নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কদিন আগে আমাদের গ্রামে একটা ছেলের করোনা ধরা পড়েছে । তার বয়স ১০/১২ বছর হবে !
ছেলেটার বাবার পায়ে সমস্যা হওয়ার কারনে তিনি ততটা উপার্জন করতে পারেন না, পরিবারের চাহিদা মেটাতে ছেলেটা একটা দোকানে কর্মচারীর কাজ করে । পরে তার পরিবারের সবার স্যম্পল পরীক্ষা করে তার মায়েরও করোনা শনাক্ত হলো । এখন মা-ছেলে দুজনেই করোনা আক্রান্ত।
প্রশাসন বাসাটা লকডাউন করে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়ে গেছে । পরিবারের কেউই বাড়ির বাইরে যেতে পারে না ।
গ্রামের একটা বাড়িতে তো আর সবসময় ১৫/২০ দিনের খাবার মজুদ থাকে না, তারউপর দিনমজুর হলে তো সমস্যাটা আরেকটু বেশী । এখন তার বাড়ির সবাই যেহেতু আবদ্ধ সেহেতু তাদেরকে বাইরের মানুষের উপরেই ভরসা করতে হয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মেটানোর জন্য এবং সেটাই স্বাভাবিক ।
আম্মু, স্বাস্থ্য সহকারী হওয়ায় আম্মুকে মাঝে মাঝে এসব রোগীদের বাড়ি ভিজিট করতে যেতে হয় । লকডাউন মানছে কি না, বাসা থেকে বের হয় কি না বা অন্য কোনো সমস্যা হয় কি না সেসবের খোজখবরের জন্য ।
সেদিন এই পরিবারটা বললো, লকডাউন করার পর থেকেই তাদের বাড়ির আশেপাশেও কেও আসে না, ঘরে তো সবসময় সব খাবার থাকে না, পিয়াজ/মরিচটা অন্তত দরকার হয়, খাদ্যসহায়তা তো দূরের কথা, মানুষকে টাকা পয়সা দিয়েও বাজারটা করে আনানো যায় না, আর আমরা তো বের হতেই পারি না....!
এই হলো ৯৭ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটা গ্রামের ছোট্ট একটা পরিবারের অবস্থা ।
এই যদি হয় কোনো করোনা আক্রান্ত পরিবারের অবস্থা তাহলে মানুষজন কেনো করোনা পরীক্ষা করাতে চাইবে ? যদি আক্রান্ত হয়েও যায়, তবে মানুষ কেনো পালিয়ে বেড়াবে না ? রাজাবাজারের মতোন ১৫০ ভলান্টিয়ার নিয়োগ করে তো আর লকডাউন সব জায়গায় কার্যকর করা হচ্ছে না, তাহলে পরিবারের দায়িত্ব না নিয়ে 'বাসা লকডাউন' কার্যকর করাটা একটা 'নির্যাতন'ই বলা যায় ।
আবার বাসা লকডাউন না করলেও তো তাদের বাসার সদস্যদের দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হবে, তাহলে এর সমাধান কি, কি করা যেতো ?
*আমরা তো মুসলিম(উত্তরাধিকারসূত্রে অবশ্য), আমাদের কি উচিত ছিল না, প্রতিবেশী হিসেবে নিজ দায়িত্ব নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে/সাবধানে থেকে সেই বাড়ির দেখভাল করা । হয়তো সমাজের সবার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না কিন্তু সেই পরিবারের উপার্জনটা তো এখন একদমই স্তিমিত তাহলে এলাকাবাসী অন্তত চাঁদা তুলে হলেও তাদের খাদ্যের ব্যাবস্থা করা উচিত ছিল, উচিত ছিল ঠিক না, আসলে এটাই হওয়া দরকার ছিল । মুসলিম হিসেবে না হোক অন্তত মানবিকতা দেখিয়ে হলেও তাদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য আশেপাশের মানুষেদের ।
*ধরে নিলাম, গ্রামের মানুষ অসচেতন, তারা হয়তো আতঙ্কিত হয়ে পরিবারটির পাশে যাচ্ছে না তাহলে প্রশাসনের উচিত ছিলো সেই পরিবারের আগামী ১৫/২০ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া ! সেই সাথে পাড়ার কিছু সচেতন ভলান্টিয়ারের ব্যবস্থা করা যারা অন্তত তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর ব্যবস্থা করবে ।
*গ্রামের অসচেতন মানুষ এমনিতেই আতঙ্কগ্রস্থ থাকে সবসময় ! সুতরাং শিক্ষিত/গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে আক্রান্ত বাড়িটিতে বলা দরকার ছিল, 'আর এটা আহামরি কিছু না তবে সংক্রামক, সাবধানে বাড়ির ভিতরেই থাকো, ঔষধপত্র খাও, আর কিছু লাগলে জানায়ো...'
খুব বেশী চাওয়া ছিল এগুলা ? গ্রামের একটা পরিবার বিপদে পড়লে তার পড়শীদেরই তো উচিত, এগিয়ে এসে বিপদে সাহায্য করা, নইলে 'মানুষ সামাজিক জীব' কথাটারই অবমাননা হয় ।
করোনা আক্রান্ত পরিবারকে যদি এমনভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয় তাহলে মানুষ কেনোইবা পালিয়ে বেড়াতে চাইবে না ? আমরা তো কেউই ঘরবন্দি থাকতে পছন্দ করি না, তারউপর যদি সামাজিকভাবেও কোনঠাসা করা হয় তাহলে পালিয়ে না বেড়িয়ে উপায় কি ?
এই বিপদ-আপদের দিনে আমরাই যদি কারো পাশে না দাঁড়াই, তাহলে সরকারের কি এমন ঠ্যাকা পড়ছে আপনার পাশে দাঁড়ানোর । আগে নিজেকে জিগ্যেস করে দেখা উচিত, আমার মানবতা আছে কি না, তারপর আরেকজনের দিকে আঙ্গুল উঠানো উচিত !
করোনার পরিস্থিতি বাংলাদেশে ভয়াবহ আকার ধারনা করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নাই, যে কোনো সময় আমরা যে কেউই আক্রান্ত হতে পারি, সুতরাং নিজেকে আক্রান্তের জায়গায় বসিয়ে ভাবা উচিত, এরকম ঘটনা আমার পরিবারের সাথে ঘটলে আমার কি অবস্থা হতো ! অন্তত সেই বিচার/বিবেচনা বোধটুকু মাথায় এনে হলেও আমাদের উচিত মানুষের পাশে দাড়ানো।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং উত্তম বুঝ দান করুন !
জাজাকাল্লাহ খাইরান !
২| ০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: এলাকাবাসী সেই পরিবারটীকে খাবার দিচ্ছে না কেন? একেক দিন একেক বাসা থেকে দিলেই তো হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি যা আপনার পোষ্টে লিখেছেন, সেটা ঐ পরিবারের জন্য আপনি কি করেছেন? আপনার আম্মা করেছেন?