নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইউটিউবে আবু হেনা রনির পারফর্মেন্সগুলা দেখছিলাম ! প্রায় ৫০টির কাছাকাছি প্রোগ্রাম সে মিরাক্কেলের সেটে দাঁড়িয়ে করেছে ! বিচারক আছেন ওপার বাংলার বাঘা বাঘা তিনজন অভিনেতা-অভিনেত্রী । আর উপস্থাপনায়! তিনি কালাকার পুরস্কার জয়ী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, রেডিও উপস্থাপক, পুরো ভারতবর্ষের মধ্যে বাংলা ভাষায় উপস্থাপনা করা যে কয়েকজন উপস্থাপক রয়েছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া মানুষটা । তিনি মীর আফসার আলী !
প্রত্যেকটা প্রোগ্রাম শেষে আমাদের রনি সেই বিচারক, মীরদা, অতিথিদের কাছ থেকে এতো এতো সুন্দর কথা শুনেছে, আমরাও সেসব শুনেছি, যা তার প্রাপ্য ! এসব মানুষগুলো এমনি এমনি তাকে খ্যাতির শীর্ষে চড়ায় নি ! কথাগুলো তার প্রাপ্য, সেগুলো শোনার অধিকার সে রাখে !! একটা মানুষকে আপনি খুব সহজেই কাঁদাতে পারেন, কিন্তু মন খারাপ করে থাকা মানুষটার মুখে হাসি ফোটাতে কয়জন পারে ? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় স্নাতকোত্তর শেষ করে, রনি কিন্তু খুব যোগ্যতার সাথেই সেই কাজটা করেছে ! কাজের স্বীকৃতি তো বটেই সেই সাথে তার নিজ যোগ্যতায় সে ২০১১ সালে হয়েছে, মিরাক্কেল ৬ এর চ্যাম্পিয়ন !
একটা গল্প শোনাই আপনাদের, কোন এক এপিসোডে রনি বাঁশী নিয়ে পারফর্ম করবে, কিন্তু কেও একটা বাঁশী জোগাড় করতে পারলো না, অথচ আর কিছুক্ষন পর শো শুরু হবে ! একজন বাঁশী জোগাড় করতে গিয়ে নিয়ে এলেন একটা বাঁশ ! রনি, সাথে সাথে বাঁশকে নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করে তখনই প্রোগ্রাম করলেন ! তালি তো বটেই, বিচারকদের বাহবা পেয়ে তিনি সন্তুষ্ট করলেন এপার বাংলার মানুষকে ! আজ যদি আমাদের দেশের ভালো ভালো অভিনেতারা তাদের শতভাগ জিনিস পাশে না পান তো, তিনি শুটিং এ যান না !!!
রনিও পারতো সেদিন বাঁশিটার অজুহাত দিয়ে সেদিনের শো টা বাদ দিতে পারতেন, এরকম নিয়মও মিরাক্কেলে আছে, কিন্তু তা তিনি করেন নি । একজন জাত শিল্পির এটাই বড় গুন, হাতের কাছে সে যাই পাবে, তাই দিয়েই সে তার খেলা দেখাবে, অজুহাত তার বাধা হয়ে দাঁড়াবে না ! রনি সেখানে শতভাগ সফল !
একবার কল্পনা করুন, সারা বিশ্বে যতগুলি কমার্শিয়াল কমেডি শো হয়, তার মধ্যে মিরাক্কেল অন্যতম ! সেখানে নিশ্চয় যেমন তেমন জোকস সিলেক্ট হয় না ! সেখানে প্রস্তুতি ছাড়া শুধু বাঁশকে নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করে, সেটাতে রস ঢেলে দর্শকের হাসির খোরাক জোগানো চাট্টেখানে কথা নয় !
একবার রাজশাহীতে তার একটা ইন্টারভিউ নিতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাই, মিরাক্কেলের মতো একটা শো তে আপনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, তো এখন আপনার অনুভূতি কি ?
তিনি বলেছিলেন, সব লোক এই একটা কথায় জিজ্ঞেস করলো যে, আমার অনুভূতি কি ! এই অনুভুতির কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত !
কারণটা কি জানেন, তার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, তাকে আমরা কাজের সুযোগ করে দিতে পারি নি ! কয়েকটা টিভিসি, ২/৩টা মুভিতে ছোট্ট কয়েকটা চরিত্র, আর কয়েকটা অন্যান্য প্রোগ্রাম ছাড়া বলতে পারেন, আজকে সেই রনি কোথায় আছে, কি তার অবস্থা, সে কতটুকু কাজের সুযোগ পাচ্ছে ? অথচ সে নিজে উদ্যোগী হয়ে দেশের সাত বিভাগে সাতটি কমেডি ক্লাব তৈরি করেছে ।
আমরা এমন একজন শিল্পিকে যথাযথ সম্মান দিয়ে তার প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে পারি নি ! এই ব্যার্থতার দায়ভার কার ?
শুধু রনিই না, আমাদের দেশে এরকম হাজারো রনি বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে, তাদেরকে আমরা সঠিক প্লাটফর্ম তৈরি করে দিতে পেরেছি কি ? পারি নি !!! শুধুমাত্র যোগ্যতার মাপকাঠি অনুযায়ী তার কাজ না দিতে পারার কারনে, তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগের ব্যাবস্থা করতে না পারার কারনে, আমরা তাদের হারাচ্ছি !!!!
ইবনে বতুতা ঠিকই বলেছিলেন, বাংলাদেশ আসলেই একটা তলাবিহীন ঝুড়ি ।
যে দেশে জ্ঞানীর গুনের কদর হয় না, সে দেশে জ্ঞানী জন্মায় ঠিকই কিন্তু তা আতুরঘরেই শেষ হয়ে যায় !!!
ছবি : আবু হেনা রনির ফেসবুক ওয়াল থেকে
©somewhere in net ltd.