নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিপদজনক ব্লগ

কৌশিক

নিদারুণ প্রহসনের দিনগুলি

কৌশিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সু-পালিশ করতে করতে দেখতে থাকি কন্যার ছোট জুতা বড় হয়ে যায় দিনেদিন

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০২

সকাল বেলা মেয়ের সু পালিস করা আমার অন্যতম একটা প্রিয় কাজ। পালিশ করার আগে ছোট্ট দুটি কালো জুতো দেখে আমি বুঝতে পারি মেয়েটা আগের দিন স্কুলে কতটুকু খেলেছে। স্কুল গ্রাউন্ডের কোন অংশে গিয়েছে - কোন রাইডে চড়েছে, ইত্যাদি। জুতায় লেগে থাকা ময়লা অথবা কাদার পরিমাণ বলে দেয় তার স্কুল টাইম কতটুকু আনন্দে কেটেছে।

জুতা হাতে নিয়ে একটা তোয়ালা দিয়ে প্রথমে পরিস্কার করি। তারপরে টিউব-কালি দিয়ে জুতাটার চারপাশে সময় নিয়ে বেশ যত্ন করে কালি লাগাতে থাকি। শক্ত কালি লাগিয়ে ব্রাশ করার চেয়ে টিউব দিয়ে কালি লাগানো অনেক সহজ, ব্রাশ করতে হয় না। কিন্তু আমি ব্রাশিং-এও পটু ছিলাম। এখন কালো পলিশড সু পরি না বলে সু পলিশ করার আনন্দটা মিস করি।

আমার স্কুল বেলায় সুপলিশ করতে হতো নিজের জুতার এবং বাবার জুতারও। প্রথম অবশ্য বাবার জুতাই পলিশ করতে শুরু করেছিলাম নিজে পলিশড ব্লাক সু পরা শুরু করার আগে। কেউ সু পলিশ করতে বলে নি, কিন্তু বাবাকে পলিশ করতে দেখে আমার অদ্ভুত লাগতো। কাজটা মজার মনে হতো। বারান্দায় মড়ায় বসে তিনি অনেক সময় নিয়ে জুতা ব্রাশ করে চকচকে করে ফেলতেন। তার জুতা পলিশ করার অনেক বস্তু-সামগ্রীও ছিলো। একটা খুবই পরিচিত ব্রান্ডের চ্যাপ্টা কালির কৌটা দেখতাম যার ভেতরে শক্ত কালি থাকতো। ব্রাশের তুলির সামনের কোনা সেই কালির উপরে ঘসে নিয়ে জুতায় মাখতে হতো। তারপর ব্রাশ দিয়ে ব্রাশিং। বিভিন্ন স্টাইলে। প্রতিটা ডিটেইল আমার মনে আছে। সেসময় এটাকে দারুণ একটা ভিন্ন কাজ মনে হতো। বাবা জুতা পলিশ করছে আর আমি তার সামনে ফ্লোরে বসে সেই জুতা পলিশ করা দেখছি চোখে রাজ্যের বিষ্ময় নিয়ে। মনে মনে চাইতাম করতে। বাবাকে বলতাম। আমাকে করতে দাও, আমিও করতে পারবো এমন আবদার করে তার কান ঝালাপালা করে দিতাম। তারপর একদিন সুযোগ হলো। বাবা শেখালেন হাতেকলমে হাউ টু সু-পালিশ করা। অবশ্য সেদিন মা কিন্তু বাবাকে বিশাল এক ঝাড়ি দিয়েছিলেন। তোমার এত সাহস...আমার একমাত্র ছেলেকে তুমি জুতা পালিশার বানাচ্ছো!

আমি অবশ্য শেষে জুতা পালিশারই হলাম। এবং বিখ্যাত। বাবার জুতা পালিশ করতে করতে এতই দক্ষতা বাড়লো যে নিজের ও বোনের জুতা পলিশ করার সময় যখন হলো তখন চাকুরীটা আমার পার্মানেন্ট হয়ে গেলো। এমনকি তখন ভাবতাম প্রফেশনালি মুচির কাজ শুরু করবো। বাজারে একটা দোকান দিয়ে বসবো। পড়াশুনা আর করতে হবে না - পড়াশুনার মত জঘন্য কাজ যদি কেরিয়ারের জন্য হয়, তবে সে কেরিয়ার তো আমার এখনই জুতা পালিশ করে জুটিয়ে নেয়া যায়!

আমার মেয়ের জুতা পালিশ করতে করতে জুতার গায়ে লেগে থাকা ময়লা সরিয়ে আমি চকচকে করে তুলি। খুব বেশীদিন এই সুযোগ পাওয়া যাবে না। এই জুতাটা ছোট হয়ে যাচ্ছে, নতুন জুতা কিনে দিতে হবে। এরপরেরটাও বাটার কালো পলিশড সু-ই কিনতে বলেছে মেয়ে, তবে অন্য ডিজাইনের। সে জুতাটা একটু বড় হবে আর আমিও সেটা পলিশ করবো। তারপরে সেটাও পুরান হবে, ছোট হবে। তার আগ পর্যন্ত দক্ষ সু-পলিশারের মত জুতাটা সাইনিং করতে থাকবো স্কুলের সকালে। প্রত্যেকদিনের ময়লা জুতার গা থেকে সরাবো এবং সে সময়ে মেয়ের প্রতিদিনের খেলাধুলা, দৌড়ঝাপ, হাটাচলার চিত্র কল্পনা করার চেষ্টা করবো। এমন করে সে একদিন পলিশড কালো জুতো পরার সময় পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে। তার আগে বর্তমানের প্রতিটা মুহূর্ত - আমার ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময় - অপচয় করতে চাই না।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +১৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব টাচি একটা লেখা!!! আপনি ব্লগে নিয়মিত হচ্ছেন দেখে আনন্দিত!!

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এভাবেই সময় বয়ে যায়!!!

দেখার চোখ থাকলেই বোঝা যায়! আর ছেলে বা মেয়েটা যখন বাবার মাথা ছাড়িয়ে যায়- ওর বড় হবার আনন্দের পাশে পাশি নিজের বুড়ো হয়ে যাওয়াটাও যেন আঙুল দিয়ে দেখীয়ে দেয়!

চিরতরুন মন তখন কেমন কেমন করে ওঠে ;)

++++

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬

হাসান রাজু বলেছেন: বাবা নাস্তার টেবিলে যখন, ছোট বোনটিকে দেখতাম বাবার জুতো হাতে । সে জুতো হাতে ছুটোছুটি করবে এটায় তার আনন্দ, ঠিক এটা বাবার ও আনন্দ। আহা ! সেই দিন কোথায় চলে গেছে !
আমার মেয়ে বড় হচ্ছে সেই দিন গুলো হয়তো ফেরত আসবে ।

৪| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: পড়ে খুব ভালোলাগলো। মমতা নিয়ে লেখা। জুতার কালি করার কথা তো উছিলা মাত্র, মেয়েকে যে কতটা ভালোবাসেন এইটার কোথাও না কোথাও কাউকে না কাউকে বলে যাইতে চাইছেন বলে মনে হইলো।

আপনার আর আপনার মেয়ের প্রতি শুভকামনা রইলো :)

৫| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১১

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: খুব ভাল একটা লেখা দিয়েছেন । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।

৬| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: আবেগটাকে চমৎকার করে এঁকেছেন! অনেক শুভকামনা রইলো!!

৭| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল লেখা ।

৮| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

বোকামানুষ বলেছেন: মনিরা সুলতানা বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল লেখা ।

অল্পতেই দারুন একটা লেখা

৯| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১০

রিকি বলেছেন: লেখাটা পড়তে পড়তে আমার বাবার কথা মনে পড়ল। ভালো লাগা অনেক অনেক। বাবারা খুব খুব অদ্ভুত প্রকৃতির হয়। :) :) :)

১০| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২২

আহমেদ জী এস বলেছেন: কৌশিক ,



এর-ই নাম "জীবন" ।
ছোট চারাগাছটি লকলক করে বড় হয়ে না ওঠা অবধি কী সুতীব্র প্রতীক্ষা মানুষের ।

একজন বাবা-মা'য়ের এই আকুতি কি আজকালকার ছেলেমেয়েরা বুঝে উঠতে পারে ? কে জানে ! সংশয় যে কাটেনা কিছুতেই ...

১১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২৯

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: খুব মমতা নিয়ে লেখা, মন ছুঁয়ে গেলো। সু পলিশ করার কথায় নস্টালজিক হয়ে গেলাম। চেরী ব্লসম সু পলিশ নিয়ে ব্রাশের তেলেসমাতি। আহ কি দিন ছিল!!


ভালো থাকুক কন্যা। বেড়ে উঠুক সুন্দর সমাজে। অটুট থাকুক বন্ধন।

শুভেচ্ছা রইল :)

১২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮

সুফিয়া বলেছেন: এমন করে সে একদিন পলিশড কালো জুতো পরার সময় পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে। তার আগে বর্তমানের প্রতিটা মুহূর্ত - আমার ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়।

খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

১৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭

হামিদ আহসান বলেছেন: ছুঁয়ে গেল .........

১৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২২

মহান অতন্দ্র বলেছেন: ভাল থাকুন আপনারা বাবা-মেয়ে। আপনাদের সম্পর্ক আরও মধুর হোক। শুভ কামনা।

১৫| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮

ভিটামিন সি বলেছেন: ওরে কেউ আমারে মাইরালা.. জুতা পালিশ নিয়ে এতো সুন্দর লেখাও লেখা যায়!!! থাক মারিস না, আমিও আমার মেয়ের জুতা পালিশ কইরা দিমু।

১৬| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২৯

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা। ভালো লাগল।

১৭| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২

আবু শাকিল বলেছেন: গভীর ভাবে লেখা।ভাল লাগা ছুয়ে গেল।

১৮| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
মনছুয়ে গেল।+++

সন্তানরা এভাবেই চোখের সামনে বড় হয়ে যায়।

১৯| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ভুমিহিন জমিদার বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন। বড় কথা হলো ভালবাসার চেইন টা ভাল লেগেছে ।

২০| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

নীলসাধু বলেছেন: চমৎকার!
ভালো লাগলো লেখাটি। ভালো লেগেছে অন্তর্নিহিত আবেগী ভাব।

২১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

শায়মা বলেছেন: আমি অবশ্য শেষে জুতা পালিশারই হলাম। এবং বিখ্যাত। বাবার জুতা পালিশ করতে করতে এতই দক্ষতা বাড়লো যে নিজের ও বোনের জুতা পলিশ করার সময় যখন হলো তখন চাকুরীটা আমার পার্মানেন্ট হয়ে গেলো। এমনকি তখন ভাবতাম প্রফেশনালি মুচির কাজ শুরু করবো। বাজারে একটা দোকান দিয়ে বসবো। পড়াশুনা আর করতে হবে না - পড়াশুনার মত জঘন্য কাজ যদি কেরিয়ারের জন্য হয়, তবে সে কেরিয়ার তো আমার এখনই জুতা পালিশ করে জুটিয়ে নেয়া যায়


হা হা

:P

২২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.