নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিদিন যে পরিমাণ বই, পত্রিকা কাগজে ছাপা হয় বা প্রতিদিন যে পরিমাণ লেখা কাগজের বই/পত্রিকায় ছাপা হয় তার তুলনায় কয়েক লক্ষ গুন বেশী লেখা প্রকাশিত হয় ইন্টারনেটে। সংগতভাবেই ভালো লেখার পরিমাণের দিক থেকে বিচার করলে ইন্টারনেটেই বেশী প্রকাশিত হয়। এর এক লক্ষ ভাগের এক ভাগও হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও কাগজে ছাপা হয়ে প্রকাশিত হবে না। সেটা সম্ভবই না। সে পরিমাণ কাগজ পৃথিবীতে তৈরী হয় নি এখনও, হবেও না। সকল বন উজার হয়ে যাবে।
তদ্রুপ পৃথিবীর ইতিহাসে ছাপার অক্ষরে যত কুৎসিত লেখা/ধর্ম বিদ্বেষমূলক লেখা (যা কারো কারো চোখে মনে হতে পারে অঞ্চল ভেদে, ভাষা ভেদে, দেশ ভেদে) প্রকাশিত হয়েছে তার তুলনায় কয়েক লক্ষ-কোটি গুন ইন্টারনেটে রয়েছে। যা কখনই হয়তো ছাপা হবে না, হওয়া সম্ভব নয়। ইন্ডিয়ার বিভিন্ন ব্লগে বাংলাদেশ সম্বন্ধে যা লেখা হয় তা যদি বাংলাদেশের পত্রিকায় ছাপা হয় ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে বুদ্ধিজীবিদের অভাব হবে না। বাংলাদেশের ইন্টারনেটে ভারতের সম্বন্ধে যা লেখা হয় তাও যদি ইন্ডিয়ার কোনো পত্রিকায় ছাপা হয় – সেখানেও একই চিত্র দেখা যেতে পারে। একই কাহিনী প্যালেস্টাইন-ইসলাইলের স্ব স্ব ইন্টারনেট জগতে। শত্রুভাবাপন্ন দুই দেশের ইন্টারনেটে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেখার অযোগ্য শব্দ/ভাষার ব্যবহার দেখা যায়। রাষ্ট্র দিয়ে বিষয়টা যত সহজে বোঝানো গেলেও, ধর্মের ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন নয়,সেখানে এটা ক্রস-কাটিং ইস্যু। বাংলাদেশের মুসলমানরা বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মকে অবমাননা করে যদি কিছু ইন্টারনেটে লিখে থাকে তবে ভারতের হিন্দিভাষী মানুষ সেই ধর্ম অবমাননা সম্বন্ধে অজ্ঞাতই থেকে যান। যদি না সেটা সেখানের কোনো পত্রিকা আবার ছাপিয়ে দেয়। তেমনি আরব কোনো মুসলমান আরবীতে ইন্টারনেটে খ্রিস্টান ধর্ম সম্বন্ধে অশালিন মন্তব্য করলে জার্মানভাষী কোনো খ্রিস্টান সে অবমাননায় আঘাতগ্রস্থ হবে না। কিন্তু একই ভাষায় দুই ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ যখন পরস্পরের ধর্মকে অবমাননা করে - দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়; তারমানে এই নয় যে অন্য কোনো ভাষায় তাদের নিজ নিজ ধর্ম সম্বন্ধে বিদ্বেষ বা কটুক্তি নেই। ইন্টারনেটে প্রকাশিত লেখার মধ্যে এই সীমান্ত, প্রতিটা বিষয় কেন্দ্রিকই নিজস্ব মত, সংস্কৃতি, বিশ্বাস কেন্দ্রিক গঠিত হয়। একই দেশের মধ্যে অসংখ্য স্বাধীন ইন্টারনেট দেশ। আবার অনেক রাষ্ট্র মিলে একটা বৈশ্বিক কনফেডারেশন। ভাষা, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির আলাদা ব্যবস্থা- 'ইন্টারনেটনাল'।
প্রিন্ট বই/পত্রিকা আপনার কিনে পড়তে হয়, কিন্তু ইন্টারনেটের বেশীরভাগ লেখাই আপনার কিনে পড়তে হয় না। ফলে না চাইলে যেমন আপনি সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস কিনবেন না, তেমনি না চাইলে ইন্টারনেটের লেখাও পড়বেন না। বইয়ের ক্ষেত্রে যেমন আপনার বইয়ের কাছে পৌঁছাতে হয়, কিনতে হয়, সংগ্রহ করতে হয় - ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সেটা আরো সহজতর। একেতো ফ্রি তার উপরে দুই ক্লিকে বই এসে হাজির হয়। ক্লিকে ক্লিকে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বা মাউস নাড়িয়ে স্ক্রল-ডাউন করে পড়ে ফেলতে পারেন হাজারো লেখা আর তা হাজির করার জন্য আলাদীনের চেরাগ 'গুগল' আপনার সামনে সর্বদাই উপস্থিত।
আপনার অপছন্দের বই আপনি কিনবেন না হয়তো, কিন্তু ধর্ম-বিদ্বেষকারী বই পুড়িয়ে তৃপ্তি পেতে পারেন। বইকে আনপ্রিন্ট করা যায় না বলে, পৃথিবীর সকল ছাপা বই পুড়িয়ে ফেলতে পারবেন না - তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। রাষ্ট্র কোনো অভিযুক্ত বইয়ের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, বাজার থেকে তুলে নিতে পারে। আপনি কাগজে ছাপা বই/পত্রিকা যেমন বেছে বেছে পড়েন - পকেটের পয়সা খরচ করে পড়েন, ধর্মানুভূতি আহত না করার মত বই/পুস্তক/পত্রিকাও আপনি এড়িয়ে চলেন।
কিন্তু ইন্টারনেটের বিষয়টা, উপরে যেভাবে আমি আলোচনা করলাম, ইন্টারনেটনাল হওয়ায় এর প্রকাশিত সমস্ত লেখা আপনি ইচ্ছে করলেও, কোনো শক্তিধর রাষ্ট্র চাইলেও মুছে ফেলতে পারে না। কিন্তু বিপরীতে আপনাকে খুঁজে নেয়ার যেমন সহজ পদ্ধতি দিয়েছে তেমনি বাতিল করারও সহজ সুবিধা দিয়েছে। ফেসবুকের যেকোনো কনটেন্ট আপনি ব্লক করে দিতে পারেন, লেখকসহ। ব্লগের যেকোনো লেখা আপনি আনফলো করতে পারেন। গুগলে আপনি সার্চ করতে পারেন কেবল আপনার পছন্দের বিষয়টিই। যা আপনি পড়তে চান না, যা আপনার ধর্মানুভূতি ক্ষতিগ্রস্থ করে সেসব ওয়েবসাইট এবং ব্যবহারকারীকে আপনি যেহেতু সহজেই খুন করতে পারেন ব্লক অস্ত্র ব্যবহার করে সেখানে প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে আপনি অনেক বেশী নিরাপদ পাঠ/সামাজিক যোগাযোগ পরিবেশ কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন।
ইন্টারনেটে ফেসবুকে/ব্লগে কত বিশাল পরিমাণ লেখা বিভিন্ন ভাষায় ও বিষয়ে প্রকাশিত বা লিখিত হলো সেসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মত মাথা কোনো ব্যক্তিবিশেষের নেই, তা বোঝার বা ধারণ করার মত মস্তিস্কও কোনো একক মানুষের হবে না কখনও। কারণ ইন্টারনেটের বিশাল তথ্য-ভান্ডার এখন কোটি মানুষের মস্তিস্কের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। একে কোনো ধরণের শেকল পড়ানোর বৃথা চেষ্টা না করে নিজের পাঠ/যোগাযোগ ক্ষেত্রটাকে নিজের মত করে গড়ে নেয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। এতে আপনি নিজের জন্য যেমন সাম্রাজ্য তৈরী করতে পারেন - তেমনি নিজের জন্য প্রয়োজনীয় লেখা ও পড়ার সামগ্রীও পেয়ে যেতে পারেন।
ইন্টারনেটের পাঠক ও ব্যবহারকারী হে বন্ধুসকল, নিজের পাঠ ও সামাজিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রন ও অনুকূলে রাখার সব অস্ত্র যখন ব্লগ/ফেসবুক/মেইল সহ ইন্টারনেটের সকল প্রয়োজনীয় সার্ভিসসমূহে রয়েছে, সেখানে ব্লগের গায়ে শেকল পড়ানোর বিপক্ষে আপনার কণ্ঠ ধ্বনিত হোক। আপনি যদি ব্লগ নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ান আপনার ভার্চুরিয়েলিটিতে কাল অন্য ঘাতকেরা আঘাত হানবে না যে তার নিশ্চয়তা কি?
২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১২
এস.কে.ফয়সাল আলম বলেছেন: আপনি যদি ব্লগ নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ান আপনার ভার্চুরিয়েলিটিতে কাল অন্য ঘাতকেরা আঘাত হানবে না যে তার নিশ্চয়তা কি?..............
এসব অপচেষ্টা এখনই প্রতিহত করা আশু প্রয়োজন।
কোন ভাবেই ব্লগের উপর এই অশুভ ছায়া দাড়াতে দেয়া যাবে না।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১১
কর্ণেল সামুরাই বলেছেন: “খারাপ জিনিষ না পড়লেই হয়” এমন লজিকের কোন ভিত্তি আছে কি? ধরেন, পত্রিকায় ছাপা হল, ”সামহয়্যার ব্লগ জামাত শিবিরের ব্লগ” আপনার লজিক অনুসারে আপনি সেই পত্রিকা কিনবেন না, পড়বেননা। কিন্তু বাস্তবতা হল, নোটিশবোর্ডে স্টিকি পোষ্ট দিয়ে তার সমালোচনা করা হবে!
কোন লজিক দেবার আগে নিজের পাতে লক্ষ্য রেখে দিতে হয়। আমি যা করি, অন্যকে না করতে বলি কোন মুখে?
দ্বিতীয়কথা, দায়হীনতা কোন সমাধান নয়। আমরা আইয়্যামে জাহেলিয়াতী নই যে মনে যা চাইব করব। মনে চাইল গালি দেব, মনেচাইল লাথি দেব! দিলে তা মুক্তিবুদ্ধি হয়না হয় গুন্ডামী আর বেহায়াপনা। মুক্তচিন্তার প্রসার হোক জ্ঞানে, খুজলামিতে নয়। ব্লগে মুক্তবুক্তির দৌড় যখন ইসলাম আর মুহম্মদ (সা) এ পড়ে থাকে, তখন মুক্তচিন্তার দোহাই দিয়ে পিঠ বাচানোর চেষ্ঠা অবশ্যই হাস্যকর।