নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় ।

মাহমুদ পিয়াস

মানুষ হবার চেষ্টা করছি ! পারছি কই !

মাহমুদ পিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

**নারীবাদী ও ধর্মভীতি **

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

আজ রাতে হোটেলে খেতে গেছিলাম । গিয়ে দেখি সামনের ছিটে এক হুজুর আংকেল বসে খাচ্ছেন । পাশের অন্য ছিটগুলো খেলোয়াড় মেয়েদের দখলে । যারা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল প্রতিযোগীতায় বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে এসেছে । তো একপর্যায়ে হুজুর আংকেল বলে উঠলেন এই সরকার কি সব শুরু করছে দেখছেন । মেয়েদের দিয়ে ফুটবল খেলাচ্ছে । যেখানে মেয়েরা বাড়িতে বসে পর্দার মধ্যে থাকার কথা সেখানে তারা বেহায়ার মতো ছোটগেঞ্জি পরে ফুটবল খেলছে । ছি: ছি: এদের কি লজ্জাশরম নেই । আর এদের বাবামায়েরাই বা কেমন যে, এদেরকে ফুটবল খেলতে পাঠিয়েছে । দেখে তো মনে হয়না এরা কোনো ভদ্র পরিবারের সন্তান । ছি: ।
উনার কথায় অবশ্য বেশ কয়েকজন সায় দিলো । পাশের ছিটের লোকটি বোধহয় একটু শিক্ষিত । তিনি বললেন আরে এদের কি দোষ । সেই বেগম রোকেয়া নামের এক বিধর্মী মেয়ের জন্যই আজ সমাজে এই অবস্থা । যার কারণেই আমাদের মেয়েরা বাইরে বের হয়ে বেপর্দার সাথে চলাফেরা করছে ।
কিছুক্ষণ পর পাশের লোকটিকে জিঙ্গেস করলাম,
>>আংকেল আপনি কি করেন?
>শিক্ষকতা করি ।
>> আপনার বাসা কোথায় ?
>বাগমারা (রাজশাহী) ।
>>আপনার স্কুলে মেয়েরা পড়তে আসে ?
>হু আসে, কেনো?।
>>না এমনিতেই।
>>আপনার কয় ছেলেমেয়ে
>এক ছেলে দুই মেয়ে । বড় মেয়ে এবার দাখিল পাশ করলো । তুমি এসব জিঙ্গেস করছো কেনো ? >>কারণ তো আছেই । ধরেন আপনার মেয়ের শারীরীক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলো ।ডাক্তার বললো
আপনার মেয়েকে পাইলস এর অপারেশন করাতে হবে । তখন যদি কোন পুরুষ ডাক্তার এই কাজটি করে তাহলে সেটি আপনি মেনে নিবেন ?
>তুমি কি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো?
>>মোটেই না । আমি আপনার কথাগুলো ধরে দিচ্ছি ।
এখানে আপনি যে মন্তব্য টি করলেন যে, বেগম রোকেয়াই মেয়েদের ঘরের বাইরে বের করে আনার জন্য দায়ী । আবার আপনি নিজেই মহিলা ডাক্তার দিয়ে আপনার মেয়ের অপারেশন করাবেন । ব্যাপার টা কেমন গুলিয়ে গেলো না ? সেই কাজটি যদি কোন পুরুষ করত তাহলে কি পর্দা রক্ষা হতো ? রোকেয়া ছিল বলেই তো, আপনার মেয়েকে আজ দাখিল পাশ করাতে পেরেছেন , আজ মহিলা ডাক্তার দিয়ে মেয়েদের চিকিৎসা করাতে পারছেন । তাহলে মেয়েরা ফুটবল খেললে সমস্যা কোথায় ? আপনি আপনার মেয়েকে দাখিল পড়াবেন, আপনি দুনিয়াটাকে আপনার বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখবেন ভালো কথা তার মানে এই না যে আপনি অন্যদের কেও নিরুৎসাহিত করবেন । যুগ পরিবর্তন হয়েছে । আপনার মতো করে সবাই ভাবলে আজ আমাদের দেশ কোথায় থাকতো জানেন ?...............
ভালো করে বোঝানোর পর ভদ্র লোকটি সহ হুজুরকে একহাত নিলাম, অবশ্য ভদ্র ভাষায় । বেঁচে থাকতে উনি আর কখনো হয়তো এই কথাগুলো মুখে আনবেন না । আর ভুলে এসে গেলেও আমার মুখটি তার সামনে ভেসে উঠবে, যদি উনার শ্রোতাদের মধ্যে আরেকটা আমি থাকি!!!!!
....
উনি হুজুর, এইটা কোন সমস্যা না, উনি উনার মেয়েকে দাখিল পড়াচ্ছেন, এইটা আমার কাছে কোন সমস্যা না । আমার কাছে সমস্যা, উনার কথাগুলো । উনাদের কথাগুলো আমার ভালো লাগে নি । যদি তারা অশিক্ষিত হতেন, তবে আমি হয়তো প্রতিবাদ করতাম না, কেননা ওই কথাগুলো উনার জেনারেশন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতো । কিন্তু উনি শিক্ষিত, একজন স্কুল শিক্ষক । এইটা আমার সমস্যা, উনার মুখে এই কথাগুলো মোটেই মানায় না । বলতে পারেন, “আমি বেয়াদব” ।
‘হ্যাঁ, তাই । এই লোকটি যদি আমার বাবাও হতো, তবুও আমি এইভাবেই কথাগুলো বলতাম । কেননা শুধুমাত্র ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে আমরা এতটা পিছিয়ে আছি । ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান অল্প । এ নিয়ে বাড়াবাড়ি আমি কখনোই করতে চাই না, করার সাহসটাও দেখাতে চাই না । ধর্মকে অবশ্যই অবশ্যই মেনে চলতে হবে । তবে গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় দেওয়াটা আমাদের নিজেদের জন্যই খুব একটা খুশির খবর হবে না । আমিও চাই, আমাদের দেশের মেয়েরা তাদের নিজ নিজ ধর্ম মেনে চলুক । তার মানে এই না যে, তাকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখতে হবে, তাকে ফুটবল খেলতে দেওয়া যাবে না ।
“আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক । জয় হোক আমাদের দেশের মেয়েদের, জয় হোক মানবতার”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.