নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাস থেকে নেমেই দেখি সামনে কয়েকটা বিশাল তিমি মাছের প্রতিকৃতি ! পাশে বাস কাউন্টারের সাইনবোর্ডের নিচে এই জায়গার নাম লেখা ডলফিন মোড়, কক্সবাজার ! ডান দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে হোটেল “ওশান প্যারাডাইস” ! এটাই আমাদের আগামী কয়েকদিনের আবাসস্থল !
এই ট্যুরের সদস্য তিনজন ! আমি, ওয়াহিদ আর প্রান্ত ! তিনজনই স্কুল ফ্রেন্ড ! দুই দিনের প্রস্তুতিতেই কক্সবাজার ঘুরতে চলে এসেছি ! হোটেলে পৌঁছেই বুঝলাম, সারারাত জার্নি করে সবাই বেশ ক্লান্ত ! নিজেদের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম ! উঠলাম দুপুর দেড়টায় ! রুটিন অনুযায়ী আমাদের এখনই বের হতে হবে ! হোটেল থেকে বেরিয়ে আবার আসলাম সেই ডলফিন মোড়ে ! একটা সিএনজি ভাড়া করে হিমছড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম !
সিএনজি চলছে মেরিন ড্রাইভের উপর দিয়ে ! বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি দেশের অন্যতম আশ্চর্যের নমুনা এই মেরিন ড্রাইভ ! এক পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড় আর আরেক পাশে সমুদ্রের ঢেউ তীব্র গর্জন করতে করতে তীরে আছড়ে পড়ছে ! মাঝখান দিয়ে আমাদের সিএনজি ছুটে চলেছে হিমছড়ির উদ্দেশ্যে ! চোখ ধাঁধানো এই অপরুপ ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রকৃতি সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে বাংলাদেশকে দিয়েছেন !
চোখ-মুখ থেকে বিস্ময় না কাটতেই চালক জানালেন আমরা হিমছড়ি চলে এসেছি ! সিএনজি থেকে নামতে না নামতেই কয়েকজন ছেলে গলায় ডিএসএলআর ঝুলিয়ে আমাদের পাশ ঘেঁষে বারবার করে ছবি তোলার আবেদন করতে থাকলো ! দামদর করে একজনকে ঠিক করলাম যিনি আমাদের এই স্মরণীয় মুহূর্তগুলো চিত্রবন্দী করবেন ! তিনটা টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকলাম !
গেট থেকে ডান দিকে সামান্য হেঁটে পৌঁছলাম হিমছড়ি ঝর্নার কাছে ! হিমছড়ি আসার পথেও বেশ কয়েকটা ঝর্না চোখে পড়েছে ! তবে এই ঝর্নাটাকে একটু বিশেষ কায়দায় বেশ সমীহ করে রাখা হয়েছে !উপর থেকে পানি এসে নিচে পাথরের উপর পড়ছে ! মনে হচ্ছে, এক সুন্দরী ললনা কলসি উচু করে পানি ঢালছে আর নিচে দাঁড়িয়ে কেউ সেই পানি দুহাত পেতে পান করছে ! সেখানে দাঁড়িয়ে পর্যটকেরা বিভিন্ন পজে ছবি তুলছে ! তবে ছবি তোলার চাইতে এই সৌন্দর্যটাকে উপভোগ করতেই কেনো জানি বেশ ভালো লাগছিল ! অনিক আর প্রান্ত তো ছবি তুলে শেষই করতে পারে না ! অনেক পরে অনেক সৌন্দর্য একসাথে পেলে যা হয় আর কি ! অনিকের অনুরোধে স্থিরচিত্র পোজ দিতেই হলো ! ছবিটা তুলে ডিসপ্লের সামনে ধরে ফটোগ্রাফারের অনুরোধ, ‘’ভাই, আপনার হাসিটা জোশ ! এভাবে হাসি দিয়ে ঝর্নার পাশটায় একটু দাঁড়ান আপনার কয়েকটা ছবি নিই...” !
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা অভ্যাস না থাকলেও মাঝে মাঝে ঢেকি গিলতেই হয় কিন্তু পয়সা তো পেইড করতে হবে ছবির সংখ্যা অনুযায়ী ! সুতরাং যেখানে সেখানে যত্রতত্র ছবি তুলে আমাদের পোষাবে না !
ঝর্নার কাছে ফটো তোলা শেষ করে এবার শুরু করলাম সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠা ! উপরে উঠলেই নাকি পাহাড় দেখা যাবে ! এক এক করে একে বেকে ১৫৮টা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম ! অনিকের পাহাড় খুব পছন্দ ! চোখ থেকে তার বিস্ময় সরতেই চায় না ! ডানপাশে বিশাল বিশাল পাহাড় মাথা উচু করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে যুগযুগ ধরে ! কতো গাছ-গাছালি কতো প্রাণীকে এই পাহাড় নিজের বুকে ধারন করে রেখেছে ভাবতেই নিজেকে কতো ক্ষুদ্র মনে হয় ! গুস্তাভ ফ্লুবেয়ার এর কথাটা মনে পড়লো
“ভ্রমণ মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। সে জানতে পারে দুনিয়ার তুলনায় সে কত ক্ষুদ্র”
আরেক পাশে তাকালে দেখি সেই মেরিন ড্রাইভের পাশে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের ঢেউ ! ডান পাশের পাহাড়টা আমার বুক সমান উচু, আর সমুদ্রকে মনে হচ্ছে আমার দিকে জেনো ছুটে আসতে চাইছে !এই সৌন্দর্য প্রকৃতি লালন করছে সেই বহু বহু আগ থেকেই ! দু-চোখ দিয়ে দেখে কি আর তার সৌন্দর্য কমানো যায় !
“এই ম্যানেজার, ছবিওয়ালাকে টাকা দিতে হবে, এদিকে আয়...” সৌন্দর্যের ঘোর কাটলো অনিকের ডাকে ! কেবল দিয়ে ছবি নিতে গিয়ে দেখি ১৭৮ টা ছবি ওঠানো হয়েছে ! ফটোগ্রাফারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বুঝলাম, বাসা থেকে DSLR টা না নিয়ে যাওয়া মহাভুলের সামিল ! এই ভুলের মাশুল দিতে হবে আরো কয়েকটা দিন !
এবার নামার পালা ! অনিককে বললাম, দোস্ত, এখানে একটা ঘর করে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় না ? সে বলে, আমাকে একটা ঘর ভাড়া দিস তাহলে ! প্রান্ত বলে উঠলো, ক্ষুধা লাগসে রে, নিচে চল... !
নিচে চলে আসার সময় বারবার একটা বাক্যই মনে হচ্ছিলো,
“পিছুটান না থাকলে হয়তো সারাজীবন পাহাড়েই থেকে জেতাম”
পর্বভিত্তিক ৭ দিন ৮ রাতের ট্যুর লিখবো ইন শা আল্লাহ !
২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:১৫
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বিশেষ শুভচ্ছো থাকল
৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।
ছবি আরও বেশি দিলে খূশি হতাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর