নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৫ই ফ্রেব্রুয়ারী দুপুরের দিকে ফেসবুকের ফিডে মোটামুটি একটা ঝড় দেখলাম। কিছুক্ষণ আগে রায় বের হয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন - সবাই মোটামুটি স্তম্ভিত, তারপরে বিক্ষোভ, সেসবে ভেসে যাচ্ছে ফেসবুক।
চলো চলো শাহবাগ। যত ফ্রেন্ড দেখছি - সবার একই স্টাটাস। কে ডাক দিয়েছে জানি না, কিন্তু সবাই যে শাহবাগ যাচ্ছে বুঝতে পারছি। অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম সাড়ে চারটার দিকে। আমার যাবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই। শাহবাগের এমন অনেক মানববন্ধনে গিয়েছি। স্বতস্ফুর্তভাবে গিয়েছি মাত্র দুইবার। একবার রামুতে বৌদ্ধদের উপরে আক্রমনের পরে, আরেকবার আসিফ মহিউদ্দিনের উপরে আক্রমনের প্রতিবাদে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয় নাই - এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে কোনো লাভ হবে না এমন ধারণাই আমার প্রবল ছিলো। ফলে ফেসবুকে যখন মানুষের ঢল দেখলাম শাহবাগের প্রতিবাদে যোগ দেবার জন্য, তখন নিজেও আপ্লুত হয়ে ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই বলে সবার সাথে একটা চিৎকার দিলাম ফেসবুকে। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। মানববন্ধনে যাবার কোনো ইচ্ছে আমার তখনও ছিলো না।
ঠিক সেই সময় সিমু নাসের ফোন করলো। আপনি কি আসবেন না? আমি খুবই বিশ্বাসযোগ্যভাবে একটা মিথ্যা কথা বললাম। এই তো আসতেছি। কিন্ত আমি জানি, আমি যাবো না। সাড়ে ৬টার দিকে আবার সিমু ফোন করলো, কই আপনি? এদিকে তো ইতিহাস হয়ে গেছে! শাহবাগের চত্বর দখল করে ফেলেছে পাবলিক! মাঝখানে আমি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলাম।
সিমু যখন এত সিরিয়াসলী বলছে কেবল ইতিহাস দেখার জন্য প্রচন্ড অনিচ্ছা নিয়ে শাহবাগে হাজির হলাম। গিয়ে আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তখন বোধহয় সাতটা বাজে। মোড়ে একটা বর্গাকৃতি। মোমাবাতির। বর্গের চারপাশে মানুষ বসে আছে। অন্ধকারের মধ্যে একটা জীবন্ত অগ্নিচিত্র। ভেতরে একদল মাইকে স্লোগান দিচ্ছে।
ভেতরে ঢুকে পড়লাম। খুঁজে বের করলাম সিমুকে। দেখা হলো রবি, ফাহমিদ ভাই, হেলাল ভাই, শামীম, শুভ, সবাক, রাজিউর, বাকী, শরৎ সহ অনেক পুরাতন ব্লগারদের। অন্যান্যদের আমি চিনি না। তাদের সাথে বর্গের একটা কোনে বিস্তর বাদাম ধ্বংস করলাম।
দুই ঘন্টা পরে অনেক হয়েছে ভেবে যাই বলে যখন উঠলাম, তখন আবার প্রতিরোধ। সিমু ও রবি দুইজনই বললো, আরে ভাই থাকেন না, একরাত থাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। সবাই থাকতেছে, আপনি থাকবেন না কেনো?
আবার বসলাম। মশাল জ্বালিয়েছে ভেতরে। জনগণের পরিমাণ বেড়ে বর্গের ভেতরে গিজগিজ করছে মানুষ। তার মধ্যে একটা মশাল কারো হাত ছিটকে পড়লো রাস্তায়। দপ করে আগুণ জ্বলে উঠলো। জটলার মধ্যে কয়েকজন এদিক সেদিক ছিটকে গেলো। আমাদের সামনের মানুষেরা দেখলো হুড়োহুড়ি, তারা দিলো দৌঁড়। আমি মনে করলাম পুলিশ নিশ্চয়ই আক্রমন করেছে। পুলিশের লৌড়ানির সময় আমি সবার আগে দৌড় দেই এটা একটা ঐতিহাসিক সত্য। সুতরাং দিলাম ভো দৌড়। নিরাপদ দূরত্বে এসে দেখলাম আমার সাথে আরো অনেকেই আছে। একা নই। তারপরে দেখি, না তেমন কিছু হচ্ছে না ভেতরে। সাহস সঞ্চয় করে ভেতরে ঢুকে জানলাম তেমন কিছু না, বীরের মত আবার গর্বের সাথে ভিতরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তবে আমি যে আগে ভো দৌঁড় দিয়েছি এটা রবি ছাড়া আর কেউ জানে না। সে নিশ্চয়ই হাটে হাঁড়ি ভাঙবে না - এই বিশ্বাস আমার আছে।
তারপরে আবার বাদাম। ভেতরে তখন তিন চারটা বৃত্ত তৈরী হয়েছে। আমাদের সামনেও ৭১ লেখা একটা অর্ধবৃত্ত তৈরী হয়েছে। মোমবাতি দিয়ে প্রথমে ইংরেজিতে লেখা হলো 71, পরে সেটা বাংলায় বিপ্লবিত হলো। পরিচয় হলো আরো কতগুলো নতুন মুখের সাথে। তবে প্রতি মুহূর্তে আমি সুযোগ খুঁজছিলাম কখন ভাগা যায়। এর মধ্যে একসময় রাতের খাবারের জন্য একটা গ্রুপ এলো চাঁদা তুলতে। একশটাকা দিলাম। আমাদের সাথে আরো কয়েকজন টাকা দিলো। পেটে খিদে, একবার পুবালি ব্যাংকের সামনে গিয়ে আমরা পরোটা-ডিম মেরে এলাম।
তারপরে কখন রাত একটা হলো টের পেলাম না। বাসার গেট বন্ধ। টপকে ভিতরে ঢুকতে হবে। ওদিকে শীত শীতও করছে। কিন্তু যাদের সাথে আছি সেই সিমু, রবির বাড়ি ফেরার কোনো তাড়া নাই। বিরক্ত মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি, কখন এদের তেজ কমবে। কিন্তু কিসের কি, কোনো বিকার নাই, শাহবাগের মোড় তারা তখন ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছে। এর মধ্যে অনবরত আমি যাই যাই করছি। আবার একশ টাকা দিয়ে খাবারের জন্যও অপেক্ষা করছি।
রাত দুটোর দিকে মাঝখানের জটলা থেকে বোধহয় ঘোষণা করা হলো আজকের মত আন্দোলন শেষ, কালকে আবার সকাল ৮টা থেকে সমাবেশ চলবে। শুনেই আনন্দে নেচে উঠলাম। কিন্তু তার চারপাশের মানুষজন নিরানন্দ হলো। একজন বললো, আপনাদের যাদের যাওয়ার তারা যান, আমরা ছাড়ছি না রাজপথ। মনক্ষুন্ন হয়ে আবার গিয়ে বসে পড়লাম। খাবার তখনও আসেনি। এমন রাতভর আন্দোলন করার দু:স্বপ্ন আমি জীবনেও দেখি নাই। তার উপরে পুলিশের দৌড়ানি, বোমা-ককটেল শুনলেই আমার হার্টবিট থাকে না। কিন্তু তারপরেও কথা থাকে। একশ টাকা দিয়েছি, না খেয়ে যাচ্ছি না।
অবশেষে আড়াইটার দিকে খাবার এলো। প্যাকেটে তেহারি। খেয়েটেয়ে সিমুকে বললাম, যাই ভাইয়া - মনে হয় তার একটু দয়া হলো আমার চেহারার অবৈপ্লবিক ভগ্নদশা দেখে। খুবই আন্তরিকতার সাথে বললো, ভাগেন।
রাত ৩টার ঢাকা দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরলাম। তাপরে একটা স্টাটাস দিলাম। তারপরে ঘুমালাম। আর উঠলাম আজকে একমাস পরে।
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৮
কৌশিক বলেছেন: যারা কাপায় তারা কেউ ব্লগ লেখার টাইম পায়?
২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৮
রোড সাইড হিরো বলেছেন: জটিল লাগলো...
৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৮
মদন বলেছেন: শীতনিদ্রা
৪| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৫
নিয়েল ( হিমু ) বলেছেন:
হাটে হাড়ি কেডায় ভাংল ?
৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২৪
বাতাসের রূপকথা বলেছেন: যা দেখলাম তাতে ডা: ইমরান নিজে একটা ছোকরা, কাজেই বাস্তবতার চেয়ে ফ্যান্টাসী বেশী কাজ করেছে তার মধ্যে। আর সুবিধাবাদী আওয়ামীলীগ এটাকে হাতছাড়া না করে কিছু সময়ের জন্য টিসু পেপার হিসাবে ব্যবহার করেছে।
ফাঁসি চাই কিন্তু কার কাছে চাই তার কোন নাম নিশানা নাই। আর টাকা দিয়ে হোক আর এমনিতেই হোক ওসব বিরিয়ানী খেয়ে, নাচ গান করে আর ক্ষমতাসীনদের সাথে মিশে গিয়ে আন্দোলন হয় না। আন্দোলনের মসলা হলো- পুলিশের পিটুনী, অভুক্ত থাকা, এবং সুবিধাবাদী প্রশাসনের চোখ রাঙানি ।
আপনার লেখা তাহরীর স্কয়ারের (ছি ছি ভূল বলছি), শাহবাগ স্কয়ারের ইমেজের ধুতিতে টান দিয়েছে।
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩৫
কৌশিক বলেছেন: আমাকে দিয়ে মাপলে তো হবে না।
আমার যা মনে হয়েছে তা হলো এই আন্দোলনের দাবীই আওয়ামী লীগের এজেন্ডা ছিলো। তারা তা পূরণ করবেই। কিন্তু এরজন্য গণজাগরণের প্রয়োজন ছিলো নানামুখী অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক চাপ সামলানোর জন্য।
এই আন্দোলনের ফলে তারা মনোবল পেয়েছে। সাহস পেয়েছে। কাজেই আন্দোলনকে পূর্ণ নিরাপত্তাও দিচ্ছে।
প্রত্যেকটা আন্দোলনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ভিতরে সরকার বিরোধী আন্দোলন হয়ে ওঠার কোনো উপাদান নাই।
৬| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৬
বাতাসের রূপকথা বলেছেন: এই রাস্ট্র যন্ত্র চালাচ্ছে আওয়ামীলীগ, ট্রাইবুনাল হয়েছে আওয়ামীলীগের দ্বারা। সেখানে বিচারের জন্য শাহবাগ লাগবে কেন?
কোন কর্তৃপক্ষ বরাবরে অথবা প্রতিপক্ষ ছাড়া কিসের জন্য আন্দোলন? শাহবাগ ভেবেছিল বিচার, নিষিদ্ধ, সারাদেশে পতাকা উত্তোলন - যখন যা বলবে সব হয়ে যাবে। পরে দেখা যাবে কেউ কথা রাখেনি।
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১১
কৌশিক বলেছেন: দেখা যাক কোথাকার মল কোথায় গিয়ে পড়ে।
৭| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১০
মিতক্ষরা বলেছেন: শাহবাগের কারনে আজ এই অবস্থা। আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করার আখেরে এই বুঝি কপালে ছিল।
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৪
কৌশিক বলেছেন: একটা গান শুনলাম শাহবাগে।
শাহবাগে জনতার বুক ফাটা চিৎকার, তুই রাজাকার তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
চিরকুট ব্যান্ডের। হেভি।
৮| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৫
মিতক্ষরা বলেছেন: শুধু গানই শুনেছেন! অনেকের কাছে শুনলাম বিরিয়ানি নাকি পাওয়া যায়। কেউ কেউ নাকি টাকাও পেয়েছে।
৯| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪০
s r jony বলেছেন: কোনো এক সময় রাজনিতি, মিছিল, মিটিং , পিকেটিং নিয়ে এলাহি কান্ড করতাম তাই একবারে মেট্রিক পরিক্ষা দিতে পারি নাই। পরিক্ষার আগের রাতেই কট খাই। সেই থেকে তওবা করছি আর কখনো গ্যাঞ্জামে জড়াব না।
রাস্তায় গাড়ির টায়ার বাস্ট হইলেই আতঙ্কে দৌড় দেই। মিছিল দেখলে বাড়ির ভিতরে লুকাই। হরতালে লেপের নিচে ঘুমাই। এই ছিল আমার গত ১২-১৩ বছরের জীবন-জাপন।
কিন্তু এবার কেন জানি ভিতর থেকে তাড়না অনুভব করি শাহাবাগ জাবার জন্যে, গলা ফাটিয়ে স্লোগান দেই সেই আগের মত। ফাসি চাই ফাসি চাই বলে রাজপথে মিছিল করছি। হরতালে বীরদর্পে পথে নামি।
না, এখন আর ভয় পাই না, আমি বাঙালি, বীরে জাতি।
জয় বাংলা
১০| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
রাত ৩টার ঢাকা দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরলাম। তাপরে একটা স্টাটাস দিলাম। তারপরে ঘুমালাম। আর উঠলাম আজকে একমাস পরে।
এই কথাগুলোর তাৎপর্য ও গভীরতা অনেক। ঠিক যেন তাই। কিন্তু এই ঘুমের কথা সত্যি আমাদের ছিলনা ভাইয়া, কিন্তু কেন ঘুমালাম !!!!
১১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪১
অনুমান বলেছেন: কৌশিক ভাই -
বেশ কয়েকদিন ধরেই এই ব্লগে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে আমি জরিয়ে পড়েছি।
কি ভাবে ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে এই চত্বরটাকে জনসমুদ্রের চেহারা দিয়েছে তা ব্লগ পড়তে পড়তে জেনেছি। শাহবাগ চত্বরটা কোথায় তাও জেনেছি। না আমি বাংলাদেশে কোনোদিন যাইনি - যাবার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু ব্লগের লেখা পড়তে পড়তে নিজেকে আমি শাহবাগের একপ্রান্তে আবিষ্কার করি রোজ। লক্ষ কন্ঠের স্লোগানের গর্জন শুনতে পাই। লাকি আক্তার-কে দেখতে পাই মাউথপিস হাতে নিয়ে নিরন্তর স্লোগান দিতে- সেই স্লোগানে দুলে উঠছে লক্ষ কন্ঠ। অবাক হয়ে ভাবি- এই তরুণ-তরুণীরা এত শক্তি কোথায় পায়।
ধন্যবাদ - জয় বাংলা
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৭
মন মণষা বলেছেন: কৌশিক ভাই...শরৎ এর ব্লগে আপনার ছবি দেখেতো ভাবতেসিলাম শাহাবাগ কাঁপায় ফেলতেসেন.. আসল ঘটনা তাহলে এই...