাভাবিক ধরনের ইপিলেপসি বা মৃগী রোগে আক্রান্ত যার কারনে মাঝে মাঝেই ব্রেইন ডিসঅর্ডার দেখা দিলেই পুরো শরীর খিঁচুনি দিয়ে ওঠে। জন্মের পরপরই মাসুদ রানা তার বাবাকে হারায়, সে বাবার কোন স্মৃতি স্বরন করতে পারে না। তার উপর গত ২০০৯ ইং সালের শেষ দিকে তার একমাত্র বোনকে (এইস. এস. সি. পড়া অবস্থায়) জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে দেখেছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের বন্ধুটি মানসিক, শারিরীক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পুরোপুরি অসহায়।
খুলনার বন্ধু রিয়াজ ইতিমধ্যে আমাদের যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রধান ও প্রশাসনের সকল ব্যপারে অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করছে। আমরা ইতিমধ্যে মাসুদ রানার চিকিৎসার জন্য আমাদের বন্ধুবর স্বল্প কিছু ফান্ড যোগাড় করতে পেরেছে। আগামী দুই সপ্তাহের ভেতর মাসুদ রানা কে ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসা করানোর কথা। আসুন আমার প্রিয় বন্ধুরা আমাদের বন্ধুটির দিকে একবার ফিরে তাকাই। তাকে অর্ধমৃত অবস্থা থেকে সুন্দর একটি জীবন উপহার দেয়ার সামান্য উপলক্ষ্য হিসেবে কাজ করি। মাসুদ রানা তুমি আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসো। এটাই আমাদের কামনা।
আসুন সবাই মিলে আমাদের এই মৃত বন্ধুটিকে জীবিত করে তুলি।
যোগাযোগ করুন:
সরাসরি যোগাযোগ যদি কেউ মাসুদ রানার ব্যপারে সহযোগিতার হাত বাড়ান।
১। রিজুন নুর রিয়াজ (মোবাইল নম্বর: ০১৭২৩৮৩২৬০৭)
[email protected]
২। মো: জুলকার নাঈন ([email protected])
৩। আব্দুল্লাহ আল-মামুন ([email protected])
নিম্নক্ত ব্যাংক একাউন্ট নম্বর এ টাকা পাঠানোর জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে।
Dutch Bangla Bank Ltd.
Account Name: Md. Muzammel Hossain
A/C: 169. 101. 61333
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯
মোঃ জুলকার নাঈন বলেছেন: হ্যাঁ মামুন.........আমাদের কিছু একটা করতেই হবে।
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০১
পিচ্চি হুজুর বলেছেন: মাসুদ এর চিকিৎসা কবে থেকে শুরু হবে। আর মামুন তোরে ফেইসবুকে একটা ম্যাসেজ পাঠাইছি চেক করিস।
৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
মেকানিক ফিরোজ বলেছেন: ভাই আপডেট জানিও। চেষ্টা করছি সাধ্যমতো করার।
৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০০
দ্যা বেদুইন বলেছেন: হুম। আমরা কিছু করতে পারবো অবশ্যই। মাসুদ ভাই ফিরে আসুক স্ব-মহিমায়।
৫| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৭
অদ্ভূত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বলেছেন: একটি স্বপ্নের এভাবে মৃত্যু ঘটতে দেখাটাও অন্যায়। যেখানে উনার দেখার কথা ছিল আলো , সেখানে দেখেন শুধুই আঁধার! উনাকে আলো দেখাতেই হবে।
৬| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৬
দুরন্ত রিফাত বলেছেন: কুয়েটে পড়া শেষ করে আসলাম অথচ জানলামই না কিছুই।আসুন আমরা সবাই এগিয়ে আসি।পোস্টটা স্টিকি করা হোক।
৭| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২
দুরন্ত রিফাত বলেছেন: ভাই রিকি আপনি তো মাসুদ ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন ভার্সিটিতে পড়ার সময় কেন ব্যাপারটা জানলেন না সবাইকে...
৮| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১১
সুবিদ্ বলেছেন: মাসুদ রানা, আমরা আছি তোমার সাথে...
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৩
চাঁদোয়া বলেছেন: আমরা আশা ছাড়িনি............