নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিপদজনক ব্লগ

কৌশিক

নিদারুণ প্রহসনের দিনগুলি

কৌশিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধাপরাধীদের জন্য আর নয় ধর্মের ঢাল

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৯

হাজার হাজার মানুষ বিগত তিন সপ্তাহ যাবত শাহবাগে আছেন,গণ-জাগরণ মঞ্চে। ঘর,সংসার,চাকুরী,পড়াশুনা বাদ দিয়ে প্রজন্ম চত্বরকে অবিরত মুখরিত রাখছেন স্লোগানে। অনিয়মিত ঘুম,খাবার আর অক্লান্ত পরিশ্রমের চুড়ান্ত নজির তারা রেখেছেন। কারো জ্বর হয়েছে,মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন,হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন,স্যালাইন দেয়া লেগেছে। হাত-পায়ের চামড়া ছড়ে গেছে,চেহারা বিবর্ণ হয়েছে,শরীরে ধুলোর আস্তর জমেছে। একই কাপড় পড়ে,গোছল না করে দিনের পর দিন স্লোগানে প্রকম্পিত করেছে প্রান্তর। স্বেচ্ছাসেবক হয়ে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে,দাবীতে অবিচল থেকে শাহবাগে জন্ম দিয়েছে ইতিহাস। বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তান পরিজনদের শত অনুরোধ-উপরোধ-হুমকি-স্নেহজাল উপেক্ষা করে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের অনঢ় স্তম্ভ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রবলভাবে প্রোত্থিত করে দিয়েছেন প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরে। শিশু-কিশোর-তরুনের মধ্যে জাগ্রত করেছে রাজনীতির উপরে বিশ্বাস ও আস্থা। মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের এক জীবন্ত চিত্র তারা উপস্থাপন করেছেন প্রতিটি মানুষের চোখের সামনে। সবাই বিষ্ময়ে দেখেছে তাদের অবিচল ব্রত, অদম্য সংগ্রাম। এই মানুষগুলো তৈরী করেছে নতুন একটা প্রজন্ম,জাগ্রত করেছে স্বদেশ প্রেম - অসাম্প্রদায়িক চেতনার আদর্শ। দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অনুপম ভ্রাতৃত্ববোধের,নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্কের।



এই কয়েক হাজার মানুষের নিরলস সংগ্রামী অবস্থান,এক ইঞ্চি জায়গা না ছেড়ে আকড়ে থাকার যুদ্ধ কি আমাদের পক্ষে সত্যিই বোঝা সম্ভব? বিশেষ করে যারা কেবল আমার মত বাইরে থেকে টিভি-ফেসবুক-ব্লগ দেখে এই আন্দোলন নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে মিনিটে মিনিটে স্টাটাস বা ব্লগ লিখে গেছে - তাদের পক্ষে কখনই কি ফিল করা সম্ভব হবে শাহবাগে জীবন বিপন্ন করে বসে থাকা মানুষের আবেগ? একজন ব্লগার খুন হয়েছেন। স্লোগান দিতে দিতে আরেকজন ব্লগার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন, তারপরেও কি ভর করেছে তাদের মধ্যে,কি চেতনায় তারা এমন মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রে বুঁদ হয়ে আছেন - সেসব আমাদের ভেতরে কতটুকু নাড়া দিয়েছে? আমরা তাদের এই আত্মত্যাগের মর্যাদা কতটুকু দিচ্ছি?



এই ঘরত্যাগী মানুষগুলো,এই দুরন্ত যোদ্ধারা আমাদের জন্য রচনা করে চলেছে যুদ্ধাপরাধমুক্ত বাংলাদেশ। এই মানুষগুলোকে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চলছে ধর্ম-বিরোধী হিসাবে। কয়েকজন মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম-বিশ্বাস নির্ভর লেখালেখি টেনে এনে কিছু পত্রিকায় ছাপানো হচ্ছে, প্রচার করা হচ্ছে। এই মানুষগুলো শাহবাগে এসে কোনো ধর্মের পক্ষে কথা বলেনি,কোনো ধর্মের বিপক্ষেও কথা বলেনি। এই মানুষগুলো ব্যক্তিজীবনে যাই থাকুক না কেনো - সে দাঁড়িয়েছে দেশের পক্ষে। ধর্মের নামে যারা মুক্তিযুদ্ধে মানুষ খুন করেছে দাঁড়িয়েছে তাদের বিপক্ষে।



এই জাগরণে সব স্তরের মানুষ আছে। ধর্মভীরু, ধর্মহীন, নৈরাজ্যবাদী, সংশয়বাদী -সবাই। যেমন থাকে সমাজের সর্বস্তরে। একটা সার্বজনীন আন্দোলনে সমাজের প্রতিচ্ছবি থাকবে,এখানেও তাই আছে।



মানুষ তার ব্যক্তিগত ধর্ম-চিন্তা,সমাজ-চিন্তা,দার্শনিক উপলব্ধির কথা লেখার অপার স্বাধীনতা ভোগ করে ব্লগে। সমাজ বিবর্তনে, প্রগতিশীলতার উন্মেষে এই বিতর্ক আর চিন্তার স্ফুরণ নতুন দিকচিহ্ন নির্মাণ করে। বিশ্বের সভ্য হয়ে ওঠার ইতিহাসই এই স্বাধীন চিন্তা বিকাশের,চিন্তা-সংঘর্ষের ফলশ্রুতি। ধর্মের ভেতরে ও বাইরে নানা দার্শনিকের ভিন্নতর ব্যাখ্যার ধারাবাহিকতায় ব্লগের এসব লেখালেখি,যা আগে কেবল গুরুকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র অবয়বে ছিলো। কিন্তু সমাজে তার অবস্থান কখনই অনুপস্থিত ছিলো না।



শাহবাগের এই গণজাগরণ সর্বস্তরের সৃজনশীল চিন্তা ও চর্চার মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের সহাবস্থানের সূত্রে এর গুরুত্ব ও প্রভাব অপরিসীম। আমাদের সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতার চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে যুদ্ধাপরাধীরা এতকাল যে ধর্মকে ঢাল বানিয়ে রক্ষা পেয়েছিলো - তা ভেঙে পড়েছে। এই জাগরণে সর্বধর্ম ও সর্বমতের মধ্যে অনুপম ভারসাম্যময় সমাজ-ব্যবস্থার রূপ তৈরী হয়েছে। যেখানে যুদ্ধাপরাধী ও ধর্ম-ব্যবসায়ীরা ক্রমশ ব্রাকেটবন্দী হয়ে যাচ্ছে প্রত্যাখানের কারাগারে। পুরো বাংলাদেশ তৈরী হবে তাদের জন্য এক জাগরিত প্রতিরোধ ভূমি - আর প্রত্যেকটা মানুষই তার নিজস্ব ধর্ম-বিশ্বাস ও অবিশ্বাস নিয়ে থাকবে বিরোধহীন।



শাহবাগের গণজাগরণ এই ধর্ম-ব্যবসায়ীদের সকল সাম্প্রদায়িক প্ররোচনাকে ইতিমধ্যে নস্যাত করে দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরো সচেতন থাকতে হবে কখনই কারো ব্যক্তিগত ধর্ম-বিশ্বাস ও অবিশ্বাস নির্ভর লেখা উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করে এই যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় প্রদানকারী ধর্ম-ব্যবসায়ীরা যেনো মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে। শাহবাগে অসম্ভব এক আত্মত্যাগের নজির স্থাপনকারী সময়ের সাহসী সন্তানদের জন্য এটাই হোক আমাদের ট্রিবিউট। ধর্মব্যবসায়ীদের ঘৃণ্য প্রচারণাকে প্রশ্রয় না দিয়ে এই যোদ্ধাদের রক্ষা করতে সবারই সচেষ্ট থাকতে হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪৩

নন্দনপুরী বলেছেন: যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হবেই হবে.......ইনসাআল্লাহ

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪৪

ইনকগনিটো বলেছেন: দেশের প্রতি এই অনুভুতি ভিতর থেকে আসে। কোন ধর্ম/ অধর্ম/ দল/ বর্ণ সেই অনুভুতিতে ঠাই পায়না।


আর যাদের আসেনা, তাদের কোনদিনও আসেনা।

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

রাফা বলেছেন: এইখানও অনেকে বাহানা খুজে বেড়ায়।এই যে অসামান্য অবদান এটাকে যারা ছোট করে দেখছে এবং সমালোচনায় প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে তাদেরকেও আমার রাজাকারের মতই ঘৃণ্য মনে হয়।

দেশের প্রতি এই আবেগের কোন মূল্য হয়না।শাহাবাগের পুর্বের বাংলাদেশ আর পরের বাংলাদেশ কখনই এক হবেনা।তাদেরকে কোন শব্দের মাধ্যমেই সন্মান জানানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।আশা করি তাদের এই সংগ্রা বৃথা যাবেনা।

জয় বাংলা।

৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

মোঃ আবদুল হাই বলেছেন: বর্তমান সরকার চাইলে সাংবিধানিক ভাবেই ৫ মিনিটেই সংসদে জামাত শিবির নিষিদ্ধ করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের বিন্দু মাত্র স্বদিচ্ছা নাই-জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার।

৫| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: কৌশিক,
বিশ্বাস, অনেক যত্ন করে ঋদ্ধতায় সমৃদ্ধ এই লেখাটির সুন্দর আকাঙ্খা মরে যাবেনা কখোনও । আপনার (এবং আমাদেরও) এই অনুভবকে মহান সৃষ্টিকর্তা বিজয়ী করবেনই করবেন ।

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬

ইখতামিন বলেছেন:
২য় ভালো লাগা.
+++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.