নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিপদজনক ব্লগ

কৌশিক

নিদারুণ প্রহসনের দিনগুলি

কৌশিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিজিটাল ডিভাইডের শিকার বুদ্ধিজীবিতা

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬

তানপুরা যে খোল দিয়ে বানানো হয় সেটা ফেটে গেছে, কিন্তু তারপরেও কিছু লোক তা বাজিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বুদ্ধিমত অনুযায়ী ঢাকা দিয়ে ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাবে না। ঢাকা শাহবাগের বিষয়ে ইতিবাচক হলেও ঢাকার বাইরের মানুষ শাহবাগের বিষয়ে নেতিবাচক।



এই বুদ্ধিমতদাতারা এই জ্ঞান ঢাকাতে বসে অর্জন করেছেন দু/তিনটা পত্রিকা আর তার কলমজীবিদের বক্তব্য শুনে। তারা অনবরত বলে যাচ্ছেন ঢাকার বাইরের মানুষ, মেহনতী মানুষ, দিনমজুর এই সরকারের উপরে ফুসে উঠেছে। কারণ শাহবাগ তাদের ধর্মানুভূতি ধরে টানা হেচড়া করেছে। তাদের এই বিদ্রোহ এখন দিকে দিকে ছড়িয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধে ও একাত্তুরকে ছাপিয়ে বিশাল গণহত্যায় রূপান্তরিত করে ফেলেছে।



তাদের এই তত্ত্ব প্রসবের প্রধান কারণ প্রযুক্তির দেশব্যাপী বিস্তার সম্বন্ধে চরম অজ্ঞতা। এখন ঢাকার বাইরে এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষ রয়েছে। সংখ্যায় তাদের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলছে। জেলা ও উপজেলা শহরগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুনেরা ব্লগ/ফেসবুক/অনলাইন পত্রিকাগুলো নিয়মিত পড়ে এবং এর ব্যবহারকারী। প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে মানুষটি ব্লগ/ফেসবুক সম্বন্ধে জানে না - তার নিকটেও রয়েছে একজন ব্লগার। যে'কজন জামাত-শিবিরের এজেন্ট অনলাইনে রয়েছে তার চেয়ে একশগুন বেশী রয়েছে শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখেন এমন মানুষ।



ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অজপাড়াগায়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিলো যে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে ধর্মের বিষেদগার করা হয়েছে - তার একটা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হওয়াটাই স্বাভাবিক। যাদের ব্লগ/ফেসবুক জ্ঞান নাই তাদের কাছে 'ব্লগাররা নবীর নামে ঘৃণ্য কট্যুক্তি করেছে' এমন ধরণের সংবাদ প্রদান অর্থবহ নয় বলে সেটাকে শাহবাগের নামে চালানো হয়েছিলো। এইসব সংবাদের প্রাথমিক উত্তেজনার সাথে সাথে মানুষের কৌতুহলের পরিধিও বৃদ্ধি পায়। কি বলেছে, কারা বলেছে, কোথায় বলেছে - এগুলো দেখার হিড়িক পড়ে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষই যেহেতু ইন্টারনেট/ব্লগ/ফেসবুক সম্বন্ধে ধারণা রাখে - সেহেতু শাহবাগ, ব্লগার, প্রজন্ম চত্বর ও যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবী ইত্যাদি সম্বন্ধে তাদের স্পষ্ট অবস্থানও আছে। ডিজিটাল ডিভাইডের শিকার মানুষেরা তাদের পাশেই বাস করে। সুতরাং প্রোপাগান্ডার পালে দীর্ঘমেয়াদী হাওয়া দেওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। শাহবাগে ব্লগার নামক কিম্ভুত চিড়িয়ার এক প্রাণী তারা দেখতে পেলো না - লক্ষ জনতা ধর্মকে কট্যুক্তি করছে এমন কোনো উদাহরণও তারা আবিস্কার করতে ব্যর্থ হলো।



ফলে ঢাকার বাইরের মানুষকে গণহারে মেহনতী, দরিদ্র, প্রযুক্তি-বিমুখ এই অলীক তথ্যের উপরে ভিত্তি করে নির্মিত বিশাল থিসিস অসার হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সাঈদীকে চাঁদে ফাসিয়ে একটা কল্পলোকের ইন্দ্রিয় তৈরী করে ঐশ্বরিক প্রোপাগান্ডার উম্মাদনা তৈরীর চেষ্টা চালানো হয়। এর মাঝেই সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বন্ধ করার ছক মেলাবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইডের বৈশিষ্ট্যের সাথে শহর ও গ্রামের ডিজিটাল ডিভাইডের যে পৃথকতা রয়েছে সেই অনুমান করা থিসিস প্রণেতাদের বৃদ্ধত্ব, প্রযুক্তিহীনতা ও প্রজন্ম-দূরত্বের ফলে সম্ভব নয়। মোবাইল ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সাথে সাথে মানুষের কাছে বিভিন্নমুখী সংবাদপত্রও এখন হাতের নাগালে। কয়েকডজন চ্যানেলও রয়েছে। সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মানুষ এখন একটা চ্যানেল আর একটা পত্রিকার উপরে নির্ভরশীল থাকে না। একজন অনলাইন ব্যবহারকারী হাজারো লেখার পক্ষ-বিপক্ষ যুক্তি পড়ার সুযোগ পায় - তা সে ঢাকা থাকুক বা ঢাকার বাইরে। রাজধানীর মানুষকে আলোকিত ভাবার সুযোগ ফুরিয়েছে প্রযুক্তির ভৌগলিক-ব্যাপ্তির কারণেই।



খুঁজলে দেশের প্রতিটা শহরে, উপজেলা এমন কি ইউনিয়নের নামে পাওয়া যায় ফেসবুকে তৈরী করা কোনো গ্রুপ বা পেজ। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তৈরী করেছে প্রায় দুই হাজারের মত পেজ, যা অঞ্চল ভিত্তিক। এসব পেজে রয়েছে স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ। গড়পড়তা দুই থেকে তিনশ মানুষ এর সদস্য। ব্লগে লেখে সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে শুরু করে চারদিকে সমুদ্রবেষ্টিত কোনো দ্বীপবাসী। ডিজিটাল ডিভাইডের শিকার জনগোষ্ঠীকে সাময়িক উম্মাদনা দিয়ে দু-কদম সামনে নিয়ে আসা সম্ভব বটে, কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রা রুখে দেবার জন্য আশেপাশেই আছে অনলাইন জনগোষ্ঠী। তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা প্রমাণ সাপেক্ষে উপস্থিত করা সম্ভব এবং সময়ের পরিক্রমায় শাহবাগের আসল চিত্র- লক্ষ জনতার ফাঁসির দাবী আর অহিংস প্রতিবাদ চিত্রই সামনে চলে আসে। দুই/তিন হাজার টাকা দামের মাল্টিমিডিয়া মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে শাহবাগের জাগরণী সব গান, ভিডিও চিত্র। আর এসব ব্যবহার করে দরিদ্র মানুষেরাই। ফলে উম্মাদনা ছড়িয়ে দেবার রাস্তাটা এখন আর একমুখী নয়, হাজারটা প্রতিরোধের সামনে পড়তে হচ্ছে চাঁদমুখী থিসিস।



ফলে প্রযুক্তিজ্ঞানহীন এসব কলামিস্টের পক্ষে শহর ও গ্রাম কিংবা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে শাহবাগের চেতনা ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীর ঘনিষ্ঠতা অনুধাবন করা একেবারেই অসম্ভব। চোখ বন্ধ করে এরা একটা পত্রিকা পড়তে পারেন হয়তো, কিন্তু মানুষ এখন দশটা ট্যাবে দশটা পত্রিকা খুলে রাখে। এরা শাহবাগের লক্ষ জনতার ছবিকে ফটোশপের কারসাজি মনে করতে পারেন কিন্তু দশ লক্ষ জনতা যে প্রান্তরে উপস্থিত থাকে তাদের কাছে সেটা ঐতিহাসিক উপস্থিতির ফটোগ্রাফ, এক বিরল মুহূর্ত হিসাবে জাগরুক থাকে। শাহবাগে অংশ নেয়া প্রতিটা মানুষ তার প্রতিবেশীকে এসব তথ্য শেয়ার করতে দেরী করে নি। কিন্তু ডিজিটাল ডিভাইডের শিকার বৃদ্ধিজীবিতা এত প্রজন্ম-দূরত্বে অবস্থান করে যে তাদের বন্ধুরা থাকে কেবল চাঁদ-আসমানে, তারা এসব খবর পাবে কবে?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮

সরোজ রিক্ত বলেছেন: বাআল এর বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে আর পারা গেল না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.